Riwayahbd
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ
No Result
View All Result
Riwayahbd
No Result
View All Result

হুদাইবিয়ার সন্ধিঃআমাদের সুস্পষ্ট বিজয়। সুমাইয়া মারজান

by সাবের চৌধুরী
November 16, 2020
1 min read
0
হুদাইবিয়ার সন্ধিঃআমাদের সুস্পষ্ট বিজয়। সুমাইয়া মারজান
35
SHARES
269
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

 

হিজরতের পর  দেখতে দেখতে ছয়টি বছর কেটে গেলো। হিজরী এসে পড়েছে ৬ষ্ঠ সনে। এ ছয়বছরে মরুভূমির হাওয়া বদলের সাথে সাথে মুসলমানদের জীবনেও এসেছে পরিবর্তন। দিনে দিনে উত্থান ঘটেছে মুসলিমশক্তির। মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে মদীনা পুরো বিশ্বে পরিচিত হয়ে যায়। চারিদিকে শোনা যায় মুসলমানদের জয়জয়কার। মদীনার ভেতরের বিষাক্ত সাপগুলোর বিষদাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাই নেই আঘাতের আশঙ্কা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ও তার প্রিয় সাহাবীদের জীবনে এসেছে সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, স্থিতিশীলতা।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম একদিন স্বপ্নে দেখেন, তিনি সাহাবীদের নিয়ে কাবা শরীফে হজ পালন করছেন। কাবার চাবি হাতে পেয়ে তাওয়াফ ও উমরা করছেন। স্বপ্ন দেখার পর তার মন উতলা হয়ে উঠলো বাইতুল্লাহর জিয়ারতের জন্য। মক্কার অলিগলি, কাবাচত্বর, জমজম কূপ যেন তার চোখে ভাসতে লাগলো জীবন্ত জলছাপ হয়ে। সাহাবীদের ডেকে বললেন স্বপ্নের কথা। আবেগভরা কণ্ঠে বললেন—আমি এবছর বাইতুল্লাহ জিয়ারতের ইচ্ছা করেছি। তোমরা চাইলে আমার সঙ্গী হতে পারো। একথা শোনার পর সাহাবীদের মুখে ফুটে উঠলো নির্মল হাসি। চোখের তারায় আনন্দরা ঝিলমিল করে উঠলো। কারণ কদিন ধরে তাদের মনেও উঁকি দিচ্ছিলো বাইতুল্লাহর জিয়ারতের ইচ্ছা। মন শুধুই জানতে চাইছিলো কেমন আছে মরুভূমির মক্কা? পিতৃভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন, বাইতুল্লাহর জিয়ারত করা হয়নি গত কয়েকবছর। মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা এই কষ্টটা যেন তাদের জীবনকে করে তুলেছিলো অস্থির। তাই নবীজীর কথা শুনে খুশিতে ভরে গেলো সাহাবীদের মন। তৈরি হতে লাগলেন তারাও।

 

৬ষ্ঠ হিজরীর জিলক্বদ মাসে নবীজী প্রায় পনেরোশো মুহাজির ও আনসার সাহাবী নিয়ে মক্কার পথে বেরিয়ে পড়লেন। জিলক্বদ মাস। পবিত্র মাস। আরবে তখন যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ। এই সুযোগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বাইতুল্লাহর জিয়ারত করতে চাইলেন। প্রায় পনেরোশো যাত্রীর কাফেলা। সত্তুরটি কুরবানীর উট আছে সাথে। কাফেলার সবার মুখে লাব্বায়িক লাব্বায়িক পবিত্র ধ্বনি। নবীজীর পিছু পিছু এগিয়ে চলছেন তারা। তাদের মনে নেই কোন যুদ্ধের গোপন ইচ্ছা,দুরভিসন্ধি। তাই আত্মরক্ষার জন্য কোষবদ্ধ তরবারি ছাড়া আর কোন অস্ত্রও নাই।

যুলহুলায়ফা পৌঁছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কুরবানির জন্তুর গলায় ঘন্টা পরিয়ে দিলেন। উমরার জন্য ইহরাম বেঁধে নিলেন। এবং বনু খুযাআর একজন গোয়েন্দা আগে আগে পাঠিয়ে দিলেন কুরাইশদের সংবাদ জেনে আসার জন্য। কুরাইশদের কাছেও ততক্ষণে নবীজীর আগমনের খবর পৌঁছে গেছে। তারা জিঘাংসায় মেতে উঠলো। মুসলমানদের আক্রমণ করতে বদ্ধপরিকর হলো তারা। খালিদ ইবনে ওয়ালীদ ও ইকরামা ইবনে আবু জেহেলের নেতৃত্বে পাঠালো একদল অশ্বারোহী সৈন্য। কুরাউল গামীম উপত্যকায় গিয়ে পৌঁছলো সে সৈন্যবাহিনী। নবীজী মক্কার কাছাকাছি উসফানে পৌঁছলে গুপ্তচর ফিরে এসে জানালো কুরাইশদের এই প্রতিবন্ধকতার কথা। বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তারা প্রতিজ্ঞা করেছে আপনাকে কিছুতেই মক্কায় প্রবেশ করতে দিবে না।
হায়! ধিক কুরাইশদের! আমি তো যুদ্ধ করতে আসিনি। আমাকে তাদের সাথে আলোচনার সুযোগ দিতে অসুবিধাটা কোথায়? আফসোস করেন নবীজী। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করতে বসেন। সামনে দুইটি পথ। যুদ্ধ করা অথবা যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু পরামর্শ দিলেন সংঘাত এড়িয়ে যাওয়ার। নবীজীও তাই ভাবলেন। বললেন, এমন কেউ কী আছো, যে আমাদের কুরাইশদের আটকে রাখা পথ ছাড়া অন্য পথে মক্কায় নিয়ে যেতে পারবে? আমি পারবো। বলে উঠলো একজন। তার দেখানো দুর্গম পাহাড়ি পথধরে মুসলমানরা এগিয়ে চললেন মক্কার দিকে। সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে মক্কার নিম্নভূমি হুদায়বিয়ায় এসে উপনীত হয় কাফেলা। এখানে এসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের উষ্ট্রী কসওয়া বসে পড়ে। সাহাবীরা কসওয়াকে বলতে লাগলেন উঠো,উঠো। কিন্তু সে বসেই রইলো। সাহাবীরা বলেন, কসওয়া বসে গেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন — এভাবে বসে পড়া কসওয়ার স্বভাব নয়। বরং আল্লাহ তাআলাই তাকে বসিয়ে দিয়েছেন। তারপর বললেন — সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ। আল্লাহ তাআলার দ্বীনের সম্মান অক্ষুন্ন রেখে কুরাইশরা আমার নিকট যে আবদারই করবে আমি তা রক্ষা করবো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এই বলে কসওয়াকে হাঁকালে কসওয়া চলতে শুরু করে। তারপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম হুদাইবিয়ার শেষ প্রান্তে একটি কূপের পাড়ে অবস্থান নেন।

 

গ্রীষ্মের মৌসুম। প্রচন্ড গরমের দিন। পানির চাহিদা ছিল বেশি। সে তুলনায় কূপের পানি অনেক কম। লোকজন অল্প অল্প করে পানি নেওয়ার পরও কূপের পানি ফুরিয়ে গেলো। সাহাবীরা বিষয়টি নবীজীকে জানালে তিনি তার তূনীর থেকে একটি তীর বের করে কূপের ভেতর ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তীর ফেলার সাথে সাথে কূপের তলদেশ থেকে উঠে আসে স্বচ্ছ জলের প্রবাহিত ধারা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তার আগমনের উদ্দেশ্য কুরাইশদের জানানোর জন্য খারাশ বিন উমাইয়া খুযায়ী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে কুরাইশদের কাছে পাঠান। কুরাইশরা কথা তো শুনলোই না বরং তার উট জবাই করে ফেলে এবং তাকে হত্যা করতে চায়। কিছু লোকের কারণে তিনি বেঁচে যান।
খারাশ রাদিআল্লাহু আনহু ফিরে এসে নবীজীকে সব জানান। নবীজী সব শুনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পাঠাতে চাইলে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন—হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো জানেন মক্কার লোকেরা আমার উপর কতটা ক্ষেপে আছে। তাছাড়া বনু আদী বিন কাবের এমন একজন লোকও নাই যে আমাকে বিপদে সাহায্য করতে পারবে। আমার মনে হয় আপনি উসমানকে পাঠালে ভালো হয়। সেখানে তার অনেক আত্মীয়স্বজন রয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে কুরাইশদের কাছে সংবাদ নিয়ে যাওয়ার আদেশ দিয়ে বললেন—তুমি ওদের কাছে গিয়ে বলবে, আমরা যুদ্ধ করতে আসিনি। উমরা পালন করতে এসেছি। তাদেরকে তুমি ইসলামের দাওয়াত দিবে। সাথে মক্কার মুসলমানদের জন্য দিয়ে দিলেন সুসংবাদ।
বললেন—তুমি মক্কার মুসলমানদের বলবে যে, আল্লাহ তাআলা শীঘ্রই পুরো মক্কায় ইসলামকে বিজয়ী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু কুরাইশদের কাছে নবীজীর বার্তা পৌঁছানোর সাথে সাথে তারা সকলে একবাক্যে জবাব দিলো, এবছর তো মুহাম্মদ মক্কায় আসতে পারবেই না। তুমি যদি চাও তো তাওয়াফ করে যেতে পারো। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের এই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে বললেন—আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে ছাড়া কিছুতেই তাওয়াফ করবো না। একথা শুনে তারা নিশ্চুপ হয়ে গেলো। এবং তাকে আটকে রাখলো।

 

দীর্ঘসময় উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু ফিরে না আসায় মুসলমানদের মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লো উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করা হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এ খবর শুনে খুবই মর্মাহত হলেন। এবং বললেন—কুরাইশদের সাথে বোঝাপড়া না করে আমরা এখান থেকে ফিরে যাবো না। তিনি সাহাবীদের বাইআতের আহ্বান জানালেন। সাহাবায়ে কেরাম বাইআত হওয়ার জন্য ছুটে গেলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম একটি গাছের নিচে বাইআত গ্রহণ করতে শুরু করলেন। একজন ব্যক্তি ছাড়া কাফেলার সবাই রাসুলের হাতে বাইআত হলেন। ব্যক্তিটি ছিল জাদ্দ বিন কায়েস। সে ছিলো মুনাফিক। কিছুসময় পরে দেখা গেলো উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর শহীদ হবার খবরটি ছিল মিথ্যা। তিনি ফিরে এলেন। এবং তিনিও আল্লাহর রাসুলের হাতে বাইআত হলেন। এই বাইআতকে বলা হয় বাইআতে রিদওয়ান। বাইআতে রিদওয়ান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে আয়াত নাযিল করে বলেন—আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে শপথ করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয়। (সূরা ফাতহ:১৮)।

 

কুরাইশরা বাইআতের খবর শুনে ভয় পেয়ে যায়। তারা সন্ধি করার চিন্তাভাবনা শুরু করলো। বনু খুযাআ গোত্রের বুদাইল ইবনে ওয়ারাকা কয়েকজন ব্যক্তি নিয়ে নবীজীর সাথে দেখা করতে গেলো। তারা ছিল মুসলমানদের কল্যাণকামী। সে রাসুলের সাথে দেখা করে তাকে জিজ্ঞেস করলো আপনি কী উদ্দেশ্যে এসেছেন? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বললেন—আমি কোন যুদ্ধ, বিগ্রহের জন্য আসিনি। এসেছি শুধু কাবা জিয়ারত করতে। বুদাইল বললো— কিন্তু কুরাইশরা তো আপনাকে কিছুতেই মক্কায় প্রবেশ করতে দেবে না। এ অবস্থায় আপনি কী করবেন? নবীজী বললেন —তুমি তাদের গিয়ে বলো আমরা যুদ্ধ করতে আসিনি,বাইতুল্লাহর জিয়ারতের জন্য এসেছি। আর তাছাড়া এখন পবিত্র মাস। এ মাসে কেউ যুদ্ধ করে না। তবে তারা কেন আমাদের সাথে যুদ্ধ করবে?
মক্কায় ফিরে এলো বুদাইল। কুরাইশদের সব কথা বললো। আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো তারা। বললো—যদি সে যুদ্ধ করতে না এসে থাকে তবুও আমরা তাকে জোরজবরদস্তিমূলক মক্কায় প্রবেশ করতে দিবো না। সাধারণ আরবরাও এ কথা জানে যে, মক্কাবাসী কখনোই কাউকে এ শহরে জোরপূর্বক প্রবেশ করতে দেয়নি। তারপর আরও কয়েকজন কুরাইশ প্রতিনিধি আসলো। নবীজী সবার কাছে এক জবাবই দিয়ে দিলেন। উরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফী নামের এক ব্যক্তি নবীজীর সাথে কথা বললো। নবীজী তাকেও আগের কথাই বললেন। সব শুনে সে বললো — আপনি বলুন তো, যদি আপনি নিজের কওমকে নিঃশেষ করে দেন তো কেমন হবে ব্যাপারটা? আপনি কি আপনার আগে কোনো আরব সম্পর্কে এটা শুনেছেন যে, সে তার কওমকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে? আর যদি পরিস্থিতি অন্যরকম হয় তাহলে তো আমি আপনার আশেপাশে এমনসব আজেবাজে লোক দেখছি যারা আপনাকে অনায়াসেই ছেড়ে যাবে। একথা শুনে আবু বকর রেগে তাকে গালি দিয়ে বললেন—আমরা নবীজীকে ছেড়ে পালিয়ে যাবো? এতটাই ঠুনকো মনে হয় আমাদের ভালোবাসা? উরওয়া জিজ্ঞেস করলো—এই লোকটি কে? সাহাবীরা বললেন— তিনি আবু বকর। উরওয়া বললো— খোদার কসম! যদি আমার উপর তোমার অনুগ্রহ না থাকতো, তবে আমি তোমার কথার জবাব দিতাম। এরপর উরওয়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সাথে কথা বলতে থাকে। সে কথা বলার সময় বারবার নবীজীর দাড়ি স্পর্শ করছিলো। নবীজীর কাছেই দাঁড়ানো ছিলেন মুগীরা ইবনে শুবা রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি ছিলেন উরওয়ার ভাতিজা। উরওয়া রাসুলের দাড়িতে পুনরায় হাত দিতে গেলে তিনি তার হাতের তলোয়ারের বাঁট দিয়ে তার হাত সরিয়ে দিলেন। এবং বললেন নিজের হাত রাসুলের দাড়ি থেকে দূরে রাখো। উরওয়া তার দিকে ফিরে তাকালো। শিরস্ত্রাণ পরা ভাতিজাকে সে চিনতে পারলো না। সে জিজ্ঞেস করলো এই লোকটি কে? সাহাবীরা বললেন আপনার ভাতিজা মুগীরা ইবনে শুবা। উরওয়া বললো—বিশ্বাসঘাতক! আমি কী তোর বিশ্বাসঘাতকতা আর বিশৃঙ্খলার মিটমাট করে দেইনি?

 

উরওয়া আল্লাহর রাসুলের সাথে কথা বলছিলো আর নবীজীর প্রতি সাহাবায়ে কেরামের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, প্রেম তা প্রত্যক্ষ করছিলো। সে তাদের মহব্বতের আশ্চর্য প্রকাশ দেখে বিস্মিত হয়ে গেলো। বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে গেলো সে। মক্কায় ফিরে সে তার সঙ্গীদের কাছে গিয়ে বললো—হে আমার কওম! আমি কায়সার, কিসরার মতো সম্রাটদের দরবারে গিয়েছি। আল্লাহর শপথ মুহাম্মদের মর্যাদার তুলনায় তাদের মর্যাদা কিছুই না। সে রাজা বাদশাহদের চেয়েও উর্ধ্ব মর্যাদার অধিকারী। উচ্চ ক্ষমতার অধিকারী সে। মুহাম্মদের মতো ব্যক্তি তোমাদের সন্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন তোমরা তা গ্রহণ করে নাও কোনরূপ দ্বিধা ছাড়াই।
শেষ পর্যন্ত তারা সুহাইল ইবনে আমরকে সন্ধির উদ্দেশ্যে প্রেরণ করে। তাকে আসতে দেখে নবীজী সাহাবীদের বললেন—তোমাদের কাজ তোমাদের জন্য সহজ করে দেওয়া হয়েছে। এই লোক আসার অর্থ হচ্ছে, কুরাইশরা সন্ধির প্রতি আগ্রহী। সুহাইল এসে শুরু করলো আপোষে রফার আলোচনা। এমনসব শর্ত আরোপ করলো সে, যা ছিলো মুসলমানদের জন্য পরাজয়মূলক।
শর্তগুলো ছিল—
১.মুসলমানরা এ বছর মক্কায় প্রবেশ না করেই ফিরে যাবেন। আগামীবছর মক্কায় আসবেন এবং তিনদিন অবস্থান করতে পারবেন। তাদের সঙ্গে আত্মরক্ষার অস্ত্র হিসেবে শুধু কোষবদ্ধ তরবারি থাকবে।

২. কুরাইশ ও মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ থাকবে দশবছরের জন্য।

৩.যদি কোন কুরাইশ মুসলমানদের সাথে যোগ দেয়, তবে তার অভিভাবক তাকে ফেরত চাইলে ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু কোন মুসলমান কুরাইশদের দলে যোগ দিলে কুরাইশরা সে আর ফিরে আসতে পারবে না।

৪.আরবের যে কোন গোত্র মুসলমান অথবা কুরাইশদের সঙ্গে সন্ধি করতে পারবে।

সন্ধিচুক্তির সিদ্ধান্ত পাকাপাকি হয়ে গেছে। বাকি শুধু লিখিত রূপ নেওয়ার। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছুটে গেলেন নবীজীর কাছে। জিজ্ঞেস করলেন—হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি আল্লাহর রাসুল নন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন আমরা কি মুসলমান নই? নবীজী বললেন, হ্যাঁ। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ওরা কি মুশরিক নয়? নবীজী বললেন হ্যাঁ। উমর রাদিয়াল্লাহু বললেন তাহলে কী আমরা দ্বীনের কারণে এই অবমাননা বরদাশত করতে চাচ্ছি?
নবীজী জবাব দিলেন—আমি আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। তার নির্দেশ আমি কখনোই অমান্য করবো না। আর তিনি আমাকে কখনো বিপথগামী করবেন না। দৃঢ়তার সাথে বললেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম। বেশীরভাগ সাহাবীদের অমত থাকা সত্ত্বেও এই চুক্তি লিখিত রূপ পেলো। চুক্তিটি লেখার কাজে মুসলমান ও মুশরিক উভয় পক্ষের অনেকেই সাক্ষী হলেন। সাক্ষীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু, আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু। আব্দুল্লাহ ইবনে সুহাইল ইবনে আমর, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু, মাহমুদ ইবনে মাসলামা, মিকরায ইবনে হাফস ও আলী ইবনে আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন চুক্তিপত্রের লেখক।

 

কুরবানীর উটগুলোকে কিভাবে কুরবানী করে ইহরাম মুক্ত হওয়া যায় তা নিয়ে নবীজী চিন্তিত ছিলেন। চুক্তি সই হয়ে গেলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের বললেন— ওঠো এবং নিজ নিজ পশু কুরবানি করো। সাহাবায়ে কেরাম সন্ধির ব্যাপারটা নিয়ে এতটাই শোকার্ত ও বিষণ্ণ ছিলেন যে, নবীজী তিনবার এই আদেশ দেওয়ার পরেও কেউ উঠলেন না। নবীজী নিজের তাঁবুতে গেলেন। সে সফরে নবীজীর সাথে উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা। নবীজী তাকে বিষয়টি বললেন। বুদ্ধিমতী উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু নবীজীকে চমৎকার পরামর্শ দিলেন। তিনি বললেন—ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কাউকে কিছু না বলে আপনার হাদির পশু জবাই করুন। এবং আপনার মাথা মুণ্ডন করে নিন।
নবীজী তা-ই করলেন। সাহাবায়ে কেরাম এ দৃশ্য দেখে নবীজীর অনুসরণ করলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্য তিনবার ও চুল ছোটকারীদের জন্য তিনবার মাগফিরাতের দোয়া করলেন।
দুইসপ্তাহ মতো সময় অবস্থানের পর কাফেলা মদীনার পথে চলতে শুরু করলো। সবার মন শোকার্ত। কষ্ট, বেদনায় ক্ষতবিক্ষত। সাহাবীরা এই চুক্তিকে নিজেদের পরাজয় ও অপমানজনক বলে মনে করেছিলেন। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মূলত তা-ই বুঝায়। কিন্তু এই চুক্তিতে মুসলমানদের সুবিধা নিতান্ত কম হলেও এর পরিণতি ছিল সুদূর প্রসারী। আরবের বুকে মুসলমানদের কাছে মুশরিকদের মাথানত করার প্রত্যক্ষ স্বীকৃতি এলো এ সন্ধির মাধ্যমে। সকলের অজান্তেই আগামীদিনের মহাবিজয়ের রাজপথ, স্বর্ণালী তোরণ আর রাজকীয় সোপান তৈরি হয়ে গিয়েছিলো সেদিন। চুক্তির শর্ত বাহ্যিক দৃষ্টিতে যদিও দেখতে অবমাননাকর ছিলো, কিন্তু তা ভবিষ্যতের বিশ্বজয়ের পথে পথচলার সূচনা হয়ে রইলো। হুদাইবিয়ার উষর মরু প্রান্তর ছেড়ে আসা ভগ্নহৃদয়ের সাহাবীরা তা ঘূর্নাক্ষরেও টের পাননি। মনের বিষণ্ণতা ফুটে উঠেছিলো তাদের পায়ের ছাপে। কে জানতো ভারাক্রান্ত মনের এই কাফেলার পদভারেই একদিন উড়বে মরুর ধূলিকণারা। কাঁপবে মরুর বুক। সেদিন তাদের সকলের মুখে থাকবে বিজয়ীর স্নিগ্ধ, অনাবিল হাসি। বিষাদমাখা মন নিয়ে যখন কাফেলা মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে এলো, তখন সেখানকার মরুর বুক আলোকিত করে এলো আসন্ন বিজয়ের সুসংবাদ। সাথে এলো মহাপ্রভুর স্বীকৃতি। আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিলেন, এ চুক্তিটি ছিলো মুসলমানদের জন্য প্রকাশ্য বিজয়। নাযিল হলো কুরআন শরীফের আয়াত :- “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে দান করলাম প্রকাশ্য বিজয়।”(সুরা ফাতহ :১)
আর মহান রবের স্বীকৃতিই তো প্রকৃত স্বীকৃতি।
–
তথ্যসূত্র:-

১.সীরাতে ইবনে হিশাম।
২.আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া।
৩.ফাতহুল বারী।
৪.আর রাহীকুল মাখতুম।
৫.তাবাকাতে ইবনে সাদ।
৬.যুরকানী।
৭.সীরাতে মুস্তফা ২য় খন্ড।
৮.সহীহ মুসলিম।

Facebook Comments

Previous Post

ইসলামের আদর্শ যুদ্ধনীতি: হুদায়বিয়ার সন্ধি ও মক্কা বিজয় প্রসঙ্গ। আব্দুল হালীম ওয়াইস

Next Post

ইত্তিবায়ে সুন্নাহ ও মুমিনের জীবনদর্শন। সালমান মানসুরপুরি

সাবের চৌধুরী

সাবের চৌধুরী

Related Posts

ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহ.- জীবন ও কর্ম
ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার

ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহ.- জীবন ও কর্ম

September 7, 2021
তাবেঈ রাবী ইবনে খুসাইম: একজন আলোকিত মানুষের আলোকিত জীবন। শারাফাত শরীফ
বিবিধ

তাবেঈ রাবী ইবনে খুসাইম: একজন আলোকিত মানুষের আলোকিত জীবন। শারাফাত শরীফ

July 12, 2021
Next Post
ইত্তিবায়ে সুন্নাহ ও মুমিনের জীবনদর্শন। সালমান মানসুরপুরি

ইত্তিবায়ে সুন্নাহ ও মুমিনের জীবনদর্শন। সালমান মানসুরপুরি

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

Recent.

তাসাউফ সম্পর্কে অপপ্রচার ও ভ্রান্তি : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা ।। মাওলানা আনাস চৌধুরী

December 16, 2022
এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

November 28, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি | শেষ পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | তরজমা: হুজাইফা মাহমুদ

November 16, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি—প্রথম পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | ভাষান্তর: হুজাইফা মাহমুদ

November 12, 2022
বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

October 29, 2022

  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

No Result
View All Result
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ

© 2020 রিওয়ায়াহ - Developed by Tijarah IT Limited.