Riwayahbd
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ
No Result
View All Result
Riwayahbd
No Result
View All Result

রাষ্ট্রিয় কোষাগারের উপর জনগণ কর্তৃক অর্থনৈতিক নজরদারির গুরুত্ব। মূল : ড. বশীর ইসাম। অনুবাদ : সাবের চৌধুরী

by সাবের চৌধুরী
March 13, 2021
1 min read
1
রাষ্ট্রিয় কোষাগারের উপর জনগণ কর্তৃক  অর্থনৈতিক নজরদারির গুরুত্ব। মূল : ড. বশীর ইসাম। অনুবাদ : সাবের চৌধুরী
20
SHARES
151
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

ড. বশীর ইসাম ইসলামি রাষ্ট্র বা অন্তত মোলিক বিষয়গুলোতে ইসলামকে অনুসরণ করে শাসনকার্য পরিচালনা করা হয়, এমন রাষ্ট্রগুলোকে সামনে রেখে আলোচনাটি করেছেন। বাংলাদেশ যদিও শাসনব্যবস্থার দিক দিয়ে এ অবস্থানের নয়, তবুও এ আলোচনাটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রজোয্য। কারণ, এ বিষয়ে ইসলামের এই নির্দেশনাটি সার্বজনীন ও যে কোন দেশের জন্য সবিশেষ কল্যাণকর।  উপরন্তু বাংলাদেশ হলো মুসলিম কান্ট্রি। এখানের রাষ্ট্রিয় কোষাগারে বেশিরভাগ অংশে মুসলমানদের সম্পদই জমা হয়। সুতরাং, এ দেশের শাসকগোষ্ঠি রাষ্ট্রিয় সম্পদ কোথায় কীভাবে খরচ করছে সে তালাশ সকলেরই রাখা কর্তব্য। বিশেষ করে মুসলিম ধর্মীয় লিডারগণের সবিশেষ দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রের সম্পদসংক্রান্ত আয় ব্যয় দুর্নীতি রাষ্ট্রিয় অপচয় ও অপব্যবহার নিযে সোচ্চার থাকা। আমরা লেখাটি কে এ জায়গা থেকে পাঠ করি এবং বিশেষত সমকালের প্রেক্ষিতে একজন মুসলিম চিন্তাবীদের পক্ষ থেকে এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কীকরণ হিসেবে দেখি।  লেখাটি অনুবাদ করেছেন সাবের চৌধুরী——সম্পাদক। 

 

আমাদের দুঃখজনক অমনোযোগিতা

যে সময়টিতে আমরা শুনছি এখানে ওখানে বিভিন্ন জায়গায় ‍মুসলিম শাসকেরা জনগণের সম্পদকে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ ও ভোগবিলাসিতায় ইচ্ছেমতো খরচ করছে, এদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে থাকছে, কাপড় না পেয়ে উলঙ্গ হয়ে ঘুরছে এবং দারিদ্রের কষাঘাতে পড়ে বিপন্নভাবে জীবন যাপন করছে, সে সময়টিতে আমাদের মনে প্রথমেই যে বিস্ময়টি জাগে, তা হলো—এই শাসকেরা সাধারণ মুসলমানদের সম্পদ নিয়ে এমন নির্লজ্জ হোলিখেলার সাহস ও সুযোগটা পেল কীভাবে?

 

জ্বলজ্যান্ত একটি বিষয় আমরা ভুলতে বসেছি—বিশেষ একটি গোষ্ঠি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির তোয়াক্কা না করে নিজেদের খেয়াল-খুশিমত এই যে সম্পদগুলো দু’হাতে খরচ করে, এগুলো তাদের সম্পদ নয়; দেশের জনগণ মুসলমানদের সম্পত্তি। শাসকগোষ্ঠি বিভিন্নভাবে এগুলো তাদের হাত থেকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়েছে।

 

আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না—অপচয় ও স্বজনপ্রীতিকে রোধ করার জন্য শাসকগোষ্ঠির ‍উপর সবসময় অর্থনৈতিক নজরদারি জারি রাখা—এটি সংস্কার ও সংশোধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ। বিষয়টি একেবারেই স্বতঃসিদ্ধ ও তর্করহিত। কিন্তু এ বিষয়টিতে পুরো জাতি অনেকদিন যাবত গাফিল হয়ে আছে। পশ্চিমা আধিপত্যবাদি লিবারাল সংস্কৃতি আমাদেরকে আমাদের অনেক অকাট্য বিধান পুনঃনিরীক্ষণ করতে ও সেগুলোর ব্যাপারে নতুন করে কথা উঠাতে বাধ্য বাধ্য করেছে। এর ভিতর দিয়ে তৈরী হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই বিধানটির প্রতি আমাদের অবহেলা ও অমনোযোগিতা।

 

আরো দুঃখজনক হলো—অনেকে যখন শাসকদেরকে জনগণের সম্পদ নিয়ে এমন স্বেচ্ছাচারিতা করতে দেখে, তখন উদাহরণ হিসেবে পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক সুষম বণ্টনের চিত্রগুলোকে সামনে আনেন এবং একে কেন্দ্রে রেখেই তাদের অর্থনৈতিক সাম্য ও ন্যায়পরায়নতার আলোচনাটি গড়ে তুলেন।

 

স্বীকার করি, এই বিষয়ে পশ্চিমাদের বর্তমান অবস্থা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো। কিন্তু এ ব্যাপারেও সন্দেহ নেই যে, এই উভয় অবস্থা থেকে অনেক উন্নত হলো এ সংক্রান্ত ইসলামী ধারণাটি। কিন্তু একে চোখের আড়াল থেকে সরিয়ে মানুষের অন্তর থেকে রীতিমত মুছে দিয়ে দিয়েছে জালেম শাসককর্তৃক সম্পদের উপর্যপুরি অপব্যবহার, এবং এ কাজে বৈধতা দিয়ে সমর্থন জুগিয়েছে কিছু মুর্খ ধর্মব্যবসায়ীর দল। এই অন্যায় বৈধতা দানে তাদের দোহাই হলো সেই ব্যাখ্যাযোগ্য সংক্ষিপ্ত মূলনীতিগুলো, যেগুলো ‘ফিতনা’ ও ‘আনুগত্য’ শব্দ দুটোর অধীন বিষয়াবলীর সাথে সম্পৃক্ত। অথচ, এই সময়টিতে তারা শরীয়তের শাসন সংশ্লিষ্ট অন্য মূলনীতিগুলো বেমালুম ভুলে যাওয়ার ভান করে, এবং ভুলে থাকতে চায় সে সব বিষয়ও, যেগুলোর কথা একটু পরেই আমরা আলোচনা করব।

 

 

বিশেষ লক্ষ্যণীয় একটি বিষয় :

মুসলমানগণ যখন নিজের চোখে গণ-সম্পদের এই অবমূল্যায়ন ও অপব্যবহার দেখে, তখন তাদের মনে ভেসে উঠে খোলাফায়ে রাশেদীনের সময়কালের চিত্র—তারা কীরকম সতর্কতা ও আমানতদারিতার সাথে জনগণের সম্পদকে সংরক্ষণ করেছেন, এবং নিজেরা এসবের সামান্য অপব্যবহার থেকেও বেঁচে থেকেছেন।

 

কিন্তু খোলাফায়ে রাশেদীনের জীবন-চিত্রটি তাদের মনে যে ভঙ্গিতে উদিত হয়, সে ভঙ্গিটি বেশ সমস্যাজনক। বিষয়টা একটু খুলে বলা দরকার। ওয়ায়েজিন ও গল্পকারেরা ইতিহাসের নানা মনীষী ও সাধকদের অনেক সাধনার গল্প করেন। ঘটনায় বিবৃত কর্মগুলো এতো জটিল কঠিন অনন্য ও নজীরবিহীন হয় যে, আমাদের বর্তমান বাস্তব জীবনের সাথে যার কোন সম্পর্কই নাই। আমলের ক্ষেত্রে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পরিমিতি ও মধ্যপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন, তার সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার বিষয়টি তো আছেই। যেমন, কোন মনীষী এশার অজু দিয়ে ৪০ বছর পর্যন্ত ফজরের নামাজ পড়েছেন; অথবা, আল্লাহর ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে কারা অন্ধ হয়ে গিয়েছেন ইত্যাদি। (*)

আজকে সম্পদ সংরক্ষণের সূত্রে যাদের মনে খোলাফায়ে রাশেদীনের চিত্রটি ভেসে উঠছে, এই ভেসে উঠাটা অনেকটা এই ভঙ্গি ও আবহেই হচ্ছে।

 

এ কারণে পরিস্কার হওয়া দরকার যে, সম্পদ সংরক্ষণে খোলাফায়ে রাশেদীনের কর্মপদ্ধতিটি মোলিকভাবে অসম্ভব কিছু ছিল না, এবং প্রান্তিক সেইসব আবেদ ও যাহেদগণের অতিসাধনার মতো সুন্নাহ এর সাথে সাংঘর্ষিকও ছিল না। বরং তা ছিল বাস্তবতাধর্মী একটি ইসলামি পদ্ধতি, যা এ পৃথিবীতেই তারা সরাসরি বাস্তবায়ন করে গেছেন। এবং মুসলমানদেরকে আদেশ করা হয়েছে, তারা যেন সকল কালেই একে অনুসরণ করে চলে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার পরে যারা আসবে, তোমরা তাদের অনুসরণ কোরো। অন্য হাদীসে আছে—…সুতরাং তোমরা আমার ও আমার পরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদীনের কর্মপদ্ধতিকে অবশ্যই অনুসরণ করবে এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্তভাবে কামড়ে ধরবে।

 

তাদেরকে অনুসরণ করা যেহেতু একটি প্রমাণিত সত্য, সুতরাং আমরা কেবল পাক পবিত্রতা ও সালাতের ক্ষেত্রে অনুরণ করব, কিন্তু তাদের শাসক-জীবনটির আলোচনা উঠলেই বলব : তারা তো আল্লাহওয়ালা বিশেষ এক প্রজন্ম ছিলেন। সে সময়ের পরিস্থিতিই ছিল ভিন্ন। কিন্তু আমরা তো তাদের মতো নই এবং আমাদের সময়টিও অনেক জটিল ও ব্যতিক্রম—এমনটি বলার কোন সুযোগ নেই।

 

এমনটি বলে নিজেরাই যদি ইসলামকে ব্যক্তিগত ইবাদত-বন্দেগিতে সীমিত করে ফেলি, তাহলে ইসলাম সকল কাল ও ভূখণ্ডের জন্য উপযোগী—এ কথাটির মানে থাকবে কী? এই মনোভাব ও চিন্তা মূলত লিবারালিজমের দিকে আমাদের যাত্রার সূচনা ও পয়লা পদক্ষেপ। লিবারাল চিন্তা গড়ে উঠার প্রথম সময়টিতে খৃষ্টানজগতে ঠিক এটিই ঘটেছিল। তারা বলেছিল কায়সারকে (অর্থাৎ, শাসককে) কায়সারের কাজ করতে দাও, আর, আল্লাহর অংশটি আল্লাহর জন্য রেখে দাও। ফলে, কায়সার তার অনুসারীদেরসহ বস্তুবাদীদের মূলনীতি দিয়ে গড়া শাসনব্যবস্থা নিয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছিল, এবং মানুষের আত্মা ও হৃদয়ের শাসনভার দিয়েছিল গির্জাগুলোকে। আমাদের পরিণতিও কি তাই হতে চললো?

 

হ্যাঁ, সাহাবায়ে কেরামের প্রজন্মটি ছিল অনন্য সাধারণ। এমন প্রজন্ম এ পৃথিবীতে আর কখনোই আসবে না। এ নিয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই; কিন্তু এ কথা বলে তাদের অনুসরণকে অসম্ভব করে তোলার অর্থ কী? তাদের অনুসরণ করা শুধু যে শরীয়তের দিক থেকে ওয়াজিব তা-ই নয়; বরং বাস্তবতা ও কল্যাণের নিরীখেও তা অনিবার্য। কারণ, সাহাবাদের জীবনধারাটি আমাদের চেষ্টা ও সাধনার প্রধানকেন্দ্র। একেই আমাদের মূল মঞ্জিল বলে ঘোষণা করা উচিত এবং আমাদের উচিত যথাসম্ভব এর কাছাকাছি উপনীত হতে চেষ্টা করার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া।

আমাদেরকে এই সিদ্ধান্তে আসতে হবে—নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে কলমে শিখিয়ে দেওয়া সাহাবায়ে কেরামের জীবনধারাটিই হলো আল্লাহর দীনের বাস্তব নমুনা। একে বাস্তবায়নের জন্যই আমরা কাজ করব, যদি এর সবটুকু আজকেই করে ফেলা সম্ভব না হয়, তবুও; কারণ, বর্তমানে একে শতভাগ বাস্তবায়ন করে ফেলার সামর্থ আমাদের নেই সত্য, তবু মূল লক্ষ্যটি যদি পরিস্কার ও উজ্জ্বল থাকে, তাহলে এটি আমাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে, পথে চলতে গিয়ে বিকৃতি থেকে রক্ষা করবে।

 

সাহাবায়ে কেরামের জীবনের আলোকে অর্থনৈতিক নজরদারি :

এখন আমরা সাহাবায়ে কেরামের জীবন থেকে এ সংক্রান্ত কিছু দৃশ্য তুলে আনছি।

ইবনে সা’দ তার ‘তাবাকাত’ গ্রন্থে আতা ইবনে সায়িব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন : আবু বকর রা.-কে যখন খলীফা বানানো হলো, পরদিন সকালবেলা তিনি বাজারের উদ্দেশে রওয়ানা করলেন। তাঁর কাঁধে ছিল ব্যবসার কাপড়চোপরের স্তুপ। পথে উমর ইবনে খাত্তাব ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ রা. এর সাথে দেখা। তারা বললেন : হে আল্লাহর রাসূলের খলীফা, আপনি কোথায় চললেন? তিনি বললেন : বাজারে। তখন তারা বললেন : আপনি মুসলমানদের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব মাথায় নিয়ে এ আপনি কী করছেন! আবু বকর রা. তখন বললেন : ব্যবসা না করলে পরিবারকে খাওয়াব কী? তারা দুজন তখন বললেন : চলুন, আমরা আপনার জন্য কিছু ভাতা ঠিক করে দিচ্ছি। তিনি তাদের সাথে গেলেন। এরপর কয়েকজন মিলে তার জন্য একটা ভাতা ঠিক করে দিলেন : প্রতিদিন অর্ধেকটি ছাগল, সাথে পরার জন্য দুটো পোষাক।

 

এই ঘটনাটি পরিস্কার জানাচ্ছে—সাহাবায়ে কেরাম অনুমতি দেওয়ার আগ পর্যন্ত আবু বকর রা. রাষ্ট্রিয় কোষাগার থেকে কোন কিছু গ্রহণ করতে রাজি হননি। এবং এটিও বুঝা যাচ্ছে আবু বকর রা. নিজে নয়; সাহাবায়ে কেরামই তা ঠিক করে দিয়েছেন। অন্য এক বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় আবু বকর রা. ভাতার পরিমাণ আরেকটু বাড়িয়ে দিতে তাদেরকে অনুরোধ করেছিলেন। বিবরণটি এই : যখন আবু বকর রা.কে খলীফা বানানো হলো, তখন সাহাবায়ে কেরাম তার জন্য ভাতা হিসেবে দুই হাজার নির্ধারণ করলেন। তখন তিনি বললেন : আরেকটু বাড়িয়ে দাও, আমার তো পরিবার আছে, এদিকে তোমরা আমাকে ব্যবসা থেকে ফিরিয়ে রেখেছ। এ কথা শুনে তাঁরা আরো পাঁচ শো বাড়িয়ে দিলেন।

 

এই ঘটনাটি আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—জনগণেই রাষ্ট্রিয় কোষাগার থেকে শাসকশ্রেণীর ভাতার পরিমাণ ঠিক করে দেয়ে। এবং তারা জনগণের সুস্পষ্ট সম্মতি এড়িয়ে সামান্যতম স্বজনপ্রীতি করার অধিকারও রাখে না। উপরের ঘটনাটিতে জনগণের পক্ষ থেকে বিশেষ কিছু সাহাবি কাজটি করেছেন। তারা ছিলেন আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ—নীতি নির্ধারণী বিশেষ প্রতিনিধি দল, শূরা সদস্য।

 

আবু বকর রা. এর মৃত্যুর সময় যখন ঘনিয়ে এলো, তিনি তার কাছে থাকা ভাতার অবশিষ্ট অংশটুকু বাইতুল মালে ফিরিয়ে দিতে বললেন, আমাদেরকে এ কথা বুঝানোর জন্য যে, জনগণের ঠিক করে দেওয়া ভাতাটি তার মালিকানা সম্পদ ছিল না।

আপনি এই ঘটনাটির সাথে সমকালের সে সকল রাজা বাদশা প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীদের আচরণকে মিলিয়ে দেখুন, যারা জনগণের সম্পদকে নিজেদের পৈতৃক সম্পদ মনে করে নিজেদের সন্তানাদির মাঝে বিলিয়ে দেয়।

 

হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রা.ও এই একই পথে হেঁটেছেন। তিনিও মুসলমানগণ ঠিক করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত বাইতুল মাল থেকে কোন ভাতাই গ্রহণ করেননি। ইবনে সাদ রহ. বর্ণনা করেন—উমর রা. শুরুতে একটা সময় পর্যন্ত কোন ভাতা নেননি। ফলে, তার ঘরে খাদ্যভাব ও অনটন দেখা দিল। তিনি তখন সাহাবায়ে কেরামকে ডেকে বললেন : আমি তো শাসনকাজ নিয়ে ব্যস্ত। নিজের জীবিকা নির্বাহের জন্য কিছু করতে পারছি না। কোষাগার থেকে আমি কতটুকু গ্রহণ করতে পারি?

 

উসমান ইবনে আফফান রা বললেন : আপনি নিজে খান, এবং প্রয়োজ অনুপাতে অন্যদেরকে আহার করান। সাঈদ ইবনে যায়েদও একই কথা বললেন। উমর রা. আলী রা.-কে জিজ্ঞেস করলেন—আপনি কী বলেন? তিনিও বললেন—সকাল বিকালের খাবার আপনি গ্রহণ করুন। এরপর উমর রা. সে অনুপাতে ভাতা গ্রহণ করতে লাগলেন।

 

সংক্ষেপে অর্থনৈতিক নজরদারির ব্যাপারে শরীয়তের বিধান :

আল্লাহ তাআলা বলেন, যেন সম্পদ কেবল তোমাদের মধ্যকার বিত্তশীলদের মাঝে সীমিত হয়ে না পড়ে। এই আয়াতটি অনেক বড় কুরআনিক একটি মূলনীতিকে প্রমাণ করে, যে মূলনীতিটি মানুষের সম্পদ বিশেষ কিছু শক্তিশালী ও শাসক শ্রেণীর মাঝে বন্দি না থেকে জনগণের মাঝে স্বাভাবিক গতিতে সঞ্চালিত হওয়ার নির্দেশনা দেয়। শরীয়তে জুলুম, সিন্ডিকেট, ধোঁকা-প্রতারণা, সুদ, জুলুম করে মানুষের মাল ছিনিয়ে নেওয়া ও এতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করা হারাম হওয়া সংক্রান্ত যতগুলো বক্তব্য রয়েছে, সবগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য হলো—সম্পদ যেন কল্যাণময়তা ও ইনসাফের সাথে সকলের মাঝে বণ্টিত হয়, তা নিশ্চিত করা।

 

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিস্কারভাবে বলেছেন : এই সমস্ত সম্পদের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। নবী নিজে সেখান থেকে কেবল সেটুকু গ্রহণ করতে পারেন, যেটুকু আল্লাহ তাঁর জন্য বৈধ করেছেন।

 

সহীহ বুখারিতে রয়েছে, তিনি বলেন—আমি নিজে থেকে তোমাদেরকে কোন কিছু দিব না, না-ও করব না; আমি কেবল বণ্টনকারী। যেখানে যতটুকু দিতে আদেশ করা হয়েছে, সেখানে ততটুকু দেই।

 

আলী রা. বর্ণনা করেন, একবার নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে দিয়ে যাকাতের উট যাচ্ছিল। তিনি উটের পিঠ থেকে একটু পশম হাতে নিয়ে বললেন, এই এটুকুন পশমের ক্ষেত্রেও একজন মুসলমানের চেয়ে আমি অধিক হকদার নই।

সুতরাং, প্রিয় নবী, যিনি নিষ্পাপ ছিলেন, তিনি যখন মুসলমানদের সম্পদ থেকে আল্লাহ প্রদত্ত অংশের বাইরে সামান্য সম্পদের মালিকও হন না, তখন উম্মতের অন্য কোন ব্যক্তির জন্য মানুষের সম্পদ জোর করে ছিনিয়ে নেওয়া বৈধ হয় কী করে! এবং উম্মতের সাধারণ মানুষ ও আলেমগণ কীভাবে এ ব্যাপারে চুপ করে থাকেন?

 

সুতরাং, মুসলিম সাধারণ জনগণের সম্পদের উপর জনগণকৃর্তৃক নজরদারি এবং অন্যায়ভাবে কেউ কুক্ষিগত করতে চাইলে তা প্রতিহত করা অর্থনৈতিক অরাজকতা ও লুটপাট দূর করার জন্য একটি বিশুদ্ধ ইসলামি বিধান। হালের এই গণতান্ত্রিক আইন-কানুন আসার বহু শতাব্দি আগেই ইসলাম একে প্রতিষ্ঠিত করে গেছে। সকল আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, রাষ্ট্রিয় কোষাগারে যে সম্পদ রয়েছে, তা সাধারণ মুসলমানদের সম্পদ। শাসক সেখান থেকে অনুমোদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় অংশটুকু ছাড়া অতিরিক্ত সামান্য কিছুও গ্রহণ করার অধিকার রাখে না। অন্যায়ভাবে কাউকে দেওয়ার ক্ষমতাও তার নাই। এমনিভাবে শরীয়তের নির্দেশিত ক্ষেত্রগুলো ছাড়া অন্য কোথাও তা ব্যয় বা অপচয় করার অনুমতিও তার নেই। বাইতুল মালের সম্পদ কোথায় কোথায় ব্যয় করা হবে এর বিস্তারিত বিবরণ সাধারণ ফিকহ ও শাসন সংক্রান্ত গ্রন্থগুলোতে রয়েছে। সুতরাং, শাসক নিজের প্রবৃত্তিমতো এই সকল সম্পদ খরচ করার জন্য আমাদের ফিকহি গ্রন্থগুলোতে একটি রেফারেন্সও পাবে না।

শাসক ও জনগণের সম্পর্ক বিষয়ে আরো কিছু কথা আমরা আলোচনা করব, সামনের প্রবন্ধে ইনশাআল্লাহ।

 

(*) শরীয়তে সবার জন্য সহজে পালনীয় ইবাদাতের পরিমিত একটা ব্যবস্থা ও নির্দেশনা রয়েছে। এর বাইরে অন্য কারো হক নষ্ট না করে ও অর্পিত দায়িত্বসমূহ আদায় করে কেউ যদি এর চেয়ে বেশি ইবাদাত করে, তা দোষণীয় নয়। এটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত তাকওয়া ও পরহেজগারিতার ব্যাপার। সাহাবায়ে কেরামসহ সকল কালেই এমন বিশেষ ইবাদাত গোজার আল্লাহর বান্দাগণ বিদ্যমান ছিলেন। তবে, কেউ যদি এসব আমলকে ভুলভাবে প্রচার করে সাধারণ মানুষজনকে ইবাদাত বন্দেগীর ব্যাপারে ভীত করে তোলে, তাহলে নিঃসন্দেহে তা দোষণীয়।——অনুবাদক

 

See the source image
ড. বশীর ইসাম

লেখকের মূল রচনাটি পাঠ করতে এখানে ক্লিক করুন।

 

 

Facebook Comments

Previous Post

ইসলামি ধারণায় শাসক ও জনগণের সম্পর্ক-২ : রাজনৈতিক প্রতিবাদ, বিরোধিতা ও আন্দোলন। ড. বাশীর ইসাম

Next Post

সম্পদ ও সম্পদ সংরক্ষণ: ইসলাম যেভাবে মূল্যায়ন করে। আনাস চৌধুরী

সাবের চৌধুরী

সাবের চৌধুরী

Related Posts

ইসলামি ধারণায় শাসক ও জনগণের সম্পর্ক-২ : রাজনৈতিক প্রতিবাদ, বিরোধিতা ও আন্দোলন। ড. বাশীর ইসাম
রাজনীতি

ইসলামি ধারণায় শাসক ও জনগণের সম্পর্ক-২ : রাজনৈতিক প্রতিবাদ, বিরোধিতা ও আন্দোলন। ড. বাশীর ইসাম

February 22, 2021
ইসলামি ধারণায় শাসক ও জনগণের সম্পর্ক :: আনুগত্য : প্রশ্ন ও পর্যালোচনা। ড. বাশীর ইসাম।
রাজনীতি

ইসলামি ধারণায় শাসক ও জনগণের সম্পর্ক :: আনুগত্য : প্রশ্ন ও পর্যালোচনা। ড. বাশীর ইসাম।

February 20, 2021
Next Post
সম্পদ ও সম্পদ সংরক্ষণ: ইসলাম যেভাবে মূল্যায়ন করে। আনাস চৌধুরী

সম্পদ ও সম্পদ সংরক্ষণ: ইসলাম যেভাবে মূল্যায়ন করে। আনাস চৌধুরী

Comments 1

  1. Pingback: রাষ্ট্রিয় কোষাগারের উপর জনগণ কর্তৃক অর্থনৈতিক নজরদারির গুরুত্ব। মূল : ড. বশীর ইসাম। অনুবাদ : সাবে

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

Recent.

তাসাউফ সম্পর্কে অপপ্রচার ও ভ্রান্তি : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা ।। মাওলানা আনাস চৌধুরী

December 16, 2022
এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

November 28, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি | শেষ পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | তরজমা: হুজাইফা মাহমুদ

November 16, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি—প্রথম পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | ভাষান্তর: হুজাইফা মাহমুদ

November 12, 2022
বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

October 29, 2022

  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

No Result
View All Result
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ

© 2020 রিওয়ায়াহ - Developed by Tijarah IT Limited.