আপনি কিভাবে কুরআনে কারীম অধ্যয়ন করবেন?(প্রথম পর্ব)
এক.
কুরআনুল কারীমকে যিনি পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে পাঠ করবেন, এবং এই মহাগ্রন্থটি থেকে নিজের জীবনে সত্যই আলো গ্রহণ করতে চান, তার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে—এ গ্রন্থের বড়ত্ব ও মর্য়াদা দিয়ে তার অন্তরটি পরিপূর্ণ থাকতে হবে। দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিশ্বাসের এই আলো প্রবাহিত হবে—আল্লাহ তাআলার অনাদি গুণগুলো থেকে বিশেষ একটি গুণ হলো এই কালাম। সৃষ্টি জগতের সাথে এ গুণের কোন তূলনা ও সাদৃশ্য হয় না, সম্পর্কও হয় না; তবু, তিনি আপন অনুগ্রহে অনাদি এই গুনটিকে আরবি ভাষার পোশাক পরিয়ে পৃথিবীতে অবতীর্ণ করেছেন এবং তাঁর ও তাঁর বান্দাদের মাঝে সম্পর্কের সেতুবন্ধনরূপে একে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। (ইসমাইল শহীদ রহ.-কৃত সিরাতে মুস্তাকিম)।
বিশ্বাসের জায়গা থেকে স্বাভাবিকভাবে সকল মুসলমানই মান্য করেন যে, কুরআন আল্লাহ তাআলার পবিত্র কালাম বা কথামালা; তবে এই পবিত্র কথামালা থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য অসচেতন ও অমনোযোগী বিশ্বাস যথেষ্ট নয়, বরং সে বিশ্বাসটিকে সবসময় হৃদয় ও মস্তিষ্কে জাগিয়ে রাখা একান্ত দরকার।
কুরআনে কারীমে বারবার বলা হয়েছে : “মহাগ্রন্থ এই কুরআন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে, এটা তাঁরই বাণী”। এই যে কু্রআনের সাথে আল্লাহ তাআলা নিজের সম্পর্ক ও সম্বন্ধটির কথা পুনরাবৃত্তি করছেন, এটা শুধু এ গ্রন্থের সনদ বা সূত্র বর্ণনার জন্যে নয়। বরং, সূত্র বর্ণনার পাশাপাশি এ কথা বুঝানোও উদ্দেশ্য যে, এটি সাধারণ কোন গ্রন্থ নয়; গুরুত্ব ও মর্য়াদায়, পবিত্রতা ও সৌন্দর্যে অনন্য ও অসাধারণ। পৃথিবীর কোন গ্রন্থের সাথে এর তূলনা হতে পারে না। একে পাঠ ও গ্রহণ করতে হবে বোধ ও উপলব্ধির সুউচ্চ জায়গা থেকে। এ কথা আমরা কেন বলছি? কারণ, এটা স্বীকৃত বিষয় যে, কথকের মর্যাদা ও মহত্ত্বের কারণে কথাগুলোও সুমহান এবং মর্যাদা পূর্ণ হয়ে ওঠে।
আল্লাহ তাআলার সাথে কুরআনুল কারীমের এই সম্বন্ধের কথা মাথায় নিয়ে এই গ্রন্থ ও এতে বর্ণিত সকল বিষয়ের প্রতি হৃদয়ে পূর্ণ ভক্তি, বিশ্বাস ও আস্থা লালন করলেই কেবল প্রকৃত অর্থে এ থেকে ঈমানী নুর লাভ করা যাবে। সীমালংঘন ও অজ্ঞতায় নিমজ্জিত কোন মানুষ যদি কুরআনের সাথে আল্লাহ তাআলার এই সম্পর্ক ও সম্বন্ধের মর্যাদা অনুভব না করে, এটা তার নিঃস্বতা ও সংকীর্ণ দৃষ্টির ফল। অন্যথায় বাস্তবতা তো হলো এই, আল্লাহ তাআলা বলেন : আমি যদি পর্বতের উপর এই কুরআনকে অবতীর্ণ করতাম, তাহলে তুমি দেখতে আল্লাহর ভয়ে সে পর্বত নত ও বিদীর্ণ হয়ে গেছে (হাশর : ১২) অর্থাৎ কুরআনুল কারীম যার গুন, সে আল্লাহর বড়ত্ব ও মর্য়াদা এত বিপুল যে, কোন পাহাড়ের উপর একে অবতীর্ণ করলে, সেই কথকের শক্তি ও মর্য়াদার প্রভাবে পাহাড়টি নত হয়ে দেবে যেত এবং ভয় পেয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হত। কুরআনুল কারীমের সাথে আল্লাহ তাআলার এই সম্বন্ধের বিশ্বাস ও অকুণ্ঠ স্বীকৃতিতে যার হৃদয় পূর্ণ, তার অবস্থা কেমন হয়, সে বিবরণও তিনি দিয়েছেন। রাসূলের কাছে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তারা যখন তা শ্রবণ করে, তুমি দেখবে সত্য চেনার কারণে তাদের চক্ষু অশ্রুসজল। (সূরা মায়েদা : ৮৩)
এই সৌভাগ্যবান মানুষজন যখন আল্লাহ তাআলার কালাম শ্রবণ করে তখন তাদের হৃদয় কেঁপে উঠে, দেহের পশম দাড়িয়ে যায় এবং শঙ্কা ও ভীতির কারণে তাদের মধ্যে এক আজব অবস্থা তৈরি হয়। তাদের তনুমন ভেতর-বাহির সমস্ত অস্তিত্ব আকুল হয়ে উঠে এবং ভয়ে, ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় বিনম্র ও বিনত হয়ে আসে।
ٱللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ ٱلْحَدِيثِ كِتَٰبًا مُّتَشَٰبِهًا مَّثَانِىَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ ٱلَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَىٰ ذِكْرِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُدَى ٱللَّهِ يَهْدِى بِهِۦ مَن يَشَآءُۚ وَمَن يُضْلِلِ ٱللَّهُ فَمَا لَهُۥ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, পূনঃ পূনঃ পঠিত। এতে তাদের লোম কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ার উপর, যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, এরপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়। এটাই আল্লাহর পথ নির্দেশ, এর মাধ্যমে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা যুমার:২৩)
আল্লাহর বানী শুনতে পেলে তাদের হৃদয় প্রকম্পিত হয় এবং যতই শুনে, তাদের ঈমান ততই বাড়তে থাকে।
إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتْهُمْ إِيمَٰنًا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। (সূরা আনফাল : ২)
এমনিভাবে এখানে তারা নিজেদের আত্মার ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভের উপকরণ খুঁজে পায়।
وَنُنَزِّلُ مِنَ ٱلْقُرْءَانِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَۙ وَلَا يَزِيدُ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا خَسَارًا
আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়। (আল ইসরা : ৮২)
এখানে মূল যে বিষয়টি বলা হয়েছিল, কুরআনুল কারীম থেকে উপকার লাভ করার জন্য জরুরী হলো, এই গ্রন্থের বড়ত্ব ও মহত্ত এবং সত্যতার বিশ্বাস রক্তের মতো দেহের শিরা উপশিরায় প্রবাহিত হতে হবে। পাশাপাশি একে এতোটা যত্নের সাথে তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন করতে হবে, যেন এটি তার একান্ত হৃদয়ের বন্ধু, আমরণ সঙ্গী। ইমাম শাতিবি (মৃত্যু : ৭৯০ হি.) যথার্থই বলেছেন : যে ব্যক্তি দীনকে জানতে চায়, তার জন্য জরুরী হলো কুরআনুল কারীমকে নিজের একান্ত সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করা, দিনরাত সর্বদা এর সাথে লেগে থাকা। কুরআনের সাথে এই সম্পর্কটি হতে হবে দুই দিক থেকে—ইলমী ও আমলি। অর্থাৎ, জ্ঞানগতভাবে এবং বাস্তব জীবন যাপনে। কোন একটিকে গ্রহণ করা যথেষ্ট নয়। দুটোকেই এক সাথে গ্রহণ করতে হবে। কেউ যদি এভাবে সম্পর্ক রাখতে পারে, আশা করা যায় সে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। আল-মুওয়াফাকাত :৩/৩৪৬.
দুই.
আল্লাহ তাআলা একদিকে যেমন নিজের কালামকে বান্দাদের সাথে সম্পর্কের সেতু বানিয়েছেন, অপরদিকে এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও বাস্তব জীবনে এর দর্শন ও বিধানাবলী প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সত্তাকে সর্বোচ্চ উৎস ও অথরিটি বলে ঘোষণা করেছেন। এ কারণে কুরআনুল কারীম থেকে সত্যের আলো ও দিশা গ্রহণ করতে হলে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে নবীজিকে অনুসরণ করতে হবে, পূর্ণাঙ্গরূপে তাঁর আনুগত্য করতে হবে এবং তার বাণী ও নির্দেশনার উপর সম্পূর্ণ স্বস্তির সাথে ভরসা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোন ধরণের দ্বিধা, খটকা ও অস্বস্তি গ্রহণযোগ্য নয়। গভীর আস্থার এই উৎসকে বাদ দিয়ে কুরআনুল কারীম থেকে উপকৃত হওয়ার আশা করা অনর্থক ও অসম্ভব চিন্তা। স্বয়ং কুরআনুল কারীম নবীজির সাথে নিজের যে সংযোগ ও সম্পর্কের কথা বর্ণনা করেছে, এটা স্পষ্ট প্রমাণ করে, কুরআনে কারীম থেকে উপকার প্রত্যাশীদের জন্য নবীজির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কোন বিকল্প নাই।
কুরআনের ঘোষণা হলো—
هُوَ ٱلَّذِى بَعَثَ فِى الأميين رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُوا۟ عَلَيْهِمْ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا۟ مِن قَبْلُ لَفِى ضَلَٰلٍ مُّبِينٍ
তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত।
( সুরা জুমআ : ২)
এখান থেকে জানা গেল আল্লাহ তাআলার পবিত্র কালাম শিক্ষা দেওয়া নবীজির নবুওয়াতি দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। অন্য জায়গায় বলা হয়েছে :
وَأَنزَلْنَآ إِلَيْكَ ٱلذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যে গুলো তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। (সূরা নাহল:৪৪)
বুঝা গেল, কুরআনুল কারীমের শিক্ষাদান ও এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের কাজটি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নবীজির উপর সোপর্দ করা হয়েছে।
এখন নবীজি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কুরআনুল কারীম নিয়ে গবেষণা করা এবং কুরআনে বর্ণিত বিষয়াবলী থেকে উপকৃত হওয়ার আশা করা মানে সীমাহীন অন্ধকার একটি সমুদ্রে নিজেকে নিক্ষেপ করা। এ জন্য প্রখ্যাত তাবেয়ী মুতাররিফ ইবনে শিখখীর রহ.কে যখন কিছু মানুষ আপত্তি করে বলেছিল—আপনি আমাদেরকে শুধু কুরআনের কথা বলুন, তখন উত্তরে তিনি বলেছিলেন—
والله ما نريد بالقرآن بدلا، ولكن نريد من هو أعلم بالقرآن!
আল্লাহর কসম, আমরা কুরআনের পরিবর্ত অন্য কোন কিতাব চাই না; তবে কুরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের জন্য সে ব্যক্তিকে অনুরণ করতে চাই, যিনি কুরআন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অবগত। অর্থাৎ, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। (আল মুয়াফাকাত:৪/২৪)
ইমাম শাতেবি বলেছেন, কুরআনুল কারীমের জন্য নবীজির হাদীস হচ্ছে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মতো। (আল মুয়াফাকাত:৪/১০)
নবীজির সে হাদীসগুলো হলো খোদায়ী সেই তোহফা, যাকে আল্লাহ তাআলা কুরআনে বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
لَقَدْ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُوا۟ عَلَيْهِمْ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا۟ مِن قَبْلُ لَفِى ضَلَٰلٍ مُّبِينٍ
আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট। (আলে ইমরান : ১৬৪)
প্রশিদ্ধ মুফাসসির আবু হাইয়ান আন্দালুসি কিতাবে ‘হেকমত’ এর ব্যাখ্যায় ইমাম মুজাহিদের উদ্ধৃতিতে লিখেছেন—কুরআনের হেকমত হচ্ছে কুরআনের উপলব্ধি ও বুঝ। (আল বাহরুল মুহীত : ১/৩৯৩)
.
ইমাম তাবারি লিখেছেন, আমাদের মতে বিশুদ্ধ বক্তব্য হলো—হিকমত হচ্ছে সেই সব খোদায়ী বিধান, যেগুলো শুধু নবীজির ব্যাখ্যা ও বর্ণনা থেকে জানা যায়। (তাফসীরে তাবারী, সূরা বাকারা ১২৯ নং আয়াত)
কিতাবুর রিসালায় ইমাম শাফেয়ি লিখেছেন—কুরআনে কারীমের সেই সকল বিজ্ঞ আলেম, যাদেরকে আমি পছন্দ করি ও যাদের উপর আস্থা রাখি, তাদের থেকে শুনেছি—হিকমত হলো নবীজির সুন্নাহ (বক্তব্য ও নির্দেশনা) এর নাম।
কুরআন থেকে উপকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে এই হিকমত তথা নবীজির সু্ন্নাহ এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কতখানি, ইমাম শাতেবি রহ. এ ব্যাপারে নিজের সিদ্ধান্তটি নিম্নোক্ত শব্দে ব্যক্ত করেছেন : সুন্নাহ—যা মূলত কুরআনের ব্যাখ্যাকার ও বিশ্লেষক—এই সুন্নাহ এর সাথে যিনি বিশেষ সম্পর্ক রাখেন এবং এসব নিয়ে গভীর চর্চা করেন, কেবল তার পক্ষেই কুরআন বুঝা সম্ভব। (আল মুওয়াফাকাত : ৪/১৪৪)
আর মালেকি মাজহাবের শীর্ষস্থানীয় ফকীহ ও মুহাদ্দিস ইমাম ইবনুল আরাবি রহ. তো এ পর্য়ন্ত বলেছেন যে : কুরআনুল কারীমের প্রত্যেক এমন শব্দ, যা থেকে কোন বিধান আহরিত হয়, সে শব্দটি যদি মুজমাল (অস্পষ্ট) হয়, তাহলে এর ব্যাখ্যা ও মর্ম নির্ধারণের বিষয়টি নবীজির বক্তব্যের উপর নির্ভরশীল হবে। এ কথার বাস্তবতা ও অকুণ্ঠ স্বীকৃতি শরীয়তে নিজেই অনুসন্ধান করে দেখুন, অবশ্যই পেয়ে যাবেন। কোন অস্পষ্ট শব্দের ক্ষেত্রে যদি ধরে নেওয়া হয় যে, এর কোন বিশ্লেষণ পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে আমাদের উপর সে হুকুম পালনের দায়িত্বও বাকি থাকবে না (আহকামুল কুরআন : ১/৫)।
কুরআনুল কারীম থেকে জ্ঞান ও আলো গ্রহণ করতে হলে যে বিষয়গুলো একান্ত জরুরী, এর মধ্যে প্রথমটি হলো, কুরআন আল্লাহর কালাম, সুতরাং তা তূলনাহীন ও মর্য়াদায় অনন্য—এই অনুভূতিটি সর্বদা মনের ভিতরে জাগিয়ে রাখা, এবং দ্বিতীয়টি হলো, এ গ্রন্থের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রধান উৎস হলো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ, তাই কুরআন ব্যাখ্যার সময় একে কোনভাবেই উপেক্ষা করা যাবে না; বরং মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে। অন্যথায় ভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত হওয়া অনিবার্য়—এই বিশ্বাস হৃদয়ে পোষণ করা। উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে কুরআনের আয়াত ও স্বীকৃত ইমামদের বক্তব্যের আলোকে এ বিষয় দুটো সকলের নিকট সুস্পষ্ট হোক।
অন্যান্য বিষয়গুলো পর্য়াক্রমে আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ।
Ma sa Allah. Barakumullah Fikum.
Barakumullah Fikum.