Riwayahbd
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ
No Result
View All Result
Riwayahbd
No Result
View All Result

যাঁরা তৈরী করলেন হিজরতের জমি — দ্বিতিয় পর্ব ।মুসা আল হাফিজ

by সাবের চৌধুরী
November 18, 2020
1 min read
1
যাঁরা তৈরী করলেন হিজরতের জমি — দ্বিতিয় পর্ব ।মুসা আল হাফিজ
33
SHARES
257
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

 

 

মুসআব বিন উমাইর রা. অনেক প্রতিকুলতার ঝড়ের মুখোমুখি হন। গোত্র থেকে খেদিয়ে দিতে হবে তাকে, তাড়াতে হবে ইয়াসরিব থেকে, এমন আওয়াজ হয়ে উঠলো নৈমিত্যিক ব্যাপার। বনু আব্দিল আশহাল গোত্রের ইসলামে দীক্ষা বনূ নাজ্জারকে ভীত করে তোলে। বনূ নাজ্জারের প্রধান আসআদ ইবনে যুরারার রা. এর মেহমান ছিলেন মুসআব রা.।

গোত্রের অনেকেই আসআদ রা. এর উপর প্রচণ্ড চাপ তৈরী করলো, যেন তিনি মুসআবকে রা. বের করে দেন।

তাঁর আতিথ্য প্রদান বন্ধ করেন। তারা মুসআব রা. এর নিরাপত্তার উপর হুমকি তৈরী করলো। মুসআব রা. বাধ্য হলেন গৃহান্তরে। তাকে অতিথি করে নিলেন বানূ আব্দিল আশহালের নেতা হযরত সা’দ ইবনে মুআয রা.। তার গৃহ পরিণত হলো মুসআবের রা. দাওয়াতের কেন্দ্র। হুমকি তখনো থেমে থাকেনি। প্রতিকূল তরঙ্গগুলো আসছিলো নানাদিক থেকে। কিন্তু ধৈর্য এবং প্রজ্ঞা দিয়ে তিনি তুফানের বিপরীতে এগুতে থাকলেন। তার দিন-রাত হয়ে উঠলো দাওয়াতে দ্বীনের দিন-রাত। প্রত্যহ, প্রতিনিয়ত তিনি দাওয়াতী কাজের প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছিলেন

আর তৈরী করছিলেন সুযোগ! প্রতিটি ঘরে ও মজমায় তার উপস্থিতি হতে থাকলো অনিবার্য। এর ফলও আসছিলো ক্রমে ক্রমে। আওস-খাজরাজের এমন ঘর কম ছিলো, যেখানে কোনো নারী বা পুরুষ গ্রহণ করেননি ইসলাম!

প্রতিটি শাখাগোত্রই সাড়া দিচ্ছিলো ইসলামের দাওয়াতে। কেবল সাড়া দেয়নি বনু উমাইয়া বিন যায়েদ, খাতমা ও ওয়ায়েল উপগোত্র!তাদের সরদার ছিলেন কবি কায়স বিন আসলাত। ইয়াসরিব মদীনাতুর রাসূল সা. হবার পরেও তিনি আপন লোকদের বিরত রাখেন ইসলাম থেকে। পঞ্চম হিজরীতে, গজওয়ায়ে খন্দক ভেঙ্গে দেয় বাঁধ। এইসব শাখাগোত্রও দীক্ষিত হয় ইসলামে।

 

ইয়াসরিবের পরিস্থিতি প্রিয় নবীকে সা. জানানো ছিলো জরুরী। নবুওতের ত্রয়োদশ বছরের হজ্বের মৌসুমের আগেই মুসআব বিন উমাইর রা. যাত্রা করেন মক্কা অভিমুখে। বদলে যাওয়া ইয়াসরিবের চিত্র তিনি তুলে ধরেন খোদার হাবীবের সমীপে। সেখানে কল্যাণ ও সফলতার যে জাগরণী হাওয়া বহমান, তার বিবরণ তিনি শুনালেন সবিস্তারে।

প্রিয় নবীর সা. সামনে ইয়াসরিব হাজির হলো ইসলামের নতুন কেন্দ্র হিসেবে। যে কেন্দ্রের তীব্র প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিলো প্রতিনিয়ত।

মুসআবের রা. পেছনে তৈরী হচ্ছিলো কাফেলা। হজ্জ মৌসুম আসন্ন। তারা যাত্রা করবেন মক্কায়।

লাভ করবেন খোদার হাবীবের সা. দীদার। গ্রহণ করবেন তাঁর হাতে বায়আত। প্রিয় নবীকে সা. আমন্ত্রণ জানাবেন নিজেদের জনপদে। যদি তাঁর শুভাগমনে পুস্পিত হয় ইয়াসরিবের হাওয়া!যদি তাঁর চাঁদচেহারা উদ্ভাসিত হয় ইয়াসরিবের দিগন্তে!

 

হজ্বে এলেন ইয়াসরিবের যাত্রীদল। মুসলিম-অমুসলিম সকলেই আছেন কাফেলায়। মুসলিমরা চান প্রিয় নবীর সা. সাক্ষাত। অমুসলিম সাথীদের সেটা বুঝতে দেয়া হয়নি। মুসলিমরা এখানেও ছিলেন দাঈর ভূমিকায়। কাফেলায় তারা সমজদারদের নানাভাবে উদ্দীপিত করছিলেন দ্বীনের প্রতি। খাজরাজের মশহুর নেতা আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম ছিলেন যাত্রীদলে। কিছু মুসলিম নির্জনে তার সাথে মিলিত হলেন। বললেন, আপনি মহান, আপনি ন্যায়বান।

আপনি মানুষের আশ্রয়। আমরা আপনাকে ভালোবাসি। ভালোবাসা আমাদেরকে ব্যাকুল করছে আপনার প্রতি একটি নিবেদনে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর জানতে চান, কী সেই নিবেদন?

তারা বলেন, আমরা চাই না জাহান্নামের ভয়াবহ আগুনে আপনি পুড়বেন। এটা আমরা বরদাশত করতে পারছি না।

কিন্তু মুহাম্মদ সা. এর কাছে যে সত্য নাযিল হয়েছে, তাকে না মানলে জাহান্নামের শাস্তির ভীতিবাণী রয়েছে।

আবদুল্লাহ ইসলামের প্রতি অনুরাগী ছিলেন আগ থেকেই। মুসলমানরা সেটা উপলব্ধি করেই তাঁর দিকে হাত বাড়ান।

তিনি সাড়া দেন। গ্রহণ করেন ইসলামের সত্য।

হজ্ব শেষ। এখন প্রিয় নবীর সা. সাথে দেখা করতে হবে। আগ্রহীদের সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৩।যাদের মধ্যে ছিলেন দুই

সাহসী মহিলাও।রাতে তারা মিলিত হবেন নবীজীর সাথে। কেউ যেন বুঝতে না পারে, সতর্ক থাকতে হচ্ছে।

অমুসলিম সঙ্গীদের সাথে তারা থাকেন একই তাবুতে। রাতে অন্যরা যখন ঘুমান, তারাও ঘুমিয়ে পড়লেন। তারা কি

ঘুমিয়ে পড়েছিলেন? আসলে তারা বালিশে মাথা রেখেছিলেন, যেন অন্যরা দেখে তারা ঘুমাচ্ছেন। কীভাবে তারা ঘুমাবেন? তাদের হৃদয়ে তো নিদ্রাহীন প্রতিক্ষা । কখন প্রিয় নবীর সা. সাথে দেখা হবে? কখন?

১২ জিলহজ্বের রাত। এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলো। প্রতিটি তাবুতে সঙ্গীদের ভরপুর নিদ্রা। চারদিকে নিরব নৈশব্দ। শয্যাত্যাগ করে মুসলিমরা ছোট ছোট দলে বেরিয়ে পড়লেন। যেতে হবে আকাবায়। সভাস্থলে।

নির্ধারিত সময়ে সবাই উপস্থিত। সবার আগে উপস্থিত নবীয়ে রহমত সা.। সাথে আপন চাচা আব্বাস বিন আবদিল মুত্তালিব। তিনি তখনো মুসলমান নন, কিন্তু প্রিয় নবীর সা. প্রতি মমত্ব ও সহানুভূতিতে অগ্রণী। তাঁর সহায়তায় একপায়ে খাড়া। তিনি দেখতে চান, ভাতিজা কী করতে যাচ্ছেন? বুঝতে চান ইয়সরিববাসী, তাঁর প্রতি কতোটা আগ্রহী ও আন্তরিক?

 

 

নিস্তব্ধ রাতের সভা। সবার আগে উচ্চারিত হলো আব্বাসের কণ্ঠস্বর।‘মহোদয়গণ! নিরাশার তিমিরে আছাড় খেতে খেতে যারা এখানে এসে উপনীত হয়েছেন, তাদের আমি বলতে চাই অতিশয় জরুরী একটি কথা। আপনাদের সামনে যিনি উপস্থিত, তিনি আমাদের মহিমান্বিত একজন। মর্যাদাবান একজন। তাঁর ব্যক্তিগত মহত্ব সবার কাছে স্বীকৃত।

আজ অবধি আমরা তার সুরক্ষা নিশ্চিত করে আসছি তার শত্রু ও প্রতিপক্ষের মোকাবেলায়। আমাদের সাধ্যের শেষটুকু দিয়ে এই সব প্রবল ও শত্রুশক্তির ছোবল থেকে আমরা তাঁকে নিরাপদে রেখেছি। আমাদের যে সব হাশেমী

তার সত্যকে গ্রহণ করেছেন, তারা নিজেদের বিশ্বাস ও ভক্তির দাবিতে এটা করছেন। যারা তার সত্যে দীক্ষা নেননি, তারা করছেন বংশীয় সম্পর্কের দাবিতে। সকলেই তার পক্ষাবলম্বন করছেন, করছেন সাহায্য-সহায়তা। কিন্তু এখন তিনি চান, এই শহর ত্যাগ করে আপনাদের জনপদে যাবেন। সেখানে স্বাধীনভাবে, স্বস্তির সাথে প্রচার করবেন তার সত্যকে। পরিচালনা করবেন আপন দ্বীনের তৎপরতা।

আব্বাস বলেন, আপনারা কি তাঁর নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন? তাঁর দুশমনদের সাথে যুদ্ধ করতে পারবেন? যে কোন মূল্যেই তাকে শত্রুর হাতে তুলে না দিয়ে তাঁর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন?

যদি পারেন, তাহলে তাকে নিয়ে যান। নতুবা এ কঠিন গুরুভার গ্রহণে অস্বীকৃত হোন। সত্য এবং উত্তম কথা হলো,

তিনি আমাদের নিরাপত্তায় আছেন। আমরা তাঁর দেখভালের সবটুকু করছি। এমন যেন না হয় যে, আপনারা তাঁকে

এখান থেকে নিয়ে গেলেন আর কঠিন সময় এলে তাঁর থেকে আলাদা হয়ে গেলেন। তাঁকে ছেড়ে দেবেন দুশমনদের কৃপার কাছে! আপনারা কী করবেন, ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। নিজেদের মধ্যে বুঝাপড়া করুন। আপনারা যুদ্ধসক্ষম, এতে সন্দেহ নেই। আপনারা সম্পদশালী এবং সম্মানিত। কিন্তু তাঁকে নিজেদের মধ্যে নিয়ে গেলে আরবের সকল গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঝুঁকি সামনে আসবে। তারা সকলে একই ধনুক থেকে আপনাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করবে।অতএব ভালোভাবেই বুঝে-শুনে সিদ্ধান্ত নিন।

 

 

ইয়াসরিবের প্রনিধিদের অন্যতম কাব রা.। তিনি দাঁড়ালেন। নিবেদন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার চাচা যা বলেছেন, আমরা শুনলাম। আমরা চাই আপনার থেকে এ বিষয়ে শুনতে। আপনার ও আপনার প্রভুর জন্য যা করণীয়, আপনি সে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আপনি বলুন, আমাদের থেকে এ ব্যাপারে কী আশা করেন। বিশ্বাস রাখুন, আমরা আপনার প্রতিটি আদেশ ও উপদেশ পালনে সদাপ্রস্তুত।

প্রিয় নবী সা. প্রদান করলেন এক অভিভাষণ। প্রথমে তেলাওয়াত করলেন খোদার কালাম। তাদেরকে আহবান জানালেন আল্লাহর পথে। বললেন সেই বিষয়ে, যে জন্য সবাই সমবেত হয়েছেন ।বললেন, আমি আল্লাহ তায়ালার

বিষয়ে তোমাদের থেকে চাই যে, তোমরা কেবল তারই ইবাদত করবে, অন্য কাউকে শরীক করবে না তার সাথে।

আমার ও ইসলামের জন্য চাওয়া হচ্ছে, অত্যাচারিদের নিপীড়ন থেকে আমাদের আশ্রয় দেবে। আমাদেরকে সুরক্ষা দেবে এমনভাবে, যেভাবে নিজেদের সম্পদ ও সন্তানদের রক্ষা করো।

নবীয়ে রহমতের বক্তব্য শেষ হলো। আগন্তুকদের পক্ষ থেকে দাঁড়ালেন হযরত বারা ইবনে মারুর রা.। আঁকড়ে ধরেন প্রিয় নবী সা. এর বরকতময় হাত। বললেন, আমরা শপথ করছি সেই প্রভুর নামে, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন। অবশ্যই আমরা আপনাকে সুরক্ষা দেবো। যেভাবে আমরা রক্ষা করি আপন পরিবারকে, সন্তান-সন্ততিকে। আমরা যোদ্ধাজাতি। পূর্বপুরুষ থেকে আমরা পেয়েছি সশস্ত্র উত্তরাধিকার!আপনি গ্রহণ করুন আমাদের

বায়আত।

দাঁড়ালেন আবুল হাইসাম ইবনুত তায়্যিহান রা.। নিবেদন করলেন ব্যাকুল এক জিজ্ঞাসা। বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ!

ইহুদিদের সাথে আমরা একটি চুক্তিতে আবদ্ধ আছি। আমরা সে চুক্তি থেকে সরে আসবো। এটা যখন সম্পন্ন হবে

আর আল্লাহ পাক আপনাকে মহান মিশনে জয়ী করবেন, তখন কি আপনাদের ছেড়ে চলে যাবেন? আপনি কি চলে যাবেন নিজ সম্প্রদায়ের কাছে? আমাদের বিরহী করে?

প্রিয় নবীর সা. মুখে হাসি। স্নিগ্ধ উচ্চারণে জানালেন, শুনো, আমার রক্ত হচ্ছে তোমাদের রক্ত, আমার জীবন হচ্ছে

তোমাদের জীবন। আমি তোমাদের, তোমরা আমাদের। আমি যুদ্ধ করবো তাদের সাথে , যাদের সাথে যুদ্ধ করো তোমরা। শান্তি রচনা করবো তাদের সাথে, যাদের সাথে মৈত্রি রাখো তোমরা।’

 

 

এরপর সকলেই উদগ্রীব হয়ে উঠলেন বায়আতের জন্য। দাঁড়ালেন হযরত আবুল হাইসাম রা.। আপন কবিলার লোকদের স্মরণ করিয়ে দিলেন সেই দায়িত্বের গুরুভার, প্রিয়নবীকে সা. ইয়াসরিবে নিলে যা তাদের পালন করতে হবে। জানতে চাইলেন, তারা কি সকল ত্যাগের বিনিময়ে প্রিয়নবী সা. এর সাথে থাকবেন? তারা কি পারবেন, সারা আরবের বিরোধিতাকে মোকাবেলা করে প্রিয় নবীর সা. সঙ্গ অবলম্বন করতে? লোকেরা সমস্বরে বললেন, আমরা পারবো, আমরা এর জন্য প্রস্তুত!

 

দাঁড়ালেন আসআদ ইবনে যুরারা রা.। আপন কবিলার সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিলেন, কোন গুরুভার তারা কাঁধে নিতে যাচ্ছেন! বললেন, সারা আরবের বৈরিতার বিপরীতে প্রিয়নবীর পাশে তারা থাকতে প্রস্তুত কি না? লোকেরা সমস্বরে বললো, আমরা তৈরী, আমরা প্রস্তুত!

দাঁড়ালেন আব্বাস ইবনে উবাদা ইবনে নাদলা রা.। খাজরাজের লোকদের বললেন, তোমরা কি হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছো প্রিয় নবীর সা. কাছে প্রদত্ব প্রতিশ্রুতির কী দাবি? কী এর মানে? তেমরা জেনে রাখো, এ এমন বায়আত, যার দাবি, আরব -অনারবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে দাঁড়ানো। এ বায়আতের মানে হচ্ছে, সারা দুনিয়ার সাথে লড়াইয়ের ঝুঁকি নেয়া।

এ বায়আতের মানে হচ্ছে, তোমাদের সম্পদের হানি হবে, কৃষি বিনষ্ট হবে এবং তোমরা একে মেনে নেবে।

এ বায়আতের মানে হচ্ছে, তোমাদের বাগান উজাড় হবে, বড় বড় বীর জীবন দেবে, তোমাদের সন্তানরা যুদ্ধমাঠে ক্ষত-বিক্ষত হবে, তোমরা একে মেনে নেবে। এ বায়আত করে নেয়া মানে, তোমাদের নারীদের বৈধব্যকে মেনে নেয়া, সন্তানের পিতৃহীন হওয়াকে মেনে নেয়া, যুদ্ধে বন্ধু ও আত্মীয়ের জীবনদান মেনে নেয়া!

 

যদি ভেবে থাকো, পরিস্থিতি এমন হলে তোমরা বায়আত ভেঙ্গে ফেলবে, তাঁর সা. নিকট থেকে সরে যাবে, তাহলে হাজার গুণ ভালো হবে, যদি তোমরা বায়আত না করো। যদি বায়আত করে তা থেকে সরে যাও, তাহলে আল্লাহর

কসম, ইহ-পরকালে তোমাদের ভাগ্যে থাকবে লাÄনা, লা’নত। তোমাদের মৃত্যু হবে নপুংসকের মৃত্যু। অতএব যদি দৃঢ়চিত্ত হও, যদি কোনো অবস্থায় বায়আত থেকে না সরো, প্রিয় নবীর সা. আঁচল না ছাড়ো, তাহলে সবাই বায়আত করো। এতে নিহিত আছে দ্বীন ও দুনিয়ার কল্যাণ, সৌন্দর্য।

আব্বাস ইবনে উবাদার বক্তব্য শেষ হলে সকলেই বললেন, আমরা অনেক ভেবেছি। সকল ফলাফল ও পরিণতি নিয়ে বিবেচনা করেছি। আমরা বায়আতের জন্য তৈরী! আমরা প্রস্তুত!

আব্বাস ইবনে উবাদা রা. এবার প্রিয় নবীর সা. সমীপে কিছু বলবেন।ভক্তি ও বিনয় তার চেহারায়।

নিবেদন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা যদি প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষম হই, কী হবে আমাদের পুরস্কার?

: ‘জান্নাত’। একটি শব্দে জবাব দিলেন রাসূলে খোদা সা.।

সকলের কণ্ঠে উচ্চারিত হলো, এই প্রতিদানে আমরা খুশি, সম্মত। আপনার হাত প্রসারিত করুন ইয়া রাসূলাল্লাহ!

আমরা পবিত্র হাতে হাত রেখে বায়আত করবো।’

কোমল, মোহন, মহিম হস্ত প্রসারিত হলো। কোন সৌভাগ্যবান প্রথমে বায়আত গ্রহণ করলেন? ইবনে ইসহাক বলেন, বনূ নাজ্জার গোত্রের দাবি হলো, তিনি আসআদ ইবনে যুরারা রা. বনূ আব্দিল আশহাল গোত্রের দাবি হলো, তিনি হযরত আবুল হাইসাম ইবনুত তায়্যিহান রা.। হযরত কা’ব ইবনে মালিকের রা. মতে, তিনি হযরত বা’রা ইবনে মারুর রা.। বিশ্লেষকরা প্রাধান্য দিয়েছেন প্রথমে হযরত আসআদ ইবনে যুরারার রা. বায়আত গ্রহণের সম্ভাবনাকে।

তারপর একে একে বায়আত গ্রহণ করলেন ৭৩ জন পুরুষ আর ২ জন মহান মহিলা। মানবেতিহাসে অবিস্মরণীয় বিপ্লবের উপলক্ষ হলেন বায়আতকারীরা। নাক্ষত্রিক সেই মানুষেরা হলেন- আউস কবীলার বনূ আবদিল আশহাল  শাখার ১. উসাইদ বিন হুযাইর রা., ২. আবুল হাইসাম বিন আত্ তাইহান রা., ৩. সালমা বিন সালামাহ রা.।

আওসের বনূ হরিসা শাখার : ৪. যোহাইর বিন রাফে’ রা., ৫. আবূ বারদাহ বিন নাইয়ার রা. , ৬. নুহাইর বিন আল হাইসাম রা.।

আওসের বনূ আমর বিন আউফ শাখার : ৭. সায়াদ বিন খুসাইমা রা., ৮. রিফায়া বিন আল মানযার রা. ,

৯. আবদুল্লাহ বিন যুবাইর রা. , ১০. মায়ায বিন আদী রা., ১১. উয়াইম বিন সায়িদা রা.।

 

খাযরাজ কবীলার বনূ নজ্জার শাখার ১২. আবূ আইয়ূব খালিদ বিন যায়িদ রা. , ১৩ মায়ায বিন হারিস রা. ,

১৪ আউফ বিন হারিস রা. , ১৫. আম্মারা বিন ইবনে হাযম রা. , ১৬. সায়াদ বিন যরারাহ রা. , ১৭. রিফায়া

বিন হারিসা রা. , ১৮. সাহাঈল বিন উতাইক রা., ১৯. ঊস বিন সাবিত রা. , ২০. আবূ তালহা যায়িদ বিন

সাহল রা., ২১. কীস বিন আবী সা’সাহ রা. , ২২ আমর বিন গুযাইয়া রা.।

বনূ হারিস বিন খাযরাজ শাখার ২৩. সায়াদ বিন রবী’ রা. , ২৪. খরিজা বনি যায়িদ রা., ২৫. আবদুল্লাহ বিন

রাওয়াহা রা., ২৬. বশীর বিন সায়াদ রা., ২৭. আবদুল্লাহ বিন যায়িদ রা. , ২৮. আবূ মসউদ আকাবা বিন

আমর রা., ২৯. খাল্লাদ বিন সুয়াইদ রা.।

খাজরাজের বনূ বায়াযা শাখার: ৩০. যিয়াদ বিন লুবাইদ রা. , ৩১. ফরদা বিন আমর রা., ৩২. খালিদ

বিন কীস বিন মালিক রা.।

খাজরাজের বনূ যররীক শাখার: ৩৩. রাফে’ বিন মালিক বিন আজলান রা., ৩৪. যাকওয়ান বিন

আবদি কীস রা., ৩৫. উব্বাদ কীস বিন আমের রা., ৩৬. হারিস বিন কীস রা.।

 

খাজরাজের বনূ সালমা শাখার : ৩৭. বারা বিন মা’রূর রা., ৩৮. সান্নান বিন সাইফী রা., ৩৯.

তোফাইল ইবন নু’মান রা., ৪০. মা’কাল বিন মানযার রা., ৪১. ইয়াযীদ বিন মানযার রা., ৪২. মসউদ বিন

ইয়াযীদ রা., ৪৩. যাহহাক বিন হারিসা রা., ৪৪. ইয়াযীদ বিন আযযাম রা., ৪৫. জাব্বার বিন সাহার রা., ৪৬.

তোফাইল বিন মালিক রা., ৪৭. বাশার বিন বারা.রা. ৪৮. কা’ব বিন মালিক রা. ৪৯. সলীম বিন আমর রা.

৫০. কাতাবা বিন আমের রা. ৫১. ইয়াযীদ বিন আমের রা., ৫২. আবুল উসাইর কা’ব বিন আমর রা. ৫৩.

সা্‌ইফি বিন সাওয়াদ রা. ৫৪. সা’লাবা বিন সালামা রা. ৫৫. আমর বিন সালামা রা. ৫৬. ঈস বিন আমের রা.

৫৭. আবদুল্লাহ রা. বিন উনাইস রা. ৫৮. খলিদ বিন আমর র. ৫৯. আবদুল্লাহ বিন আমর রা. ৬০. জাবির

বিন আবদিল্লাহ রা. ৬১. মায়ায বিন আমর রা. ৬২. সাবিত বিন আলজাযা রা. ৬৩. উমাইর বিন হারিস রা.

৬৪. খাদীজা বিন সাল্লামা রা. ৬৫. মায়ায বিন জাবাল রা.।

খাজরাজের বনী আউফ বিন খাজরাজ শাখার: ৬৬. উবাদা বিন সামিত রা. ৬৭. আব্বাস বিন উবাদা রা.

৬৮. আবদুর রহমান বিন ইয়াযীদ রা. ৬৯. আমর বিন হারিস রা. ৭০. রিফায়া বিন হারিস রা. ৭১. আকাবা

বিন ওহব রা.।

খাজরাজের বনী সায়িদা শাখার ৭২. সায়াদ বিন উবাদা রা. ৭৩. মানযার বিন আমর বিন খোনাইস রা.।

 

যে দুই মহীয়ষী নারী বায়আত গ্রহণ করলেন , তারা হলেন, আরবপ্রসিদ্ধ বীর ও সাহসী রমণী নুসাইবা বিনতে কা’ব। যিনি বিখ্যাত ছিলেন উম্মু আম্মারা রা. নামে ।

দ্বিতীয়জন ছিলেন আসমা বিনতে আমর। উম্মু মুনী’ নামে যার ছিলো প্রসিদ্ধি।

 

তারা বায়আত গ্রহণ করলেন এই মর্মে যে, ১. তাহারা অদ্বিতীয় আল্লাহ তায়ালার এবাদত করবেন। কাউকে তার সাথে শরীক করবেন না।

২. তারা প্রিয় নবী সা. ও তাঁর মুহাজির সাথীদের নিজেদের জনপদে অবস্থান দেবেন।

৩. তারা যে কোন শত্রুর মোকাবেলায় প্রিয় নবী সা. ও তাঁর সাথীদের সেভাবে সুরক্ষা দেবেন, যেভাবে দিয়ে থাকেন

নিজেদের পরিবার ও সন্তানদের।

৪. উপরের অঙ্গীকারগুলি বাস্তবায়নের ব্যায় এবং আর্থিক দায়দায়িত্ব তারা বহন করবেন। হোক তা তাদের পক্ষে সহজ বা কঠিন ।

৫. সুখে-দুঃখে তারা রাসূলুল্লাহ স. এর আদেশ পালন করবেন। সে আদেশ তাদের পছন্দের হোক বা অপছন্দের।

কখনো যদি আপাত: মনে হয় আদেশটি তাদের স্বার্থের পক্ষে নয়, তবুও তা মেনে নিতে হবে।

৬. আইনগত কর্তৃপক্ষের সাথে তারা বিরোধ বা বিবাদে লিপ্ত হবেন না।

৭. তাহারা সৎ কাজের পরামর্শ্ দেবেন এবং অসৎ কাজ থেকে দূরে থাকবেন।।

৮.সকল জায়গায়, সকল অবস্থায় তারা সত্য বলবেন এবং তিরস্কার বা লাঞ্ছনা-গঞ্জনার ভয় না করে সত্য ধর্ম ও

আল্লাহর ভাবমর্যাদাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরবেন।

বায়আত সমাপ্ত হলো। প্রিয় নবী সা. সবাইকে মনোযোগী করলেন। নতুন মিশন হাতে নেয়া হয়েছে। নতুন দায়িত্ব

বন্টন করতে হবে। প্রিয় নবী সা. বললেন, যেভাবে হযতর মূসা আ. তাঁর জাতির জন্য ১২ জন নকীব নিযুক্ত

করেছিলেন, আমি তেমনিই করছি। তোমাদের জন্য ১২ জন দায়িত্বশীল য়োগ দিচ্ছি। যারা তোমাদেরকে দান

করবে জ্ঞান, শিক্ষা। , তোমাদের করবে প্রশিক্ষিত।দৃষ্টি রাখবে তোমাদের চরিত্রের প্রতি। আর ইয়াসরিববাসীর মধ্যে

প্রচার করবে ইসলাম। এ কাজের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সচেতন ও আন্তরিক ১২ জনকে বাছাই করো। আমার

 

নিকট তাদের নাম পেশ করো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ১২ জন নকীব স্থির হয়ে গেলেন। প্রিয় নবীর সা. মনোনয়ন

চূড়ান্ত হয়ে গেলো। খাজরাজ কবিলার নয়জন এবং আউসের তিনজন পব্রিত্রহৃদয়ের মনীষীর নাম ঘোষিত হলো।

তারা হলেন-

১. আসয়াদ বিন যারারাহ রা. : অতিশয় আন্তরিক, বড়ই দ্বীনদার ও সীমাহীন নিষ্ঠাবান, পবিত্র আবেগে

উদ্দীপিত সাহাবী । তাঁর নেতৃত্বগুণের স্বীকৃতি অসংশয়। ইয়সরিবে জুমআর সালাতের সূচনা তিনিই করেন।

হিজরী ১ সনেই তিাঁর ইন্তেকাল হয়।

২.সা’দ বিন রবী’ রা. : অতিশয় একনিষ্ঠ দায়িত্বশীল সাহাবী । গজওয়ায়ে উহুদে শাহাদাত বরণ করেন। যুদ্ধক্ষেত্রে

তাঁর সন্ধানে প্রিয় নবী সা. লোক পাঠালেন। দেখা গেলো, তিনি পড়ে আছেন মারাত্মক আহত হয়ে।শাসকষ্ট প্রবল

হয়ে উঠেছে।লোকদের বললেন, আমাকে তোমরা মৃত ধরে নাও। প্রিয় নবীর সা. কাছে আমার সালাম পৌছে দাও ।

আর বলো, যেন আল্লাহ তাঁকে সর্বোচ্চ প্রতিদান দেন। আমার জাতির প্রতি আমার এ বার্তা পৌছে দিয়ো। তাদের

একটি প্রাণও দুনিয়ার বুকে যতক্ষণ নিশ্বাস নেবে, ততক্ষণের মধ্যে কোনো দুশমন যদি আল্লাহর হাবীবের সা. নিকটে

পৌছে যায়, তাহলে তারা কোনোভাবেই আল্লাহর দরবারে ওজর পেশ করতে পারবে না।

৩ আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা রা. : প্রখ্যাত কবি , একনিষ্ঠ সাহাবী, বীর যোদ্ধা। বনী হারেসের নেতা ছিলেন।

মূতার যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন।

৪.রাফে’ বিন মালিক বিন আজলান রা. : অতিশয় মর্যাদাশীল বুযুর্গ সাহাবী। গজওয়ায়ে উহুদে শাহাদাত বরণ

করেন।

৫.বারা বিন মারূর বিন সখর রা. : অন্যন্ত নিবেদিত, কুশলী ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।বয়োবৃদ্ধ ছিলেন।

বাইয়াতের মাত্র ২ মাস পরে ইন্তিকাল করেন।

৬.আবদুল্লাহ বিন আমর বিন হারাম রা. : বনী সালিমাহ কবিলার মানুষ। উচ্চ মর্যাদার অধিকারী, অত্যন্ত

মুখলিস সাহাবী। গজওয়ায়ে উহুদে শাহাদাত বরণ করেন । শাহাদাতের পরে তাঁর পুত্রকে প্রিয় নবী সা. বলেন,

তোমার পিতাকে খোদার তরফে বলা হলো, যা চাওয়ার, চেয়ে নাও। তোমার বাবা বললেন, হে খোদা, আমার

কামনা তো একটাই, আমি যেন আবারো জীবিত হই এবং ইসলামের জন্য কুরবান হতে পারি।

৭.উবাদা বিন সামিত রা. : বড় আলিম, ক্বারী, হাদীস রেওয়ায়েতে অন্যতম এবং খুবই প্রজ্ঞাবান সাহাবী। হিজরী

৩৪ সালে দুনিয়া থেকে বিদায় হন।

৮.সা‘দ বিন উবাদা রা. : অন্যন্ত সম্মানী, গম্ভীর প্রকৃতির এবং উচ্চ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সাহাবী।বনী সায়েদা গোত্রের

সরদার ছিলেন। রাসূল সা, এর ইন্তিকালের পরে আনসারগণ তাকে খলীফা নির্বাচিত করতে চেয়েছিলেন। শেষ

জীবনে সিরিয়ায় চলে যান। হিজরী ১৫ সালে তাঁর ইন্তেকাল হয়।

৯.মুনযির বিন আমর রা. : কুরআনবিশেষজ্ঞ, শিক্ষক ও দাঈসাহাবী। বনী সায়েদা গোত্রের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

হিজরী ৪ সালে বিরে মাউনায় শাহাদাত বরণ করেন।

 

আউস থেকে বাছাইকৃত নকীব ছিলেন –

১০ . উসাইদ বিন হোযাইর রা. : ইয়াসরিবের অগ্রগণ্য নেতা। সম্মান ও প্রভাবে সুবিদিত। জ্ঞান ও প্রজ্ঞায়

অগ্রসর। বনী আব্দিল আশহাল গোত্রের নেতৃপুরুষ ছিলেন। হযরত ওমর রা. এর খেলাফতকালে ইন্তেকাল করেন।

 

১১. আবুল হাইসাম মালিক বিন তায়্যিহান রা.।বনী আব্দিল আশহাল গোত্রের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। সহজাত নেতৃত্বগুণে

বিভূষিত।ন্যায়ভাষী। নিষ্ঠা ও একাগ্রতায় অনন্য। সিফফিনের যুদ্ধে হযরত আলী রা. এর পক্ষে জিহাদে শাহাদত

বরণ করেন।

১২.সা‘দ বিন খায়সামা রা.। বনী হারেসার সুপুরুষ। বদর যুদ্ধের জন্য ঘর থেকে যখন বের হন, তার পিতা

বললেন, যুদ্ধে যাবার অধিকার তো আমারও আছে। তবে একজনকে তো ঘরেও থাকতে হবে। অতএব উভয়ের

মধ্যে লটারি করা হলো। তাতে সা’দ রা. এর নামই উঠলো। যুদ্ধে তিনি শহীদ হয়ে গেলেন।

বায়আত গ্রহণ ও নকীব ঘোষণা সম্পন্ন হলো। প্রিয় নবী সা. ভিন্নমাত্রিক ও বহুমুখী এ দায়িত্বের প্রশ্নে

দায়িত্বশীলদের সচেতন করে দিলেন। নিলেন প্রতিশ্রুতি। বললেন, তোমরা নিজেদের কওমের যিম্মাদার ও অভিভাবক,

যেমন ছিলেন ঈসা আ. এর হাওয়ারিগণ। আমিও যিম্মাদার ও অভিভাবক আমার কওমের, সকল

মুসলমানের।সকলেই বললেন, যথোচিত বলেছেন, হে আল্লাহর রাসূল সা.!

সভা শেষ । ইয়াসরিবের আগন্তুকরা রাতের স্তব্ধতার মধ্যে ধীর পায়ে ছড়িয়ে পড়লেন। একজন, দু’জন, তিন

জন।যেভাবে তারা বেরিয়েছিলেন তাবু থেকে, সেভাবেই সংগোপনে ফিরে গেলেন যার যার তাবুতে।বিশ্রামে।

প্রিয় নবী সা. চলে গেছেন মক্কায়। সুমহান সান্নিধ্য থেকে পৃথক হলেন শপথকারীরা। তারা জানেন, অচিরেই সময়

আসছে, যখন খোদার হাবীব তাদের প্রতিবেশি হবেন। তারা সব সময়ের জন্য কাছে পাবেন রহমতের নবীকে সা.।

এখন যে বিদায়, সেটা তো ক’দিনের মাত্র। কিন্তু এ বিদায়ও মেনে নিতে পারেননি চার মহান আশিকে রাসূল সা.।

তাঁরা প্রিয়নবীকে সা. ছেড়ে কোথাও থাকবেন না। এমনকি নিজেদের ঘরবাড়ীতেও না। ইয়াসরিবে ফিরে তারা

প্রশান্ত থাকতে পারলেন না। যাত্রা করলেন মক্কায়, রাসূলে খোদার সা. সান্নিধ্যে। তারা হলেন ১. যাকওয়ান বিন

আবদি কীস রা. ২. উকাবা বিন ওহাব রা. ৩. আব্বাস বিন উবাদা রা. ৪ যিয়াদ বিন লুবাইদ রা.। মক্কাতেই

তারা শুরু করলেন বসবাস।যখন সাহাবায়ে কেরামকে ইয়াসরিবে হিজরতের আদেশ করা হয়, তখনই তারা

মুহাজির হয়ে ফিরে আসেন নিজেদের বাড়ী ঘরে। এ জন্য তাদেরকে বলা হয় আনসার-মুহাজির!

শপথে উজ্জীবিত, নবজাগ্রত একদল মশালচী ইয়াসরিবে ফিরেছেন। তাঁদের সত্যচর্চা ও কল্যাণবিস্তার পেলো নতুন

প্রাণশক্তি। দাওয়াত ও প্রশিক্ষণের শুরু হলো অভিনব মৌসুম। জনপদগুলো মুখর হতে থাকলো আলোর শিহরণে।

নতুন ভোরের কম্পন খেজুর গাছের পাতায় পাতায়। বহু শতাব্দীর অন্ধকার পরাজিত হচ্ছে। শিরক ও কুফুরির

আলকাতরার তলায় চাপাপড়া হৃদয়গুলো তাওহিদের কালিমা উচ্চারণ করে আকাশের দিকে মাথা তুলছে। শপথকারীরা

প্রত্যেওকর সামনে হাজির হতে ধাকলেন দ্বীনের পয়গাম নিয়ে। নেতৃস্থানীয় ও বয়োবৃদ্ধসহ সকলেই তরুণ এই

জীবনবন্যায় তরঙ্গিত হতে থাকলেন একে একে। এ তরঙ্গ হাজির হলো আমর ইবনে জামুহের নিকটে। পূজার জন্য

কাঠের এক প্রতিমা আছে তার। ঘরে থাকে প্রতিমাটি। নিয়মিত তিনি পূজা করে । তিনি শুনলেন তার গোত্র বনূ

সালমার যুবকরা মিুসলমান হচ্ছে। তাগড়া নওযোয়ান অনেকেই চলে গেছেন ইসলামে।ইসলাম ঢুকে গেছে তার

পরিবারেও।তার পুত্র মায়াজ হয়ে গেছেন মুসলিম। গভীর রাতে আমর বিন জামূহ যখন ঘুমিয়ে পড়েন, কে

যেন প্রতিমাকে ঘর থেকে নিয়ে যেতো। ফেলে দিতো ময়লার স্তুপে। ভোরে ইবনে জামূহ ঘরে যখন প্রতিমা পেতেন

না, বেরিয়ে পড়তেন অনুসন্ধানে। তাকে পেতেন ময়লার স্তুপে। তিনি তাকে উঠিয়ে আনতেন অনেক আদরে।

পরিষ্কার করতেন। প্রতিমায় লাগাতেন সুগন্ধি। কিন্তু পরের রাতে ঘটতো একই ঘটনা। কে এমন করছে, তিনি

জানতেন না। প্রতিমার কাছে কি তিনি জানতে চাইবেন কে এমন করে? কিন্তু প্রতিমা তো পারে না বলতে, প্রশ্নের

জবাব দিতে। বিরক্ত আমর জমূহ প্রতিমার গলায় একটি নাঙ্গা তলোয়ার ঝুলিয়ে দিলেন। বললেন ‘ আমি

তো সন্ধান পেলাম না, কে তোমাকে এভাবে অপমান করছে? আজ যদি সে আসে, তুমি তার মাথা উড়িয়ে দেবে।

নিত্যদিনের বিপদ থেকে এভাবেই মুক্তি পেতে পারি। তুমি এতে নিস্ক্রান্ত হবে, আমিও হবো।

রাতের শেষ প্রহর।প্রতিমার গলার তরবারি সরিয়ে নিলেন মায়াজ। একটি মরা কুকুর বেঁধে রাখলেন তার

গলায়।প্রতিমাকে ফেলে এলেন এক ভাগাড়ে। সকালে আমর ইবনে জামূহ দেখতে চাইলেন সেই লোকটির লাশ, যে

প্রতি রাতে প্রতিমাকে অপমান করে চলছে। তিনি দেবতার কামরায় গেলেন। কিন্তু কোথায় সে? ঘরের কোথাও

 

নেই সেই দেবতা। প্রতিদিনের মতো বের হলেন অনুসন্ধানে। তাকে পাওয়া গেলো ভাগাড়ে। গলায় বাঁধা মরা

কুকুর। তলওয়ার উধাও।

নিজের খোদার এই অপমানজনক অবস্থা দেখে তিনি বিধ্বস্ত হলেন। হতাশ হলেন। দেবতার প্রতি চরম বীতশ্রদ্ধ

হলেন। মনে মনে ভাবলেন, তুমি নিজেকে এমন অপমান ও অপদস্ত দশা থেকে বাঁচাতে পারো না, কীভাবে তুমি

বাঁচাবে আমাকে? কীভাবে তুমি নিশ্চিত করবে আমার কল্যাণ ও পরিত্রাণ? তার মানসিক দোলাচল কেবলই তাকে

অনীহ করছিলো দেবতার প্রতি। তখনই হাজির হলেন কিছু যুবক। তারা বলতে থাকলেন এমন এক মহিমান্বিত

প্রভুর কথা, যার কোনো দুর্বলতা নেই। যিনি কোনো কিছুর মুখাপেক্ষি নন। যিনি সকল শক্তি ও ক্ষমতার উrস।

যাকে কেউ তৈরী করেনি। তিনিই বরং সকলকে সৃষ্টি করেছেন। আমর বিন জামূহ বিশ্বজগতের সেই স্রষ্টার

পরিচয়ের জন্য প্রতীক্ষমাণ ছিলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করে নিলেন।

এভাবেই ইয়াসরিবে নানামাত্রায়, নানা কৌশলে চলতে লাগলো দাওয়াতের কাজ। হোটা শহরে প্রতিষ্ঠিত হলো মুসলিম

আধিক্য।হিজরতের জমি প্রস্তুত হয়ে গেলো। হুকুম এসে গেলো। প্রিয় নবীর সা. সাহাবীরা অচিরেই আসতে শুরু

করবেন এখানে। আসবেন হাবীবে খোদাও। ইয়াসরিব হয়ে উঠবে মদীনাতুর রাসূল। সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া আলিহি

ওয়াসাল্লাম।

 

 

 

গ্রন্থপঞ্জী

সহীহ বুখারী -মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ

আল ইস্তিয়াব ফি মা’রিফাতিল আসহাব- মুহাম্মদ ইবনে আবদুল বার

তারিখুর রাসূল ওয়াল মুলূক-মুহাম্মদ ইবনে জরীর তাবারী

সীরাতু ইবনি হিশাম-আবূ মুহাম্মদ আবদুল মালিক ইবনে হিশাম

তাবাকাতুল কুবরা- আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে সাদ ইবনে মানি আল বাসরী

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া – আবুল ফিদা ইসমাইল ইবনে আমর ইবনে কাসীর আল কুরাইশী

রাসূলে রহমত-মওলানা আবুল কালাম আযাদ,

নবীয়ে রহমত-সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদবী

আর রাহীকুল মাখতূম-মাওলানা সফিউর রহমান মুবারকপূরী

 

প্রথম পর্ব পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন

Facebook Comments

Previous Post

যাঁরা তৈরী করলেন হিজরতের জমি — প্রথম পর্ব ।মুসা আল হাফিজ

Next Post

হিউম্যান রাইটস: রঙিন বোতলে পুরনো বিষ। যাহেদ সিদ্দিক মুগল

সাবের চৌধুরী

সাবের চৌধুরী

Related Posts

ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহ.- জীবন ও কর্ম
ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার

ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহ.- জীবন ও কর্ম

September 7, 2021
তাবেঈ রাবী ইবনে খুসাইম: একজন আলোকিত মানুষের আলোকিত জীবন। শারাফাত শরীফ
বিবিধ

তাবেঈ রাবী ইবনে খুসাইম: একজন আলোকিত মানুষের আলোকিত জীবন। শারাফাত শরীফ

July 12, 2021
Next Post
হিউম্যান রাইটস: রঙিন বোতলে পুরনো বিষ। যাহেদ সিদ্দিক মুগল

হিউম্যান রাইটস: রঙিন বোতলে পুরনো বিষ। যাহেদ সিদ্দিক মুগল

Comments 1

  1. Pingback: যাঁরা তৈরী করলেন হিজরতের জমি - প্রথম পর্ব ।মুসা আল হাফিজ - Riwayahbd

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

Recent.

তাসাউফ সম্পর্কে অপপ্রচার ও ভ্রান্তি : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা ।। মাওলানা আনাস চৌধুরী

December 16, 2022
এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

November 28, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি | শেষ পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | তরজমা: হুজাইফা মাহমুদ

November 16, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি—প্রথম পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | ভাষান্তর: হুজাইফা মাহমুদ

November 12, 2022
বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

October 29, 2022

  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

No Result
View All Result
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ

© 2020 রিওয়ায়াহ - Developed by Tijarah IT Limited.