পর্ব- ১
ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. বলেন, সুফিয়ান সাওরী যদি তাবিয়ীদের মধ্যে থাকতেন, সেখানেও তাঁর আলাদা মর্যাদা হতো।
- তিনি আরো বলেন, আলকামা আর আসওয়াদ যদি সুফিয়ান সাওরীর সময় থাকতেন, তবে তারাও সুফিয়ানের দ্বারস্থ হতেন।
- আবদুল্লাহ বিন মুবারক রহ. বলেন, আমার কাছে কারও প্রশংসা করা হলে যাচাই করে সকলকেই আমি তার সম্পর্কে শোনা প্রশংসার তুলনায় কম পেয়েছি। ব্যতিক্রম শুধুমাত্র সুফিয়ান সাওরী।
- তাঁর সমসাময়িক সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ রহ. বলেন, সুফিয়ান সাওরী নিজেই তার কোনো সমতুল্য দেখেননি।
- ইউনুস বিন উবাইদ বলেন, আমি সুফিয়ান সাওরী থেকে উত্তম কাউকে পাইনি। একজন বলল, আপনি সাঈদ বিন জুবাইর, ইবরাহীম, আতা এবং মুজাহিদকে পেয়েও এই কথা বলছেন? তিনি বললেন, হাঁ, যা বলেছি তা বুঝেশুনেই বলেছি। সুফিয়ান সাওরী থেকে উত্তম কাউকে আমি পাইনি।
তিনি নিজের সম্পর্কে বলেন, আমি হৃদয়ে যা আমানত রেখেছি, আমার হৃদয় তার সাথে খিয়ানত করেনি। অন্য বর্ণনায়: আমি হৃদয়ে কিছু গচ্ছিত রেখে তা কখনো ভুলে যাইনি।
কে তিনি? চৌদ্দশ বছরের প্রজন্ম পরম্পরায় ইলম আমলের চলমান এই ধারায় যে কাফেলা নেতৃত্ব দিয়েছে যুগে যুগে আলোর মশাল হয়ে, সে কাফেলার একেবারে সামনের সারিতে একঝলক ইমামের মাঝে তিনি অন্যতম বরেণ্য ইমাম। তিনি সুফিয়ান সাওরী রাহিমাহুল্লাহ।
ইলমুল হাদীস ও অন্যান্য ইলমে ছিলেন ইমাম। তিনি ছিলেন সর্বজনবিদিত দীনদার, তাকওয়ার অধিকারী এবং হাদীস গ্রহণে নির্ভরযোগ্য। মুজতাহিদ পর্যায়ের ইমাম।
মিহরান রাযী বলেন, আমি সুফিয়ান সাওরী থেকে বিভিন্ন অধ্যায়ের হাদীস লিখেছিলাম। পরে এক সময় সেখান থেকে ‘কিতাবুদ দিয়াত’ হারিয়ে ফেলে ঘাবড়ে গেলাম। পুরো ঘটনা সুফিয়ানকে জানালে তিনি অভয় দিয়ে বললেন, আমাকে অবসর পেলে মনে করিয়ে দিও। আমি আবার লিখিয়ে দেব। হজ্জের সফরে দুজনই ছিলেন একসাথে। সুফিয়ান তখন তাওয়াফ করে শুয়েছেন। তখন আমি তাকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলাম। তিনি অধ্যায়ের পর অধ্যায় এভাবে সম্পূর্ণ কিতাবই মুখস্থ লিখিয়ে দিলেন।
৯৭ হিজরী (৭১৮ ঈসায়ীতে) জন্মগ্রহণ করেন। জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুফায়। শাসনভার নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় কুফা থেকে পলায়ন করে মক্কা ও মদীনায় ছিলেন অনেকদিন। এরপর সেখান থেকে লুকিয়ে বসরায় গিয়েছেন আর সেখানেই ১৬১ হিজরী মোতাবেক ৭৭৮ ঈসায়ীতে ইনতেকাল করেছেন। ‘আল জামিউল কাবীর’ ও ‘আল জামিউস সাগীর’ নামে রয়েছে তাঁর হাদীসের দু’টি সংকলন।
প্রসিদ্ধ ইমাম আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক বলেন, আমি তার মজলিসে বসে হাদীস শুনতে শুনতে মজলিস শেষে মনে হতো, তার থেকে নেয়ার মত আর কোনো ইলম বাকি নেই। পরে অন্য মজলিসে বসে দেখতাম, তিনি আজ সম্পূর্ণ নতুন হাদীস শোনাচ্ছেন যা আমি কখনো শুনিনি। তখন আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম, তাঁর ইলমের বড় এক অংশ এখনো আমার না-শোনাই রয়ে গেছে।
ইবরাহীম বিন আবুল লাইস আশজায়ীর সূত্রে বলেন, আমি সুফিয়ান সাওরী থেকে ত্রিশ হাজার হাদীস শুনেছি।
ইলম হাসিলের সূচনা
পরিবার থেকেই তিনি লাভ করেন ইলম হাসিলের অদম্য আগ্রহ। বাবা সাঈদ বিন মাসরুক হলেন হাদীসের নির্ভরযোগ্য রাবী, কমবয়সী তাবেয়ীদের অন্তর্ভুক্ত। শা’বীর শাগরেদ। হাদীসের প্রসিদ্ধ ছয় কিতাবের প্রতিটিতেই তাঁর বর্ণিত হাদীস রয়েছে।
উমর ও মুবারক দুই ভাইই বাবার হাদীসের শাগরেদ। প্রিয় আম্মাও ছিলেন সকল সন্তানের জ্ঞান আহরণের প্রতি ব্যাকুল আগ্রহী। তিনি বলেন, বাছাধন! ইলম অন্বেষণ করতে থাকো। আমার এই চরকা দিয়েই তোমার খরচ নির্বাহ করব।
তিনি ইলম অর্জন করতে শুরু করেন বাবা মাসরুকের কাছ থেকে। এরপর তিনি অসংখ্য শায়খের কাছে ইলম শিখতে যান।
প্রসিদ্ধ আছে, তাঁর শায়েখের সংখ্যা প্রায় ছয়শ, যাদের মধ্যে বয়স্ক শায়েখগণ সরাসরি আবু হুরাইরা রাযি., জারীর রাযি. এবং আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি.-এর মত প্রখ্যাত সাহাবীদের থেকে হাদীস গ্রহণ করেন। সম্ভবত সাহাবীদের কাছ থেকে এক মাধ্যমে হাদীস গ্রহণ করার কারণেই তার কাছ থেকে তাঁর অনেক শায়খ হাদীস গ্রহণ করেন।
সুফিয়ান সাওরী রহ. এর যুগ ছিল বয়স্ক তাবেয়ীদের শিক্ষাদানের যুগ। ফলে অসংখ্য শায়খের কাছ থেকে হাদীস অর্জন করতে চাইলে প্রয়োজন পড়ত দীর্ঘ সফরের ও বেশ সময়ের। সে সময়ে সুফিয়ান সাওরী রহ. হাদীসের জ্ঞান অর্জন করেন প্রায় ছয়শ জন শায়খের কাছ থেকে।
ফলে তার শাগরেদ যে বিপুল সংখ্যক হবেন, তা খুব সহজেই অনুমেয়। বরং শুধু সে শায়খদের নামের তালিকাই বেশ দীর্ঘ, যাদের কাছ থেকে তিনি হাদীস শিখেছেন পরে একসময় তারাই শাগরেদ সুফিয়ানের কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করেছেন।
ইমাম যাহাবী রহ. বলেন, সুফিয়ান সাওরী ছোটকাল থেকেই উচ্চপ্রশংসার অধিকারী ছিলেন তিনটি কারণে। ১. তার অসম্ভব ধী-শক্তি, ২. হিফযে হাদীসের ব্যাপ্তি এবং ৩. তিনি হাদীস বর্ণনা শুরু করেন একদম অল্প বয়সেই।
ইয়াহইয়া বিন আইয়ুব আবুল মুসান্নার সূত্রে বলেন, মারওতে লোকজন বলাবলি করছিল, সাওরী এসেছেন সাওরী এসেছেন। আমি তাকে দেখতে বের হলাম। দেখি, এক বাচ্চা ছেলে যার এখনো গালে ঠিকঠাক দাড়ির পশমই ওঠেনি। অথচ হাদীসের জগতে তখনই তিনি কতটা প্রসিদ্ধি লাভ করে ফেলেছেন!
এখানে শুধু তাঁর সে শাগরেদদের নাম উল্লেখ করছি, যারা হাদীস বা ফিকহ অথবা উভয় শাস্ত্রে ইমাম হিসেবে প্রসিদ্ধি অর্জন করেছেন।
আবু হানিফা, সুলাইমান আ’মাশ, ইবনু জুরাইজ, জা’ফার সাদিক, আওযায়ী, ইবনু আবি যি’ব, মিস‘আর, শু’বা, মা’মার।
আবু ইসহাক ফাযারি, আসবাত বিন মুহাম্মদ, ইবনু উলাইয়াহ, যুহাইর বিন মুআবিয়া, সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ, আবু দাউদ তয়ালিসি, আবদুল্লাহ বিন মুবারক, আবদুল্লাহ বিন নুমাইর, উবাইদুল্লাহ আশজায়ী, আলী বিন জা’দ, আলী বিন হাফস মাদায়িনী, ইমাম মালিক বিন আনাস, হারুন বিন মুগীরা, প্রসিদ্ধ হাফিযুল হাদীস ওকী বিন জাররাহ, ইয়াহইয়া আল কাত্তান।
বড়দের সবকিছুই বড়
এত বড় ও প্রসিদ্ধ ইমাম হয়েও সুফিয়ান সাওরী রহ. ছিলেন সজাগ ও সতর্ক মানুষ। দরসে ও মজলিসে তিনি শাগরেদদের খেয়াল করতেন। কেউ নিয়মিত চুপচাপ থাকলে বা প্রশ্ন করতে ইতস্তত করলে তিনি নিজ থেকেই কথা বলে তাকে স্বাভাবিক করতেন।
মজলিসে একজন নিয়মিত আসত কিন্তু কোনো কথা বলতো না। একবার সুফিয়ান রহ. নিজেই তার কথা শোনার জন্য তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে যুবক, আমাদের পূর্বপুরুষগণ তেজী ঘোড়ায় চড়ে অনেক সামনে চলে গেছেন। এদিকে আমরা পড়ে আছি আঘাতপ্রাপ্ত গাধার পিঠে। কী অবস্থা হবে আমাদের? যুবক উত্তর দিলো, যদি আমরা ঠিক পথেই এগুতে থাকি, তাদেরকে খুব দ্রুতই ধরে ফেলতে পারব।
তিনি বলেন,
- তিন ক্ষেত্রে আল্লাহর ক্রোধ থেকে বেঁচে থাক। ১. তিনি তোমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তাতে শিথিলতা প্রদর্শন করা থেকে। ২. তিনি তোমার জন্যে যে রিযিক বণ্টন করেছেন তাতে তোমাকে অসন্তুষ্ট অবস্থায় দেখা থেকে। ৩. তুমি দুনিয়ার কিছু কামনা করে পাচ্ছ না এবং এ কারণে তোমার রবের উপর তুমি অসন্তুষ্ট, এমন হওয়া থেকে।
- শারীক বলেন, এক ব্যক্তি এসে সুফিয়ান সাওরীর নিকট উপদেশ কামনা করল। তিনি বললেন, এই দুনিয়ায় যতদিন থাকবে সে হিসেবে কাজ করো। আর আখিরাত শান্তির স্থায়ী আবাস হিসেবে সেখানের জন্য আমল কর।
পর্ব-২
- তাঁর সহপাঠি ও সমকালিন মনিষি বিখ্যাত হাফিযে হাদীস শু’বা বলেন, সুফিয়ান আমার থেকেও বড় হাফিযে হাদীস।
- ইয়াহইয়া ক্বাত্তান বলেন, আমার দেখায় হাদীসের সবচে বড় হাফিয সুফিয়ান সাওরী, এরপর শু’বা।
- আবু উবাইদ আজুররি আবু দাউদের সূত্রে বলেন, সুফিয়ান ও শু’বা কোথাও ভিন্নমত হলে সঠিক থাকেন সুফিয়ান। পঞ্চাশেরও অধিক জায়গায় দু’জনের মতপার্থক্য হয়েছে। প্রতিটিতেই সুফিয়ানের মত সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
- শু’বা, ইবনু উয়াইনা, আবু আসেম, ইয়াহইয়া বিন মায়ীনসহ আরও অনেকেই বলেছেন, সুফিয়ান সাওরী হাদীসের আমীরুল মুমিনীন।
- তিনি আরো বলেন, আমার দেখামতে হালাল হারামের সবচেয়ে বড় জ্ঞানী ছিলেন সুফিয়ান সাওরী।
- বিশর বিন হারিস রহ. বলেন, সকল ইলম ছিল সুফিয়ান সাওরীর নখদর্পনে। তিনি যা ইচ্ছা আহরণ করছেন, যা ইচ্ছা রেখে দিচ্ছেন।
- আব্বাস দুরী বলেন, আমি ইয়াহইয়া বিন মায়ীনকে দেখেছি, তিনি ফিকহ, হাদীস, বুযুর্গিসহ সকল ক্ষেত্রে সুফিয়ান সাওরীকে সর্বাগ্রে রাখতেন।
- শু’বার সূত্রে আবু ক্বাতান বলেন, সুফিয়ান সাওরী ইলম ও তাকওয়া উভয় ক্ষেত্রেই ছিলেন ইমাম।
- আবু বকর বিন আইয়াশ বলেন, সুফিয়ান সাওরীর দরসে বসাতেই লোকদের মর্যাদা বেড়ে যেতো।
প্রতিযুগেই আল্লাহ আহলে ইলমের মাধ্যমে ইলমের হেফাজত করেন
ফাদল বিন মুহাম্মদ বলেন, আমি ইয়াহইয়া বিন আকসামকে বলতে শুনেছি, আগে উলামায়ে কেরামের মধ্যে অনেক শাস্ত্রজ্ঞ ছিলেন। যেমন সুফিয়ান সাওরী ছিলেন হাদীসের শাস্ত্রজ্ঞ। আবু হানীফা ছিলেন ফিকহে শাস্ত্রজ্ঞ। কিসায়ী ছিলেন কিরাআতে শাস্ত্রজ্ঞ। আজ আর তেমন শাস্ত্রজ্ঞ নেই।
সতর্ক ও সচেতন ইতিহাসবিদ ইমাম যাহাবী রহ. এই বক্তব্যের পর তাঁর এই মন্তব্য যোগ করেছেন, এদের পরও অনেক শাস্ত্রজ্ঞ আলেম এসেছেন। যেমন এর পরের স্তরে ছিলেন হাদীসে আবদুর রহমান বিন মাহদী, ইলমুল লুগাহ (ভাষাবিজ্ঞান)-তে ছিলেন আবু উবাইদা মা’মার, ফিকহে ছিলেন ইমাম শাফেয়ী, কিরাআতে ছিলেন ইয়াহইয়া যুবাইরি, যুহদে ছিলেন মারুফ কারখি।
এদের পরের স্তরে ছিলেন, হাদীস ও ইলালে হাদীসে ইবনুল মাদীনি, ফিকহ ও সুন্নাহে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, কিরাআতে আবু উমর দুরি, লুগাতে ইবনুল আ’রাবী, যুহদে সারী সাকাতী।
এভাবে প্রতি শতাব্দীতেই প্রতি শাস্ত্রের শাস্ত্রজ্ঞ উলামায়ে কেরাম ছিলেন। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরবিচ্ছিন্ন মেহনতে আমরা দীন পেয়েছি অক্ষত। আল্লাহ তাদের সবাইকে জাযায়ে খাইর দান করুন। আমীন।
ফিকহে সুফিয়ান সাওরীর গ্রহণযোগ্যতা
তিনি ছিলেন আহলে ইলমের মাঝে বরিত গ্রহণযোগ্য ইমাম। ফলে বড়রাও তাঁর সিদ্ধান্ত বিনা প্রশ্নে মেনে নিতেন।
ইমাম আওযায়ী রহ. বলেন, নামাযে উচ্চস্বরে হেসে দিলে নামাযের কী হুকুম সেটা আমার কাছে অস্পষ্ট ছিল। পরবর্তী সময়ে সুফিয়ান সাওরীর সাথে সাক্ষাৎ হলে আমি এবিষয়ে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, সে পুনরায় অযু করে নামায পড়বে। আমিও বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিলাম।
সুফিয়ান সাওরীর উসতায আসিম বিন আবুন নুজুদ তার শাগরেদ সুফিয়ানের নিকট ফতওয়া জানার জন্য আসতেন। তিনি বলতেন, হে সুফিয়ান, তুমি ছোট থাকতে আমাদের কাছ থেকে ইলম শিখেছ। আজ তুমি ইলমের বয়সে বড়। তাই এখন আমরা তোমার কাছ থেকে ইলম শিখতে আসি।
ইমাম আযম আবু হানিফা রহ. এর সাথে
ইমাম আযম আবু হানিফা রহ. এর সাথে সে যুগের হাদীস ও ফিকহের ইমামদের যে বিনীত ও শ্রদ্ধার আচরণ, ইতিহাসের পাতায় শব্দের বুনন তা আর কতটাই বা ধারণ করতে পারে! বরং বলা চলে, এই বিশাল ব্যক্তির অনুসরণকে যে ইমামগণ নিজেদের জন্য সৌভাগ্যের কারণ গণ্য করতেন, সুফিয়ান সাওরী রহ. ছিলেন তাঁদেরই একজন।
ইবনুল মুবারক বলেন, সুফিয়ান সাওরী আবু হানিফা সম্পর্কে বলেন, আবু হানিফার ইলম বর্শার ফলার থেকেও বেশি শানিত ছিল। আল্লাহর কসম, তিনি ইলমকে খুব মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন। হারাম থেকে সবচেয়ে বেশি বেঁচে থাকতেন। ইলমের রাজধানীখ্যাত তার এলাকার আলেমদের খুব অনুসরণ করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুধুমাত্র সহীহ হাদীসগুলোরই অনুসরণ করতেন। নাসিখ হাদীস ও মানসুখ হাদীস সম্পর্কে তাঁর অগাধ ইলম ছিল। শুধুমাত্র নির্ভরযোগ্য রাবীদের হাদীস আর রাসূলের আমলই তিনি তালাশ করতেন।
মুহাম্মদ বিন শুজা হাসান বিন আবু মালিকের সূত্রে বলেন, ইমাম আবু হানিফার সবচে কাছের ও প্রধান শাগরেদ আবু ইউসুফ বলেন, সুফিয়ান সাওরী আবু হানিফাকে আমার থেকেও বেশি অনুসরণ করেন।
আবদুল্লাহ বিন দাউদ বলেন, আমি সুফিয়ান সাওরীর সাথে হজ্জের সফরে ছিলাম। জনৈক ব্যক্তি এসে তাকে হজ্জের মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি উত্তর দিলেন। তখন লোকটি বলল, আবু হানিফা তো অন্যরকম বলেন। সুফিয়ান বললেন, আবু হানিফা যেমন বলেছেন, তেমনই হবে।
বাশশার বিন কীরাত বলেন, আমি আবু হানিফা ও সুফিয়ান সাওরীর সাথে হজ্জের সফরে ছিলাম। তারা যাত্রাপথে যেখানেই থামতেন সেখানেই ইলমের মজলিস শুরু হয়ে যেতো। ইলমপিপাসুরা দলেদলে ছুটে আসতো আর বলতো, ইরাকের সনামধন্য দুই ফকীহ একসাথে আছেন। ইলমের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে নিই। সেখানে সুফিয়ান সাওরী আবু হানিফাকে সামনে এগিয়ে দিতেন আর নিজে তার পেছন পেছন হাঁটতেন। তাদেরকে কেউ মাসআলা জিজ্ঞেস করলে আবু হানিফা থাকতে সুফিয়ান উত্তরই দিতেন না, যেন আবু হানিফাই সকল প্রশ্নের উত্তর দেন।
যায়িদা বলেন, আমি একদিন সুফিয়ান সাওরীকে এক গাছের নিচে একটি কিতাব খুব মনোযোগের সাথে পড়তে দেখলাম। আমি কিতাবটি দেখার অনুমতি চাইলাম। তিনি কিতাবটি আমাকে দিলেন। আমি খুলে দেখি সেটি আবু হানিফা রহ. কর্তৃক লিখিত কিতাবুর রিহন বা বন্ধক পর্ব। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তাঁর কিতাব পড়েন? তিনি বললেন, যদি তাঁর সকল কিতাব একসাথে পেতাম, সবগুলো পড়ে নিতাম। ইলম দিয়ে পরিপূর্ণ তাঁর কিতাবগুলো পড়লে আমার ইলম অর্জনের আর কিছু বাকি থাকতো না।
তিনি বলেন,
- উকবা বিন আমের সুফিয়ান সাওরীর সূত্রে বলেন, তোমরা এই ইলম শিক্ষা কর। শেখা হলে মুখস্থ কর। মুখস্থ হলে তার উপর আমল করে। আমল করা হলে এরপর সেটি অন্যদের কাছে ছড়িয়ে দাও।
- আশজায়ী সুফিয়ান সাওরীর সূত্রে বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি মিথ্যা হাদীস বলে, সে তার ঘরের একদম ভেতরের কামরায় থাকলেও আল্লাহ লোকসমাজে তার মিথ্যাচার প্রকাশ করেই দেবেন।
পর্ব – ৩
ইবনু আবি যি’ব বলেছেন, সুফিয়ান সাওরী ছিলেন তাবিয়ীদের সাথে সবচে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ।
আইয়ুব সাখতিয়ানি বলেন, কুফা থেকে আমাদের নিকট যারা এসেছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ছিলেন সুফিয়ান সাওরী।
খুরাইবী বলেন, আমি সুফিয়ান সাওরীর তুলনায় বড় কোনো ফকীহকে দেখিনি।
আবু সালিহ বিন হারব মাদায়িনী বলেন, আমি আশা করি, কিয়ামতের দিন সুফিয়ান সাওরীকে তাঁর সময়কালের উম্মাহর বিরুদ্ধে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করে বলা হবে, তোমরা তোমাদের নবীকে পাওনি ঠিক আছে। কিন্তু সুফিয়ান সাওরীকে তো পেয়েছিলে। তাকে পেয়েও কেন তার অনুসরণ করলে না?
শাসকদের সাথে সুফিয়ান সাওরী রহ.
একদিন সুফিয়ান সাওরী খলীফা মাহদির নিকট গিয়ে কিছু গরম কথা বললেন। কাছে থাকা ঈসা বিন মুসা বলল, আপনি আমীরুল মুমিনীনের সাথে এভাবে কথা বলছেন? অথচ আপনি সাওর গোত্রের একজন সাধারণ লোক! সুফিয়ান সাওরী বললেন, সাওরের একজন আল্লাহর অনুগামী বান্দা তোমার গোত্রের একজন নাফরমানের তুলনায় অবশ্যই উত্তম।
কা’কা’ বিন হাকীম রহ. বলেন, আমি খলীফা মাহদির দরবারে বসে ছিলাম। এমন সময় সুফিয়ান সাওরী রহ. এলেন। তিনি খলীফার জন্য খুব আড়ম্বরের সাথে সালাম না দিয়ে খুব স্বাভাবিক স্বরে সালাম দিলেন এবং দরবারে প্রবেশ করলেন। এদিকে রাবী’ তার মাথার কাছেই তরবারিতে ভর দিয়ে বসে বসে কাণ্ডকারখানা দেখছে।
খলীফা মাহদি বেশ হাসিহাসি চেহারা নিয়ে সুফিয়ান সাওরীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন, এই যে সুফিয়ান সাহেব, আপনি তো আমাদের থেকে এদিকে সেদিকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আপনার নাকি ধারণা, আমরা আপনাকে ধরতেই পারব না? এই যে এখন আপনি আমাদের হাতের মুঠোয়। এখন যদি আমি আপনার ব্যাপারে কোনো লাঞ্ছনার ফায়সালা করে দেই?
সুফিয়ান সাওরী দরাজ কণ্ঠে বললেন, আপনি আমার ব্যাপারে কোনো অন্যায় ফায়সালা করলে আপনার ব্যাপারেও সবচেয়ে বড় ক্ষমতাধর বাদশাহ তেমনই ফায়সালা করবেন।
রাবী’ বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! এই মূর্খ আপনাকে এমন উত্তর দিতে পারলো? আপনি শুধু একবার অনুমতি দিন, আমি ওর মাথা গর্দান থেকে আলাদা করে ফেলবো।
মাহদি চটে গিয়ে বললেন, চুপ কর বেওকুফ কোথাকার! এরা তো চায়ই যে আমি তাদের হত্যা করে তাদেরকে চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিই আর আমি পড়ে থাকি সব অমঙ্গলের ঢেঁকি নিয়ে! তাকে কুফায় কাযীর দায়িত্ব লিখে দাও। কেউ যেন এটা নিয়ে প্রশ্ন না তোলে। ফলে তৎক্ষনাৎ একটি কাগজে সে নির্দেশ লিখে তাকে দেয়া হলো। তিনি সে নির্দেশনামা নিয়ে বের হয়ে গেলেন। দজলায় তার কাযীর দায়িত্ব অর্পণের এই পত্র নিক্ষেপ করে পালিয়ে গেলেন কুফা থেকে। তাকে সকল শহরে খোঁজা হলো, কিন্তু আর পাওয়া গেলো না।
মুহাম্মদ বিন সা’দ বলেন, সুফিয়ান সাওরীর খোঁজে লোক পাঠিয়ে তাকে পাওয়া গেলো না। এদিকে তিনি মক্কায় রওয়ানা হয়ে গেলেন। তখন মক্কার গভর্নর মুহাম্মদ বিন ইবরাহীমের প্রতি খলীফা মাহদি নির্দেশ জারি করলেন, যে করেই হোক সুফিয়ান সাওরীকে তার চাই। এদিকে মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম সুফিয়ানকে এ ব্যাপারে জানিয়ে দিয়ে বললেন, আপনি চাইলে খলীফার কাছে ধরা দিতে পারেন। আমি আমার লোক দিয়ে আপনাকে খলীফা পর্যন্ত পৌঁছে দেবো। আর চাইলে আপনি আত্মগোপন করতে পারেন।
সুফিয়ান সাওরী দ্বিতীয়টি পছন্দ করে আত্মগোপনে গেলেন। মুহাম্মদ বিন ইবরাহীমও শহরজুড়ে আওয়াজ ছড়িয়ে দিলেন, যে ব্যক্তি সুফিয়ান সাওরীকে ধরে দিতে পারবে, তাকে এইসেই পুরষ্কার দেয়া হবে। এই অবস্থাতেই মক্কায় ছিলেন। শুধুমাত্র আহলে ইলম এবং যাকে তিনি নিরাপদ ভাবতেন তাদের দেখা দিতেন।
কাযা বা বিচারকের দায়িত্ব ফিকহে ইসলামীর একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা ও ফরীযা। একইসাথে এটি অনেক নাযুক ও ভারী দায়িত্ব। হাদীস শরীফে বিচারকদের সম্পর্কে দুটি ইরশাদ এখানে উল্লেখ করছি।
বুরায়দা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিচারক তিন শ্রেণীর। দুই শ্রেণীর ঠিকানা জাহান্নাম, এক শ্রেণীর ঠিকানা জান্নাত। যে বিচারক জেনেবুঝে অন্যায়ভাবে ফয়সালা করে, তার ঠিকানা জাহান্নাম। যে না জেনে লোকদের হক নষ্ট করে, তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর যে ন্যায়সঙ্গত ফয়সালা করে, তার ঠিকানা জান্নাত। – আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ
আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন ন্যায়পরায়ন বিচারকের এমন সময় আসবে, যখন সে তামান্না করবে, হায় যদি সে দুজনের মাঝেও কোনো ফয়সালা না করত! – মুসনাদে আহমদ
এসকল হাদীসের দিকে খেয়াল রেখে সালাফের অনেকে বিচারকের দায়িত্ব গ্রহণ না করে বিপরীতে শাসক শ্রেণীর বিরাগভাজন হয়েছেন, এমনকি জীবনের শেষ পর্যন্ত নির্যাতন সয়েছেন বা আত্মগোপনে কাটিয়েছেন। সুফিয়ান সাওরী রহ. ছিলেন তেমনই একজন।
আবু শিহাব হান্নাত বলেন, সুফিয়ান সাওরী মক্কায় থাকতে একদিন তার বোন আমাকে দিয়ে একটি থলেতে কিছু কেক ও মিষ্টি পিঠা দিয়ে পাঠালেন। আমি মক্কায় এসে তাঁর খোঁজ নিয়ে জানলাম, তিনি মাঝেসাঝে কা’বার কাছে বসে থাকেন। আমি তাকে খুঁজে বের করে সালাম দিলাম। তিনি অন্যসময়ের মত স্বাভাবিকভাবে সালামের জবাব দিলেন না, হালপুরসিও করলেন না। আমি বললাম, আপনার বোন আমাকে দিয়ে একটি থলে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেন, দ্রুত দাও। আমি তাকে সালামের জবাব ও হালপুরসি না করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমাকে এ বিষয়ে কথা শুনিয়ো না। গত তিনদিন যাবত আমি কিচ্ছু খাইনি। এজন্য কথা বলার শক্তিই পাচ্ছিলাম না। ভাবা যায়, কাযীর দায়িত্ব গ্রহণ করা থেকে একজন পালিয়ে কী নিদারুণ ক্ষুতপিপাসায় কষ্ট করছেন!
কিন্তু মক্কাতেও বেশি সময় তিনি থাকতে পারলেন না। আবু আওয়ানা এসে সুফিয়ানকে সালাম দিলে তিনি সালামের জবাব দিলেন না। তাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, তাকে আমি চিনি না। আর এই অবস্থায় আমি অপরিচিতদের সাথে বিলকুল কথা বলছি না। তখন তাকে জানানো হল, আপনার অবস্থান এখন অনেকেই জানে।
এটা শুনে তিনি নিজের নিরাপত্তার আশঙ্কা বোধ করে সেখান থেকে গেলেন হাইসাম বিন মানসুরের ঘরে। সেখানেও বেশিদিন থাকতে না পেরে রওয়ানা দিলেন বসরার উদ্দেশে। সেখানে ইয়াহইয়ার ঘরের কাছেই অবস্থান নিলেন। ইয়াহইয়া তাঁকে পাশের ঘরে জায়গা দিয়ে তাঁর ও সুফিয়ানের ঘরের মধ্যে একটি দরজা তৈরি করে দিলেন। সে দরজা দিয়ে বসরার মুহাদ্দিস ও হাদীসের তালিবগণ এসে হাদীসের সুধা ও পিপাসা নিবারণ করে যেতেন।
ভাবা যায়, শুধুমাত্র কাযীর দায়িত্ব এড়াতে কী কষ্টের বিতাড়িত এক জীবন পার করছেন তিনি! যেখানে তিনি থাকতে পারতেন কাযীর জন্য বরাদ্দ বাড়ীতে, ভোগ করতে পারতেন কাযীর জন্য বরাদ্দ সুযোগ সুবিধা, সেখানে তাঁর আবাস পরিবর্তন হতে হতে কূফা থেকে মক্কা, মক্কা থেকে আবার বসরায়! আসলে তারাই ছিলেন প্রকৃত যাহেদ ও দুনিয়াত্যাগী।
আমানতদারির উজ্জ্বল নমুনা
সুফিয়ান সাওরী যখন সুলতানের চোখ ফাঁকি দিয়ে বসরায় এলেন, তিনি একটি বাগানে ফলরক্ষকের চাকুরি নিলেন। একদিন সে বাগানের পাশ দিয়ে জনৈক ওশর আদায়কারী যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করল, তুমি কোত্থেকে এসেছো? তিনি জবাব দিলেন, কূফা থেকে। সেই ব্যক্তি কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইল, বল তো, কোন জায়গার খেজুর বেশি মিষ্টি, কূফা না বসরা? তিনি বললেন, আমি এখনো বসরার খেজুর খাইনি, তবে কূফার সাবেরি এলাকার খেজুর মিষ্টি। সে ব্যক্তি বেশ চটে গিয়ে বলল, কী মিথ্যুকরে বাবা! বাগানে কাজ করে আবার সে খেজুর খায়নি! হেহ! ভালো খারাপ সবাইই খায়, এতো সূফী সাজার কিছু নেই! তাদের মত তুমিও বাগানে কাজ করছো অথচ দাবি করছো তুমি খেজুর খাওনি!!?
সে লোকটি এতো বেশি আশ্চর্য হলো যে নিজের ভেতর এই অনুভূতি ধরে রাখতে না পেরে গভর্নরের কাছে গিয়ে পুরো ঘটনা শোনাল। পুরো ঘটনা শোনার পর গভর্নর তাকে বলল, আরে বোকা, ঘটনা যদি সত্যি হয়, তাহলে সে ব্যক্তিকে গিয়ে পাকড়াও করে আনো। সে নিশ্চয়ই সুফিয়ান সাওরী। আমীরুল মুমিনীন তাঁকে খুঁজছেন। তাকে ধরে আনতে পারলে তুমি আমীরুল মুমিনীনের বেশ নৈকট্য লাভ করবে। সে ব্যক্তি দ্রুত ফিরে এসে দেখে, সুফিয়ান সাওরী উধাও। ঠিক এভাবেই তিনি নিজেকে শাসক ও সুলতানদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতেন। তেমনই আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল খলীফা মানসুরের চাচার সাথে।
খলীফা মানসুরের চাচা আবদুস সামাদ অসুস্থ সুফিয়ান সাওরীকে দেখতে এলেন। তাকে দেখে সুফিয়ান অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখলেন এবং তার সালামের জবাবও দিলেন না। এটা দেখে আবদুস সামাদ ভাবলো, সুফিয়ান ঘুমুচ্ছেন। তিনি বললেন, সাইফ, আমার ধারণা আবু আবদুল্লাহ ঘুমুচ্ছেন। সাইফ বলল, আমিও এমনটাই ভাবছি। সুফিয়ান বলে উঠলেন, সাইফ, মিথ্যা বলো না। আমি ঘুমুচ্ছি না।
তখন আবদুস সামাদ বলল, আবু আবদুল্লাহ, আপনার কোনো প্রয়োজন থাকলে বলতে পারেন। সুফিয়ান নিঃসঙ্কোচে বললেন, আমার তিনটা প্রয়োজন আছে। আপনি আর আমাকে দেখতে আসবেন না। আমার জানাযায়ও শরীক হবেন না। আমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন না। এসব শুনে আবদুস সামাদ লজ্জায় মাথা নিচু করে আস্তে করে উঠে বেরিয়ে গেলো। বের হয়ে বলল, খোদার কসম! আমি ভেবেছিলাম, ঘাড় থেকে তার মাথাটা আলাদা করে তার মাথা সাথে নিয়েই বের হব।
তিনি বলেন,
- ইয়াহইয়া আল কাত্তান সুফিয়ান সাওরীর সূত্রে বলেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক সে, যে আখেরাতের আমল দিয়ে দুনিয়া কামাই করে।
পর্ব – ৪
- আবদুর রহমান বিন মাহদী রহ. বলেন, আমার দেখা লোকদের মধ্যে ইমাম মালিক বিন আনাস ছিলেন বুদ্ধিমত্তায় সর্বোত্তম। আবদুল্লাহ বিন মুবারক ছিলেন উম্মাতে মুহাম্মাদির কল্যাণ কামনায় সর্বোত্তম। সুফিয়ান সাওরী ছিলেন হাদীসের ইলমে সর্বোত্তম।
- হাফস বিন গিয়াস রহ. বলেন, আমরা সুফিয়ান সাওরীর মত কাউকে পাইনি। তাঁর মজলিস ছিল সবচে উপকারী মজলিস।
যুহদের ময়দানে সাওরী রহ.
হাদীস ও ফিকহে ইমাম হওয়ার পাশাপাশি সুফিয়ান সাওরী ছিলেন বুযুর্গি ও আখিরাত-ভীতিতে শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিত্ব।
আবু হিশাম ওকী’র সূত্রে বলেন, সুফিয়ান সাওরী বলেছেন, শুকনো রুটি চিবানো আর মোটা কাপড় পরিধানের নাম যুহদ নয়। যুহদ হচ্ছে আশা-আকাঙ্ক্ষা কমিয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করা।
জনৈক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করল, যুহদ কী? তিনি বললেন, নিজের অবস্থান নামিয়ে আনা।
তিনি বলেন, যুহদ দুই প্রকার। ফরয ও নফল। ফরয যুহদ হচ্ছে বড়াই অহংকার, রিয়া, প্রসিদ্ধি-কামনা ও মানুষের জন্য নিজেকে আলাদাভাবে পেশ করার প্রবণতা বর্জন করা। আর নফল যুহদ হচ্ছে, হারাম কিছুতে পড়ে যাওয়ার আশংকায় আল্লাহর দেয়া হালাল কিছু ছেড়ে দেয়া। তবে এই হালাল কিছু ছাড়লেও তা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ছাড়া ফরয।
ইউসুফ বিন আসবাত বলেন, একদিন আমি সুফিয়ান সাওরীকে একটি মাসআলা জিজ্ঞেস করলাম। তিনি তখন কিছু একটা ক্রয় করছিলেন। আমার মাসআলা শুনে তিনি বললেন, আপাতত আমাকে ছাড়। আমার মন এখন আমার দিরহামের কাছে পড়ে আছে। এই অবস্থায় আমি মাসআলা বলতে পারবো না।
সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন, একরাতে তিনি খেয়ে বেশ তৃপ্তি অনুভব করলেন। তখন বললেন, গাধাকে বেশি খাবার দিলে কাজও বেশি করিয়ে নিতে হয়। এই বলেই তিনি নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। সারারাত নামাযেই কাটিয়ে দিলেন।
তিনি আরেকদিনের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, একদিন সুফিয়ান সাওরী আমাদের খাবারের দাওয়াত দিলেন। আমরা যেতেই তিনি আমাদের সামনে খাবার ও ছানা পরিবেশন করলেন। যখন আমরা খাবারের মোটামুটি মধ্য পর্যায়ে পৌঁছলাম, তিনি বললেন, চলেন আমরা আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করে দুই রাকাত নামায পড়ি।
সুফিয়ান সাওরী মক্কায় এক মুদ্রাব্যবসায়ী থেকে দীনারের বিনিময়ে দিরহাম ক্রয় করতে গেলেন। তিনি তার দীনার দেয়ার পর তার থলে থেকে একটি দীনার পড়ে গেল। সেটা উঠাতে গিয়ে দেখলেন, পাশে আরেকটি দীনার পড়ে আছে। মুদ্রাব্যবসায়ী বলল, এটিও আপনার। দু’টিই আপনি তুলে নিন। কিন্তু সুফিয়ান বললেন, আমি একটি আমার হিসেবে চিনতে পারলেও অন্যটি চিনতে পারছি না। ব্যবসায়ী জোরাজুরি করলেও তিনি পাশের দীনারটি না নিয়েই চলে গেলেন।
সম্পদের ব্যাপারে সযত্ন সাওরী:
যুহদের ইমাম হয়েছেন বলেই যে প্রয়োজনীয় সম্পদ রাখা যাবে না, ব্যাপারটা এমন নয়। সুফিয়ান সাওরী রহ. ছিলেন এই বিষয়ে সজাগ সতর্ক মানুষ।
রাওয়াদ বিন জাররাহ বলেন, আমি সুফিয়ান সাওরীকে বলতে শুনেছি, আগে সম্পদ ছিল অপছন্দের জিনিস। এখন এটা মুমিনের ঢালস্বরূপ। আমি আমার অপছন্দের কারও মুখোমুখি হতেই সে যখন আমাকে হালপুরসি করে, তখন তার প্রতি আমার অন্তর নরম হয়ে যায়। তাহলে আমি যাদের দাওয়াতে খাবার খাব, তাদের প্রতি আমার অন্তরের কী অবস্থা হবে?
- তিনি বলতেন, আল্লাহ হিসাব নেবেন এমন দশ হাজার দিরহাম রেখে যাওয়া আমার কাছে মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে অধিয় প্রিয়।
এক ব্যক্তি সুফিয়ান সাওরী রহ.কে কিছু দিনার দেখিয়ে বলল, হে আবু আবদুল্লাহ! লাগবে নাকি? তিনি ধমক দিয়ে বললেন, চুপ করো। এসব আমাদের কাছে না থাকলে শাসকরা আমাদেরকে পকেটের রুমালের মত তুচ্ছভাবে ব্যবহার করতো।
এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করল, আমি হজ্জে যেতে চাই। তিনি বললেন, এমন ব্যক্তির সঙ্গ নেবে না যে তোমার উপর দান করে দয়া দেখাতে পারে। কারণ এমন লোকের সাথে চলতে গিয়ে যদি সমান খরচ কর, তোমার ক্ষতি হবে। আর তার দয়া নিলে সে তোমাকে পদেপদে অপমান করবে।
তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে যার কাছেই দীনার দিরহাম আছে, সে যেন এর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে। কারণ আমরা এমন এক সময়ে বসবাস করছি, কেউ আর্থিক সাহায্য চাইলে সর্বপ্রথম তার কাছে দীন বিক্রি করে দিতে হয়।
পরকালের পেরেশানি:
কাবীসা বলেন, সুফিয়ান সাওরীর মজলিসে বসলেই আমার মৃত্যুর কথা স্মরণ হতো। তার মত এতো অধিক পরিমাণে মৃত্যুকে স্মরণ করতে আমি আর কাউকে দেখিনি।
আবদুর রহমান বিন রুসতাহ বলেন, ইবনু মাহদীর ঘরে সুফিয়ান সাওরী রাত কাটালেন। তখন সুফিয়ান কান্না শুরু করলে ইবনে মাহদী কারণ জানতে চাইলেন। তিনি মেঝে থেকে একটি জিনিস তুলে বললেন, আমার কাছে আমার গুনাহগুলো এরচেয়েও হালকা মনে হয়। ফলে আমার খুব ভয় হয়, মৃত্যুর পূর্বেই আমার ঈমান হরণ হয়ে যায় কিনা। (মুমিনের কাছে তার ছোট্ট গোনাহও পাহাড়ের মত ভারি মনে হয় তাই)
আবদুল্লাহ বিন খুবাইক ইউসুফ বিন আসবাতের সূত্রে বলেন, একদিন ইশার পর সুফিয়ান সাওরী আমার কাছে ওযুর পানি চাইলেন। আমি পাত্রে পানি দিলাম। তিনি ডান হাতে নিয়ে বাঁ হাত গালে রেখে চিন্তা করতে লাগলেন। এদিকে আমি ঘুমিয়ে গেলাম। ফজরের সময়ে উঠে দেখি তিনি ঠিক সেভাবেই ডান হাতে ওযুর পাত্র আর বাঁ হাত গালে রেখে বসে আছেন। আমি বললাম, ফজরের সময় হয়ে গেলো তো! আপনি পুরো সময় এভাবেই বসে ছিলেন? তিনি বললেন, তুমি আমাকে এই ওযুর পাত্রটি দেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি আখেরাতের চিন্তায় বিভোর ছিলাম।
অলৌকিক ঘটনা
মুহাম্মদ বিন সাহল বিন আসকার আবদুর রাযযাকের সূত্রে বর্ণনা করেন, সুফিয়ান সাওরী যখন মক্কার উদ্দেশে রওয়ানা হলেন, তখন আবু জাফর কাঠুরিয়াদেরকে এই ফরমান জারি করে পাঠালো যে সুফিয়ানকে পেলে শূলিতে চড়াবে। কাঠুরিয়ারা এসে কাঠ দিয়ে শূলির ব্যবস্থা করল এবং শহরজুড়ে সুফিয়ান সাওরী নিয়ে আওয়াজ তোলা হল। এই আওয়াজ যখন সুফিয়ানের কাছে পৌঁছলো, তখন তার মাথা ফুদাইল বিন ইয়াদের কোলে আর দু’পা ইবনু উয়াইনার কোলে। তখন সুফিয়ান কা’বার কাছে এগিয়ে গিয়ে পর্দা ধরলেন। এরপর বললেন, আমি তার থেকে মুক্ত হয়ে গিয়েছি। যদি আবু জাফর মক্কায় প্রবেশ করেও, তবুও সে আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
পরে তাই হয়েছিল। আবু জাফর মক্কায় প্রবেশের পূর্বেই মারা যায়। তার মৃত্যুর খবর শুনে সুফিয়ান সাওরী কিছু বলেননি।
পরকালের পথে যাত্রা
ইবনু মাহদী বলেন, আমরা রাতের বেশির ভাগ ঘুমিয়ে কাটাতাম। কিন্তু সুফিয়ান সাওরী আমাদের এখানে আসার পর তিনি আমাদের নিয়ে রাতের বেশির ভাগ ইবাদাতে কাটাতে শুরু করলেন।
যখন তিনি পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হলেন, তার সেবা করতে গিয়ে আমার জামাআত ছুটে যেত। তাঁকে সেকথা জানানোর পর বললেন, একজন মুসলিমের কিছু সময় সেবা করা জামাআতে নামায পড়ার তুলনায় উত্তম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এটি কার থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন, আসেম বিন উবাইদুল্লাহ আমের বিন রাবীআ রাদি.-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, একজন মুসলিমের অসুস্থাবস্থায় সেবা করা আমার নিকট ষাট বছর তাকবীরে উলার সাথে নামায পড়ার চাইতে প্রিয়।
যখন তার অসুস্থতা বেড়ে গেলো, তিনি কষ্টের আতিশয্যে বলতে লাগলেন, হে মৃত্যু হে মৃত্যু! আমি বললাম, আমি আপনার মৃত্যু কামনা করতে পারি না। তার জন্য দোয়াও করতে পারি না। পরে যখন তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হয়ে গেল, তিনি অধৈর্য হয়ে কান্না শুরু করলেন। আমি তার কান্না সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, মৃত্যু সত্যি খুব কষ্টের। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। তখন আমি তাঁর ঘাম মুছে দিলাম। তিনি বললেন, মুমিনের রূহ এই ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। আমিও আল্লাহর কাছে এমনটাই আশা করি। এরপর বললেন, আল্লাহ তো দয়ালু স্নেহশীল মায়ের চেয়েও অনেক দয়াশীল। নিশ্চয় তিনি মহান ও মহানুভব। আমি কীভাবে তার সাক্ষাত কামনা করে আবার মৃত্যুকে অপছন্দ করতে পারি?!
এরপর তিনি সেখানে থাকতেই ১৬১ হিজরীতে ইনতেকাল করেছেন। তাকে দাফন করা হয় রাতের বেলা। রাহিমাহুল্লাহ। ১৬১ হিজরীর কোন মাসে তিনি ইনতেকাল করেছেন তা নিয়ে একাধিক মত পাওয়া যায়। কেউ কেউ হিজরীর শুরুর দিকের কথা বললেও ইমাম যাহাবী শা’বান মাসের কথা উল্লেখ করেছেন।
ওকীপুত্র সুফিয়ান বলেন, আমার বাবা ওকী বলেছেন, সুফিয়ান সাওরী ইনতেকালের সময় একশ দিনার পরিমাণ আসবাব রেখে গেছেন। তিনি আম্মার বিন সাইফকে তার লিখিত কিতাবগুলো জ্বালিয়ে দেয়ার ওসিয়্যত করে গেছেন। তার কোনো উত্তরাধিকারী ছিল না। তার এক ছেলে ছিল। সে সুফিয়ান সাওরীর জীবদ্দশায় ইনতেকাল করেন। তাই তাঁর সকল রেখে যাওয়া আসবাবের মালিক বানিয়ে দিয়েছিলেন তার বোন ও ভাগ্নেদেরকে।
তিনি বলেন,
- আহমদ বিন ইউনুস বলেন, আমি সুফিয়ান সাওরীকে অসংখ্যবার দোয়া করতে শুনেছি, ইয়া আল্লাহ, শান্তি দিন শান্তি দিন। আমাদেরকে শান্তি দিন। দুনিয়া ও আখেরাতে নিরাপত্তা দান করুন।
- শয়তানের পিঠ বা কোমড় সবচে বেশি ভাঙে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ার দ্বারা।
গ্রহণযোগ্যতা – ঘটনাঃ
জনৈক ব্যক্তি ইবনুল মুবারককে জিজ্ঞেস করল, আপনি সুফিয়ান সাওরীর মত কাউকে দেখেছেন? তিনি বললেন, আমি কী দেখবো, তিনি নিজেই কি তার মত কাউকে দেখেছেন?!
ইবনুল মুবারক বলেন, আমি এগারোশ’ শাইখ থেকে হাদীস লিখেছি। তাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ছিলেন সুফিয়ান সাওরী।
আহমদ বিন হাম্বল বলেন, আমাকে ইবনু উয়াইনাহ বলেছেন, তুমি তোমার এই দুই চোখে মৃত্যু পর্যন্ত সুফিয়ান সাওরীর মত কাওকেই দেখতে পাবে না।
ইয়াহইয়া বিন সাঈদ বলেন, সুফিয়ান সাওরী শু’বা থেকেও বেশি দৃঢ় ও রাবীদের সম্পর্কে বেশি জানেন।
ইয়াহইয়া কাত্তান বলেন, আমার কাছে সবচে পছন্দের শাইখ হচ্ছেন শু’বা। তার মত কেউ নেই। এই শু’বার সাথেও যদি সুফিয়ান সাওরীর কোনো ক্ষেত্রে মতবিরোধ হয়, আমি আমার পছন্দের শাইখকে ছেড়ে সুফিয়ান সাওরীর মত নিবো।
ইয়াহইয়া বিন সাঈদ রহ. বলেন, সুফিয়ান সাওরী আ’মাশের হাদীস স্বয়ং আ’মাশের তুলনায় বেশি মুখস্থ রাখতে পারতেন।
তার এই সীমাহীন ধী-শক্তি ও অগাধ আগ্রহের দরুণ জনৈক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করল, আপনি তো যুহরী রহ.-এর যামানা পেয়েছেন। তো সফর করেননি কেন? তিনি উত্তর দিলেন, দিরহাম ছিলো না।
ইবনু রাহওয়াইহ বলেন, আবদুর রহমান বিন মাহদী চারজনের নাম উল্লেখ করলেন। ১. সুফিয়ান সাওরী ২. শু’বা ৩. মালিক ৪. আবদুল্লাহ বিন মুবারক। এরপর বললেন, এই চারজনের মধ্যে সবচে বড় আলেম সুফিয়ান সাওরী রহ.
ইবনু উয়াইনাহ বলেন, আমি আবদুর রহমান বিন কাসিম, সাফওয়ান বিন সুলাইম এবং যায়েদ বিন আসলামের মজলিসে বসেছি। কিন্তু তাদের কাওকে সুফিয়ান সাওরীর মত পাইনি।
বিশর আল হাফী বলেন, সুফিয়ান ছিলেন আমাদের নিকট সকলের নেতা।
তিনি আরও বলেন, আবু বকর রাদি. ও উমর রাদি. তাদের সময়ে যে স্তরে ছিলেন, সুফিয়ান সাওরীও তার সময়ে সে স্তরে ছিলেন।
ইয়াহইয়া বিন মায়ীন রহ. বলেন, আ’মাশ, মানসুর এবং আবু ইসহাকের হাদীসের ব্যাপারে সবচে বড় আলেম ছিলেন সুফিয়ান সাওরী।
ইয়াহইয়া বিন মায়ীন বলেন, কেউ সুফিয়ান সাওরীর সাথে মতভিন্নতা করলে সেখানে সুফিয়ানই সঠিক থাকতেন।
ইবনু উয়াইনাহ বলেন, হাদীসের বাহক তিনজনই। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস তার সময়ে। শা’বী তার সময়ে আর সুফিয়ান সাওরী তার সময়ে।
আবদুল্লাহ বিন মুবারক রহ. বলেন, আমার জানায় ভূপৃষ্ঠে সুফিয়ান সাওরী হলেন সবচেয়ে বড় জ্ঞানী।
ইবনুল মুবারক বলেন, সুফিয়ান সাওরীর কাছে গেলে দেখি তাকে হয়ত নামাযে নয়ত হাদীসের মজলিসে নতুবা ফিকহের গভীর শাখায় নিমগ্ন।
প্রসিদ্ধ আছে, উমর বিন খাত্তাব রাযি. ছিলেন তার যুগে সকল বিষয়ে সকলের প্রধান। এরপর সে আসনে আসীন হয়েছেন আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাযি. এরপর শা’বী, এরপর সুফিয়ান সাওরী।
আলী বিন মাদীনী বলেন, আমার জানামতে সুফিয়ান সাওরী মাত্র একবার ভুল করেছেন; তাও নামে হালকা ভুল। আবু উবাইদার স্ত্রীর নাম জুফাইনা। তিনি জীমের জায়গায় নোকতা ছাড়া হুফাইনা বলতেন।
তথ্যসূত্র:
সিয়ারু আ’লামিন নুবালা
আত-তারীখুল কাবীর
আল-ওয়াফী বিল ওয়াফায়াত
ওয়াফায়াতুল আ’ইয়ান
আল-আ’লাম
আল-ইনতিক্বা
আত-তাবাক্বাতুল কুবরা
আখবারু আবি হানিফা ওয়া আসহাবিহী