হিজরত নবীজীবনের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। হিজরত শুধু ঐতিহাসিক ঘটনাই নয়, এর মাধ্যমে আমরা
ইসলামের বিশেষ কিছু দার্শনিক, রাজনৈতিক ও ধর্মতাত্ত্বিক অবস্থানের ব্যাখ্যাও পাই। মুসলমানদের
রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনীতির সাথে সম্পর্ক ও মোকাবেলা ; হক ও বাতিলের সংঘর্ষে হকপন্থীদের বিকল্প
প্রস্তাব কেমন হবে, কীভাবে ইসলাম বাস্তবায়ন করতে হবে, হিজরতের মধ্যে এর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা
আছে। হিজরতের ঘটনাকে তাই বিশেষভাবে পাঠ করতে হবে।
আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মানুষকে খলিফা হিসেবে
আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে এই খেলাফতের দায়িত্বে নফস, শয়তান ও বাতিলের বিশেষ বাধা রয়েছে ; বিশেষ
পরিস্থিতিতে মানুষ অক্ষম হয়ে যেতে পারে। পবিত্র কোরআনে এমন পরিস্থিতিতে মানুষকে হিজরতের
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
إِنَّ الَّذِينَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلآئِكَةُ ظَالِمِي أَنْفُسِهِمْ قَالُواْ فِيمَ كُنتُمْ قَالُواْ كُنَّا مُسْتَضْعَفِينَ فِي الأَرْضِ قَالْوَاْ أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللّهِ
وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُواْ فِيهَا فَأُوْلَـئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَسَاءتْ مَصِيرًا
অর্থাৎ, কাফের রাষ্ট্রে থেকে নিজের ওপর জুলুম করতে থাকে, ফেরেশতারা তাদের জান কবজ করে বলে,
তোমাদের ধর্মীয় অবস্থা এমন কেন ? তারা বলে, এখানে তো আমরা অসহায় ছিলাম। ফেরেশতারা বলে,
আল্লাহর জগত তো প্রশস্ত ছিল, তোমরা হিজরত কেন করলে না ? অতএব, এদের বাসস্থান হল জাহান্নাম
এবং তা অত্যন্ত মন্দ স্থান। [ সুরা নিসা ৪:৯৭ ]
এই আয়াতের আলোকে হিজরতের বিশেষ গুরুত্ব ও ধার্মিকতার সাথে তার সম্পর্ক বুঝা যায়। সুনানের মধ্যে
ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ কাজ পরিত্যাগ করাকেও হিজরত হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের এই
লেখায় নবীজির হিজরতের সাথে সংশ্লিষ্ট মৌলিক কিছু মাসায়েল বর্ণনা করবো। মাসায়েল মানে নিছক
প্রশ্ন নয় ; কাশশাফু ইসতিলাহাতিল ফুনুনে মাসআলার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবনা ও আলোচনা। ফলে
এখানে হিজরতের মাসায়েলের অর্থ হিজরত সংশ্লিষ্ট কিছু মৌলিক প্রস্তাবনা ও আলোচনা।
অমুসলিমদের অধীনে মুসলমানদের বসবাস ও দেশত্যাগ-
যে দেশের আইন, রাষ্ট্রক্ষমতা বা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অমুসলিমদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়, সে দেশে
মুসলমানরা থাকতে পারবে কিনা এটি একটি আলোচিত প্রশ্ন। বর্তমানে মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় এক-
তৃতীয়াংশ অমুসলিম প্রধান দেশগুলোতে বসবাস করেন। বর্তমান যুগের আগে এত ব্যাপকভাবে অমুসলিম
দেশে মুসলমানদের বসবাস করার চল ছিল না। অস্থায়ী যাতায়াতের সংখ্যাও ছিল সীমিত।
হিজরতের আলোকে আমরা এই প্রশ্নের আলোচনা করতে পারি। হিজরত না করলে বা না করতে বাধ্য হলে
আপনি অমুসলিম দেশে বসবাস করতে পারবেন। নবীজি নবুওয়ত প্রাপ্তির পরে একটা উল্লেখযোগ্য সময়
অমুসলিম অঞ্চল মক্কায় বসবাস করেছেন। যদি অমুসলিম দেশে থাকা এককাট্টা বা শর্তহীনভাবে হারাম হত, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জন যদি ইসলামের মৌলিক আকিদা ও ধার্মিকতার অংশ হত, তাহলে নবীজি সাঃ
নবুওয়তপ্রাপ্তির সাথেসাথে হিজরত করে মক্কার বাইরে চলে যেতেন। তিনি যাননি। অর্থাৎ কিছু শর্তের
সাপেক্ষে অমুসলিম দেশে থাকার সুযোগ আছে।
ফুকাহায়ে কেরাম অমুসলিম দেশে বসবাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আমার কাছে রাজনৈতিক
ফকীহ ইমাম মাওয়ারেদি রহ.-এর ব্যাখ্যা সবচেয়ে গোছানো মনে হয়েছে। তিনি দেখিয়েছেন, ইসলামের
দৃষ্টিতে কোন অঞ্চলে বসবাসের চারটি ভিত্তি হতে পারে। ক) নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা। খ) আলাদা
সংস্কৃতিতে থাকতে পারার সক্ষমতা। গ) দাওয়াতি কার্যক্রম। ৪) রক্ষার প্রয়োজনে যুদ্ধ করার
সক্ষমতা। এই চার শর্তের ভিত্তিতে ইমাম মাওয়ারেদী রাহঃ সম্ভাব্য পাঁচটি চিত্রের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
আল হাবিউল কাবীর ( খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২২২ )
ইমাম মাওয়ারেদী রহ. বলেন, যারা নিরাপত্তা, ধার্মিকতা ও পৃথক সংস্কৃতি ধরে রাখতে সক্ষম, তারা
অমুসলিম দেশে থেকে যেতে হবে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মুসলিম দেশে ফিরে আসা তাদের জন্য নিষিদ্ধ।
কেননা তারা যতদিন নিরাপত্তা ও অধিকারের সাথে অমুসলিম দেশে থাকতে পারবেন, ততদিন সেখানে দ্বীনের
আলো জারি থাকবে। এই আলো নেভানোর অধিকার কারো নাই। পাশাপাশি দাওয়াত ও রাজনৈতিক সক্ষমতা
গুরুত্বপূর্ণ হলেও ধার্মিকতার শাখাগত বিষয়। এর সক্ষমতা থাকলে মুসলিম দেশে ফিরে আসা আরও
শক্তভাবে হারাম। তবে নিরাপত্তা ও ধর্মীয় জীবনযাপন রক্ষা করা সম্ভব না হলে হিজরত করতে হবে।
আমরা নবীজির জীবন ও শিক্ষার দিকে তাকালেও এর দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। যতদিন মক্কায় ন্যূনতম
নিরাপত্তার সাথে ধর্ম পালন করতে পেরেছেন, ততদিন মক্কাতেই ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়েছেন।
আবু তালিবের মৃত্যুর পর ক্রমশ মক্কায় অনিরাপত্তা প্রবল ও চূড়ান্ত হয়ে উঠলে প্রথমে আবিসিনিয়ায় ও
তায়েফে হিজরত সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে বাইয়াতের দুই চুক্তির ভিত্তিতে নবীজি মদিনায় চূড়ান্ত হিজরত
করেন। হিজরতের অনুমতিপ্রাপ্তির হাদিসে নবীজি নিরাপত্তার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
إن الله قد جعل لكم إخوانًا ودارًا تأمنون بها
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ভাই তৈরি করেছেন, তৈরি করেছেন এমন বাসস্থান যেখানে তোমরা নিরাপত্তা
পাবে। ( বাবুল হিজরাহ ইলাল মাদিনাহ / বেদায়াহ ওয়ান নেহায়াহ )
অমুসলিম আইনের সাহায্যগ্রহণ
মুসলমানরা অমুসলিম আইনের সাহায্যগ্রহণ করতে পারবে কিনা, এটি এই যুগে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক
প্রশ্ন। কেননা আগেই যেমন বলেছি, এখন মুসলমানদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ অমুসলিম দেশে বসবাস করেন।
পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোতেও ধর্মনিরপেক্ষ আইনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে মুসলমানরা
অমুসলিম আইনের সাহায্যগ্রহণ করতে পারবে কিনা, সে নিয়ে বিশেষ প্রশ্ন তৈরি হয়।
হিজরতের আগে নবীজি একাধিকবার অমুসলিম আইন ও ব্যবস্থার সাহায্যগ্রহণ করেছেন। মক্কার সমাজে
শক্তিশালী ব্যক্তিবর্গের দুর্বলদের আশ্রয় প্রদান করার রীতি চালু ছিল। আশ্রয় গ্রহণের মাধ্যমে
দুর্বল ব্যক্তিরা স্বাধীনভাবে ধর্ম ও চিন্তা চর্চার সুযোগ পেতেন। আশ্রয় দাতাদের সামাজিক প্রভাবের
কারণে আশ্রিতদের জীবন ও যাপনে হস্তক্ষেপ করা সম্ভব হত না। আশ্রয়দাতারা যে কোন উপায়ে
আশ্রিতদের নিরাপত্তা প্রদান করতেন।
নবীজির হিজরতের আগের জীবনে আমরা এই বিষয়ক দৃষ্টান্ত পাই। নবীজি তার চাচা আবু তালিবের
আশ্রয়গ্রহণ করেছিলেন। আবু তালিব মুসলমান হননি বটে, তবে সবসময় নবিজিকে আশ্রয় প্রদান
করেছেন। পাশাপাশি আবু বকর রাযিঃ কে ইবনে দাগিনা আশ্রয় প্রদান করেছিলেন। তিনিও তার আশ্রয়
গ্রহণ করেছিলেন। এর থেকে বুঝা যায়, বিশেষ প্রয়োজনে অমুসলিম আইনের সাহায্য গ্রহণ করা যেতে
পারে। এর আলোকে আমরা দেখি, নবীজি আবু তালিবের মৃত্যুর পরে খুব বেশীদিন মক্কায় অবস্থান করেননি।
হিজরতের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কেননা ধারাবাহিক নির্যাতনের মুখে মক্কায় নিরাপত্তা রক্ষা ও
জাহেলিয়াত থেকে মুক্তির প্রশ্নের সমাধান হওয়া সম্ভব ছিল না। নবীজি বলেন,
ما نالت منِّي قريشٌ شيئًا أَكرَهُهُ حتَّى ماتَ أبو طالبٍ
আবু তালিবের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কুরাইশরা আমার অপছন্দনীয় এমন কিছু আমার সাথে করতে সক্ষম
হয়নি। ( সিরাতে ইবনে হিশাম, খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ৫৮ )
অবশ্য আবু বকর রাযিঃ প্রকাশ্যে ইবাদত করা শুরু করলে, ইবনে দাগিনা ব্যক্তিগতভাবে গোপনে
ধর্মপালন করার নির্দেশ দেন, নয়তো তার নিরাপত্তা-আশ্রয় প্রত্যাহার করার হুমকি দেন। আবু বকর
রাযিঃ প্রকাশ্যে ইবাদত পালনে কোন ছাড় না দিয়ে তার নিরাপত্তা-আশ্রয় ফিরিয়ে দেন। এর থেকে বুঝা
যায়, অমুসলিম আইনের সাহায্যগ্রহণের সুযোগ থাকলেও তাতে ইসলামী বিধিবিধানে কাটছাঁটের আশঙ্কা
তৈরি হলে অমুসলিম আইনের আশ্রয় পরিত্যাগ করতে হবে।
قالَ أَبُو بَكْرٍ: إنِّي أَرُدُّ إلَيْكَ جِوَارَكَ، وَأَرْضَى بجِوَارِ اللَّهِ
আবু বকর রাযিঃ বলেন, আমি আপনার আশ্রয় ফিরিয়ে দিচ্ছি। আল্লাহর আশ্রয়ে আমি সন্তুষ্ট। ( বুখারি,
২২৯৭ )
অমুসলিমদের সাহায্যগ্রহণ
আমরা মিশ্র সমাজে বসবাস করি। একদিকে যেমন প্রায় একতৃতীয়াংশ মুসলমান অমুসলিম দেশে বসবাস
করে, তেমনিভাবে মুসলিম দেশগুলোতেও বিপুলসংখ্যক অমুসলিমের বসবাস রয়েছে। সেই ভিত্তিতে অনেক
প্রসঙ্গ ও প্রেক্ষাপটে পারস্পরিক যোগাযোগ, সহযোগিতা ও সমন্বয়ের সুযোগ তৈরি হয়। প্রশ্ন হচ্ছে,
মুসলমানদের জন্য অমুসলিমদের সাহায্যগ্রহণ করা কি বৈধ, নাকি বারা বা ধর্মীয় বিচ্ছিন্নতার অংশ
হিসেবে কোন রকমের সাহায্যগ্রহণের সুযোগ নেই?
নবীজি হিজরতের সময় গাইড হিসেবে একজন অমুসলিমের সাহায্যগ্রহণ করেন। এর থেকে স্পষ্টত বুঝা
যায়, অমুসলিমদের থেকে সাহায্যগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। যদিও এই প্রসঙ্গের অনেক শাখাপ্রসাখা রয়েছে,
প্রত্যেক শাখার বিশেষ বিধান থাকারও সম্ভাব্যতা রয়েছে। তবে মৌলিকভাবে অমুসলিমদের
সাহায্যগ্রহণের সুযোগ রয়েছে, সেটা আমরা হিজরতের প্রস্তাবনায় বুঝতে পারি। মৃত্যুর আগে নবীজি এক
ইহুদী থেকে ঋণ নিয়েছিলেন, তার থেকে বুঝা যায়, পার্থিব কাজে অমুসলিমদের সাহায্যগ্রহণে কোন অসুবিধা
নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে, ধর্মীয় কাজে কি অমুসলিমদের সাহায্যগ্রহণ করা যাবে? এক্ষেত্রে নবীজির থেকে একাধিক
অবস্থান পাওয়া যায়। একদিকে নবীজি বদরের যুদ্ধে আরব মুশরিকের সাহায্যের প্রস্তাব ফিরিয়ে
দিয়েছিলেন ( ১৮১৭ মুসলিম। ২৭৩২ আবু দাউদ। ) তবে পাশাপাশি হুনাইনের যুদ্ধে মুশরিক সাফওয়ান বিন
উমাইয়ার সাহায্যগ্রহণ করেছেন। এখানে নবীজি থেকে একটা দ্বৈত অবস্থান বুঝা যায়।
মুহাদ্দিসিন ও ফুকাহায়ে কেরাম এই দ্বৈততা সমাধানে অনেক ব্যাখ্যা বর্ণনা করেছেন। তবে মৌলিকভাবে
অনেকে প্রথম হাদিসকে মানসুখ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে একে নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে
দেওয়াকেই অনেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন। অবশ্য ইবনে হাজারের মতে যার মধ্যে কুফুরি মূল্যবোধ
প্রণোদনা হিসেবে কাজ করে, তার সাহায্য গ্রহণ করা যাবে না বলে ব্যাখ্যা করেছেন, যা নেতৃত্বের কৌশল
ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গৃহীত হতে পারে। ( ফাতহুল বারী, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৪৭৪ )
সামাজিক কাজে নারীর অংশগ্রহণ
নারীরা যে কোন সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে গতশতকে পশ্চিমা নারীবাদ ও খোলামেলা সংস্কৃতির
প্রসারের পর মুসলিম সমাজে নারীর ভূমিকা নিয়ে কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। একদিকে অনেক নারী যেমন পুরুষ
হয়ে উঠতে চান, নিজেদের সৌন্দর্যকে বিনিময়ের মাধ্যম বানানোর চেষ্টা করেন, অন্যদিকে অনেক পুরুষ
নারীদেরকে কোন সামাজিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে সুযোগ দেন না। অথচ ইসলামের ইতিহাসে খাদিজা-
আয়েশা রাযিঃ থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নারী ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি দেখি। সে তুলনায় দুইশতকে
মুসলিম নারীরা যেভাবে পশ্চিমা প্রভাবিত বা সামাজিক ভূমিকাহীন হয়ে উঠেছেন, তার তুলনা ইসলামী
ইতিহাসে মেলে না। হিজরতের সিলসিলা থেকে আমরা নারীর ভূমিকার শিক্ষাও পাই।
নবীজি ও আবু বকর হিজরতের পথে রওনা দেবার পর আবু জাহেল আবু বকরের ঘরে হামলে পড়ে। প্রচণ্ড
আক্রোশে আসমা রাযিঃকে জিজ্ঞাসা করে, তোমার বাবা কোথায়? আসমা উত্তর দেন, জানি না। প্রচণ্ড ঘৃণায়
আবু জাহেল তাকে চড় মারে। আসমা এই হুমকি ও শারীরিক আক্রমণ সত্ত্বেও হিজরতে বিশেষ ভূমিকা
পালন করেন। তিনি প্রতি সন্ধ্যায় হুজুর সাঃ ও তার পিতার জন্য খাবার নিয়ে যেতেন।
এই তরুণী মেয়ে মক্কার প্রশাসন ও গোয়েন্দা ব্যবস্থার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে হিজরতে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করেন। শুধু তাই নয়, আসমার মনস্তাত্ত্বিক ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। তার দাদা আবু কুহাফা
তখনো ইসলামগ্রহণ করেননি, তিনি আসমাদেরকে বললেন, তোমার বাবা তো তোমাদেরকে অসহায় অবস্থায়
রেখে গেল। উত্তরে আসমা অভিনয় করে দেখান যে, তাদের কাছে এখনো সম্পদ রয়েছে। আবু কুহাফা অন্ধ
হওয়ায় আসমার কৌশল ধরতে পারেননি।
শুধু দাওয়াতি কাজেই নয়, হিজরতে আসমার পারিবারিক ও মনস্তাত্ত্বিক কৌশলও বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য। হিজরতের মৌলিক প্রস্তাবনায় তাই সামাজিক কাজে নারীর অংশগ্রহণের বিষয়টিও
গুরুত্বপূর্ণ। নারীরা আমাদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, পশ্চিমা নারীরা তাদের রোলমডেল নয়, তাদের রোল
হবে, হিজরতের প্রস্তাবনায়, আসমা বিনতে আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা।