বি প্রাউড অব ইসলাম-০১
আকাশ থেকে ঝরে পড়ো না
ঈমানের শাশ্বত আলো থেকে কুফরের তিমির আধাঁরের দিকে ধাবিত হওয়া মানে আকাশ থেকে পাতালপুরির দিকে যাত্রা। আল্লাহ তাআলার আশ্রয় থেকে বেড়িয়ে পড়া। ঈমান দুনিয়া-আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ লাভের মূলমন্ত্র। আর কুফর হচ্ছে আল্লাহর রহমত থেকে দূর হয়ে যাওয়ার সর্বশেষ স্তর। কুরআনুল কারিমে যেসব বিষয় সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে, ঈমান এবং কুফরের আলোচনা সেগুলোর অন্যতম। এই ঈমান এবং কুফর বিষয়ে আমাদের প্রত্যেকের স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক।
আমরা যারা আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান এনেছি, আমাদের মনে হতে পারে ঈমান-কুফরের সবিস্তার আলোচনা আমাদের জন্য খুব প্রয়োজনীয় নয়; কারণ আমরা তো এমনিতেই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখি। কিন্তু একটু চিন্তা করলে সহজেই অনুমেয় যে, এই কথাগুলো আমাদের সবার জন্যই জানা জরুরি। ঈমান ও কুফর বিষয়ে সবারই জানা কেন জরুরি? তা নিচের কয়েকটি পয়েন্ট থেকে বুঝা যাবে।
যাতে আমরা ইসলামের সার্বজনীন কল্যাণের বোধ নিজেদের মধ্যে জাগ্রত করতে পারি। ইসলাম আল্লাহ তাআলার কী বিশাল নিয়ামত! তা পরিপূর্ণভাবে জানতে পারলেই ইসলাম যে চিরন্তন সুখের উৎস এবং গর্ব করার মতো বিষয়, তা আমরা অনুভব করতে পারব।
এতে করে আমরা ঈমান ও কুফরের মধ্যকার পার্থক্য নিরূপণ করতে পারব। এতদুভয়ের মধ্যেকার পার্থক্য স্পষ্টরূপে জানা থাকলেই কেবল আমরা ঈমানের শিখর থেকে কুফরের অতলে পতিত হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে, সে যেন আকাশ থেকে পড়ল আর পাখিরা তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল কিংবা বাতাস তাকে কোনো দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল।’ (সুরা হজ, আয়াত ৩১) ঈমান আর কুফুরের মধ্যকার আসল পার্থক্য এই আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। এবং এই পার্থক্য সময় থাকতেই আমাদের প্রত্যেকের জন্য জানা জরুরি।
কুফরের নেতিবাচক দিকগুলো জানতে পারলেই আমরা ঈমানের প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করতে পারব। বলা হয়, وبضدها تتميزالأشيــــــــــــــاء অর্থাৎ বিপরীত জিনিসের মধ্যে দিয়েই কোনো কিছুর আসল পরিচয় নিরূপণ করা সম্ভব।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তিনটি জিনিস যার মধ্যে থাকবে, সে ঈমানের পরিপূর্ণ স্বাদ পাবে। এর মধ্যে তৃতীয়টি হলো, ‘সে কুফরে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার মতো অপছন্দ করে’। (বুখারী:১৬, মুসলিম:৪৩)
ইসলামের শত্রুরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ঈমানকে ঘৃণিত আর কুফরকে লোভনীয় করে তুলতে চায়। তাদের সেই প্রচেষ্টা বানচাল করার জন্য এবং হৃদয়ে নিবিড়ভাবে ঈমানকে ধারণ করার জন্য এই বিষয়ে আলোচনা করা খুবই জরুরি।
কুরআনুল কারিমে যে সকল বিষয়ে সবচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে, ঈমান ও কুফর তার অন্যতম। তাই এই দুই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে না পারলে আমরা কুরআনের পরিপূর্ণ হেদায়েতকে ধারণ করতে পারব না।
ইসলাম সকল যুগের সকল মানুষের জন্য আল্লাহ তাআলার মনোনীত দ্বীন। তাই ঈমান ও কুফরের মাসআলার সমাধান শুধু মুসলমানদের জন্য নয়; বরং সমগ্র বিশ্বমানবতার জন্যই জানা জরুরি। মানুষের প্রকৃত কল্যাণ তো রয়েছে তাওহিদে। আর আল্লাহ তাআলা তো আমাদের প্রেরণ করেছেন মানুষের কল্যাণের জন্যই। ইরাশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, তোমাদের বের করা হয়েছে (সৃষ্টি করা হয়েছে) মানুষের জন্য’। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০) অর্থাৎ, মানুষের দুনিয়া আখেরাতের কল্যাণের জন্য আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।
আমরা সেই উম্মতের সদস্য, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা রহমতস্বরূপ জগতে প্রেরণ করেছেন। আমাদের ওপর অর্পিত এই গুরুদায়িত্ব অবহেলা করলে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্চনা এবং আখেরাতের জীবনে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে আমাদের।
কতিপয় মুসলিমের ভ্রান্তধারণা নিরসনের জন্যও এই বিষয়ে আলোচনা করা জরুরি। যারা মনে করেন, অমুসলিমদের সাথে যাচ্ছেতাই করা যাবে। তাদের এই সকল অনৈসলামিক আচরণ মূলত মানুষকে আল্লাহর দ্বীনবিমুখ করে তোলে। অথচ তারা জানেই না, আল্লাহ তাআলা এইসব কাজ করা থেকে কত কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এবং যারা এগুলো করে, তাদের ব্যাপারে কী কঠিন হুমকি উচ্চারিত হয়েছে!
আমাদের মধ্যে পশ্চিমা চিন্তাক্রান্ত কথিত উদারতার দাবীদার এমন মানুষেরও অভাব নেই, যারা আমাদের মানসিকভাবে দুর্বল এবং পরাজিত করতে চায়। আমাদের মাঝে পশ্চিমের চিন্তা-চেতনা সাপ্লাই করাই যাদের একমাত্র কাজ। তারা অমুসলিম দেশে বসবাসরত মুসলমানের সন্তানদের বিধর্মীদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন, কিন্তু বিধর্মীদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার ব্যাপারে তারা আবার নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যেমনটা এই ভদ্রলোক পশ্চিমবিশ্বে অবস্থানরত মুসলিম নারীদের নসিহত করতে গিয়ে বলেন, ‘প্রিয় বোন, আপনি তাদের দেশে বাস করছেন, সেই সমাজের সব কল্যাণে নিজের ভাগ বসাচ্ছেন, তারা আপনার সন্তানের শিক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। অথচ এত কিছু করার পরও আপনি আপনার সন্তানদের চার্চে গিয়ে তাদের ধন্যবাদটা পর্যন্ত জানাতে দিচ্ছেন না! তারা আপনাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, নিরাপত্তা এবং বেতন দিচ্ছে, এর পরও কি আপনার সন্তানদের উচিত নয়, চার্চে গিয়ে তাদের ধন্যবাদ জানানো?
শুধু এই অজুহাতে যে, তারা অমুসলিম-কাফের? আসলে আমরা তো আরও বড় কাফের। কুফর তো শুধু দ্বীন অস্বীকার করার নামই নয়; নেয়ামতের অস্বীকার করাও তো কুফরের অন্তর্ভুক্ত। আমরা একে অপরকে হত্যা করছি, একে অন্যের মসজিদ ধ্বংস করছি। আমরা একে অপরকে ধ্বংস করছি এবং একে অপরের কুফরের কারণ হচ্ছি। আমি তো মনে করি, আমাদের দ্বীনের কথা বলাই উচিত নয়, অন্তত সামনের দশ বছর। যাবত না আমরা আমাদের দেশগুলোর উন্নয়ন নিশ্চত করে ফেলি।’
আরেক জন আমাদের দাওয়াত দিচ্ছেন নাস্তিকতার দিকে। যেমন ভদ্রলোক স্বঘোষিত নাস্তিক এবং নাস্তিকতার বৈধতা দেওয়ার জন্য পৃথিবীব্যাপী খ্যাত রিচার্ড ডকিন্স ( Richard Dawkins) এর ব্যাপারে বলেন, ‘তিনি একজন মহান বৈজ্ঞানিক। আপনি চাইলে তার সাথে একমত হতে পারেন বা দ্বিমতও করতে পারেন। বাকি তিনি কিন্তু একজন বৈজ্ঞানিক। তার ইমোশন এবং মেন্টালিটি হলো বৈজ্ঞানিক, যে কারণে তিনি সবকছিুকে বৈজ্ঞানিকভাবে যাচাই করেন। তিনি তার বৈজ্ঞানিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে বিস্ময়করভাবে পুরা জগতকে আলোকিত করেছেন’। নাস্তিকতার আরেক আহ্বায়ক স্টিফেন হকিং (Stephen Hawking) এর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘হকিং একজন অসাধারণ বৈজ্ঞানিক। তার মতো বৈজ্ঞানিক পৃথিবীতে খুব কম এসেছে। কোথায় আমরা আর কোথায় হকিং-এরিস্টেটলের মতো ব্যক্তিরা। তাদের বিপরীতে আমরা তো কিছুই নই। তাদের সামনে আমরা তো গাছের ছাল-বাকল।’ আর মুসলমানদের ব্যপারে তার ধারণা হলো, ‘আর তোমরা কী? তোমরা তো নির্বোধ। নিজের পেট পালতে ব্যস্ত। ক্ষুধার্ত, বিবস্ত্র, ক্লান্ত। তোমরা তো এখনো নিজেদেরকেই নিয়ন্ত্রণ করা শেখোনি। অথচ চলে এসেছো বিশ্বকে হুমকি দিতে! পৃথিবীকে তোমরা কী দিয়েছো খুন-খারাবি ছাড়া? আধুনিকতার যাবতীয় উপকরণ তো তারা (পশ্চিমারা) দিচ্ছে’।
(আলোচক এখানে যে দুজনের কথা বলেছেন, তারা আরববিশ্বে পশ্চিমা চিন্তা আমদানিতে বিখ্যাত। ভয়াবহভাবে বস্তুবাদে আক্রান্ত। একজন মুসলমান কীভাবে এমন ভয়াবহ চিন্তা লালন করে! আমরা ইচ্ছা করেই তাদের নাম উল্লেখ করিনি। তাদের ভ্রান্তি আমাদের পাঠকের মধ্যে যেন না ছড়ায়। সে জন্যই তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু মুশকিল হলো, শুধু আরববিশ্বই নয়; পৃথিবীজুড়েই পশ্চিমা চিন্তার কাছে আত্মসমপর্ণ করা এমন পরাজিত মানসিকতার লোকগুলো বসে আছে মিডিয়ায়। আমাদের দেশের মিডিয়ার দিকে তাকালেও সহজেই এদের দেখতে পাবেন। এদের পরাজিত মানসিকতা থেকে বাঁচতেও ঈমান ও কুফরের আলোচনা জানা জরুরি। দ্বীনি বিষয় পরিষ্কার ধারণা থাকলে সহজেই আমরা তাদের চক্রান্ত ধরতে পারব। -অনুবাদক)
ইসলামের শত্রুরা মুসলিম তরুণদের মনে তাদের আত্মপরিচয় সম্পর্কে সংশয় তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে, ফল উম্মাহর প্রতি তারুণ্যের দায়িত্ব সম্পর্কে তরুণ-যুবা বেখবর থাকছে। বরং তাদের সংশয়পূর্ণ বিশ্বাসের কারণে ইসলামকে তারা ঘৃণা করতে শুরু করে। ফলে তারা সহজেই কেউ নাস্তিকতায় আর কেউ ইসলাম বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নে জড়িয়ে যাচ্ছে। মুসলিম তারুণ্যের পশ্চাদপদতা এবং অধঃপতনের এটাই একমাত্র কারণ। নাস্তিক্যবাদের করালগ্রাস থেকে তাদের উদ্ধার করার জন্য ঈমান ও কুফর সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা খুবই জরুরি।
অমুসলিমদের ব্যাপারে ইসলাম আমাদের ইফরাত-তাফরিত অর্থাৎ বাড়াবাড়ি এবং ছাড়াছাড়ির মাঝামাঝি অবস্থান করতে বলে। আর এই ইনসাফপূর্ণ জায়গাটি ভালো মতো জানতে হলে ঈমান এবং কুফর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হবে। এই অবস্থান সম্পর্কে ভালো মতো না জানার কারণে, অনেকেই অতিরিক্ত উদারতা দেখান, যা কুফরের সামনে আত্মসমর্পণ এবং পরাজিত মনোভাব লালনে পর্যভূষিত হয়। অথচ তারা তা অনুধাবনই করতে পারেন না। আরেকদল আবার অমুসলিমদের মধ্যে কারা ইসলামের বিপক্ষে ষড়যন্ত্র এবং যুদ্ধে লিপ্ত আর কারা কেবল বিশ্বাসগতভাবেই অমুসলিম, তা বিবেচনায় না নিয়ে ঢালাওভাবে সকল অমুসলিমের বিপক্ষে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বসে। ফলে অনেক নিরীহ অমুসলিম তাদের বাড়াবাড়ির শিকার হয়।
বর্তমান সময়ে সম্পূর্ণ নির্দোষ থেকেও আমরা যেমন কাফিরদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণের শিকার হচ্ছি। কিন্তু তাই বলে আমরা তো আর কাফিরদের মতো আচরণ করতে পারি না। বরং মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্মপন্থা হবে নিরীহ অমুসলিমদের রক্ষা করা। আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো: মানুষের দাসত্ব থেকে মানুষের রবের দাসত্বের দিকে, অপরাপর ধর্মের নিপীড়ন থেকে ইসলামের ইনসাফের দিকে এবং দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে দুনিয়া ও আখেরাতের সৌভাগ্যের দিকে সবাইকে দাওয়াত দেওয়া। নিরীহ অমুসলিমদের ব্যাপারে আমাদের উচিত দয়া ও করুণার পন্থা অবলম্বন করা।
আমাদের নিজেদের মধ্যেও একুরেট ব্যালেন্স তথা সুষম সমন্বয় সাধনের জন্য ঈমান ও কুফর নিয় আলোচনা করা জরুরি। আমরা যেন তাদের মতো চরমপন্থী না হই, যারা মুসলমানদের অযাচিতভাবে কাফের ট্যাগ দিয়ে থাকে। বিপরীতপক্ষে যারা প্রকৃতপ্রস্তাবেই কাফের, তাদের কাফের বলতেও আমরা যেন দ্বিধাবোধ না করি। চরমপন্থা এবং চরম শৈথিল্য দুটোই নিন্দনীয়। ইরশাদ হচ্ছে, ‘একজন উপুর হয়ে মুখম-লে ভর দিয়ে (পথ) চলে, আরেকজন সোজা হয়ে সরল পথে চলে; দুজনের মধ্যে কার পথচলা সঠিক?’ (সুরা মুলক, আয়াত ২২)
এই বিষয়গুলো আলোচনা করা এই জন্যও জরুরি যে, এগুলোতে খুব বেশি আবেগ, মনস্তাত্তিক জটিলতা এবং গদবাধা আলোচনার সুযোগ থাকায়, যুগের পর যুগ ধরে মুসলিম মস্তিষ্ক এগুলো থেকে দূরে থেকেছে। এইভাবে দুই দলের মাঝে মৌখিক দ্বন্দ্বই শুধু বেড়েছে এবং সত্য থেকে গেছে অনুপস্থিত। ফলে অনেকের ধারণাই নেই, তারা না জেনে একে অপরের বিশ্বাস সম্বন্ধে কী ভয়াবহ মন্তব্য করছে! যা কিনা নিজেদের অজান্তেই এমনকি ধর্ম থেকেও তাদের বের করে দিতে পারে!
ঈমান ও কুফরের এই আলোচনা এই জন্য জরুরি যে, আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে, যারা কুফুরি বাক্য উচ্চারণ করে এবং কুফুরি বিশ্বাস লালন করে। কিন্তু না সে নিজে আর না তার আশে-পাশের লোকেরা এর ভয়াবহতা অনুধাবন করতে পারে। আপনি হয়তো শুনবেন, রাগে-দুখে আল্লাহকে কেউ অভিশাপ দিয়ে বসল। অথচ তারপরও সে তার মুসলিম স্ত্রীর সাথে সংসার করছে, যা সম্পূর্ণ হারাম। তার মাতা-পিতা, ভাই-বোন এবং পরিবারের লোকেরা জানলেও অনেক সময় তাদের আলাদা করে দেয় না। স্ত্রীর গর্ভে এই স্বামীর সন্তানও হয়তো জন্ম নিচ্ছে এবং তার নাম ও বংশ-পরিচয় ওই লোকের সাথেই সম্পৃক্ত হচ্ছে। অথচ এই গর্ভ ধারণের পুরো প্রক্রিয়াটাই সম্পন্ন হয়েছে হারাম উপায়ে।
ঈমান ও কুফরের পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করার আরও একটি কারণ হলো, ইসলামকে বিকৃত করে আসল ইসলাম থেকে আমরা এত দূরে চলে এসেছি যে, এখন আর ঈমান-কুফরের মতো ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করারও পরিবেশও আমাদের মধ্যে বাকি নেই। যারাই কুফর বিষয়ে কথা বলতে চায়, তারাই বিবিধ তিরস্কারের শিকার হয়। তাদের বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে দমিয়ে দেওয়া হয়।
ঈমান ও কুফরের পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে জানা থাকলেই আমরা কুরআনুল কারিমের পরিপূর্ণ মর্ম উপলব্ধি করতে সক্ষম হব। তখন আমরা সমগ্র কুরআনকেই ভালোবাসতে শুরু করব এবং কুরআনের কোনো একটি আয়াত নিয়েও আমাদের মধ্যে আর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকবে না। ইতিপূর্বে কাফেরদের ব্যাপারে কঠোরতার আয়াতগুলো পাঠ করলে যে একরকম অস্বস্তি বোধ হতো, তা থেকেও আমরা সহজেই রেহাই পাব।
এতদিন আমাদের সন্তানদের ঈমান ও কুফরের স্বরূপ শিক্ষা না দিয়ে অনেক বড় ভুল করেছি আমরা। আমাদের এই ভুলের কারণেই ইসলাম তাদের হৃদয়ে যথাযথ জায়গা করে নিতে পারেনি। আমাদের অসচেতনার কারণে তারা ভাবতে বসেছে যে, এতদুভয়ের মধ্যে বোধয় খুব একটা পার্থক্য নেই।
সর্বোপরি ঈমান ও কুফরের এই আলোচনার মাধ্যমে একজন মুসলিমের যে কী মর্যাদা! তা আমরা অনুধাবন করতে পারব। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার পর আমাদের জন্য পরিপূর্ণ মুসলমান হতে পারাই হবে সবচেয়ে গৌরবের বিষয়। অর্থাৎ, মুসলিম হতে পারা যে আল্লাহ তাআলার এক অশেষ নেয়ামত তা আমরা জানতে পারব।
অতএব ‘বি প্রাউড অব ইসলাম’ সিরিজের সারমর্ম অল্প কথায় এভাবে বলা যায়—
একজন মুসলমানকে বিনয়, কল্যাণকামিতা এবং সুষম গুণাবলির ধারক বানাতে সাহায্য করা এবং তার মধ্যে এমন সব গুণাবলি তৈরিতে সহায়তা করা, যা তার হৃদয় দখল করা ঈমানের পরিচায়ক হবে। এভাবে যাতে প্রত্যেক মুসলমান ব্যক্তি ‘কুনতুম খাইরা উম্মাতিন’ (তোমরা হলে শ্রেষ্ঠ জাতি) এর মিসদাকে পরিণত হতে পারেন।
যাতে কুফরকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করতে পারে, কুফরের প্রতি ধাবিত করে এমন জিনিস সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে নিজে এবং নিজের পরিবার-পরিজনকে, সর্বোপরি বিশ্বমানবতাকে কুফর থেকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারে।
প্রিয় পাঠক, আমরা এমন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলছি, যা পশ্চিমা বিশ্বে এবং মুসলিম দেশগুলোতে বসবাসরত সকল মানুষের জন্যই জানা জরুরি। কারণ, শুধু অমুসলিম দেশে বাসরত মুসলমানদেরই বিধর্মীদের সাথে চলাফেরা করতে হয়, ব্যাপারটি এমন নয় মোটেও। রবং আমরা যারা মুসলিম দেশে অবস্থান করছি, আমাদেরও অমুসলিমদের সাথে চলাফেরা করতে হয়। অমুসলিম ছাত্র-শিক্ষক, সহকর্মী-সহমর্মী এবং পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে চলতে গিয়ে আমরা যেন ইসলামের সুমহান মর্যাদার কথা বিস্মৃত না হই।
কর্মক্ষেত্রে অমুসলিমদের সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে পারস্পারিক শ্রদ্ধা এবং আস্থার। তারা আমাদের সম্মান করবে, আমরাও তাদের সম্মান করব। এতে তারা আমাদের মাধ্যমে উপকৃত হবে, আমরাও তাদের মাধ্যমে উপকৃত হব। তাদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান সব সময়ই খুব স্বচ্ছ থাকবে। তাদের ধর্ম নিয়ে কখনোই আমরা রসিকতা করব না; তবে তাদের আল্লাহ তাআলার মনোনীত দ্বীনের প্রতি দাওয়াত দেব।