অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “৯ই রবিউল আউয়াল” সুবহে সাদিকের সময় পৃথিবীতে তাশরিফ আনেন। যা সৌরবর্ষ হিসেবে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ এপ্রিল ছিলো।
জন্ম তারিখ নিয়ে নিরীক্ষন:
যে বছরে আগমন করেন:
সমস্ত ঐতিহাসিক ও সীরাত বিশারদগণ এ ব্যাপারে একমত যে, নবি আলাইহিস সালামের জন্ম ‘হস্তি বাহিনীর’ ঘটনার বছর হয়েছিলো।(১) তবে উক্ত ঘটনার কতদিন পর জন্মগ্রহণ করেছেন তা নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী ৫০ দিন পর জন্মগ্রহণ করেন।(২)
যে মাসে আগমন করেন:
এ ব্যাপারে আল্লামা কাসতালানী রহ. (মৃত্যু:৯২৩হি.) ছয়টি অভিমত পেশ করেছেন:
১.মুহাররম
২. সফর
৩. রবিউল আউয়াল
৪. রবিউস সানী
৫. রজব ও
৬. রমযান মাস
কিন্তু জগদ্বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লাম ইবনে কাসীর রহ. এর মতে সমস্ত জমহুর এ ব্যাপারে একমত যে, নবি আলাইহিস সালামের জন্ম রবিউল আউয়াল মাসেই হয়।(৩)
প্রসিদ্ধ মুহাক্কিক আলেমেদ্বীন আল্লামা যাহেদ কাউসারী রহ. (মৃত্যু:১৩৭১হি.) জন্মমাস নিয়ে একটি চমৎকার নিরীক্ষন করেছেন। তিনি বলেন: “নিরীক্ষক আলেমগণের কাছে রবিউল আউয়াল মাস ব্যতিত অন্যান্য মাসের অভিমতগুলো কলমের অগ্রগণ্যতা অর্থাৎ ভুলই বলা চলে।(৪)
যে দিনে আগমন করেন:
এ ক্ষেত্রে সমস্ত ঐতিহাসিক ও সীরাতবীদগণ একমত যে নবি আলাইহিস সালামের জন্ম সোমবার দিনই হয়েছিলো। এ ব্যাপারে সহিহ মুসলিম গ্রন্থে স্পষ্ট হাদিসই রয়েছে:
سئل رسول الله ﷺ عن ىوم الإثنىن ؟ قال: ذاك يوم ولدت فيه, و يوم بعثت.
“ নবি আলাইহিস সালামকে সোমবার দিন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: ঐ দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং ঐ দিন আমাকে পাঠানো হয়েছে।(৫)
যে তারিখে আগমন করেন:
এ ব্যাপারে কতক উলামায়ে কেরামের অভিমত হলো: রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন, তবে কোন তারিখ তা নির্ধারিত নয়।
তবে জমহুর উলামায়ে কেরামদের মতে তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।
আল্লামা কাসতালানী রহ. এ ব্যাপারে সাতটি মত পেশ করেছেন: রবিউল আউয়াল মাসের
১. দশ তারিখ,
২. বারো তারিখ,
৩. সতেরো তারিখ,
৪. আঠারো তারিখ,
৫. বাইশ তারিখ
৬. দুই তারিখ,
৭. আট তারিখ। (৬)
আল্লামা যাহেদ কাউসারী রহ. এর এ ব্যাপারে অভিমত হলো:
১. নয় তারিখ
২. দশ তারিখ,
৩. বারো তারিখ
এবং এই তিন মত ব্যতিত অন্য কোনো মত তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আল্লামা কাউসারী রহ. এর পেশকৃত ৩টি মতের মধ্যে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতটিই পেশ করছি।
দশ তারিখের অভিমত:
এই রেওয়ায়েতটি ইবনে সা’দ রহ. (মৃত্যু:১৬৮হি.) মুহাম্মাদ বাকের রহ. (মৃত্যু:১১৪হি.) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এর সনদে তিনজন ‘অভিযুক্ত’ রাবী রয়েছেন, তাই এই মতটি গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে আল্লামা কাউসারী রহ. ও ইশারা করেছেন। (৭)
বারো তারিখের অভিমত:
এই মতটি মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক রহ. (মৃত্যু:১৫১হি.) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এর কোনো সনদ বর্ণনা করেননি। যদিও এই মতটিই বেশি প্রসিদ্ধ। এবং খোদ পবিত্র মক্কাতেও নবি আলাইহিস সালামের জন্ম উপলক্ষে বিভিন্ন জলসা এই তারিখেই হয়ে থাকে। এমনকি সারা দুনিয়াতেও এই উপলক্ষে বিভিন্ন মাহফিল-মাজালিস এই তারিখেই অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সঠিক রেওয়ায়েত অনুযায়ী এই তারিখে নবি আলাইহিস সালামের জন্ম মোবারক সাব্যস্ত নয়। একটু লক্ষ করে দেখুন ইমাম হাকিম রহ. (মৃত্যু:৪০৫হি.) এর কিতাব মুসতাদরাকের রেওয়ায়েত:
أخبرنا أبو الحسن محمد بن أحمد بن شبویہ بمرو، ثنا جعفر بن محمد النیسابوري، ثنا علي بن مھران، ثنا سلمة بن الفضل عن محمد بن إسحاق قال: ولد رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم لاثنتي عشرة لیلة مضت من شھر ربیع الأول․ (المستدرک علی الصحیحین للحاکم، رقم: ۴۱۸۳)
কিন্তু এই রেওয়ায়েতটিও মুত্তাসিল সনদ না থাকার দ্বরূন গ্রহণযোগ্য নয়। এবং এই মতটি সনদবিহীন মতের মতই অগ্রহণযোগ্য।(৮)
৯ তারিখের অভিমত:
যুক্তি ও দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে এটাই প্রমাণিত যে, নবি আলাইহিস সালামের জন্ম আট তারিখ শেষ হওয়ার পর নয় তারিখ সুবহে সাদিকের সময়ে হয়েছিলো। এ ব্যাাপারে কয়েকটি রেওয়ায়েত পেশ করছি:
১.আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহ. (মৃত্যু:৪৬৩হি.) জন্মতারিখ নিয়ে মতবিরোধ পেশ করতে গিয়ে ৯ তারিখের মতকেই সর্বাগ্রে এনেছেন।(৯)
২. প্রখ্যাত ঐতিহাসিক হাফেজ ইবনে কাসীর রহ.ও স্বীয় কিতাব ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’তে ৯ তারিখের মতটি এভাবে উল্লেখ করেছেন যে:
“ এই মতটি হুমাইদি রহ. ইবনে হযম থেকে, এমনিভাবে মালিক, আকীল, ইউনূস বিন ইয়াযিদ রহ. এবং আরো অনেকেই মুহাম্মাদ বিন যুবাইর বিন মুতঈম রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। এদিকে ইবনে আব্দুল বার রহ. ৯ তারিখের মতের ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের সত্যায়নের কথাও পেশ করেছেন। হাফিজুল কাবির মুহাম্মাদ বিন মূসা আল খাওয়ারেযমি রহ.ও এই মতটিকে অকাট্যভাবে সমর্থন করেছেন। এবং আবু খাত্তাব বিন দিহয়া রহ. স্বীয় কিতাব ”التنویر في مولد البشیر النذیر এ এই মতটিকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন।”(১০)
৩. মাওলানা হিফজুর রহমান রহ. (মৃত্যু:১৩৮২হি.) স্বীয় কিতাব “কাসাসুল কুরআন” এ উল্লেখ করেছেন:
“সাধারণদের মধ্যে প্রসিদ্ধ হলো ১২ রবিউল আউয়াল। কিন্তু এর স্বপক্ষে কিছু দূর্বল রেওয়ায়েত রয়েছে। আবার কেউ কেউ ৮ তারিখের কথাও বলেন। কিন্তু সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও সনদযুক্ত অভিমত হলো: নবি আলাইহিস সালাম ৯ তারিখ জন্মগ্রহণ করেছেন। এবং হাদিস ও ইতিহাসের প্রসিদ্ধ উলামায়ে কেরামগণ এই মতটিকেই গ্রহণযোগ্য ও বিশুদ্ধ বলে থাকেন। আর হুমাইদি, আক্বিল, ইউনুস বিন ইয়াযিদ, ইবনে আব্দুল্লাহ, ইবনে হাযাম, মুহাম্মাদ বিন মূসা খাওয়ারেযমি, আবু খাত্তাব বিন দিহয়া, ইবনে তাইমিয়া, ইবনে কাইয়ুম, ইবনে কাসীর, ইবনে হাজার আসকালানী ও বদরুদ্দীন আইনী রহ. প্রমুখদের মত বড় বড় আলেমগণ এই মতটিকেই গ্রহণ করেছেন।”(১১)
৪. আল্লামা সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী রহ.ও ৯ তারিখ জন্মগ্রহণ করার মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। (১২)
যুক্তির আলোকে কিছু প্রমাণ:
১.মুহাম্মাদ বিন খাওয়ারেযমি রহ. (মৃত্যু:২৩৫হি.) এর মত জ্যোতির্বিদ্যার বিখ্যাত ইমামও ৯ তারিখের মত পেশ করেছেন। যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।(১৩)
২. জোতিষবিদ্যার বিখ্যাত ইমাম আল্লামা মাহমুদ পাশা ফালাকি মিসরী রহ. (মৃত্যু:১৩০২হি.) ফারসি ভাষায় تقویم العرب قبل الإسلام এর বিষয়বস্তুর উপর একটি অতুলনীয় কিতাব রচনা করেছেন। এবং আল্লামা আহমাদ যাকি পাশা রহ. (মৃত্যু:১৩৫৩হি.) এর আরবি অনুবাদ করেছেন। যার নাম :
نتائج الأفھام في تقویم العرب قبل الإسلام وفي تحقیق مولد النبي وعمرہ علیہ الصلاة والسلام
এই কিতাবের মধ্যেও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের প্রসিদ্ধ জোতিষবিদদের সুনিপুণ নিরীক্ষন অনুযায়ী ৯ তারিখ সাব্যস্ত হয়।
তাঁদের বয়ানকৃত কারণসমূহের মধ্যে একটি কারণ কিছুটা এরকম: ‘‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় দশম হিজরীর শাওয়াল মাসের শেষ তারিখে সূর্যগ্রহণ হয়েছিলো। আর ঐ দিন নবি আলাইহিস সালামের পুত্র হযরত ইবরাহিম রা.ও ইন্তেকাল করেন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ.ও স্বীয় কিতাব ফাতহুল বারীতে এ কথাটি উল্লেখ করেছেন।” (১৪)
এই হিসাব অনুযায়ী যদি পিছনের দিন গণনা করা হয় তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখেই নবি আলাইহিস সালামের জন্ম মোবারক হওয়া সাব্যস্ত হয়। কারণ সোমবার দিন তাঁর জন্ম হওয়ার ব্যাপারে সবাই একমত। আর হস্তিবাহিনীর ঘটনার বছর রবিউল আউয়াল এর ৯ তারিখেই সোমবার দিন ছিলো।
এক্ষেত্রে আল্লামা মাহমুদ পাশা রহ. এর এবারত এরকম:
وقد اتفقوا جمیعا علی أن الولادة کانت في یوم الإثنین، وحیث إنہ لا یوجد بین الثامن والثاني عشر من ھذا الشھر یوم إثنین سوی الیوم التاسع منہ، فلا یمکن أن نعتبر یوم الولادة خلاف ھذا الیوم․
“সবাই এ ব্যাপারে একমত যে, নবি আলাইহিস সালামের জন্ম সোমবার দিন হয়েছিলো। আর তাঁর জন্মের বছরে ৯ তারিখে সোমবার ছিলো, ৮ বা ১২ তারিখে নয়। তাই ৯ তারিখ ব্যতিত অন্য কোনো দিনকে জন্মতারিখ ভাবা অগ্রহনযোগ্য।”
এ ব্যাপারে আল্লামা হিফজুর রহমান রহ. এর অভিমত হলো:
“মাহমুদ পাশা ফালাকি-যিনি কুসতুনতুনিয়ার প্রসিদ্ধ জ্যোতির্বিদ ছিলেন- জ্যোতির্বিদ্যা অনুযায়ী যে ফলাফল পেশ করেছেন তা হলো: নবি আলাইহিস সালামের যুগ থেকে আমাদের যুগ পর্যন্ত যদি চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের সঠিক হিসাব গণনা করা হয় তাহলে পূর্ণ তাহকীকের সাথে এটাই সাব্যস্ত হবে যে, নবি আলাইহিস সালামের জন্ম মোবারক কোনো গণনামতেই সোমবার দিন ১২ তারিখ নয়, বরং ৯ই রবিউল আউয়াল সোমবার দিন ছিলো। তাই সবচেয়ে বিশুদ্ধ সনদ ও জ্যোতির্বিদ্যা অনুযায়ী নবি আলাইহিস সালামের জন্ম তারিখ ৯ই রবিউল আউয়াল।” (১৫)
৩. উল্লেখিত কিতাব نتائج الأفھام في تقویم العرب قبل الإسلام وفي تحقیق مولد النبي وعمرہ علیہ الصلاة والسلام এর একটি সংষ্করনের উপর বর্তমান যুগের প্রখ্যাত ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক শায়খ আলী তানতাভী রহ. (মৃত্যু:১৪২০হি.) একটি মুকাদ্দামা লিখেছেন। যাতে তিনি ৯ই রবিউল আউয়াল কে নবি আলাইহিস সালামের পবিত্র জন্ম মোবারকের দিন সাব্যস্ত করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। (১৬)
৪. মুহাদ্দিসে আযম, মুহাক্কিকে বে-নযির শাইখ আহমাদ শাকের (মৃত্যু:১৩৭৭হি.) রহ.ও শাইখ মাহমুদ পাশার তাহকিক কে গ্রহণ করেছেন। (১৭)
৫. আরবের প্রসিদ্ধ জ্যোতির্বিদ আলেম আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম (মৃত্যু:১৪১৬হি.)
স্বীয় ”تقویم الأزمان“ কিতাবে লিখেছেন: “বিশুদ্ধ রেওয়ায়েত এর মাধ্যমে সন্দেহতীত ভাবে যা সাব্যস্ত হয় তা হলো: নবি আলাইহিস সালামের জন্ম ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২০ এপ্রিল হস্তি বাহিনীর ঘটনার বছর হয়েছিলো। এই হিসাবে গণনার মাধ্যমে এটাই জানা যায় যে, তাঁর জন্ম মোবারক ২০ এপ্রিল ৫৭১ হিজরী মোতাবেক সোমবার দিন ৯ই রবিউল আউয়াল হিজরীপূর্ব ৫৩ সালে হয়।” (১৮)
আরো লক্ষ্য করুন: ১. রিয়াদের দারুত তাইয়্যেবাহ থেকে প্রকাশিত, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল আওশান রহ. রচিত ”ماشاع ولم یثبت فی السیرة النبویة“ কিতাবে ”تحدید میلادہ الشریف“ শিরোনামে একটি বিস্তর আলোচনা রয়েছে। যাতে শাইখ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম রহ. উপরোল্লিখিত এবারত ছাড়াও আরো অনেক উলামায়ে কেরামদের উক্তির মাধ্যমে ৯ তারিখের মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
২. আল্লামা যাহেদ কাউসারী রহ. (মৃত্যু:১৩৭১হি.) এর একটি সংক্ষিপ্ত, তাহকিকপূর্ণ নিবন্ধ –
”المولد الشریف النبوي নামে প্রকাশ পায়। তিনিও মাহমুদ পাশা ফালাকির উক্ত কিতাব থেকে রেফারেন্স এনেছেন। এবং মাহমুদ পাশা ফালাকি রহ. এর ব্যাপারে অনেক উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন।১৯
বি.দ্র: কোনো কোনো উলামায়ে কেরাম আট তারিখের মতকে গ্রহণ করেছেন। তো আট ও নয় তারিখের উভয় রেওয়ায়েতের মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে মাওলানা হিফজুর রহমান রহ. বলেন: “আট ও নয় তারিখ নিয়ে কোনো বাস্তবিক মতবিরোধ নেই। মূলত এই মতবিরোধ আরবি মাস ২৯/৩০ দিন হওয়ার উপর নির্ভরশীল। সুতরাং যখন এই বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে যে, সঠিক তারিখ হলো ২১ এপ্রিল তাই আট তারিখের ব্যাপারে যত মত রয়েছে সবগুলোই ৯ তারিখের মতকে শক্তিশালী করার জন্য।” (২০)
যে সময়ে আগমন করেছেন:
সিরাত এর কিতাবের মধ্যে এ বিষয়টি স্পষ্ট ভাবেই উল্লেখ রয়েছে যে, নবি আলাইহিস সালামের জন্ম মোবারক সুবহে সাদিকের সময় হয়, আর মক্কা মুকাররমাতে ২০ এপ্রিল ৪:৩৯ মিনিটে সুবহে সাদিক হয়। তাই বলা যেতে পারে যে. নবি আলাইহিস সালাম হস্তি বাহিনীর ঘটনার বছর ২০ এপ্রিল ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৯ই রবিউল আউয়াল সোমবার দিন সুবহে সাদিকের সময় আনুমানিক ৪:৪০ মিনিটে ধরার বুকে আগমন করেন।
সারাংশ: উপরোল্লিখিত বিস্তর আলোচনার মোদ্দাকথা হলো, যুক্তি-প্রমাণের ভিত্তিতে এটাই সাব্যস্ত হয় যে, নবি আলাইহিস সালামের জন্ম মোবারক রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখেই হয়। (২১)
জন্মস্থান:
জমহুরের মতে মক্কাতেই তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন। কিন্তু কোন স্থানে হয়েছিলো তা নিয়ে ৩টি মত পাওয়া যায়। প্রসিদ্ধ মতটি হলো, তিনি “শিয়াবে বনি হাশেমে” জন্মগ্রহণ করেন। এটি একটি প্রসিদ্ধ স্থান। বিগত কয়েক বছর আগেও মানুষ ঐ স্থান যিয়ারাত করতে যেতে পারতো। কিন্তু কয়েক বছর পূর্বে সৌদি প্রশাসন তা বন্ধ করে দিয়ে সেখানে একটি পাঠাগার নির্মাণ করেছে। (২২)
সূত্র :
১. ۔(البدایة والنہایة ۲/۳۲۱، صفة الصفوة ۱/۵۱․ وینظر: الروض الأنف ۱/۲۷۶)
২. (البدایة والنھایة ۲/۳۲۱)
৩. (البدایة والنھایة ۲/۳۲۰)
৪. (مقالات الکوثري، ص۴۰۵)
৫. (صحیح مسلم، رقم:۱۱۶۲، باب استحباب ثلاثة أیام من کل شھر) (البدایة والنھایة ۲/۳۱۹)
৬. (المواہب اللَّدُنِّیَّة ۱/۱۴۰-۱۴۲)
৭. (الطبقات الکبری لابن سعد ۱/۱۰۰ ذکر مولد رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم)
৮. (المستدرک علی الصحیحین للحاکم، رقم: ۴۱۸۳)
৯. (الاستیعاب لابن عبد البر ۱/۳۰)
১০. (البدایة والنھایة ۲/۳۲۰)
১১. (قصص القران ۴/۲۵۳)
১২. (رحمةٌ للعالمین۱/۳۸-۳۹)
১৩. (نتائج الأفہام ص۲۸-۳۵)
১৪. (فتح الباري ۲/۵۲۹)
১৫. (قصص القران ۴/۲۵۳)
১৬. (مقدمات الطنطاوي ۸۳)
১৭. (حاشیة الشیخ أحمد شاکر علی”المحلّٰی بالآثار“ ۵/۱۱۴-۱۱۵ لابن حزم الظاھري م ۴۵۶ھ)
১৮. (تقویم الأزمان لإرشاد ذوی الألباب لمعرفة مبادئ السنین والشھور من طریق الحساب ص ۱۴۳، الطبعة الأولی)
১৯. (مقالات الکوثري ص۴۰۵ تا۴۰۸، ط: مطبعة الأنوار بالقاہرة)
২০. (قصص القران ۴/۲۵۴)
২১. (نتائج الأفھام في تقویم العرب قبل الإسلام ص ۳۵)
২২. (سبل الھدی والرشاد ۱/۳۳۸), (تاریخ الخمیس في أحوال أنفس النفیس ۱/۱۹۸)
আলী মিআ নদবী রহ: যেভাবে প্রসিদ্ধ হওয়ার দরুন শুধু বারো তারীখের কথা বলে শেষ করেছেন, তাতে পাঠক মনে সংশয় হয় ৷ (আস সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ, পৃ, ৯৯) যদিও টিকাতে মাহমূদ পাশার কথার দিকে ইঙ্গিত করেছেন, কিন্তু তাঁর মূল টেক্সটা ১২ তারীখের প্রবক্তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ স্বরুপ,
মুফতী শফী রহ: কৃত সীরাতের যে কিতাবটা মুতাওয়াসসিতার পাঠ্যতালিকাভূক্ত, তাতেও তিনি ১২ তারীখের কথা বলে প্রসিদ্ধতার অযুহাত টেনেছেন ৷ এ মূহুর্তে সেটি আমার সামনে নেই, তবে যতটুকু মনে পড়ে তিনি মাহমূদ পাশার কথা অগ্রহণযোগ্য হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন জোড়ালোভাবে ৷
এ সব বলার উদ্দেশ্য আমার বারো তারীখের বিশুদ্ধতার প্রমাণ প্রদান নয় ৷ বরং বারো তারীখের প্রবক্তাদের দলীল প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ ক্লু দেখানো ৷