Riwayahbd
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ
No Result
View All Result
Riwayahbd
No Result
View All Result

ইসনাদ : নববী ইলমের অটুট বন্ধন। হুজাইফা আওয়াদ

by সাবের চৌধুরী
August 21, 2020
1 min read
0
ইসনাদ : নববী ইলমের অটুট বন্ধন। হুজাইফা আওয়াদ

ইসনাদ এর পরিচয়

885
SHARES
1.2k
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

প্রথম কথা

কুরাআনুল কারীমের পর মুসলিম মানসে সবচেয়ে গুরুত্ব ও মর্যাদার জায়গাটা দখল করে আছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়অসাল্লামের হাদিস। সামগ্রিক অর্থে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়অসাল্লামের গোটা জীবনের তাবৎ বিষয়কে ‘হাদিস’ বলা হয়; পারিভাষিক সংজ্ঞার ক্ষেত্রে কিছুটা  যৌক্তিক মত-বৈচিত্র্য থাকলেও রাসুলের বাণী, কর্ম ও সমর্থিত বিষয়াবলীকে যে হাদিস বলা যায়, এতে কারো দ্বিমত নেই। আমাদের পূর্বসূরি যেভাবে কোরানুল কারীমকে অক্ষতরূপে অত্যন্ত  নির্ভুলভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌছে দিয়েছেন, অনুরূপ হাদিসে নববীও যেন শত সহস্রাব্দি পরে আগত উম্মার কাছে নির্ভেজাল ও পরিশুদ্ধরূপে পৌছে, এর জন্য হাজারো মনীষী তাদের জীবনের সবটা উৎসর্গ করে দিয়েছেন।  এর লক্ষ্যে সৃষ্টি হয়েছে শতাধিক শাস্ত্র। উদ্ভাবিত হয়েছে ঢেড় নীতিদর্শন।

হাদিস কীভাবে আমাদের পর্যন্ত পৌছেছে, কী কী পদ্ধতিতে প্রথম শতকগুলোতে হাদিস সংরক্ষণ করা হতো, কারা সংরক্ষণ করেছেন,  তাদেরই বা জীবনবৃত্তান্ত কী—ইতিহাসের পাতায় এসব কিছুই অক্ষরে অক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে।  শুধু মাত্র ড. মাওলানা মুস্তফা আজমী রহ. এর বিখ্যাত কিতাব দিরাসাত ফিল হাদিসিন নববী ওয়া তারিখু তাদওয়ীনিহ (Studies in Early Hadith Literature) কেউ আদ্যপান্ত পড়লেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন যে, এই সমুদ্রের কিনারা কোথায়।

প্রতিটি হাদিসের শুদ্ধতা ও যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য মুহাদ্দিসিন ( হাদিস স্কলার্স) বিস্তৃত এক সিস্টেম ডেভলপ করে গেছেন।

 

হাদিসের দুইটি দিক

যে কোন হাদিসের মৌলিক দুটি দিক থাকে। একটি হলো হাদিসের মূল পাঠ ( text)। একে আরবীতে বলা হয় ‘মতন’। আরেকটি হলো হাদিসটির বর্ণনাকারীদের নামোল্লেখ ও বিবরণ (chain of transmission)।  পরিভাষায় এটা ইসনাদ কিংবা সনদ নামে পরিচিত। বাংলায় আমরা সিলসিলা ও সূত্র পরম্পরা বলতে পারি।  কোন হাদিসের মতন (text) শুদ্ধ হওয়ার জন্য বর্ণনাকারীদেরকে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য হতে হবে।

কোন বর্ণনাকারী কেমন, কে সত্যবাদী, কে মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত , কার স্মৃতি ভ্রম হয়, কে বয়সের ভারে বিস্মৃতির  শিকার, যশ-খ্যাতি-আত্মকলুষতা কিংবা মোহে পড়ে কারা হাদিস জাল করে ইত্যাদি নানান বিষয় নিয়ে যে শাস্ত্রে আলোচনা হয়, সেটাকে বলা হয় ‘ইলমুল জারহি ওয়াত তা’দীল’ ও ইলমুর রিজাল—মনিষী চরিত বিশ্লেষণ শাস্ত্র ( Biographical evaluation)।

ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন : ‘হাদিসের সত্যতা কিংবা সত্যতার অনুপস্থিতি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নির্ণয় করা হয় হাদিস বর্ণনাকারীর সত্যতা কিংবা তার মাঝে সত্যতার অনুপস্থিতির মাধ্যমে।  তবে হ্যা, কিছু বিশেষ মুহূর্তের কথা ভিন্ন, যখন বর্ণনাকারী এমন কোন ঘটনা বলেন, যা ঘটা অসম্ভব; কিংবা এমন কিছু বলেন, যা শরিয়ার ভিন্ন কোন একটি অথেনটিক ইনফরমেশনের সাথে সাংঘর্ষিক হয় (এবং এ দুয়ের মাঝে কোনভাবেই সমন্বয় করা যায় না।)
( আর রিসালাহ- ৫৫)

 

ইসনাদ বা সনদ কী?

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সর্বপ্রথম যারা হাদিস শুনেছেন, তারা হলেন সাহাবা—যারা পূর্ণ রূপে বিশ্বাস করেছেন, উপলব্ধি করেছেন এবং বিভিন্ন পদ্ধতিতে হাদিসকে সংরক্ষণ করেছেন। তাদের কাছ থেকে যারা শুনেছেন, তাদেরকে বলা হয় তাবিঈন। তাবিঈনগণও তাদের উত্তরসূরীদের কাছে যথার্থরূপে পৌছে দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে যারা শুনেছেন ও তাদেরকে অনুসরণ করেছেন, সে লোকদেরকে বলা হয় ‘আত বা-উত তাবিঈন’।  একজন সাহাবী যখন বর্ণনা করেন, তখন এভাবে বলেন : ‘সামি’তু রাসুলাল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াকুল’—আমি রাসুলকে এভাবে বলতে শুনেছি।  তাবেয়ী বর্ণনাকালে এভাবে বলে থাকেন : ‘সামি’তু ফুলানান য়াকুলু কাযা’—আমি অমুক সাহাবিকে বলতে শুনেছি, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এভাবে বলতে শুনেছেন’। কোন সময় শোনার বিষয়টি উল্লেখ না করে সাধারণভাবে বলেন, ‘আনিন্নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’—নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে। এভাবেই সুশৃঙ্খল ও ক্রমাগত চেইনে এক থেকে দশের অধিক মনিষীও শামেল হন।  ধারাবাহিক এই সুত্র পরম্পরাকেই বলা হয় ইসনাদ,  যা শুধু মুসলিম ইতিহাসে নয়, গোটা মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ও অবিশ্বাস্য উপাখ্যান।

হাদিস গ্রহণের জন্য মুহাদ্দিসিন ‘ইসনাদ’কে অন্যতম শর্ত নির্ধারণ  করেছেন। কোনো হাদিসের পরিচ্ছন্ন সনদ না থাকলে তারা সেটাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন (তবে হ্যা, শরিয়ার অথেনটিক ইনফরমেশন জানার জন্য ইসনাদই একমাত্র মাধ্যম না— সেটা ভিন্ন আলোচনা)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কথা আসলেও বলেছেন কিনা—এটা জানার শক্তিশালী মাধ্যম হলো ইসনাদ। আল্লাহ তায়ালা এই উম্মাহকে বিশেষায়িত করেছেন ইসনাদের মত মহা গৌরবের ব্যাপার দিয়ে,  যা রাসুলের চৌদ্দশ বছর পরে আগন্তুক কোনো সাধারণ মুসলিমকেও চৌদ্দ শতক পূর্বের সে মহান কাফেলার সাথে অবিচ্ছেদ্য করে রাখে।

 

ইসনাদ কেন জররী

এখানে বিখ্যাত মুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মুযাফফারের বক্তব্য উদ্বৃত করা যেতে পারে। খতিব আবু বকর বাগদাদী রহ. শারাফু আসহাবিল হাদিস কিতাবে নিজ সনদে বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ ইবনু হাতিম বলেন :’ আল্লাহ তায়ালা এই উম্মাহকে সম্মানিত করেছেন ও ইসনাদের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করেছেন।  প্রাচীন কিংবা নতুন কোন জাতি এমন নেই, যাদের কাছে ইসনাদের মত মহা গৌরবের অধিকার রয়েছে।  তাদের কাছে যা আছে, তা কেবল পাতা-পুস্তকের কিছু সংগ্রহ। তারা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থাদির সাথে নিত্যকার কথামালা জুড়ে দিয়েছে। সেগুলোকে কেচ্ছা-কাহিনীর সাথে মিশ্রিত করেছে।  নবীদের আনীত তাওরাত  যবুর  এর আসমানী বিধিমালা এবং লোক মুখে ছড়িয়ে থাকা কথাবার্তা—যা তারা আসমানী কিতাবের সাথে গুলিয়ে ফেলেছে—আদতে এ দুয়ের মাঝে এখন পার্থক্য করার মত কোন প্রামানাদী তাদের হাতে মজুদ নেই। আর এই উম্মাহ রাসুলের হাদিস গ্রহণ করেছে কেবল এমনসব ব্যক্তিবর্গ থেকে, যারা নির্ভরযোগ্য,  সত্যবাদী,  ধী-শক্তি সম্পন্ন ও নিজের কালে সুপ্রসিদ্ধ।  অতঃপর প্রচণ্ড মাত্রায় তত্ত্ব তালাশ করেছেন,  সূত্রে থাকা ব্যাক্তিদের স্মৃতিশক্তির বিচারিক বিশ্লেষণ করেছেন, উস্তাদের সংস্রবে কোন মুহাদ্দিস বেশী সময় যাপন করেছেন আর কার সংস্রব কম—এগুলোকেও খুটিয়ে বের করেছেন। এরপর একেকটা হাদিস বিশটিরও অধিক সূত্রে লিপিবদ্ধ করেছেন,  যাতে ভুলভ্রান্তি ও  স্খলন থেকে হাদিসটি পরিশুদ্ধ থাকে।  এরপর প্রত্যেক বর্ণনাকারীর নাম ও হাদিসের প্রতিটি কঠিন শব্দকে যের যবর দিয়ে শুদ্ধ রূপটি দেখিয়ে গেছেন।  এই কঠিন ও সুদীর্ঘ পরিক্রমা কেবল মাত্র আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহেই সম্ভব হয়েছে।’

(শারাফু আসহাবিল হাদিস-  ৪০)

 

সূচনাকাল ও ইতিহাস

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে বলেছেন : সবচেয়ে উত্তম যুগ হলো আমার যুগ, এরপর উত্তম হলো পরের যুগ এবং এরপর উত্তম হলো এর পরের যুগ; অতঃপর মিথ্যা ছড়িয়ে যাবে। বাস্তবেও তাই হয়েছে। ফলে, নবিজীর জীবদ্দশা ও ইন্তেকাল পরবর্তী সময়টি ছিল নিরেট সাহাবায়ে কেরামের নির্ভেজাল সত্যের সময়। সহাবায়ে কেরাম বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে পরস্পরের বিশ্বস্ততা ও আমানতদারির ব্যাপারে অবগত ছিলেন। সেই সাথে আল্লাহ তাআলা বা নবিজীর নামে বানোয়াট কোন কথা যুক্ত করলে তার পরিণতি কী, সে ব্যাপারেও তারা সচেতন ছিলেন। একটি হাদীস তাদের মাঝে ব্যাপকভাবে চর্চা হতো—নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে আমার নামে মিথ্যা বলবে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়। এ হাদীসের কারণে কোন কোন সাহাবি হাদীস বর্ণনা করার সময় বেহুঁশ হয়ে যেতেন, কেঁদে ফেলতেন; অসতর্কতাবশত সামান্য কিছুও ভুলভাবে নবিজীর নামে যুক্ত হয়ে যায় কি না—এই ভয়ে।

ফলে, এ সময়ে কোন সাহাবি যখন বলতেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়অসাল্লামকে এ কথা বলতে শুনেছি, তখন অন্য সাহাবি তা নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করতেন ও অন্যের কাছে কথাটি বলার সময় কখনো সেই সাহাবির নাম উল্লেখ করে সূত্রটি দেখাতেন, কখনো এর প্রয়োজন মনে করতেন না—কথাটিকে সরাসরি নবিজীর দিকে সম্পৃক্ত করে বলে দিতেন। কিন্তু সময় যত সামনে এগোতে লাগলো, পরবর্তি প্রজন্ম গড়ে উঠলো ও মুসলামনদের মধ্যে অনেক ভেজাল মুসলিম প্রবিষ্ট হলো। সাথে ছিল ইহুদিদের ক্রমাগত চক্রান্ত ও কুটচাল। সেই সাথে হাদীস বর্ণনা করার ক্ষেত্রে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগলো বর্ণনাকারীগণের সতর্কতাও। তখন ইসনাদ বা সূত্র উল্লেখ করার উপর ধীরে ধীরে জোর তৈরী হলো।

বিশেষ করে হযরত উসমান রা. এর শাহাদাতের পর ফেতনা যখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে তখন পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী ইসনাদের উপর বিশেষ রকমের আলাদা জোর তৈরী হয়ে, যেন কোন চক্রান্তকারী ইচ্ছা করে এবং কোন ভালো মানুষ অসতর্কতার কারণে একটি কথাও নবিজীর নামে মিথ্যাভাবে ছড়িয়ে দিতে না পারে। সে সময়ে একদল ইহুদী এবং কিছু নামে মাত্র মুসলিম ইসলামের শেকড় উৎপাটনের চক্রান্ত শুরু করে। এর জন্য তারা আদাজল খেয়ে কোমড় বেধে ময়দানে নামে। প্রকাশ্যে ও গোপনে অহর্নিশ ষড়যন্ত্রের কৌশল আটতে থাকে। এরই অংশ হিসেবে রাসুলের নামে জালিয়াতির নতুন ফন্দি পাতে এবং যা রাসুল বলেন নি, এমন সব কথাকে রাসুলের নামে চালিয়ে দেওয়া শুরু করে। ঠিক এই মুহূর্তে সাহাবী এবং তাবিউনের জামাত হাদিস ইনভেস্টিগেটের ক্ষেত্রে আরো বেশি কঠোর নীতি অবলম্বন করেন। বিখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মদ ইবনু সিরিন বলেন : তারা (প্রথম যুগের সাহাবগণ) সূত্র নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন না; কিন্তু যখন থেকে ফেতনার সময় শুরু হলো, তখন তারা বলতেন—সাম্মু লানা রিজালাকুম। অর্থাৎ, কেউ হাদিস শোনালে তাকে বলা হতো—‘তোমার হাদিসের সূত্রে কে কে আছেন, তাদের নাম উল্লেখ করো’। (মুকাদ্দিমাতু সহিহী মুসলিম)

 

বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. এর শাগরেদ বুশাইর আল আদাওঈ একবার হাদিস বর্ণনা শুরু করেন,  কিন্তু সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না। ব্যাপারটা লক্ষ করে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে বলেন : কী হলো আপনার! আমি রাসুলের হাদিস শোনাচ্ছি,  আর আপনি শুনছেন না। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস জবাবে বললেন : একটা সময় ছিলো, তখন আমরা কাউকে ‘কালা রাসুলুল্লাহ’ (রাসুলুল্লাহ এটা বলেছেন) বলতে শুনলে  আমাদের চোখ তাৎক্ষণিক সেদিকে চলে যেতো, এবং কান লাগিয়ে শুনতাম; কিন্তু যখন মানুষ সত্য-মিথ্যার মিশ্রণের আশ্রয় নিতে শুরু করলো, তখন থেকে জনসাধারণের  অপরিচিত কোন বর্ণনা গ্রহণ করতাম না।
(মুকাদ্দিমাতু মুসলিম)

মিথ্যাচারীদের মিথ্যা ও বানোয়াট কথা যেন হাদিসের সাথে বিন্দু মাত্রও মিশ্রণ না ঘটে, এ জন্য মুহাদ্দিসিন বাস্তব প্রতিরোধমূলক বহু ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র ছিলো ইসনাদ। ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহ. বলেন : যখন মিথ্যুকরা মিথ্যার ব্যাবহার অতি মাত্রায় শুরু করলো, তখন আমরা তাদের বিরুদ্ধে ‘তারিখ’ ব্যবহার শুরু করলাম। (তারিখ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বর্ণনাকারীদের বিস্তর বিবরণ, বর্ণনাকাল ইত্যাদি)।

 

মুসলিম মনীষীগণ যে ইসনাদের প্রতি প্রবল মাত্রায় ইন্টারেস্টেড ছিলেন, এর সব চেয়ে বড় উদাহরণ হলো, তারা আমাদেরকে সুবিশাল, বিস্তৃত,  অবিশ্বাস্য অধ্যায়, ইসলামী তুরাস (legacy)-এর উত্তারাধিকারী বানিয়েছেন। এবং ইসনাদ বিশ্লেষণের জন্য রিজালের কিতাবে মহাসমুদ্র তুল্য ইলমী ভাণ্ডার রেখে গেছেন। একেকটি সূত্র বিশ্লেষণের  জন্য তারা মাসের পর মাস বছরের পর বছরও খুজে ফিরেছেন দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। ইতিহাসের পাতায় তাদের কর্মযজ্ঞের সব কিছুই লেখা আছে।  শুধু মাত্র কেউ যদি খতিব আবু বকর বাগদাদী রহ.এর কিতাব  আর রিহলাহ ফি তলাবিল হাদিস একটু পাতা উল্টে দেখে,  তাহলে বুঝতে সক্ষম হবে যে, হাদিস সংরক্ষণের জন্য সালাফ কী মহান সাধনায় ব্রত ছিলেন, যা আজকের দিনে আমাদের কাছে শুধুই অলিক কেচ্ছা-কাহিনী মনে হবে।

 

প্রাচ্যবিদ (orientalist)-দের মূল্যায়ন

সনদ এবং মতন—উভয় দিক থেকে হাদিসের শুদ্ধতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণ যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন, এবং এ জন্য যে সকল শাস্ত্রের উদ্ভব হয়েছে—যেমন, উসুলুল হাদিস, ইলমুল জারহি ওয়াত তা’দিল ইত্যাদি—তা দেখে পশ্চিমা বহু গবেষকের চোখ ছানাবড়া হওয়ার উপক্রম। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করলে অবশ্যই এইসব ঘটনাকে প্রায় অসম্ভব বলতে হবে, যা কেবল মাত্র মুসলিমদের অধিকারেই রয়েছে। অক্সফোর্ড ও কর্ণেল ইউনিভার্সিটির ত্রিত্ববাদ অনুষদের প্রফেসর বাসওয়ার্থ স্মিথ, বার্নার্ড স্মিথ, ড. স্প্রেঞ্জার সহ আরো অনেকেই এই সত্যকে লুকিয়ে রাখতে পারেন নি। অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় তারা তাদের বিস্ময়বোধের কথা বলে গেছেন।

এখানে শুধুমাত্র দু একজনের কথা উদ্বৃত করছি।

ইংলিশ ওরিয়েন্টালিস্ট ডেভিড স্যামুয়েল মার্জোলিওথ।  ইসলাম সম্পর্কে এই ভদ্র লোকের প্রকাশ্য জিঘাংসু মনোভাবের কথা সুপ্রসিদ্ধ। যার পুরোটা জীবন কেটেছে ইসলাম ও মুসলিমদের ছিদ্রাণ্নেষণে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো—তিনিও এই সত্যটা চেপে রাখিতে পারেন নি। তিনি বলেন : মুসলিমদের কাছে ইসনাদ নামের সুসংহত যে ঐতিহ্য আছে, এটা নিয়ে অবশ্যই তারা গর্ব করার অধিকার রাখে’। (আল মাকালাত আল-ইলমিয়্যাহ : ২৩৪-২৫৩)

 

১৮৫০ সনে হাফেয ইবনে হাজার র. লিখিত আল ইসাবা গ্রন্থটি নিজ সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশ কালে আরো বলিষ্ঠ ভাষায় অস্ট্রিয়ান প্রাচ্যবিদ স্প্রেনজার( Aloys Sprenger) কিতাবটির ভূমিকায় লেখেন—’হাদিস সংকলনের ইতিহাস শুধু মুসলিমদের নয়; বরং গোটা মানোবেতিহাসের এক বিশাল অর্জন। কারণ, বিশ্ব সভ্যতার সামনে মুসলিমরাই কেবল এমন এক জাতি, এক ব্যাক্তি ( মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কথা সংকলন করতে যাদের অর্ধ মিলিয়ন (পাচ লাখ) মানুষ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন। আজ আমরা চাইলেই এসকল মনীষীর জীবনের আদ্যোপান্ত ইতিহাস বইয়ের পাতায় পাতায় জ্বলজ্বল করতে দেখি…’ (সারসংক্ষেপ)*

নববী ইলম থেকে উৎসারিত ইসনাদের এই সুমহান ধারা আজও পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহকে তার অতীতের স্বর্ণ-অধ্যায়ের কথা স্মরণ  করিয়ে দেয়। শত কিংবা হাজার বছর হোক, উম্মাহর গ্রন্থি ও বন্ধন যে এক ও অবিচ্ছিন্ন—এর পবিত্র সবক শেখায়। আল্লাহ তায়ালা মুহাদ্দিসিনকে আপন রহমতে সিক্ত করুন, যারা নিজেদের জীবন দিয়ে এই উম্মাহর গৌরবগাঁথা লিপিবদ্ধ করেছেন।

——————————————————————
* বক্তব্যটি নেওয়া হয়েছে আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহকৃত আল ইসনাদ মিনাদ্দিন গ্রন্থের ভূমিকা থেকে, তিনি এটি এনেছেন স্প্রেঞ্জার সম্পাদিত আল ইসাবা এর সম্পাদকের ভূমিকা থেকে।

 

হুজাইফা আওয়াদ। জন্ম ১৯৯৬ সালে,চুয়াডাঙ্গায়। জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া ঢাকা এবং দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে কৃতিত্বের সাথে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। দারুল ফিকরি ওয়াল ইরশাদ থেকে উলুমুল হাদিস শাস্ত্রে উচ্চতর পড়াশোনা করেন। বর্তমানে মালিবাগ জামিয়ায় ইফতা বিভাগে অধ্যায়ন করছেন।

 

 

Facebook Comments

Previous Post

ইসলামি নারীবাদ এর প্রলয়ঙ্কারী প্রভাব (২য় পর্ব) । ড্যানিয়েল হাকিকাতজু

Next Post

হাদিস শাস্ত্রের প্রাচ্যবাদী বয়ান এবং মুসলিম সমাজে এর প্রভাব। হুজাইফা মাহমুদ

সাবের চৌধুরী

সাবের চৌধুরী

Related Posts

উত্তম আখলাক: অনন্য ছয়টি মর্যাদা | আনাস চৌধুরী
হাদীস

উত্তম আখলাক: অনন্য ছয়টি মর্যাদা | আনাস চৌধুরী

March 14, 2022
নারী, ফিতনা ও হাদীসের মর্মবিশ্লেষণ || ডক্টর নি’মাত বিনতে মোহাম্মাদ আল জা’ফরি অনুবাদ : হুজাইফা মাহমুদ
নারী, শিশু, পরিবার

নারী, ফিতনা ও হাদীসের মর্মবিশ্লেষণ || ডক্টর নি’মাত বিনতে মোহাম্মাদ আল জা’ফরি অনুবাদ : হুজাইফা মাহমুদ

December 11, 2021
Next Post
হাদিস শাস্ত্রের প্রাচ্যবাদী বয়ান এবং মুসলিম সমাজে এর প্রভাব। হুজাইফা মাহমুদ

হাদিস শাস্ত্রের প্রাচ্যবাদী বয়ান এবং মুসলিম সমাজে এর প্রভাব। হুজাইফা মাহমুদ

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

Recent.

তাসাউফ সম্পর্কে অপপ্রচার ও ভ্রান্তি : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা ।। মাওলানা আনাস চৌধুরী

December 16, 2022
এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

November 28, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি | শেষ পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | তরজমা: হুজাইফা মাহমুদ

November 16, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি—প্রথম পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | ভাষান্তর: হুজাইফা মাহমুদ

November 12, 2022
বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

October 29, 2022

  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

No Result
View All Result
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ

© 2020 রিওয়ায়াহ - Developed by Tijarah IT Limited.