Riwayahbd
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ
No Result
View All Result
Riwayahbd
No Result
View All Result

“রাষ্ট্রের কাছে তো ফতোয়া চাওয়া হচ্ছে না, রাষ্ট্রীয়ভাবে শুধু ঘোষণাটা চাওয়া হচ্ছে” । মাওলানা আবু সালমানের সাক্ষাতকার

by সাবের চৌধুরী
February 7, 2021
1 min read
0
“রাষ্ট্রের কাছে তো ফতোয়া চাওয়া হচ্ছে না, রাষ্ট্রীয়ভাবে শুধু ঘোষণাটা চাওয়া হচ্ছে” । মাওলানা আবু সালমানের সাক্ষাতকার
25
SHARES
191
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

কাদিয়ানি ধর্মের ভেতরগত নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে জনাব মাওলানা আবু সালমান সাহেবের সাথে। তিনি ঢাকার বিশিষ্ট দাঈ ও কাদিয়ানি ধর্ম বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আলেম। অনেক দিন যাবত তিনি দেশের কাদিয়ানি ফেতনা নিয়ে কাজ করছেন। এদের স্বরূপ দেখতে এবং মুসলমানদেরকে সচেতন করতে সফর করেছেন দেশের প্রায় সবগুলো জেলায়। কাদিয়ানি ধর্মের উপর তার রয়েছে বিস্তর পড়াশোনা ও গবেষণা। এ সাক্ষাতকারে উঠে এসেছে কাদিয়ানিদের জানা-অজানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক।

 

সাবের চৌধুরী :

কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের পরিচয় সূচনা ও বিকাশ এর দিকে না গিয়ে একটু ভেতরের কিছু বিষয় জানতে চাইবো। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি নিজের ব্যাপারে পর্যায়ক্রমে নানা রকমের দাবি করেছেন। নবুওয়াতের দাবিটা ঠিক কখন করেছেন এবং এর ধরণটা কী ছিল?

আবু সালমান :

মির্যা কাদিয়ানি প্রথমেই নবুওয়াতের দাবি করেনি। ১৮৮০ সন থেকে তার দাবির ধারাবাহিকতা শুরু হয়। প্রথমে দাবি করে মুজাদ্দিদ, মুলহাম, মামুর মিনাল্লাহ ইত্যাদি। তার জীবনের প্রথম বড় কিতাব, যার ব্যাপারে সে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালিয়েছিলো, সে কিতাবে সে দাবি করে যে, কারো কাছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ইলহাম হতে পারে, এবং ইলহাম অকাট্য ও সংশয়হীন। এখান থেকে মূলত তার একটা প্ল্যান ছিল যে, একসময় সে নবুওয়াত দাবি করবে।

১৮৯১ সন থেকে তার দ্বীতিয় পর্যায় শুরু হয়, যখন সে মাহদী এবং মাসীহ ইবনে মারইয়াম হওয়ার দাবি করে। ‘বারাহীনে আহমদিয়্যাহ’তে ঈসা আ. পুনরায় আগমনের কথা স্বীকার করলেও এ পর্যায়ে এসে তা প্রত্যাখ্যান করে। তার নতুন সিদ্ধান্ত হলো—হযরত ঈসা আসবেন না; মারা গেছেন। তার স্থলে এসেছি আমি মাসীহ ও মাহদি হয়ে। তখন দিল্লীসহ কোন কোন এলাকার আলেমগণ তার উপর কুফুরের ফতোয়া দেন। তখন সে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিল, আমি নবুওয়াত দাবি করিনি। বরং এমন দাবি যে করবে তাকে আমি কাফের মনে করি।

১৮৯১ সনে মির্যা কাদিয়ানি একটি কিতাব লেখে ‘ইযালায়ে আওহাম’ নামে। এ কিতাবের অনেক জায়গায় বলেছে—আল্লাহর রাসূল শেষ নবী, তারপরে কোন নবী হতে পারে না। অন্য এক কিতাবে বলেছে—যে নবী হওয়ার দাবি করবে সে কাফের। ওহীর দরজা বন্ধ। অবশ্য সেখানেও কিছু ফাঁক রেখে দিয়েছিল। বলেছিল, নবী না হলেও কেউ মুহাদ্দাস হতে পারে, মুহাদ্দাস শক্তি ও যোগ্যতার দিক দিয়ে নবীর মত। এরপর তৃতীয় পর্যায়টা শুরু হয় ১৯০১ সন থেকে। এ বছর সে নবুওয়াত দাবি করে এবং তার মুরিদদের থেকে যারা তাকে নবী বলে স্বীকার করে না, তাদের ভুল সংশোধন করে দেওয়ার জন্য একটা বইও লেখে—‘এক গলতি কা ইযালা’ নামে।

 

 

সাবের চৌধুরী :

নবুওয়াত দাবি করতে গিয়ে সে কখনো জিল্লি নবী বা বুরুজি নবী হওয়ার কথাও বলেছে।

আবু সালমান :

হ্যাঁ, এগুলো অনেকটা প্রটেকশনের মত। জিল্লি বা বুরুজি—ইসলামে এর কোন ভিত্তি নাই।

 

 

সাবের চৌধুরী :

জিল্লি বা বুরুজি দিয়ে সে আসলে কী বুঝাতে চেয়েছে?

আবু সালমান :

এটা মির্যা কাদিয়ানির একটা বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি। সে বুঝাতে চায়—মির্যা কাদিয়ানির নবুওয়াতটা তার নিজস্ব কোন নবুওয়াত না। বরং, সে হুবহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। নাউযুবিল্লাহ। এক গলতি কি ইযালাহ, যার বাংলা অনুবাদ ‘একটি ভুল সংশোধন’ নামে বকশি বাজার থেকে প্রকাশিত হয়। এর ৪র্থ পৃষ্ঠায় এটা আছে। সেখানে সে বলেছে—কুরআনুল কারীমের محمد رسول الله والذين أمنوا معه أشداء… আয়াতটি আমার উপর নাযিল হয়েছে। এবং এখানে محمد رسول الله বলে বুঝানো হয়েছে আমাকে। এমনকি এ কথাও বলেছে—আমি আল্লাহর রাসূলের সঙ্গে বিলীন হয়ে একদম এক হয়ে একেবারে তার ‘জিল্ল’ (ছায়া) হয়ে গেছি। যার কারণে তার গুনাবলী চরিত্র সবকিছু যেমন আমার কাছে এসেছে, তেমনি তার নবুওয়াতটাও আমার কাছে এসেছে।

এ হলো তার আবিস্কৃত ‘জিল্লি নবুওয়াত’ এর অর্থ। মির্জা কাদিয়ানির ছেলে মির্যা বশীর ‘কালিমাতুল ফসল’ কিতাবের ২৩ পৃষ্ঠায় বলেছে—জিল্লি নবুওয়াত কোন নিম্নস্তরের নবুওয়াত নয়। বরং সকল নুবওয়াতের মাথার মুকুট। এর কারণে মির্যা কাদিয়ানির মর্যাদা হুবহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমান।

আর, বুরুজি নবী দিয়ে বুঝাতে চায় সে আল্লাহর রাসূলের দ্বিতীয় প্রকাশ। বুরুজ মানে হলো প্রকাশ। এই আকীদাটি কাদিয়ানিদের কাছে ‘বি’ছাতে ছানীয়া’ বা দ্বিতীয় প্রেরণ নামে প্রশিদ্ধ। মির্যা কাদিয়ানি স্পষ্টভাবে বলেছে, যে আমার ও মুহাম্মাদের মাঝে ব্যবধান করবে, সে আমাকে চিনেনি। (খুতুবাতে ইলহামিয়া, রুহানি খাজায়েন-১৬:২৫৮)

 

 

সাবের চৌধুরী :

এটা তো হিন্দুদের পুনর্জন্মের বিশ্বাসের মত হয়ে গেল। মির্যা কাদিয়ানি ও তার অনুসারীরা কি এই পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে?

আবু সালমান :

এরা এই শব্দ স্বীকার করে না; কিন্তু, তাদের বক্তব্য থেকে তো এটাই বুঝে আসে। এ কারণে উলামায়ে কেরাম বলেন, মির্যা কাদিয়ানির মধ্যে হিন্দুদের মত পুনর্জমের বিশ্বাসও ছিল।

 

 

সাবের চৌধুরী :

মির্যা কাদিয়ানি নানা সময়ে নিজের ব্যাপারে নানা কিছু হওয়ার দাবি করেছে। তো, বর্তমানের কাদিয়ানি মতবাদে বিশ্বাসী লোকজন তাকে ফাইনালি কী হিসেবে মানে?

আবু সালমান :

এখানে দুইটা বিষয়। মানার বিষয় ও প্রকাশের বিষয়। ওরা কিন্তু নবী হিসেবেই মানে, কিন্তু প্রকাশ করে না এটা। তাদের অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি প্রচার ওয়েবসাইট ইত্যাদিতে দেখবেন, টাইটেলে এরা কখনো তাকে নবী হিসেবে উল্লেখ করে না। শুধু ঈসা ও মাহদী হিসেবে দেখায়। বিভিন্ন বইয়ের শুরুতে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানির নীচে লেখে ‘প্রতিশ্রুত মাসীহ ও মাহদি’। কিন্তু ভেতরে গেলে আপনি পাবেন। এ পর্যন্ত অনেক কাদিয়ানির সাথে আমার কথা হয়েছে। মুআল্লিম পর্যায় থেকে নিয়ে সাধারণ কাদিয়ানি পর্যন্ত। দেখা যায় শেষমেশ তারা এটা জানে যে, মির্যা নবুওয়াত দাবি করেছে এবং বাস্তবে তারা মানেও; কিন্তু প্রথমে তারা এটা স্বীকার ও প্রচার করে না।

তারা বলে আমরা ইমাম মাহদি ও মাসীহ বলে মানি। পঞ্চগড়ে একজনের সাথে কথা বলতে গিয়ে শেষে যখন নবুওয়াত দাবি করেছে মর্মে রেফারেন্স দিলাম, তখন সে বললো এটা জিল্লি ও বুরুজি নবী। বুঝাতে চায় এটা আসলে সত্যিকার অর্থে নবুওয়াতের দাবি না। বিষয়টা তারা হালকা করে লুকিয়ে ফেলতে চায়। পাকিস্তানে যখন তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করার মামলা উঠলো, তখনও তারা এ কথা বলে লুকাতে চেয়েছে। কিন্তু এটর্নি জেনারেল তাদের রেফারেন্স থেকে দেখিয়ে দিয়েছেন তোমাদের কাছে এটা অনেক উঁচু স্তরের নবুওয়াত, অন্য কোন নবী যার হকদার ছিলেন না।

তারা যখন কাউকে দাওয়াত দেয়, তখনও এই পলিসি গ্রহণ করে। নবুওয়াতের কথাটা স্বীকার করে না। প্রশ্ন তুললে বলে দেয়—এটা আলেমদের মিথ্যা প্রচার। অনেকের সাথে আমার দেখা হয়েছে, যারা প্রাথমিক অবস্থায় আছে, এবং নবুওয়াত দাবি করার বিষয়টি জানেই না। তাদের থেকে ইচ্ছে করেই গোপন রাখা হয়। এরপর যখন তাকে ভ্রান্তির গভীরে নিয়ে যায়, তখন প্রকাশ করে; কিন্তু সে সময় আর এই ব্যক্তির ফিরে আসার অবস্থা থাকে না। কারণ, ততদিনে সে ওয়াশড হয়ে গেছে এবং তাদের নানা কুসংস্কার পালনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

 

 

সাবের চৌধুরী :

ওরা যে ভেতরে ভেতরে আসলে তাকে নবী হিসেবে মানে, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হবো কী করে?

আবু সালমান :

দেখুন, ওদের লেখা অনেক বই আছে এ ব্যাপারে। উদহারণ স্বরূপ আমি কয়েকটা রেফারেন্স বলি। বাংলাদেশে কাদিয়ানিদের মূল কেন্দ্র ঢাকার বকশি বাজার থেকে প্রচারিত হয়েছে ‘এক গলতি কা ইজালা’র তরজমা ‘একটি ভুল সংশোধন’ নামে। পেছন বলেছি, বইট মির্যা রচনাই করেছিল নিজের নবুওয়াত প্রমাণ করার জন্য। ‘দাফেউল বালা’ গ্রন্থটিরও বাংলা বের হয়েছে। এর ১২ নং পৃষ্ঠায় আছে, সত্য খোদা তিনি যিনি কাদিয়ান গ্রামে তার রাসূলকে পাঠিয়েছেন। আরেকটা বই আছে—নুবওয়াত ও খেলাফাত। এর ৭৭ নং পৃষ্ঠায় আছে—মির্যার বড় ছেলের রেফারেন্সে : সারা জগতকে জানিয়ে দাও কাদিয়ানে আল্লাহর রাসূল আবির্ভুত হয়েছেন। তার নাম মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি। এটা ওদের মৌলিক আকিদার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তারা এটা প্রকাশ করে না, কারণ মুসলিম সমাজের সামনে তারা সাহস করে না। তাছাড়া যাকে দাওয়াত দিচ্ছে প্রথমেই সে এটা মানতে চাইবে না।

 

 

সাবের চৌধুরী :

কাদিয়ানি ইস্যুটি জনপরিসরে সাধারণত খতমে নবুওয়াতের সূত্রে আলোচিত হয়। খতমে নবুওয়াতের বিষয়টি ছাড়া কাদিয়ানি মতবাদের উপর শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে আর কী কী আপত্তি আছে? এবং সেগুলো কোন পর্যায়ের?

আবু সালমান :

খতমে নবুওয়াতের বিষয়টি ছাড়াও নানা রকমের ও নানা পর্যায়ের অনেক আপত্তিকর বিষয় আছে। ফলে, এক মিনিটের জন্য যদি ধরেও নেই তারা খতমে নবুওয়াত অস্বীকার করে না, তবুও তারা নানা কারণে কাফের থেকে যায়। এই স্বল্প পরিসরে আসলে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব না। উদাহরণ স্বরূপ যেমন, নবীগণের শানে গোস্তাখি। বিশেষ করে ঈসা আ. ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে। একটা উদাহরণ, যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলেছে, আল্লাহ তাআলা শুধুমাত্র চন্দ্রগ্রহণের মাধ্যমে তার মুজিযা প্রকাশ করেছেন, কিন্তু আমার মুজিযা প্রকাশ করেছেন চন্দ্র ও সূর্য উভয়টির গ্রহণের মাধ্যমে। এরপরেও তোমরা আমাকে কিভাবে অস্বীকার করো? (এ’জাজে আহমদি, রুহানি খাজায়েন-১৯:১৮৩)

এরপর আরেক জায়গায় সে দাবি করেছে তার আধ্যাত্মিকতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লামের আধ্যাত্মিকতার চেয়ে অনেক শক্তিশালি। (খুতবায়ে এলহামিয়া, রুহানি খাজায়েন-১৬:২৭১ ও ৭২) এই কথাগুলো তো স্বয়ংসম্পূর্ণ কুফুরি। এরপর, মির্যার তাজকেরা কিতাবের ৫১৯নং পৃষ্ঠায় ঘোষনা দিয়েছে তাকে নবী হিসেবে মানে না এমন সকল মুসলমানকে সে কাফের। তার মুরিদ ড. আবদুল হামিদ খানকে দল থেকে বের করে দিয়েছে শুধু এই আকদাটি না মানার কারণে। (কালিমাতুল ফসল-৩৫) এবং কাদিয়ানিদের আকীদাও এটা। এর সাথে আছে কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াতের বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা।

 

 

সাবের চৌধুরী :

আমরা জানি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি নানা রকম জটিল রোগে জীবনভর আক্রান্ত ছিলেন। এমন সম্ভাবনা কি আছে যে, তিনি কোন রোগের কারণে ‘গায়েবি’ আওয়াজ শুনে বিভ্রান্ত হতেন?

আবু সালমান :

তার জটিল জটিল নানা রোগ ছিল্। এর মধ্যে একটা রোগ ছিল, উর্দুতে একে মারিক বা মালিখুলিয়া রোগ বলা হয়। বাংলায় তরজমা হয়েছে মস্তিস্কবিকৃতি। তো, তার নানা উদ্ভট দাবি দাওয়া ছিল। যেমন মরিয়ম হওয়ার দাবি। (হাকিকাতুল ওহী, বাংলা-৬২) এমনকি সে গর্ভবতী হওয়া ও গর্ভপাতের দাবি পর্যন্ত করেছে। (কিশতিয়ে নূহ, বাংলা-৬৫)

এরকমের উদ্ভট দাবিগুলো মস্তিষ্ক বিকৃতির কারণে ঘটতে পারে। কিন্তু তার যে ঈসা মসীহ, মাহদী হওয়া বা নবুওয়াত দাবি করা—ইত্যাদি বিষয়গুলো এ কারণে করেছে তা আমার মনে হয় না। কারণ, সে এসবকে প্রমাণ করার জন্য পরবর্তিতে সে কুরআন ও হাদীসের নানা অপব্যাখ্যা পেশ করেছে। দাবিগুলো মস্তিষ্ক বিকৃতির কারণে হলে সে এই অপব্যাখ্যার আশ্রয়ে যেত না। তার সামগ্রিক তৎপরতা দেখলে স্পষ্ট বুঝা যায় সে শুরু থেকে একটা পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে। মোলিক দাবিগুলো তার সে প্ল্যানের অংশ।

 

 

সাবের চৌধুরী :

মির্যা কাদিয়ানির একাডেমিক যোগ্যতা কেমন ছিল? শরীয়াহ ও জেনারেল উভয়দিক থেকেই।

আবু সালমান :

মির্যা গোলাম আহমদ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিযে নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা অর্জন করেনি। বাড়িতে এসে কয়েকজন উস্তাদ পড়িয়ে যেতেন। তিনজন উস্তাদের কথা জানা যায়। ফজল আহমদ, ফজল এলাহি ও গুল আলি শাহ। তিনজন তিন শ্রেণীর। একজন হানাফি, একজন শিয়া, একজন গাইরে মুকাল্লিদ। নাহু সরফ মানতেকের কিছু কিতাব পড়েছে। (বিস্তারিত জানতে—রুহানি খাজায়েন-১৩:১৭৯-১৮১) এবং নিজের পিতার কাছে কিছু ডাক্তারি বিদ্যা পড়েছে। তার বাবা হাকিম ছিলেন। পরবর্তিতে বিভিন্ন ধর্মের কিতাবাদি সে প্রচুর পড়েছে। শিয়া, হিন্দু, আর্য সমাজ  ইত্যাদি। এ কারণে দেখা যায় তার বিভিন্ন দাবিও সে সকল ধর্মের অনেক দাবির সাথে মিলে যায়।

 

 

সাবের চৌধুরী :

কুরআন হাদীসকে মূল উৎস থেকে বুঝার মত যোগ্যতা তার ছিল না, বিষয়টি কি এমন?

আবু সালমান :

হ্যাঁ, সে রকম যোগ্যতা তার ছিল না। বিভিন্ন আয়াত ও হাদীসের অপব্যবহার ও অপব্যাখ্যা যা করতো, সেগুলোর মূল হোতা ছিল তার একান্ত সহচর হাকিম নূরুদ্দিন। আমাদের কাছে ‘মাকতুবাতে আহমদ’ নামে মির্যা কাদিয়ানির চিঠির সংকলনটি আছে। এখানে এক চিঠিতে দেখা যায় মির্যা কাদিয়ানি হাকিম নূরুদ্দিনকে বলছে, আপনি যে মসীহ দাবি করার কথা বলছেন, আমার আসলে নিজেকে মাসীহ দাবি করার ইচ্ছে নেই। এর দ্বারা বুঝা যায় কখন কোন দাবি করতে হবে, কী বলতে হবে এগুলোর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে হেকিম নূরুদ্দিন। তবে সবটাই যে নূরুদ্দিন করে দিত তা নিশ্চয়ই হবে না। সে নিজে নিজেও কিছু পড়াশোনা করেছে। কিন্তু নিজে কুরআন হাদীস ভালভাবে অধ্যয়ন করে দক্ষতার সাথে ‍বিকৃত করতে পারবে এমন একাডেমিক শক্তি তার ছিল না। এটা তার রচনাবলীর দিকে তাকালেই বুঝা যায়। কিন্তু তার দাবি ছিল বিরাট। তার খুতুবাতে ইলহামিয়া কিতাবটির ক্ষেত্রে সে দাবি করেছে কুরআনের শব্দ যেমন ‘মুজিয’, আমার এই কিতাবের শব্দও তেমন মুজিয। আমার পরিচিত এক আরব শায়েখ আছেন, ‍যিনি এর ভাষাগত অনেক ভুল বের করে দেখিয়েছেন।

 

 

সাবের চৌধুরী :

তাদের দ্বীতিয় খলীফা নির্বাচনের সময় নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়ে মুহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে একটা অংশ আলাদা হয়ে যায়। পরবতীতে বিচ্ছিন্ন দলটি ‘লাহোরি জামাত’ নামে পরিচিত হয়। এ দুই দলের আকীদার মধ্যে ব্যবধান কতটুকু?

আবু সালমান :

লাহোরি জামাত মোট চারটি বিষয়ে অন্য কাদিয়ানিদের থেকে নিজেদেরকে আলাদা বলে প্রচার করে। এক. মির্জা গোলাম আহমদ নবী নয়; ঈসা মসীহ, মাহদি, মুজাদ্দিদ ইত্যাদি। বিপরীতে মূল ধারার কাদিয়ানিরা তাকে নবী হিসেবে মানে। দুই. মির্যা কাদিয়ানিকে মানে না এমন মুসলমান কাফের নয়, পথভ্রষ্ট। মূলধারা সকলকে কাফের মনে করে। এ দুটো হলো মূল। আরেকটা বিষয় হলো তারা মনে করে—কাদিয়ানি জামাতটি কোন আধ্যাত্মিক খেলাফতব্যবস্থা নয়; সংগঠন। মূলধারা একে খেলাফতব্যবস্থা হিসেবে পালন করে। চার. মির্যা কাদিয়ানি বলে গিয়েছিল আল্লাহ আামার সন্তানদের থেকে একজন মুসলিহ দান করবেন। একে তারা মুসলিহে মাওউদ বলে স্মরণ করে। মূল ধারাটির দাবি হলো সে মুসলিহ হলো বড় ছেলে মির্যা বশিরুদ্দিন মাহমুদ। লাহোরি জামাত তা স্বীকার করে না।

কিন্তু এখানে মনে রাখতে হবে, এই ব্যবধান কিন্তু লাহোরি জামাতের লোকজন প্রথমে মানতো না। বরং, মির্যা কাদিয়ানির সমস্ত কিছু মেনে নিয়েই তার দলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব হওয়ার পর তারা এগুলো সৃষ্টি করে নিয়েছে। অন্যথায় স্বয়ং মুহাম্মদ আলীর পূর্বের অনেক বক্তব্য আছে, যেখানে সে নবী বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।

 

 

সাবের চৌধুরী :

এখন তারা যে ব্যবধানগুলো প্রচার করে, বর্তমানে এগুলো কি তারা সত্যই মা্ন্য করে?

আবু সালমান :

দেখুন, ওরা এখন এই ব্যবধানগুলো প্রচার করছে ঠিক, কিন্তু যেখানে মির্যা স্বয়ং নিজেকে অসংখ্যা বার নিজেকে নবী হিসেবে দাবি করেছে, মুসলমানদেরকে কাফের বলে ঘোষণা দিয়েছে, এসব যারা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে বই লিখেছে, তাদেরকে জামাত থেকে বের করে দিয়েছে, সেখানে তারা মির্যাকে মানবে আবার এগুলো স্বীকার করবে না, তা হয় কী করে? তারা তো মির্যা নবুওয়াত দাবি সংক্রান্ত বক্তব্যগুলোকে মিথ্যা বলে না। ফলে, লাহোরি জামাতের এই ব্যবধান-প্রচার আসলে ধোপে টিকে না।

 

 

সাবের চৌধুরী :

উলামায়ে কেরাম কি উভয় দলকেই কাফের বলেন? নাকি কোন ব্যবধান করেন?

আবু সালমান :

উভয় দলই কাফের। উলামায়ে কেরাম এ ক্ষেত্রে কোন ব্যবধান করেননি। প্রসঙ্গত আল্লামা ইকবাল প্রথম দিকে লাহোরি দলের ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় ছিলেন, কিন্তু, পরবর্তীতে তার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, দুই দল মূলত একই গাছের দুইটি ডাল। পাকিস্তানে কাফের বলে রায় হওয়ার আগে কাদিয়ানিদের মূল ধারার উপর তের দিন এবং লাহোরি জামাতের উপর তিনদিন—মোট ষোল দিন জেরা হয়। এরপর উভয় দলকেই কাফের ঘোষণা করা হয়।

 

 

সাবের চৌধুরী :

বর্তমানে কি লাহোরী জামাতের অস্তিত্ব আছে? আমাদের দেশে বা পাকিস্তানে অথবা অন্য কোথাও?

আবু সালমান :

আমি কাদিয়ানি বিষয়ে বাংলাদেশের কয়েকটা জেলা ছাড়া বাকি সবগুলো জেলাতেই গিয়েছি। আমার দেখা মতে বাংলাদেশে এই দলের উপস্থিতি নেই। বাংলাদেশে মূল ধারার কাদিয়ানিরা লাহোরি জামাতের বিরুদ্ধে একটা বই লিখেছে—নবুওয়াত ও খেলাফত নামে। এর শুরুতে তারা বলেছে, যদিও আমাদের দেশে ওদের কোন লোক নেই, কিন্তু যদি এই মানসিকতার কেউ থাকে, তাহলে তার জন্য এই বই। তবে পাকিস্তানে তাদের কার্যক্রম আছে। তাদের ওয়েবসাইটও আছে। পাকিস্তানে উলামায়ে কেরাম উভয় দলের মোকাবিলাই করছেন।

 

 

সাবের চৌধুরী :

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানির সাথে আমরা আরেকজন ব্যক্তির উপস্থিতি দেখতে পাই, যিনি পরবর্তিতে তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন—হাকিম নূরুদ্দিন। তার জীবনী দেখলে বোঝা যায় বেশ পড়াশোনা জানা মানুষ ছিলেন। বড় বড় উস্তাদের কাছে হাদীসসহ বিভিন্ন কিতাবাদি পড়েছেন। তার মত একজন মানুষ এভাবে বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন। স্বভাবতই এটা বেশ অবাক করা ব্যাপার। এর কারণ কী হতে পারে? অর্থাৎ, তার চিন্তা ও চরিত্রের মধ্যে কি এমন কিছু ছিল, যাকে এর জন্য দায়ী করা যায়?

আবু সালমন :

জি, অবশ্যই ছিল। যদিও সে অনেক পড়ালেখা করেছেন। বড় বড় উস্তাদের কাছে পড়েছে। কিন্তু তার চিন্তা চেতনায় প্রকৃতিবাদিতা প্রবল ছিল। সে স্যার সৈয়দের বইপত্র দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিল। তার লিখিত বইপত্র ও তাফসির দেখলে পরিস্কার বুঝ যায়। অনেকটা মুলহিদ হয়ে গিয়েছিল।

 

 

সাবের চৌধুরী :

মির্যা গোলাম আহমদ প্রচুর বইপত্র লিখেছেন। সে ব্যাপারে যদি একটু বলতেন! পরিমাণ ও গুনগত মান।

আবু সালমান :

জি, অনেক বই লিখেছে। ছোটবড় মিলিয়ে সম্ভবত ৯৯ টির মত হবে। সবগুলো ২৩ ভলিয়মে ‘রুহানি খাজাইন’ নামে সংকলিত হয়ছে। যারা সবগুলো বই পড়েছেন, তারা বলেছেন যে, সবগুলো পড়লে দেখা যাবে কয়েকটি বই আছে ভিন্ন বিষয়ে; বাকিগুলোতে একই কথা বার বার বলা হয়েছে। সারসংক্ষেপ করলে হয়তো সাকুল্যে দুই খণ্ড হবে।

এক কথা এখানে লম্বা করে বলে গেল, কয়েক পৃষ্ঠা পর গিয়ে আবার হুবহু সেই কথাগুলো তুলে দিল। প্রচুর পরিমাণে শুধু ভবিষ্যতবানি সংক্রান্ত আলোচনা। আলি মিয়া নদবি বলেছেন, তার বইয়ে দুইটা বিষয় ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। একটা হলো, ভবিষ্যতবাণী, এর সত্যতা ও এসবের গুরুত্ব ইত্যাদি। আরেকটা হলো ঈসা আ. জীবিত না মৃত। এবং আরেকটা বিষয় হলো নিজের রুহানিয়্যাত। তার বইপত্রে শুধু সে রুহানিয়্যাত, ইলহাম ইত্যাদির কথা বলে বলে নিজের নিজের নবুওয়াত দাবি করার মাঠ তৈরী করছিল।

 

 

সাবের চৌধুরী :

আমি আসলে এখনো সরাসরি মির্যা কাদিয়ানির বইপত্র পড়িনি। কিন্তু নানা বইয়ে তার লম্বা লম্বা উদ্ধৃতিতে দেখলাম শিশুদের মত অত্যন্ত হাস্যকর কথাবার্তা বলে যাচ্ছে। আমার খুব অবাক লাগে, অনেক শিক্ষিত সমঝদার মানুষও কীভাবে তাকে শ্রদ্ধা করে, মানে।

আবু সালমান :

জি। একটা ঘটন শুনাই। আমি জামালপুরে একবার তাদের ওখানে গেলাম। একজনকে বললাম, আপনারা যাকে নবী হিসেবে মানছেন, তার চারিত্রিক দিকটিও দেখার দরকার ছিল। তিনি এতো নোংরা নোংরা ভাষায় উলামায়ে কেরামকে গালি দিচ্ছেন, যা মুখে আনাও সম্ভব নয়। তখন লোকটা বলে উঠলো—এগুলো তো অত্যন্ত মাধুর্যপূর্ণ কথা। আপনি কই যাবেন এবার?

 

 

সাবের চৌধুরী :

জি, এরপর তো আসলে সমস্ত কথাই বন্ধ হয়ে যায়। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কুরআনুল কারীমের ব্যাপারে তাদের আকীদা কি? তাদের কি আলাদা কোন সংকলন আছে?

আবু সালমান :

দেখেন কুরআনের শব্দ তো পরিবর্তন করার সাহস পাবে না। ওরা মূল কুরআনকে মানার কথাই বলে। কিছুদিন আগে ওরা পঞ্চগড় সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি জেলায় ওরা কুরআনের প্রদর্শনী করেছে। দেখিয়েছে তারা ৬৫টি ভাষায় এর অনুবাদ করেছে। তো বাহ্যত দেখায় ওরা কুরআনুল কারীমের খেদমত করছে। কিন্তু ওরা কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যার মধ্যে ভয়ানক বিকৃতি করেছে। এ মাসের আলকাউসার পত্রিকায় এ ব্যাপারে একটি রচনা ছাপা হয়েছে। আমার সামনে ওদের বাঙলা ও ইংরেজি কয়েকটি তরজমা আছে। সবগুলোতে অসংখ্য জায়গায় ওরা এই বিকৃতিটা করেছে। এর পাশাপাশি মির্যা কাদিয়ানি নিজের কথিত ইলহামকে কুরআনের মতই অকাট্য বলে ঘোষণা দিয়েছে। (একটি ভুল সংশোধন-৮)

এই ইলহামগুলোর একটা সংকলন তারা করেছে ‘তাজকেরা’ নামে। আমরা জানি, তাজকেরা কুরআনুল কারীমের একটা নাম। তারা সেই ‘ইলহাম’গুলোকে এ নাম দিয়েছে। এবং এর টাইটেলে লিখা আছে ‘ওহিয়ে মুকাদ্দাস’ বা পবিত্র ওহী। মির্যার ছেলে বশির আহমদ বলেছে আামাদেরকে এই তাজকেরা নিয়মিত তেলাওয়াত করতে বলা হয়েছে। এটা তেলাওয়াত করে যে আনন্দ লাভ হয়, তা অন্য কোন কিতাব পড়ে লাভ হয় না।

 

 

সাবের চৌধুরী :

তাহলে তো দেখা যাচ্ছে অঘোষিতভাবে তারা নিজেদের জন্য আলাদা একটা কুরআন সংকলন করে ফেলেছে। আচ্ছা, আমরা এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। কোন কোন দেশে কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে কাফের বলে রাষ্ট্রিয়ভাবে ঘোষণা করে আইন পাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এই দাবি উঠছে বহুদিন যাবত। তো, কাউকে কাফের বলে ঘোষণা দেওয়া তো মুফতীগণের কাজ। এটা রাষ্ট্রের কাছে চাওয়া হচ্ছে কেন?

আবু সালমান :

দেখুন এখানে দুইটা বিষয়। এক হলো কাদিয়ানিরা কাফের কি কাফের না, তা নির্ণয় করা। তো, এটা উলামায়ে কেরামের কাজ। দ্বিতীয় হলো রাষ্ট্রিয়ভাবে ঘোষণা করা। এটা এমন, ধরুন এক জায়গায় ভাইরাস দেখা দিয়েছে। সরকার একদল বিশেষজ্ঞ ঠিক করে দিল জিনিসটা যাচাই করার জন্য। তারা গিয়ে নির্ণয় করবে। এরপর সরকার এর পরিপ্রেক্ষিতে নানা বিধিনিষেধ জারি করবে। এখানেও ব্যাপারটা এমনই। রাষ্ট্রের কাছে ফতোয়া চাওয়া হচ্ছে না। শুধু রাষ্ট্রিয়ভাবে ঘোষণা চাওয়া হচ্ছে।

 

 

সাবের চৌধুরী :

কিন্তু রাষ্ট্র এই ঘোষণা দেওয়াটা জরুরী কেন?

আবু সালমান :

খুবই জরুরী। এটা পরিচয় সংরক্ষণের প্রশ্ন। একদল নকল কারবারী যদি কোন কোম্পানির নামে ভেজাল পন্য তৈরী করে, তাহলে সরকারের দায়িত্ব হলো সে কোম্পানির পরিচয়কে হেফাজত করা, যেন জনগণ ধোঁকায় পতিত না হয়। এখানেও বিষয়টি এমন। ওরা নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করে মুসলমানদেরকে অমুসলিম বানিয়ে ফেলছে, মুসলমানের মেয়েকে বিয়ে করছে, ওরা কুরআনের বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা করছে এবং সাধারণ মানুষ ওদেরকে মুসলিম মনে করেই ওদের কথাগুলো বিশ্বাস করে ফেলছে; এমনিভাবে বামপন্থি ও নানা রাজনৈতিক নেতারা তাদের সমাবেশগুলিতে গিয়ে তাদেরকে শান্তিকামি মুসলিম বলে প্রশংসা করছে। রাষ্ট্রিয়ভাবে ঘোষণা হলে এই ধোঁকার ও প্রতারণাগুলো বন্ধ হবে। এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

 

 

সাবের চৌধুরী :

বর্তমানে কারো কারো মন্তব্য হলো—রাষ্ট্রিয়ভাবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য আন্দোলন করার দরকার কী? এর চেয়ে উলামায়ে কেরাম যদি দেশব্যাপি জনগণের কাছে তাদেরকে দলীল-প্রমাণসহ কাফের হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন, এটা বেশি কার্যকর। আপনি কী বলেন?

আবু সালমান :

আমি মনে করি গঠনমূলকভাবে দুইটারই দরকার আছে। একটা দিয়ে আরেকটার কাজ হবে না। তবে এটা ঠিক আমাদের দেশে কাদিয়ানীদের ব্যাপারে আমাদের দাওয়াতি মিশন ও সতর্কীকরণমূলক আলোচনা আশানুরূপভাবে হচ্ছে না। এ জায়গাটাতে আরো গঠনমূলকভাবে বেশি পরিমাণে কাজ হওয়া দরকার। তাদেরকে শুধু কাফের বললে হবে না, তারা কেন কাফের সেই দলীল ও বিশ্লেষণও সাধারণ মানুষের সামনে সুন্দরভাবে আনতে হবে।

ধরুন, কেন এলাকায় গিয়ে আপনি কাদিয়ানিরা কাফের ও দালাল বলে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে এলেন। আপনি চলে আসার পর ওরা সাধারণ মুসলমানদেরকে এসে ধরে; বলে, আমরা তোমাদের মতই মুসলমান। কুরআনের খেদমত করি। তবু আমাদেরকে কাফের-দালাল বলা হলো; প্রমাণ দেখাও। সাধারণ মানুষ কিন্তু তখন কিছু বলতে পারে না। ফলে, সে সময় একটা উল্টো প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়। এটা আমি কেবল ধরে নিয়ে বলছি না। বাস্তবে এমন ঘটতে দেখেছি।

 

 

সাবের চৌধুরী :

বাংলাদেশে কাদিয়ানিদের সক্রিয়তা এখন কোন পর্যায়ে আছে?

আবু সালমান :

এটা একটা বড় প্রশ্ন। খতীব উবাইদুল হক সাহেব যখন ছিলেন, তখন কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে বেশ ভালো একটা সরগরম ছিল। উনার ইন্তেকালের পর এই কাজে অনেকটা ভাটা পড়েছে। এই সুযোগে ওরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ওরা এখন প্রকাশ্যে কুরআন প্রদর্শনীসহ নানা কর্মকাণ্ড করছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ওদের সদস্য সংখ্যা কত ঠিক বলতে পারব না। ওদের কয়েকজন থেকে শুনেছি সংখ্যাটি পাঁচ লাখ। তবে, আমার দেখা মতে পাঁচ লাখ হবে না। বাকি যতই হোক, বেশ বেড়েছে। ওদের নানা অঙ্গ সংগঠন দাঁড়িয়েছে। ওদের মধ্যে সন্তান ওয়াকফ করে দেওয়ার রীতি গড়ে উঠেছে। ওদের একটা সংগঠন আছে এ কাজের জন্য—ওয়াকফে নও। এই সংগঠন ছেলেগুলোকে লেখাপড়া শিখিয়ে মুবাল্লিগ বানিয়ে দাওয়াতি মিশনে পাঠায়। মেয়েদের সংগঠনের নাম—লাজনায়ে ইমাউল্লাহ। সাহায্য সংগঠনের নাম—লাজনা আনসারুল্লাহ। ঢাকার বকশি বাজারে ওদের প্রতিষ্ঠান আছে ‘জামিয়া আহমাদিয়া’ নামে। বিরাট প্রতিষ্ঠান। এখানে ছাত্রদেরকে ছয় বছরের মুবাল্লিগ কোর্স করিয়ে মুবাল্লিগ-মুআল্লিম বানিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠা তাদের ইবাদতখানাগুলোতে এদেরকে পাঠানো হয়। বর্তমানে একশোর উপরে এরকম মুআল্লিম কাজ করছে।

 

 

সাবের চৌধুরী :

বাংলাদেশে কাদিয়ানিদের মূলকেন্দ্রটি কোথায়?

আবু সালমান :

ঢাকার বকশি বাজারে।

 

 

সাবের চৌধুরী :

বাংলাদেশে কাদিয়ানিদের আমিরের নাম কী?

আবু সালমান :

আগে ছিল মীর মুবাশ্বির। এখন আছে আবদুল আওয়াল খান নামে একজন। এ লোক প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির যে মালিক ছিল মেজর জেনারেল আমজাদ চোধুরী তার ফুফাতো ভাই।

 

 

সাবের চৌধুরী :

আমরা যে শুনি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপটি কাদিয়ানিদের। এ কথা কতটুকু সত্য?

আবু সালমান :

প্রাণের মালিক আমজাদ চোধুরী কাদিয়ানি ছিলেন। বর্তমানে তার দুই ছেলেও কাদিয়ানি।

 

 

সাবের চৌধুরী :

কাদিয়ানিদের ব্যাপারে জানার জন্য বাংলা ভাষায় নির্ভরযোগ্য কী কী বই আছে? কিছু বইয়ের নাম করলে পাঠকগণ উপকৃত হতেন।

আবু সালমান :

কয়েকটি বইয়ের নাম বলা যায়। যেমন,

  • মনযূর নোমানি রহ. এর ‘কাদিয়ানিরা কেন অমুসলিম?’। প্রকাশক, রাহনুমা প্রকাশনি, ঢাকা।
  • মাকতাবাতুল আযহার থেকে প্রকাশিত হয়েছে আবুল হাসান আলি নদবি রহ. এর ‘কাদিয়ানি সম্প্রদায় : তত্ত্ব ও ইতিহাস।
  • মাকতাবাতুল হেরা থেকে প্রকাশিত হয়েছে ইদরিস কান্ধলবি রহ. এর ‘খতমে নবুওয়াত’।
  • মাকতাবাতুল আযহার থেকে প্রকাশিত ‘আহমদি বন্ধু! ইসলামে ফিরে এসো। ইসলামই তোমার আসল ঠিকানা’। লেখক, মাও. আবদুল মাজিদ।
  • মাকতাবাতুস সালাম থেকে প্রকাশিত ‘কাদিয়ানিদেরকে চেনার সহজ উপায়’। লেখক, মাও. মনযূর নোমানি রহ.।
  • মারকাজুদ দাওয়াহ ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে—‘ইসলাম ও কাদিয়ানিয়াত ‍দুটি আলাদা ধর্ম’ নামে ছোট একটা পুস্তিকা।

 

সাবের চৌধুরী :

জাজাকাল্লাহ। আমাকে আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।

Facebook Comments

Previous Post

কাদিয়ানি ধর্ম : পরিচয় সূচনা ও বিকাশ । সাবের চৌধুরী

Next Post

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. : রিহলা ও সংগ্রাম। হুজাইফা মাহমুদ

সাবের চৌধুরী

সাবের চৌধুরী

Related Posts

ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহ.- জীবন ও কর্ম
ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার

ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহ.- জীবন ও কর্ম

September 7, 2021
তাবেঈ রাবী ইবনে খুসাইম: একজন আলোকিত মানুষের আলোকিত জীবন। শারাফাত শরীফ
বিবিধ

তাবেঈ রাবী ইবনে খুসাইম: একজন আলোকিত মানুষের আলোকিত জীবন। শারাফাত শরীফ

July 12, 2021
Next Post

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. : রিহলা ও সংগ্রাম। হুজাইফা মাহমুদ

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

Recent.

তাসাউফ সম্পর্কে অপপ্রচার ও ভ্রান্তি : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা ।। মাওলানা আনাস চৌধুরী

December 16, 2022
এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

November 28, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি | শেষ পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | তরজমা: হুজাইফা মাহমুদ

November 16, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি—প্রথম পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | ভাষান্তর: হুজাইফা মাহমুদ

November 12, 2022
বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

October 29, 2022

  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

No Result
View All Result
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ

© 2020 রিওয়ায়াহ - Developed by Tijarah IT Limited.