Riwayahbd
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ
No Result
View All Result
Riwayahbd
No Result
View All Result

আয়েশা সিলভিয়ার সাক্ষাৎকার। অনুবাদঃ ফারশিদ খান

by সাবের চৌধুরী
December 27, 2020
1 min read
0
আয়েশা সিলভিয়ার সাক্ষাৎকার। অনুবাদঃ ফারশিদ খান
58
SHARES
446
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

( ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে সিল্ভিয়া রোমানো নামে এক ইতালিয় তরুনি কেনিয়া থেকে আল শাবাবের হাতে অপহৃত হন। কেনিয়ার একটি এতিমখানায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছিলেন। এ ঘটনায় বেশ হৈচৈ পড়ে যায় পুরো পৃথিবীতে। বিশেষত তার জন্মভূমি ইতালিতে এ নিয়ে চরম উত্তেজনা তৈরি হয় রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে। আল শাবাবের সাথে দীর্ঘদিন ধরে চলা কূটনৈতিক আলাপ আলোচনা এবং আরও কয়েকটি দেশের মধ্যস্থতায় সিলভিয়া রোমানো মুক্তি লাভ করেন, ২০২০ সালের মে মাসে। ফিরে আসেন নিজের দেশে । কিন্তু ততদিনে তিনি আর আগের সিলভিয়া রোমানো নেই।  নিজ ভূমিতে অবতরণ করেই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন  এখন থেকে তাঁর নাম আয়েশা সিলভিয়া। ইসলাম ভীতিতে আক্রান্ত ইউরোপের মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি স্পষ্টভাষায়  ইসলাম গ্রহনের ঘোষণা দিলেন।

একজন অপহৃত মানুষ কিভাবে অপহরনকারিদের ধর্মকে গ্রহণ করে ফেলে এ এক আশ্চর্যের ঘটনা বটে।  বন্দিশালায় বসে ইসলামের মত এক মহা দৌলত আবিষ্কার করার চমকপ্রদ ঘটনাই বর্ণনা করেছেন এই সাক্ষাৎকারে। ইসলাম,কুরআন,হিজাব শ আরও অনেক বিষয়েই নিজের গভীর অনুভবের কথা জানিয়েছেন তিনি। আল্লাহ তাকে এই দীনের জন্য কবুল করুন,এবং এই দীনের উপর আমৃত্যু অবিচল রাখুন।

সাক্ষাৎকারটি রিওয়ায়াহর জন্য অনুবাদ করে দিয়েছেন ফারশিদ খান।— সম্পাদক)

 

ভিয়া-পাডোভায় আমি আইশা সিলভিয়ার সাথে দেখা করি। আমি তাঁর দিকে এগোচ্ছিলাম, হঠাৎ এক মিশরি নারী তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করল- “তুমি কি সিলভিয়া?”

আমি দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। তাদের কথাবার্তা শুনতে পাচ্ছিলাম না, তবে দু’জনের চোখের পানি দৃষ্টি এড়ায়নি। 

তাঁরা নিজেদের থেকে বিদায় নিলেন। আইশা সিলভিয়া সৌজন্যসূচক হাসি দিলেন। আমাদের সাক্ষাৎকারও শুরু হলো।

 

: (সেচ্ছাসেবী হিসেবে) সেখানে যাওয়া এবং অপহরণের পূর্বে ধর্মের ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল?

– অপহরণের আগে আসলে আমার ধর্মের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ ছিল না, নিজেকে অবিশ্বাসীও বলতে পারতাম।  পৃথিবীতে বিভিন্ন দুর্যোগের কথা শুনে মাকে বলেছিলাম, “যদি সৃষ্টিকর্তা থাকতেনই, তাহলে আমরা এমন খারাপ কিছু দেখতাম না। আমার মনে হয়, সৃষ্টিকর্তা নেই। নাহলে তিনি এত দুঃখ-কষ্টকে জায়গা দিতেন না।” বেশিরভাগ সময় আমি এমনই ছিলাম। আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন, সুখের পিছে ছুটে দিন পাড়ি দিতাম।

 

:তখন আপনার নৈতিক অবস্থান কেমন ছিল?

– আমার কাছে তখন ভাল-মন্দ বিচারের একমাত্র মাপকাঠি ছিল— আমি সেটায় ‘ভালো’ বোধ করি কি-না। এখন বুঝতে পারি, এটা ছিল কেবল বিভ্রম।

 

:আপনার ভেতরে কি সবসময়ই দুর্বলের পক্ষে, অন্যায়ের বিপক্ষে তাড়না ছিল? নাকি আপনার সহানুভুতি হয়েছিল? ঠিক কিসের জন্যে আপনি ইতালি ছেড়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন? 

– কলেজের (আণ্ডারগ্র্যাজুয়েট) শেষ বছর পর্যন্ত দেশের বাইরে স্বেচ্ছাসেবী হবার ব্যাপারে আমার বিশেষ আগ্রহ জন্মায়নি। আমার থিসিসের বিষয় ছিল সেক্স-ট্রেড (যৌন-ব্যবসা)। এটা আমার মধ্যে সামাজিক-সুবিচারের (social-justice) মত ব্যাপারে সহানুভুতি জাগিয়ে তোলে।

 

:আপনি কি আরও সহানুভূতিশীল হয়ে উঠেছিলেন? 

– সহানুভূতিশীল আমি সবসময়ই ছিলাম। শিশু এবং নারীদের নিয়ে চিন্তিত ছিলাম, বিশেষ করে অত্যাচারিত নারীদের ব্যাপারে। এই সহানুভুতি সবসময় আমার মধ্যে ছিল, তবে আরেক ধাপ এগোনোর চিন্তা আসে অনার্স শেষের সময়ে। তারপর মাঠে নামার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলাম। এখানে (ইতালিতে) থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাবার ব্যাপারটা আমার সাথে খাপ খায়নি। আমি অভিজ্ঞতা পেতে চেয়েছিলাম, অন্যদের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠতে চেয়েছিলাম।

 

:আপনি বহুজাতিক প্রতিবেশির মধ্যে বেড়ে উঠেছেন। এই পরিস্থিতিতে আপনার পরিবারের অবস্থান কেমন ছিল? 

– আমি ভিয়া-পাডোভ্যা এবং প্যাক্রো-ট্রটার এলাকায় বেড়ে উঠি এবং স্কুলে যাই। জায়গাটি বহুজাতিক ছিল। আমার বাবা-মা সবসময়য়ই খোলামনের, সহনশীল মানুষ ছিলেন। তাঁরা জাতিগত পার্থক্য করতেন না। আমার বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা বন্ধু ছিল। বাবা-মা আমাকে ভিন্নতাকে তারিফ করতে শিখিয়েছিলেন। মায়ের সাথে আমি অনেক জায়গায় ঘুরতেও যাই। প্রত্যেক গ্রীষ্মে আমরা নতুন নতুন দেশে যেতাম। মরক্কো, ডমিনিকান রিপাবলিক, মিশর, কেপ ভারদে- আরও অনেকগুলো।

 

:বেড়ে ওঠার সময়ে কি আপনার মুসলিমদের সাথে কথাবার্তার সুযোগ হয়? 

– হ্যাঁ, তবে দুর্ভাগ্যবশত, ইসলামের ব্যাপারে কিছুই না জেনে মানুষ যেমন ভাবে, আমিও তেমনই ভাবতাম। যখন ভিয়া-পাডোভায় হিজাব-পরিহিতা নারী দেখতাম, আমিও সাধারণ কুসংস্কারবশত তাকে অত্যাচারিত মনে করতাম। আমার কাছে হিজাব নারীর অত্যাচারিত হওয়াকে প্রতিনিধিত্ব করত।

 

:তাহলে সিলভিয়া রোমানোও কি আরেকজন ইসলামোফোবিক হতে পারত? 

– আমার মধ্যে কুসংস্কার ছিল, তবে আমি ভিন্নতাকে ভয় পেতাম না, আমার ভেতরে শত্রুতাও ছিল না। এমনকি কোনোকিছুর ব্যাপারে আমার নেতিবাচক মত থাকলেও প্রকাশ করতাম না। আমি মানুষকে কষ্ট দিতে চাইতাম না। এখন যারা ইসলাম সম্পর্কে জানে না কিন্তু জোর গলায় মতামত দেয়, তাদেরকে বুঝতে আমাকে আগের কুসংস্কারগুলো সাহায্য করে। এখন আমি বলতে পারি, সেসময়ে আমি মূর্খ ছিলাম। ইসলামকে এড়িয়ে যেতাম, তবুও মতামত রাখতাম। আপনি হয়ত অন্য বিশ্বাসের মানুষের কাছাকাছি বাস করতে পারেন, তাদের ব্যাপারে ‘ধারণা’ও নির্মাণ করেন, কিন্তু সাধারণত তাদের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা হয়ে উঠে না। এমনকি তাঁরা আপনার কাছেই বাস করলেও।

 

কেনিয়ার চাকামা— যেখানে আপনি স্বেচ্ছাসেবি ছিলেন, সেখানে কি কোনো মুসলিম ছিল?

– হ্যাঁ, সেখানে একটি মসজিদ ছিল, মুসলিম ছিল। আমার কাছের এক বন্ধুও মুসলিম ছিল। তবে সেটা আমাকে ধর্মের কাছাকাছি যাবার ব্যাপারে প্রেরণা দেয়নি। শুক্রবারে আমি তাকে আলখেল্লা পড়তে দেখতাম, আমি জানতাম মানুষেরা মসজিদে যাচ্ছে— এটুকুই। আমি ছোট মেয়েদেরও হিজাব পড়তে দেখতাম শুক্রবারে, তবে নির্দিষ্টভাবে এই বিষয়ে আমার আগ্রহ ছিল না।

 

কখন আপনি সৃষ্টিকর্তার নিকটে আসতে শুরু করেন? কখনও কি আপনি নিজের ভেতরে আওয়াজ পেতে শুরু করেন? এমন কোনো চিন্তা– যা আপনার সচেতন মানসে, আপনার অন্তরে একটা জায়গা খুলে দেয়? 

– অপহরণের পর প্রথমদিকে আমি ভাবতে শুরু করি, “আমি এখানে স্বেচ্ছাসেবি হিসেবে এসেছিলাম। আমি ভালো কাজ করছিলাম। তাহলে কেন আমার সাথে এমন হচ্ছে? আমি কি ভুল করেছি? আমার-ই অপহরণের শিকার হওয়াটা কি কাকতালীয় ছিল? কেন অন্য কোনো মেয়ে নয়? কেউ কি এটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে?”

আমি বিশ্বাস করি, এই প্রথম প্রশ্নগুলো অচেতনভাবে আমাকে সৃষ্টিকর্তার কাছে নিয়ে এসেছে। এরপর আমার আধ্যাত্মিক যাত্রা শুরু হয়। এটা কি ভাগ্য ছিল নাকি দুর্ঘটনা— ভেবে আমি যত অবাক হতে থাকি, তত আমার আধ্যাত্মিক যাত্রায় সংগ্রাম চলতে থাকে। আমার কাছে উত্তর ছিল না, কিন্তু সেটা খুঁজে পাওয়া প্রয়োজন ছিল।

 

নিজেকে এমন প্রশ্ন করে কি আপনি ‘ভালো’ অনুভব করেন? 

– নাহ। যতই আমি নিজেকে এমন প্রশ্ন করি, ততই কাঁদতে থাকি, অসুস্থ বোধ হতে থাকে। উত্তর না পেয়ে আমি রাগান্বিত ছিলাম, ক্রমে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছিলাম। আমার কাছে উত্তর ছিল না। আমি জানতাম এর একটা উত্তর আছে, কিন্তু খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমি বুঝতে পেরেছিলাম এখানে শক্তিশালী কিছু একটা আছে, যেটা আমি তখনো খুঁজে পাইনি। আমি বুঝেছিলাম, এখানে গুরুত্বপূর্ণ কারও পরিকল্পনা ছিল।

এই যাত্রার পরবর্তী ধাপ শুরু হয় জেলে থাকা-কালে। সেখানে আমি ভাবতে শুরু করি, “সম্ভবত সৃষ্টিকর্তা আমাকে শাস্তি দিচ্ছেন। তিনি আমার পাপের কারণে শাস্তি দিচ্ছেন, কারণ আমি তাঁর উপর বিশ্বাস রাখিনি, তাঁর থেকে অনেক দূরে ছিলাম।”

পরের জানুয়ারিতে আমি আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করি। আমি তখন সোমালিয়ায় জেলে ছিলাম, রাতের বেলা, ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ ড্রোন-হামলার শব্দ শুনতে পেলাম। আমি কেঁপে উঠি। আমার মনে হলো আমি মারা যাব। এরপর আমি সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করতে শুরু করি যাতে তিনি আমাকে রক্ষা করেন, কারণ আমি আমার পরিবারকে আবারও দেখতে চেয়েছিলাম। আমি তাঁর নিকট আরেকটি সুযোগ চেয়েছিলাম। মৃত্যুকে ভয় পাচ্ছিলাম। এইসময়ে আমি প্রথম তাঁর দিকে ফিরে আসি।

 

উদার হলেও অপহরণকারীরা অযাচিতভাবে বন্দিদের আটকে রেখেছিলেন। তাদের কাজ বেআইনি ছিল। কোনো মানুষ তাদের বিশ্বাসধারণ করতে পারে- সেটা বুঝতে পারাটা কঠিন।

– আমি কুর’আন পড়ি এবং তাতে কোনো অসঙ্গতি খুঁজে পাইনি।  সাথে সাথে বুঝতে পারি এটা আপনাকে বৃহত্তর উত্তমের পথে নিয়ে যাবে। কুর’আন আল-শাবাবের কথা নয়। আমার অনুভূতি ছিল— এটা অলৌকিক। আমার আধ্যাত্মিক তালাশ চলতে থাকে, সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের ব্যাপারে আমি আরও সচেতন হয়ে উঠছিলাম। একসময়ে ভাবতে শুরু করি, এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা আমাকে জীবনে একটি পথ দেখাচ্ছিলেন— যেটা আমি অনুসরণ করতে পারি, আবার না-ও করতে পারি।

 

আপনার কি সেই পরিস্থিতিতে প্রতিহত করার জন্যে শক্তি প্রয়োজন ছিল?

– আরবি শেখার মত কিছু জিনিসে ব্যস্ত থাকার পরও আমি মরিয়া ছিলাম, কারণ ভবিষ্যতের ব্যাপারে আমি একেবারেই অনিশ্চিত ছিলাম। তবে যত সময় যেতে লাগলো, আমার শক্তভাবে মনে হলো, কেবল তিনিই আমাকে সাহায্য করতে পারেন। আর সেই পথও তিনি দেখাচ্ছিলেন।

 

কুর’আনের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল? 

– প্রথমবার আমার কুর’আন শেষ করতে দু’মাস সময় লেগেছিল। দ্বিতীয়বারে আমি একটু সময় নিই, একটু গভীরে গিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। এভাবে ইসলাম গ্রহণের আগ পর্যন্ত প্রতিদিন আমি বোধ করতাম আমার আরও পড়া দরকার। কিছু আয়াত সত্যিই আমার ভেতরে ধাক্কা দিয়েছিল, যেন সৃষ্টিকর্তা আমার সাথেই কথা বলছেন। আমি বাইবেল থেকেও কিছু আয়াত পড়েছিলাম, ইসলাম এবং খ্রিষ্টধর্মের মধ্যে মিলগুলো জেনেছিলাম। পরিশেষে, আমার মনে হলো কুর’আন সুনির্দিষ্ট নীতিমালাসম্পন্ন পবিত্র বাণী, যা আমাকে সৃষ্টিকর্তার পথ দেখাতে পারে।

 

আপনার কি প্রিয় কোনো সূরা আছে? 

– আমি মুসলিম হওয়ার পূর্বে সূরা আনফালের ৭০ নাম্বার আয়াত শিখি- “হে নবী! লোকেরা তোমাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। তুমি বলঃ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য। অতএব তোমরা এ ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্ক সঠিক রূপে গড়ে নাও, আর যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক তাহলে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর।” আমি সূরা ফাতিহাও শিখি, সালাত আদায়ও শুরু করি— যদিও জানতাম না কিভাবে আদায় করতে হয়।

 

আরেকটি আয়াত আমাকে বেশ জোরে ধাক্কা দিয়েছিলঃ “কিরূপে তোমরা আল্লাহকে অবিশ্বাস করছ? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন? অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে সঞ্জীবিত করেছেন, পুনরায় তিনি তোমাদেরকে নির্জীব করবেন এবং পুনরায় তোমাদেরকে জীবিত করা হবে। অবশেষে তোমাদেরকে তাঁরই দিকে প্রত্যাগমন করতে হবে।” (২/২৮)

এছাড়াও, “যদি আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেন তাহলে কেহই তোমাদের উপর জয়যুক্ত হবেনা; এবং যদি তিনি তোমাদেরকে পরিত্যাগ করেন তাহলে তাঁর পরে আর কে আছে যে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে? এবং বিশ্বাসীগণ আল্লাহর উপরেই নির্ভর করে থাকে।” (৩/১৬০)[1]

আমার মনে হয়েছিল, এই আয়াতগুলো সরাসরি আমার সাথে কথা বলছে।

 

মুসলিম হওয়া এবং সালাত আদায় শুরু করার পর ভাগ্যের ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল? আপনি কি মনে করেছিলেন সবকিছু ভালো-ভালোয় যাবে? আপনি কি সবকিছু গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলেন? 

– বিশ্বাস বিভিন্ন পর্যায়ে আসতে থাকে এবং আমার ক্ষেত্রে এর সময়ের সাথে উন্নতি ঘটে। যখন আমি মুসলিম হই, আমি আমার ভাগ্যকে আরও শান্তভাবে দেখি। আমি নিশ্চিত ছিলাম সৃষ্টিকর্তা আমাকে ভালোবাসেন। আমার জন্যে যা ভালো— সেই পথ তিনি আমাকে দেখাবেন।

যখন আমি ভয় পেয়ে যাই, আমার পরিবার এবং ভবিষ্যতের ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে উঠি, তখন আমি প্রার্থনায় শক্তি খুঁজে পাই। যত আমার বিশ্বাস বাড়তে থাকে, তত আমি সৃষ্টিকর্তার নিকট শক্তি এবং ধৈর্য চাইতে থাকি— বিশেষ করে যখন মন খারাপ থাকত।

 

এই যে এখন ভিন্ন এক ব্যক্তি হয়ে গেলেন, বাইরের জিনিস গ্রহণ করেছেন— এমন এক সিদ্ধান্ত যা আপনার জীবন রাতারাতি বদলে দিয়েছে— এই ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? 

– ইসলাম গ্রহণের পূর্বেই একসময়ে আমি মনে করেছিলাম ইসলামই সঠিক অনুসরণীয় পথ। এক মুহূর্তে এমনও মনে হয়েছিল—  আমি ইসলাম গ্রহণের জন্যে প্রস্তুত, কিন্তু মানুষের প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে ভয় হচ্ছিল। আমি প্রায়ই সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করতাম যাতে তিনি আমার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে দেন, সামনে যে সমস্যাগুলো আসবে আমি জানতাম— সেগুলো মোকাবেলা করতে সাহায্য করেন।

 

এখন যে বৈরিতার শিকার হচ্ছেন- এটা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন?

– হ্যাঁ, অবশ্যই। আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ, তাঁর সাহাবীদের জীবনী পড়ে এই ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠি। এটা আমাকে ধারণা দিয়েছিল। মুসলিমরা সবসময়ই অত্যাচারের মুখে পড়েছে।

 

সেটা কেন হয়? আপনার কি মত? 

– কারণ ইসলাম জুলুম, অর্থের ক্ষমতা, দুর্নীতি এবং অসত্যের উপর ভিত্তিশীল সিস্টেমের বিরুদ্ধে যায়। এমন সিস্টেম ইসলামকে হুমকি হিসেবে দেখতে পারে।

 

আপনার মুসলিম হওয়াতে মানুষের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কারণ মনে হয়— মানুষ ভেবেছিল আপনি “যেখানে খুশি যাওয়া”, “যা খুশি করা”, “যেমন ইচ্ছে তেমন পোশাক পরা”র ব্যাপারে স্বাধীন ছিলেন। কিন্তু সেখানে আপনি এমন এক ধর্ম বেছে নিলেন, যেটা তাদের মতে আপনার স্বাধীনতা কেড়ে নেয় এবং পুরুষের অনুবর্তী করে ফেলে। এটা কিভাবে সম্ভব?  

 

– স্বাধীনতার নির্দিষ্ট ভিত্তিশীল ধারণা নেই, বরং ব্যক্তিভেদে একেকরকম। অনেকে মনে করেন, নারীর জন্যে স্বাধীনতা হলো ইচ্ছেমতো শরীর দেখাতে পারা, ইচ্ছেমতো পোশাক পরা— যদিও আপনাকে আসলে সবসময় তাদের ইচ্ছেমতই পোশাক পরতে হবে। আগে আমি নিজেকে স্বাধীন ভাবতাম, কিন্তু বাস্তবে আমি মানুষের আদালতে অবিরত বিচারের (judgement) অধীন ছিলাম। ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে যায় যখন আমি ভিন্নভাবে পোশাক পরা শুরু করি, আর মানুষ আমাকে আক্রমণ করা শুরু করে।

যদি স্বাধীনতা বলতে কেবল নিজ শরীরকে আবিষ্কার করা বুঝায়, তাহলে সেটা এই সমাজের বিরাট একটি সমস্যা। আমার কাছে, হিজাব স্বাধীনতার পরিচায়ক। আমি ভেতরে অনুভব করি— সৃষ্টিকর্তা চান আমি নিজের মর্যাদা এবং সম্মান বৃদ্ধির জন্যে হিজাব পরিধান করি। আমি জানি, আমার শরীর ঢাকার ফলে মানুষ প্রথমে আমার অন্তরকে দেখবে। মানুষ আমাকে যৌন-উদ্দীপনার বস্তু না বানানোই আমার কাছে স্বাধীনতা।

 

আপনি কি এখন চলাফেরা, কাজে বা মানুষের সাথে দেখা করতে ‘কম স্বাধীনতা’ অনুভব করেন?

– যখন আমি বাইরে থাকি, আমার অনুভব হয় মানুষ আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি জানিনা, তারা চিনতে পেরে তাকাচ্ছে, নাকি হিজাবের কারণে। আমার মনে হয়, ইতালিয়ান হিসেবে আমার পোশাকের ধরণ দেখে মানুষ বিস্মিত। তবে এটা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। আমি অনুভব করি আমি স্বাধীন এবং সৃষ্টিকর্তা আমাকে নিরাপদে রাখছেন।

 

আপনি কিভাবে নিজের নাম বাছাই করেন?

– এক রাতে আমি স্বপ্নে দেখি আমি ইতালিতে। আমি সাবওয়েতে যাচ্ছিলাম, আমার মেট্রোকার্ডে নাম লেখা ছিল “আইশা”।

 

আপনার কি মনে হয় আপনি এখন ব্যক্তি হিসেবে উত্তম?

– আমি এখন বেশি ধৈর্যশীল, আমার বাবা-মার প্রতি অধিক শ্রদ্ধাশীল— যেটা সবসময় ছিল না, বেশি উদার এবং অধিক সহানুভূতিশীল। যখন কেউ আমার সাথে ভুল কিছু করে, এমনকি যদি কষ্ট দেওয়ার মত কিছু করে— আমি বিরক্ত বা ক্ষুব্ধ হই না। পাল্টা কষ্ট দেবার মত কিছু দিয়ে জবাব দিতে ইচ্ছে হয় না। বরং আমি ঐ ব্যক্তিকে বুঝার চেষ্টা করি। আমার মনে হয়, তার এমন করার কারণ সে কিছুতে ভুগছে। তাই সম্ভব হলে আমার অবশ্যই তাকে সাহায্য করা উচিৎ।

 

ইতালির ইসলামিক কমিউনিটি থেকে আপনার আশা কেমন ছিল?

– মুসলিমদের সাথে পরিচিত হবার জন্যে আমি আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। ভেবেছিলাম এটা কঠিন হবে। আমার পরিকল্পনা ছিল ভিয়া-পাডোভায় যাওয়া, কোনো দোকানে বা ইসলামি মাংসের দোকানে গিয়ে বলা- “আসসালামু আলাইকুম”। মানুষ যেভাবে আমাকে চিনেছে, সেটা আমার আগে কল্পনাতেও আসেনি। আমি ভেবেছিলাম রমযান আমাকে একা একা কাটাতে হবে। সেখানে আমি পেয়ে বসলাম উপহার, অগণিত চিঠি এবং গোটা ইতালি থেকে বহু মুসলিমের সমর্থনসূচক ভিডিও, যেটা লা-লুসে  পাবলিশ করেছে। আমি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যাই। সবার কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ।

 

এই কমিউনিটির কোন ব্যাপারটা আপনাকে সবচেয়ে অবাক করেছে?.

– প্রথমত, আমি আশা করিনি এত ইতালিয়ান মুসলিম রয়েছেন। ভেবেছিলাম আমি মূলত মিশরি, মরক্কো বা আফ্রিকা থেকে আসা মুসলিমদের সাথে দেখা করব। সেখানে, প্রথমেই দেখা করা হয়  ইতালিয়ান মুসলিমদের সাথে। এটা আমাকে ভীষণ অবাক করেছিল। তাদের সংহতি আমার ভেতরে জোরে নাড়া দেয়, সেটা শুধু মিলানেই না— সবখানে। আমার কাছে এটা দ্বিতীয় পরিবারের মত।

 

এরপর আমি নতুন আরেকটি বাস্তবতা দেখতে পাই।  মিলান ও মিলানের বাইরের মুসলিম কমিউনিটির সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন সংগঠন— যারা দুর্বল, ক্ষতির সম্মুখীন এবং জুলুমের শিকার মানুষদের সাহায্য করার কাজে নিয়োজিত। বিশেষভাবে প্রগেটো আইশা’র (Progetto Aisha) প্রতি আমি আকর্ষণ বোধ করি, যারা লিঙ্গ-সম্পর্কিত বিষয়াদি নিয়ে কাজ করে। এই সকল উদ্যোগ আমাকে অংশগ্রহণ করতে, কাজ করতে অনুপ্রাণিত করছে।

[1] প্রফেসর ড. মুজিবুর রহমানের কুর’আনের অর্থের অনুবাদ থেকে আয়াতগুলোর বাংলা নেওয়া হয়েছে।

Facebook Comments

Previous Post

ফিকহুল হিজরাহ : হিজরতের কয়েকটি শিক্ষা। ইফতেখার জামিল

Next Post

দ্যা ফোর্টি রোলস অফ লাভঃ সুফিবাদের ইউটোপিয়া। হুজাইফা মাহমুদ

সাবের চৌধুরী

সাবের চৌধুরী

Related Posts

ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহ.- জীবন ও কর্ম
ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার

ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহ.- জীবন ও কর্ম

September 7, 2021
তাবেঈ রাবী ইবনে খুসাইম: একজন আলোকিত মানুষের আলোকিত জীবন। শারাফাত শরীফ
বিবিধ

তাবেঈ রাবী ইবনে খুসাইম: একজন আলোকিত মানুষের আলোকিত জীবন। শারাফাত শরীফ

July 12, 2021
Next Post
দ্যা ফোর্টি রোলস অফ লাভঃ সুফিবাদের ইউটোপিয়া। হুজাইফা মাহমুদ

দ্যা ফোর্টি রোলস অফ লাভঃ সুফিবাদের ইউটোপিয়া। হুজাইফা মাহমুদ

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

Recent.

তাসাউফ সম্পর্কে অপপ্রচার ও ভ্রান্তি : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা ।। মাওলানা আনাস চৌধুরী

December 16, 2022
এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

November 28, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি | শেষ পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | তরজমা: হুজাইফা মাহমুদ

November 16, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি—প্রথম পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | ভাষান্তর: হুজাইফা মাহমুদ

November 12, 2022
বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

October 29, 2022

  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

No Result
View All Result
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ

© 2020 রিওয়ায়াহ - Developed by Tijarah IT Limited.