Riwayahbd
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ
No Result
View All Result
Riwayahbd
No Result
View All Result

জাতীয়তাবাদ: জাহিলিয়্যাতের নতুন রূপ || আব্দুল্লাহ বিন বশির

by সাবের চৌধুরী
April 22, 2022
2 min read
0
জাতীয়তাবাদ: জাহিলিয়্যাতের নতুন রূপ || আব্দুল্লাহ বিন বশির
20
SHARES
154
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

জাতীয়তাবাদ: জাহিলিয়্যাতের নতুন রূপ

আব্দুল্লাহ বিন বশির

কুফরের সাথে ইসলামের সংঘর্ষ আজই প্রথম নয়। চৌদ্দশত বছর যাবত মুসলিমগণ ইমান কুফরের এক অনন্ত দন্দ্বের মুখোমুখি হয়ে ইমানের আলোকে পূর্ণ জৌলসের সাথে টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের শুধু প্রকশ্য কুফরির সাথেই লড়তে হচ্ছে না, বরং এমন ভয়ংকর কিছু কুফরি মতবাদের সাথে লড়তে হচ্ছে যা বাহ্যত নিজের কুফরি মুখ ইসলামের কোনো ওড়না দিয়ে ঢেকে রেখেছে। যার কারণে সাধারণ মুসলমানগণ নিজেদের মূল্যবান ইমানকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই সকল মুসলিমের উচিত নিজের ইমান রক্ষার্থে কুফরি ও বাতিল সকল মতবাদ যা আজ আমাদের সমাজে রন্ধে রন্ধে প্রবেশ করেছে তা সম্পর্কে অবগতি লাভ করা।

ইংরেজরা তাদের উপনিবেশবাদি লুটপাটকে আরো স্থায়ী করতে মুসলমানদের মাঝে এমন কিছু বিষবৃক্ষ বোপন করে গেছে যা তাদের সে লুটপাটের ইতিহাসকে শুধু দীর্ঘায়িতই করছে। পুঁজিবাদ আর তার সাথে তৈরি হওয়া জাতীয়তাবাদ হলো তেমন একটি বিষ ফোঁড়া যা আজও আমাদেরকে ইংরেজদের গোলামিতে বেঁধে রেখেছে।(1)

তাই একথা খুব ভালো করে মনে রাখতে হবে, জাতীয়তাবাদ মুসলিমদের তৈরি কোনো মতবাদ নয়। বরং জাতীয়তাবাদ ধর্মহীন আন্দোলন এনালাইটেনমেন্ট ও রেঁনেসার পর একটি নিজস্ব বিশ্বাস নিয়ে তৈরি হওয়া মতবাদ। অতএব তাকে তার জায়গা থেকেই বুঝতে এবং তার পর্যালোচনা করতে হবে। অতঃপর দেখতে হবে ইসলামের সাথে এই মতবাদের সংঘর্ষ হয় কি না। কিন্তু মতবাদকে নিজস্ব একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে সেটাকে ইসলামাইজেশন করা নিতান্ত মূর্খতা বৈ কিছুই নয়। তাই জাতীয়তাবাদের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি জানার পূর্বে জাতীয়তাবাদের ইতিহাস ও তৈরির প্রেক্ষাপট জানা অতিব জরুরি।

 

জাতীয়তাবাদ কী ?

উইকিপিডিয়াতে জাতীয়তাবাদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে, “জাতীয়তাবাদ একটি আদর্শ যেখানে জাতিকে মানব  সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয় এবং অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে  জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়া হয়। জাতীয়তাবাদ একটি জাতির সংস্কৃতি রক্ষার্থে ভূমিকা পালন করে এবং জাতির অর্জনসমূহকে সামনে তুলে ধরে।(2)

অর্থাৎ জাতীয়তাবাদের পরিচয় একজন জাতীয়বাদীর কাছে মূল এবং আসল পরিচয়। বাকি সকল কিছু চাই তা সামাজিক কোনো আদর্শ হোক যেমন ধর্ম বা আত্মীয়তা, অথবা রাজনৈতিক যেমন ইসলামি শরীয়ার জন্য রাজনীতি, তার কাছে সবটাই দ্বিতীয় স্তরের। এই জন্যই দেশের এবং শরীয়ার মাঝে কখনো যদি সংঘর্ষ হয় তাহলে জাতীয়তাবাদের চেতনাধারী বহু মুসলিম পরিচয়ধারীদের জাতীয়তাবাদকেই গ্রহণ করতে দেখা যায়।(3)

 

জাতীয়তাবাদ শব্দের উৎপত্তি :

জাতীয়তাবাদ শব্দটি ইংরেজি “ন্যাশনালিজম” (Nationalism) শব্দের বাংলা পরিভাষা। ন্যাশনালিজম শব্দটি ১৮৪৪ সাল থেকে ব্যবহৃত হতে থাকে, যদিও জাতীয়তাবাদ মতবাদটি আরও আগে থেকে চলে আসছে। ১৯শ শতাব্দীতে এই মতবাদ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মতবাদটি এর অন্তর্নিহিত অর্থের কারণে ১৯১৪ সালের পর থেকে নেতিবাচক রূপ লাভ করে। গ্লেন্ডা স্লুগা বলেন, ২০শ শতাব্দী হলো জাতীয়তাবাদের মোহমুক্তি এবং আন্তর্জাতিকভাবে একটি মতবাদ হিসেবে উন্মেষের সময়।(4)

 

আধুনিক জাতীরাষ্ট্র ও জাতীয়তাবাদের সূচনা :

ষোড়শ শতাব্দী মাত্র শেষ হলো কেবল। অন্ধকারে নিমজ্জিত ইউরোপের রাজ্যসমূহ এক ভয়ংকর যুদ্ধে লিপ্ত হলো। দীর্ঘ ত্রিশ বছরের এই যুদ্ধে নিহত হলো ইউরোপের প্রায় ৮০ লক্ষ সামরিক ও বেসামরিক মানুষ। আজও ভয়ংকর এই যুদ্ধকে ইউরোপের অধিবাসিরা ‘থার্টি ইয়ারস ওয়ার’ (১৬১৮-১৬৪৮) নামে স্মরণ করে। বাহ্যত বলা হয় এই যুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ইস্যু কেন্দ্র করে। কিন্তু এর সঠিক কারণ আজ পর্যন্ত ইউরোপ ঐতিহাসিকদের নিকট অস্পষ্টই রয়ে গেছে। ভয়ংকর এ যুদ্ধের হানাহানি বন্ধ করার জন্য ইউরোপের সকল রাষ্ট্রগুলো একটি চুক্তি করে। ইতিহাসের পাতায় যা ‘ওয়েষ্ট ফেলিয়া শান্তিচুক্তি’ নামে পরিচিত। আর এই চুক্তির মাধ্যমেই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম জাতীরাষ্ট্রের ধারণা আসে। আমেরিকান দার্শনিক এবং ইতিহাসবিদ হান্স কোহন ১৯৪৪ সালে লিখেছিলেন যে, ১৭শতাব্দীতে জাতীয়তাবাদের উত্থান হয়েছিল।(5)

ওয়েস্ট ফেলিয়ার সে চুক্তিতে কয়েকটি বিষয়ে সকল ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো একমত হয়। সেগুলো ছিলো, ১. রাষ্ট্রসমূহ পরস্পরের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ২. অপর রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। একটি রাষ্ট্র অন্য আরেকটি রাষ্ট্রের রাজনীতি, অর্থনীতি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে সেটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। ৩. রাষ্ট্রের আইনগত সম অধিকার প্রতিষ্ঠা। ৪. চিরস্থায়ী, প্রকৃত ও আন্তরিক বন্ধুত্ব ও বৈশ্বিক শান্তির অঙ্গীকার।(6)

ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোর এই ‘ওয়েস্ট ফেলিয়া চুক্তি’ পরিবর্তী পৃথিবীর ইতিহাসকে নতুন দিকে নিয়ে যায়। জাতিসংঘের ধারণা সেই ওয়েষ্ট ফেলিয়া চুক্তি থেকেই শুরু হয়। এবং বর্তমানেও জাতিসংঘের নিকট কোনো রাষ্ট্র রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য যে শর্তগুলো ধর্তব্য তা এই ওয়েস্ট ফেলিয়ার চুক্তিগুলো থেকেই গৃহীত।

 

ইউরোপে জাতীয়তাবাদের উত্থান :

ওয়েস্ট ফেলিয়া চুক্তির কারণে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো আলাদা হয়ে প্রত্যেকে প্রত্যেকের একটি আলাদা পরিচয় পূর্বেই তৈরি করে নিয়েছিলো। প্রতিটি দেশ তখন ছিলো অপর কোনো দেশের মানুষের শাসন বা কোনোরকম খবরদারী থেকে পূর্ণ মুক্ত। আর এভাবেই ইউরোপে ‘দেশাত্ববোধ’ নামক জাহেলি প্রেম জেগে উঠে। রিফরমেশন (যুক্তিবাদ) আন্দোলন ও এনলাইটেনমেন্ট (ধর্মীয় অন্ধকার থেকে উন্নতির আলো) আন্দোলনের মাধ্যমে ইউরোপে তখন ধর্মহীনতার একজোয়ার চলছিলো। এনালাইটেনমেন্ট আন্দোলনেরই একটি জোড় প্রতিক্রিয়া ছিলো নিজেদের ভিতর জাতীয় পরিচয়ে বেড়ে উঠার একটি প্রবণতা সৃষ্টি করা। আর সেখান থেকে মূলত জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আত্মপ্রকাশের একটি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়। অন্যদিকে ১৭৮৯ সালের ৪ জুনে ফরাসি বিপ্লব পালটে দেয় ইউরোপের পুরো চিন্তার জগত। এতদিনের ধর্মহীন আন্দোলনগুলো নতুন মাত্রা লাভ করে। রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্রের উত্থান হয়। ফরাসি বিপ্লব যদিও প্রাথমিকভাবে একটি প্রজাতন্ত্র বিপ্লব ছিলো। কিন্তু তা আধুনিক জাতীরাষ্ট্রের দিকে একটি আন্দোলনের সূচনা করে দিয়েছিলো এবং ইউরোপ জুড়ে জাতীয়তাবাদের জন্মের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো।(7)

ওয়েস্ট ফেলিয়া চুক্তি ইউরোপে পূর্ব থেকেই জাতি রাষ্ট্রের (Nation states) ধারণার বীজ বপন করে ছিলো। গণতন্ত্রের উত্থানে ইউরোপে সেই বীজ অঙ্কুরিত হয়ে পূর্ণতা লাভ করে। একের পর এক রাষ্ট্র জাতীয়তাবাদের শ্লোগান তুলে আলাদা হতে থাকে। ১৮৩০ সালে বেলজিয়ামে বিপ্লব হয়। হল্যান্ড থেকে তারা আলাদা হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৮১৮তে উসমানী সালতানাতের বিরুদ্ধে সার্বিয়ানরা জাতীয়তাবাদী আন্দোলন করে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করে। ১৮২৯ সালে গ্রীসও এই জাতীয়তাবাদের ধোঁয়া তুলে উছমানীদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। আর এভাবেই ইউরোপে ধীরে ধীরে জাতীয়তাবাদের উত্থান গ্রহণীয় হতে থাকে।

 

একটি ধর্মকে মানুষ যতটা আবেগ-উদ্দীপনা, উচ্ছাস-উত্তেজনার আর প্রশ্নাতীত পবিত্রতার অনুভূতির সাথে গ্রহণ করে, ইউরোপ ঠিক জাতীয়তাবাদকে তেমন করেই গ্রহণ করে নিলো। জাতীয়তাবাদ তাদের নিকট এক নতুনধর্মের পরিচয় হয়ে গেলো। যার সামনে সবকিছু বাদ, সবকিছু নস্যি। আমার জাতির স্বার্থ ও কল্যাণই দুনিয়ার সবার উর্ধ্বে। তা রক্ষা করতে অন্যজাতিকে যদি নিঃশেষও করে ফেলতে হয় তাহলে তাতে কোনোরকম দ্বিধাবোধ হবে না, এবং করা যাবে না। কারণ তা জাতীয়তাবাদী এই ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক। আর এই চিন্তা থেকেই ইউরোপে নতুন মাত্রায় যোগ হয় উপনিবেশবাদ। নিজ জাতির স্বার্থে তারা লুটতে থাকে অন্যজাতিকে। হিন্দুস্তান, আফ্রিকা আর আরব ভূখণ্ডগুলো হয়ে যায় ইউরোপীয়দের সম্পদ লুটার এক মহান কেন্দ্র। ইংল্যাণ্ডের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদের দেশ হিন্দুস্তান মাত্র ৭০ বছরে দরিদ্র রাষ্ট্রে পরিনত হয়। অনাহারে আর দুর্ভিক্ষে যেখানে মারা যেতে থাকে হাজারো নয় লক্ষ মানুষ। আমেরিকার আর ফ্রান্সের জাতীয় শিল্প বাজার ঠিক রাখতে আফ্রিকার কালো মানুষগুলো হয়ে যায় ছিনতাইয়ের মাল। যাদের ধরে নিয়ে গিয়ে পশুর মত বাজারে বিক্রি করা আর অমানুষের মত কারখানা আর ফসলের মাঠে খাটিয়ে মারা সভ্য ইউরোপিয়ানদের ছিলো স্বাভাবিক ব্যাপার। এভাবেই সারা পৃথিবীর ৭০ ভাগ সম্পদ জমা হয়ে যায় ইউরোপ আর আমেরিকার জাতীরাষ্ট্রগুলোর কাছে। আর দুনিয়ার বাকি মানুষগুলোর কি হলো তা চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। কারণ তারা তো আমার জাতি নয়।

 

মুসলিম দেশে জাতীয়তাবাদ :

“পরম পরিতাপের বিষয়, জাতীয়তাবাদের এ ভয়াবহ ব্যাধি মুসলিম দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে, অথচ প্রত্যাশা ছিলো, তারা হবে ইসলামের বিশ্বদাওয়াতের অগ্রদূত এবং পৃথিবীর জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার বার্তাবাহী। বরং তারাই হবে অভিশপ্ত জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে শক্তিশালী কেন্দ্র।’’

সাইয়েদ আবুল হাসান নদভি রহ. তার জগত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মাযা খাসিরল আলাম বি ইনহিতাতিল মুসলিমিন’-এ মুসলিম দেশে জাতীয়তদাবাদের ছোঁয়াচে রোগ কিভাবে প্রবেশ করেছে সে আলোচনা শুরু করার পূর্বে এভাবেই দুঃখভরা কথাগুলো বলেছেন।(8)

 

ধর্মহীন ইউরোপের জাতীয়তাবাদী এই ফিতনা নববী শিক্ষা ও আদর্শ দিয়ে চিরতরে মিটিয়ে দিয়ে ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ করে নেওয়া ছিলো সময়ের দাবী। সেখানে উল্টো একদল আওয়াজ উঁচু করতে থাকলো ইউরোপের ছোঁয়াচে জাতীয়দাবাদের। মুসলিম বিশ্বে বড় সুক্ষ্ণ কৌশোলে ও চাতুরতার সাথে জাতীয়তাবাদের বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। আর তা করা হয় দুইভাবে। এক. আরব-তুর্কী জাতীয়তাবাদের দ্বন্দ লাগিয়ে। দুই. উপনিবেশের বিরুদ্ধে ইসলামী জাগরণের স্থলে স্বদেশপ্রীতির জাগরণ।

 

আরব-তুর্কী জাতীয়তাবাদ :

একদিকে ইউরোপের ঋনের বোঝা, অন্যদিকে নিত্যনতুন ইউরোপীয় মতবাদ। সাথে ইসলামী প্রকৃত শিক্ষা থেকে মুসলিম দূরে হটে যাওয়া—উসমানী সালতানাত একদম মূর্মুহু অবস্থায়। ঠিক তখন একদল তুর্কী ‘তূরানবাদ’ নামের জাতীয়তাবাদের ফিতনা নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। যাদের লক্ষ্য ছিলো প্রচীন তুর্কীর সভ্যতা-সংস্কৃতি পুনর্জাগরণ। যেকোনো দেশে জাতীয়তাবাদ গড়ে তুলতে হলে আবশ্যক হলো অন্যকোনো জাতি বা দেশের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করা, যা ছাড়া কোনো জাতীয়তাবাদ লাভ করতে পারে না। তূরানবাদিরাও ঠিক তাই করলো। তারা ঘৃণার জন্য বেছে নিলো আরবজাতীকে। যার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আরব থেকে আসা ইসলামকেও তারা ঘৃণা ভরে দেখতো। উপহাস করে বলতো ‘সেমিটিক ধর্ম ও সভ্যতা’। তূরিনবাদি অনেক সমর্থক এটাও ভাবতো যে, ইসলাম হলো আরবদের পক্ষ থেকে তুর্কীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া একধর্ম।  শুধু তাই নয় কোনো কোনো তুরানবাদি এতদূর পর্যন্ত মনে করতো ‘আমরা তুর্কী আমাদের কাবা হলো তূরান’। এমন জাহিলি জাতীয়তাবাদের জোর-শোর শুধুই আর আলোচনা আর মিটিং-মিছিলেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। সেগুলো বিভিন্ন তুর্কী অফিসার ও রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিদের থেকেও প্রকাশ পেতে থাকে। আরবদের সাথে এমন আচরণ প্রকাশ পেতে থাকে যেনো আরবরা উসমানিদের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। স্বভাবজাত অভিজাত আরবদের নিকট তুর্কীদের এই আচরণ মেনে নেওয়া ছিলো কষ্টকর। একসময় তাদের মনে হতে থাকে তারা উসমানী সালতানাতের একটি অংশ নয় বরং তাদের ঔপনিবেশিক।

আর ঠিক এই সুযোগকে কাজে লাগায় বিভিন্ন আরব খ্রিস্টানরা। এই খ্রিস্টানদের সাথে তুর্কীদের না ছিলো কোনো আকিদার বন্ধন আর না ছিলো ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের কোনো দায়িত্ব। তাই তুর্কীদের থেকে আলাদা হয়ে স্বজাতি খ্রিস্টানদের মতবাদকে গ্রহণ করে নেওয়ায় তাদের কোনো বাঁধা ছিলো না।(9)

ইতিহাস সাক্ষী আরবে সর্বপ্রথম জাতীয়তাবাদের এই জাহিলি শ্লোগান তুলে লেবানন ও সিরিয়ার কিছু খ্রিস্টান আরব। আর এই খ্রিস্টানদের চটকদার শ্লোগান আর স্বাধীনতার নামের অস্পষ্ট বুলিতে আরবরা উসমানীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। স্বাধীনতা নামক কল্পিত বস্তু  এই বিষয়টি তখন আরবদের ভাবার সুযোগই দেয়নি, আরব জাতীয়তাবাদের নামে যা করা হচ্ছে এতে ইসলামের কত বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।(10)

 

ইসলামী জাগরণের বিপরীত দেশত্ববোধের জাগরণ :

একদিকে ইউরোপে চলছিলো ধর্মহীন আন্দোলন ও শিল্পবিপ্লবের উন্নয়ন বিপরীত দিকে মুসলিম শাসক ও জনসাধারণ নিজেদের আসল পরিচয় ভুলে দ্বীন ও দুনিয়া উভয়দিক থেকেই বেখবর হয়ে বসে ছিলো। আর সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইউরোপিয়ানদের চলছিলো রমরমা উপনিবেশবাদ ব্যবসা। উপনিবেশের সময় ইউরোপিয়ানরা মুসলিমদের শুধুই শারীরিক দাসত্বে বন্দী করেনি বরং সাথে মানসিক এক অদৃশ্য দাসত্বে মুসলিমদের তারা বন্দী করে ফেলে। কারণ ক্রুসেড যুদ্ধগুলো থেকে এই শিক্ষা তারা খুব ভালো করে পেয়েছে যে, শারীরিক দাসত্বে মুসলিমদের কিছুদিন আটকিয়ে রাখা সম্ভব হলেও তা কোনোভাবেই স্থায়ীত্ব হয় না। খুব দ্রুত সময়েই ইমানী জাগরনে এক মুসলিম আরেক মুসলিমের সাহায্য এগিয়ে আসবে এবং মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করবে। সাথে মানুষকে দাস বানিয়ে রাখে এমন সকল শক্তিকে উৎখাত করে আল্লাহর দাসত্বের শিক্ষা দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠা করবে।

ফিরিঙ্গিদের উপনিবেশের এই লুটপাটের রাজ্য আজ না হয় কাল শেষ হবে তা তারা খুব ভালো করেই জানতো। এমনকি এটাও বুঝে ছিলো লুট করা এই সম্পদ আর উপনিবেশের সময় অন্যায়ের যে পাহাড় তারা গড়েছে তাও মুসলিমরা উসূল করে ছাড়বে একসময়। আর এই সবটাই তখনই সম্ভব যখন মুসলমানদের মাঝে ‘ইসলামি পূনর্জাগরণ’ হবে। তাই ইসলামী জাগরণকে যদি অন্যকোনো জাগরণের মাধ্যমে পরিবর্তন করে সেখানে সরিয়ে ফেলা যায় তাহলে মুসলিমরা তাতেই ব্যস্ত থাকবে।

উপনিবেশ থেকে মুসলিমরা যখন ধীরে ধীরে ইসলামি জাগরণে পূণরজ্জীবিত হচ্ছিলো তখন ইসলামি এই জাগরণকে পশ্চিমারা ‘দেশত্ববোধের চেতনায়’ পরিবর্তন করে দিলো। আর এভাবেই মুসলিম বিশ্বে দেশত্ববোধের এক জাহিলি প্রথা ইসলামের ভাতৃত্ব ও ইসলামী জাগরণের স্থানে অনুপ্রবেশ করে ফেললো।(11)

 

ইসলাম বনাম জাতীয়তাবাদ :

পৃথিবীর যে ভুখণ্ডে একজন মানুষ জন্মগ্রহণ করে, যেখানে তার শৈশব কাটে, যার অলিতেগলিতে তার বেড়ে ওঠা, জন্মের পর পিতা-মাতার মুখে যে ভাষা শুনে সে বড় হয়েছে স্বভাবজাতভাবেই সে ভুখণ্ডের প্রতি মানুষের একটি আলাদা টান থাকে। আর এটাই স্বাভাবিক। আর এই স্বাভাবিকতার কারণেই ঐ ভুখণ্ডের মানুষের সাথে তার এক স্বভাবজাত অন্তরঙ্গতা তৈরি হয় অন্যদের চেয়ে একটু বেশি, তাদের প্রতি একটা আলাদা মায়া তার থাকে। কিন্তু স্বাভাবিক এই ভালোবাসার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যখন মানুষ আমার দেশের সব ‘আমার’, আর পর দেশের সব ‘পর’ আমার দেশের সব ‘ভালো’ আর অন্যদেশের সব ‘কালো’ এভাবে ভাবতে থাকে তখন তা আসাবিয়্যাত হয়ে দাঁড়ায়। যার সাথে ইসলামের রয়েছে পরিপূর্ণ ঘৃণা। এই বিশ্বাসকে ইসলাম জাহিলি বিশ্বাস বলে আখ্যায়িত করে।(12)

দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদের নামে এমন জাহিলিয়্যাতকে ইসলাম কখনো কবুল করেনি, বরং সূচনা লগ্ন থেকে এই জাহিলিয়্যাতকে মিটানোও ছিলো ইসলামের জিহাদের অন্যতম একটি অংশ। সমগ্র কুরআন পাঠ করুন বংশবাদ-গোত্রবাদ কিংবা আঞ্চলিকতাবাদের সমর্থনে একটি শব্দও কোথাও পাওয়া যাবে না। কুরআন গোটা মানবজাতিকেই সম্বোধন করে দাওয়াত পেশ করেছেন। ভূপৃষ্ঠের গোটা মানুষ জাতিকে কল্যাণ ও মঙ্গলের দিকে আহবান জানাচ্ছে। এ ব্যাপারে কোনো জাতি কিংবা কোনো অঞ্চলের প্রতি বিন্দুমাত্র বিশেষত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়নি; দুনিয়ার মধ্যে কেবল মক্কার সাথেই তার বিশেষ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু সেই মক্কার অধিবাসী যখন ইমান গ্রহণ না করেনি তখন তাদের ব্যাপারে কুরআন স্পষ্ট ঘোষণা করছে,

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡمُشۡرِكُونَ نَجَسٞ فَلَا يَقۡرَبُواْ ٱلۡمَسۡجِدَ ٱلۡحَرَامَ بَعۡدَ عَامِهِمۡ هَٰذَاۚ

মুশরিকরা অপবিত্র, তারা যেন এ বছরের পর আর মসজিদে হারাম—কাবার কাছেও না আসসে।(13)

মোটকথা ইসলামে স্বদেশিকতা ও আঞ্চলিকতার পূর্ণ মূলৎপাটন করা হয়েছে। এখন প্রত্যেকটি মুসলমানই বলতে পারে, প্রত্যেকটি দেশই আমার দেশ, কেননা তা আমার আল্লাহর দেশ।

 

ইসলামে জাতি বিভক্তির মূল ভিত্তি :

ইসলাম জাতির মাঝে যে বিভক্তি করে সেটা দুই জিনিষের উপর। এক. ইমান। দুই. কুফর। মানুষে মানুষে যদি কোনো বিভক্তি হয় তাহলে শুধু এই পার্থক্যের কারণেই হবে। এছাড়া আর কোনো ভিত্তি নেই মানুষের মাঝে বিভক্ত হওয়ার। দুটি জাতির মধ্যে বংশ ও গোত্রের দিক দিয়ে কোনো পার্থক্য নেই। এ পার্থক্য হছে বিশ্বাস ও কর্মের। কাজেই একই পিতার দুটি সন্তানও ইসলাম ও কুফরের উল্লেখিত ব্যবধানের দরুন স্বতন্ত্র ও দুজাতির মধ্যে গণ্য হতে হবে। এবং দুই নিঃসম্পর্ক ও অপরিচিত ব্যক্তি একই ইসলামের দীক্ষিত হওয়ার কারণে একটি জাতির অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

‌هُوَ ‌ٱلَّذِي ‌خَلَقَكُمۡ فَمِنكُمۡ كَافِرٞ وَمِنكُم مُّؤۡمِن وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٌ

তিনিই সে মহান সত্ত্বা যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। অতপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফির আর কেউ মুমিন। তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।(14)

জন্মভূমির পার্থ্যকও মুমিন জাতির মধ্যে ব্যবধানের কারণ হতে পারে না। এখানে পার্থক্য করা হয় হক ও বাতিলের ভিত্তিতে। আর হক ও বাতিলের স্বদেশ বলতে কিছু নেই। একই শহর, একই মহল্লা ও একই ঘরের দুই ব্যক্তির জাতীয়তা ইসলাম ও কুফরের পার্থক্যের কারণে বিভিন্ন হতে পারে। এবং একজন নিগ্রো ইসলামের সূত্রে একজন শ্বেতাঙ্গের ভাই হতে পারে।

ইসলাম জাতীয়তার যে গণ্ডি বা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে তা কোনো ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য বিষয়ের উপর নয়। সম্পূর্ণ আসমানী ওহির ভিত্তিই হলো ইসলামে জাতি সত্ত্বার পার্থক্যের একমাত্র ভিত্তি।

ইসলামের দৃষ্টিতে বৈশ্বিক যেকোনো সম্পর্ক অপেক্ষা ইমানের সম্পর্ক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, অগ্রগণ্য এবং তা রক্ষা করা সবকিছু অপেক্ষা অতীব জরুরি।

বরঞ্চ ইসলামের নির্দেশ তো এই যে, কখনো স্বদেশ ভুমি আর ইসলামের মাঝে যদি সংঘর্ষ হয় আর তা কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা না যায় তাহলে স্বদেশ ভূমি ত্যাগ করে ইমান রক্ষা হয় এমন ভূমিতে হিজরত করো। আর কেউ যদি ইমানের অপেক্ষা স্বদেশ ভুমিকে প্রাধান্য দেয় সে মুনাফিক বলে গণ্য হবে। সে মুসলিমের বন্ধু হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

فَلَا تَتَّخِذُواْ مِنۡهُمۡ أَوۡلِيَآءَ حَتَّىٰ يُهَاجِرُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ

সুতরাং আল্লাহর পথে হিজরত না করা পর্যন্ত তাদের মধ্য থেকে কাউকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করোনা।(15)

অন্যদিকে শুধু মুসলিম হওয়ার পরেও শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাটি কোনো বংশ, গোত্র বা কোনো মাজহাবের ভিত্তিতে নয়। তা শুধু হবে নৈতিকতা, তাকওয়া এবং খোদা ভীতির মাধ্যমে।(16)

 

গোত্র ও স্বদেশের পরিচয় ও ইসলামের উদ্দেশ্য :

এখানে স্বভাবত এই প্রশ্ন আসবে যে, ইসলামের বহু মনীষীকে আমরা দেখতে পাই, তারা নিজ বংশ, গোত্র বা স্বদেশের পরিচয়ে পরিচিত হতেন এবং খুব গুরুত্বের সাথে তা উল্লেখ করতেন। তাহলে যদি জাতীয়তাবাদ ইসলামে এতই ঘৃণীত হতো তাহলে উনারা কেনো এহেন কাজ করতে গেলেন?

প্রশ্নটি দেক্ষতে খুব ফুলা-ফাপা হলেও তা অন্তঃসারশূণ্য। কারণ ইসলাম গোত্র ও দেশের পরিচয় শুধু এই জন্য স্বীকৃতি দেয় যে যার দ্বারা ব্যক্তির পরিচয় লাভ সহজ হয়। পৃথিবীতে আল্লাহ মানুষকে বিভিন্ন রঙে ও ভাষা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। একেকজন একেক ভুখণ্ডে সৃষ্টি হয়েছে। আর মানুষের একে অপরের পরিচয়ের সহজতার জন্য আল্লাহ তায়ালা এভাবে গোত্র ও দলের পরিচয় দেওয়া অনুমতি দিয়েছেন। তবে সাথে এ সতর্কও করে দিয়েছে, গোত্র বা এই দলের সাথে সম্মান বা ইজ্জতের কোনো সম্পর্ক নেই। সম্মানের একমাত্র ভিত্তি হলো ‘তাকওয়া’ তথা আল্লাহর ভীতি। এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

‌يَٰٓأَيُّهَا ‌ٱلنَّاسُ ‌إِنَّا خَلَقۡنَٰكُم مِّن ذَكَر وَأُنثَىٰ وَجَعَلۡنَٰكُمۡ شُعُوبا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓاْۚ إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِير

হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও নারী হতে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চই আল্লাহ সকল কিছু জানেন, সকল খবর রাখেন।(17)

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা এই বাস্তবতা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যে, মানুষের মাঝে গোত্র, বর্ণ বা ভুখণ্ডের দ্বারা আলাদা করার উদ্দেশ্য শুধুই একে অপরের পরিচয় সহজতার ও সঠিকভাবে করতে যেনো পারে। কিন্তু সম্মান ইজ্জত বা কোনো রকম প্রাধান্যতা তা শুধুই তাকওয়ার সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়া ভিন্নকিছু নয়। এছাড়া যা আছে ইসলাম সেটাকে আসাবিয়্যাত বলে গণ্য করে। এবং ইসলাম প্রথম দিন থেকেই এসবের বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষণা দিয়ে আসছে।(18)

মোটকথা, জাতীয়তা (nationality) এবং জাতিগোষ্ঠীগত (ethnicity) পরিচয় ভিন্ন জিনিস। জাতিগতভাবে সে কি হবে এটা বান্দার ইখতিয়ারে নেই। কারণ কোথায় জন্ম হবে কোন গোত্রে হবে—সবটাই আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর তা পরিচয় হিসেবে বলা শুধুই। গোত্র হিসেবে কোরাইশি হওয়া আর জাতীরাষ্ট্র হিসেবে সাউদি হওয়ার মাঝে রয়েছে আকাশ জমিন ফারাক।

দ্বিতীয়ত আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের সূচনাই হয় আসাবিয়্যাতের ভিত্তিতে। যেখানে দেশকে সর্বোচ্চ আনুগত্য, পবিত্রতা এবং কর্তৃত্বের আধার হিসেবে দেখাহয়। দেশপ্রেম এবং দেশের প্রতি আনুগত্যকে দেয়া হয় সর্বোচ্চ মূল্যবোধ হিসেবে। যে কাজ অন্য কোন ক্ষেত্রে বৈধ না, দেশের জন্য করলে সেটা বৈধ হয়ে যায়। ধর্ম, বংশ, আদর্শ কিংবা সম্মানের জন্যেও যুদ্ধ করা যায় না। কিন্তু দেশের জন্য করা যায়। আর জাতিগত পরিচয়ের প্রথম উদ্দেশ্য হলো পরস্পরের পরিচয় সহজ হওয়া। কিন্তু ভুলভাবে উপস্থাপনের কারণে কখনো তা আসাবিয়্যাতের রূপ ধারণ করে।

 

জাতীয়তাবাদের গোড়ায় ইসলামের কুঠরাঘাত :

ইসলাম তার প্রথমদিন থেকেই আসাবিয়্যাতের যতরকম হতে পারে—জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি সকল কিছুকে গোড়া থেকে উৎখাত করে দিয়েছে। তাওহিদ ও রিসালাতের দাওয়াত নিয়ে ইসলাম যখন আবির্ভাব হলো তখন অভিশপ্ত এই জাতিয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে জাহিলিয়্যাত বলে ঘোষণা করলো। এবং যে সমস্ত যুদ্ধ শুধুই সাম্পদায়িকতা ও জাতীর স্তুতি-বন্দনা আর অন্য জাতীর প্রতি ঘৃণা আর বিদ্বেষ থেকে হয়—সেসব কিছুকে হারাম বলে আখ্যায়িত করলো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

ليس منا ‌من ‌دعا ‌إلى ‌عصبية، وليس منا من قاتل على عصبية، وليس منا من مات على عصبية

যারা সাম্প্রদায়িকতার ডাক দিবে তারা আমাদের দলভুক্ত নয় এবং যারা সাম্প্রদায়িকতার উপর লড়াই করবে তারা আমাদের দলভূক্ত নয় এবং যারা সাম্প্রদায়িকতার উপর মারা যাবে তারা আমাদের দলভূক্ত নয়।-সুনানে আবি দাউদ হাদিস নং ৫১২১

এই জাতীয়তাবাদই হলো আরব্য সে জাহিলিয়্যাতের একটি যার বিরুদ্ধে ইসলাম যুদ্ধ ঘোষনা করেছে। যার জন্য মৃত্যুকে ইসলাম জাহিলি মৃত্যু হিসেবে আখ্যায়িত ও ব্যাক্তিকে জাহান্নামী বলেছে।

 

অন্য হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন,

ومن قاتل تحت راية عمية يغضب لعصبة، أو ‌يدعو ‌إلى ‌عصبة، أو ينصر عصبة، فقتل، فقتلة جاهلية، ومن خرج على أمتي، يضرب برها وفاجرها، ولا يتحاشى من مؤمنها، ولا يفي لذي عهد عهده، فليس مني ولست منه

অন্ধ ও অন্ধকার পতাকার নীচে, সম্প্রদায়িকতার উন্মদনায় একত্র হয়ে, কিংবা সাম্প্রদায়িকতার ডাক দিতে গিয়ে কিংবা সাম্প্রদায়িকতাকে সমর্থন দিতে গিয়ে যে লড়াই করবে এবং নিহত হবে, তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু। আর এই লোক আমার দলভুক্ত নয়। আমিও তার দলভুক্ত নই।-সহিহ মুসলিম হাদিস নং ১৮৪৮(19)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের ভাষনে আসাবিয়্যাত নামক জাহিলিয়্যাতের ভিত্তিতে গড়ে সকল ধরনেরর মতবাদকে পা মাড়িয়ে শেষ করে দিয়েছেন।

يا أيها الناس، ألا إن ربكم واحد، وإن أباكم واحد، ألا لا فضل لعربي على عجمي ، ولا لعجمي على عربي، ‌ولا ‌أحمر  ‌على ‌أسود، ولا أسود على أحمر، إلا بالتقوى

হে লোক সকল! জেনে রাখো তোমাদের রব একজন। তোমাদের পিতা একজন। আরো জেনে রাখো, কোনো আজমের উপর আরবের প্রাধান্য নেই, আবার কোনো আরবের উপর আজমের প্রাধান্য নেই। কোনো কালো বর্ণের উপর শ্বেতাঙ্গের বা কোনো শ্বেতাঙ্গের উপর কালো বর্ণের প্রাধান্য নেই। তবে প্রাধণ্যের কারণ হবে শুধু তাকওয়ার ভিত্তিতে।(20)

মুফতি শফি রহ. বিদায়ী এই হজ্জের এই ভাষন উল্লেখ করে বলেন, বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায়ী হজ্জের ভাষণে দেশত্ববোধ ও জাতীয়তাবাদ পরিপূর্ণ শেষ করে দিয়েছেন। সাথে এই ঘোষণা করেছেন যে, ইসলাম এবং জাতীয়তাবাদ একসাথে চলতে পারে না। যদি তুমি ইসলামের আচল আকড়ে ধরো তাহলে জাতীয়তাবাদের পুঁজার প্রতিমা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলতে হবে। এবং অন্তরে ইসলামের এমন মহব্বত অন্তরে সৃষ্টি করতে হবে, যার সামনে দেশত্ববোধ, মাতৃভাষাপ্রীতি কোনো কিছুরই প্রদীপ না জ্বলতে পারে।…. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বংশীয় ও গোত্রীয় সকল প্রকার আসাবিয়্যাত (সম্প্রদায়িকতা) নিঃশেষ করে জাতীয়তাবাদের শাহরগ কেটে দিয়েছেন।(21)

 

জাতীয়তাবাদের অনিবার্য রূপ :

জাতীয়তাবাদ যদিও প্রথমত এক নিষ্পাপ ও নিষ্কলংক ভাবধারা থেকে উদ্ভূত হয়, তাতে সন্দেহ নেই। সকল জাতি মিলে নিজেদের দৈনন্দিনের যাপিত কর্মসমূহকে আরো সুন্দর করে তুলবে। কিন্তু একটি জাতি গঠিত হওয়ার পর জাতীয় বিদ্বেষের প্রভাব তার উপর অনিবার্যরূপেই আবর্তিত হয়। এ জাতীয়তা ক্রমশ সূদৃঢ় আর কঠিন হয়ে উঠে ফলে অন্য জাতীর প্রতি বিদ্বেষ ভাব ততই প্রচণ্ডতা ধারণ করে। একসময় নিজ জাতি ছাড়া ভালো ও মন্দের কল্যাণ ও অকল্যাণের কোনো সীমারেখা থাকে না। ধীরে ধীরে চূড়ান্তরূপ যখন ধারণ করে তখন তা উপনিবেশবাদে গিয়ে পরিণত হয়। এবং তাবৎ পৃথিবীর জন্য হয়ে দাঁড়ায় হুমকি।

সাইয়েদ আবু হাসান নদভি রহ. বলেন, “জাতীয়তাবাদের বীজ যে মাটিতে এবং যে জলবায়ুতে যেভাবেই বপন করা হোক তার বৃক্ষ হবে কণ্টকাকীর্ণ এবং ফল হবে তিক্ত ও বিষাক্ত। এটা সম্ভবই নয় যে, কোনো জাতি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হবে আর তার মধ্যে লুণ্ঠন ও আগ্রাসনের মনোভাব থাকবে না, কিংবা অন্য জাতির প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ ও তাচ্ছিল্যের অনুভুতি থাকবে না।’’(22)

 

ড. যাহেদ সিদ্দিক মোঘল জাতীয়তাবাদের এই আবশ্যকীয় গুণগুলো এভাবে ব্যক্তি করেন, “জাতীয়তাবাদের মৌলিক কিছু গুণাবলি আছে।

ক. জাতীয়তাবাদ মূলত মানুষের মাঝে পরস্পরে ঘৃণা সৃষ্টি করে। নিজ জাতি ছাড়া অন্যজাতিকে সর্বদা প্রতিপক্ষ ভাবাতে শিখায়।

খ. ভালো-মন্দের হিসাব নিজস্ব জাতীর বিবেচনায় করা হয়। যেকোনো ভালো-মন্দ বা যেকোনো স্বার্থে প্রথমে নির্দিষ্ট সে ভুখণ্ডের জাতির প্রতি লক্ষ্য রাখা হবে। যেমন, আফগানে যখন আমেরিকা আক্রমণ করে তখন পাকিস্তানে এই শ্লোগান তোলা হয়েছিলো ‘পাকিস্তানের স্বার্থই সর্বপ্রথম’। (মুসলিম ভ্রাত্বিত্বের এখানে কোনো স্থান নেই)

গ. মানুষকে স্বার্থপরী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করে তুলে। যত ধরনের অর্থনৈথিক, সামরিক উন্নতি ও অগ্রগতি আছে সবকিছুই হবে শুধু ঐ নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও তার মানুষের জন্য। এই অর্থে পুঁজিবাদ ও জাতীয়তাবাদ একই ফলাফলে পৌঁছে। আর তা হলো, ব্যক্তি স্বাধীনতা। একটিতে ব্যক্তিকে অফুরন্ত সম্পদ, শক্তি ও নফসের পুঁজার জন্য তৈরি করা হয় আর অন্যটিতে জাতিকে তৈরি করা হয়। (এখানে উল্লেখ্য যে, জাতীয়তাবাদ মূলত পুঁজিবাদের একটি সামর্থক বিষয়।)

ঘ. জাতীয়তাবাদে জাতির জন্য অর্থনৈথিক উন্নতি ও দুনিয়ার খুশি-তামাশা ছাড়া ব্যক্তি জীবনে উন্নতির আর কোনো লক্ষ্য দেওয়া হয়না। পুঁজিবাদই এখানে জীবনের ‘কল্যাণের’ একমাত্র লক্ষ্য। একজন পুঁজিবাদি নিজেও এই জীবন গ্রহণ করে এবং অন্যরাও যাতে জীবনের লক্ষ্যতা নির্ধারণ করে তার পূর্ণ ব্যবস্থা করে দেয় এই জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রসমুহ।

ঙ. জাতীয়তাবাদ মানুষকে অন্যের উপর উপনিবেশবাদের মানসিকতায় বেড়ে উঠায়। তা মানুষকে একটিই লক্ষ্য দেয় তা হলো, জাতির স্বার্থ এবং নিজ জাতি অন্য জাতির উপর বিজয়ী হবে, অন্য সমস্ত জাতি তার জাতির অধিনস্তে থাকবে। আর এই জন্য অন্য জাতি গোষ্ঠীকে অধিনস্ত করে এমন প্রত্যেক কাজকে ‘ভালো’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।(23)

 

জাতীয়তাবাদের আরেকটি অনিবার্য রূপ হলো ধর্মহীনতা : 

জাতীয়তাবাদের আরেকটি অনিবার্য রূপ হলো জাতীয়তাবাদ মানুষকে ধর্মহীন করে তুলে। একটি জাতি যত জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসে উন্নতি করতে থাকবে ততই তার মাঝে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে আপত্তি আসবে। জাতির স্বার্থের সামনে সে ইসলামকে হয় অস্বীকার করে বসবে অথবা কাটছাট একটি ইসলামের রূপ সে পেশ করবে। একসময় একথা অনিচ্ছায় তার বিশ্বাসে পরিনত হবে যে, আমি একজন মুসলিম হওয়ার পূর্বে অমুক জাতীয়। এবং এটাই আমার প্রথম পরিচয়। মুফতি তাকী উসমানী দা. বা. তার লেখায় এমন কিছু ঘটনা উল্লেখ করেছে।  হিন্দুস্তানের একটি অঞ্চল হলো সিন্ধ। যা মুহাম্মদ বিন কাসিম রহ.-এর হাতে বিজয় হয়ে মুসলিম প্রধান ভূখণ্ড হিসেবে আজ পর্যন্ত রয়েছে। সিন্ধের জাতীয়তাবাদের শ্লোগান শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর। চলতে থাকে স্বতন্ত্র রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন। সেখানের জাতীয়তাবাদী এক নারী লেখে,

“যে ইসলাম আর যে পাকিস্তান আমার থেকে সিন্ধী ভাষা কেড়ে নিতে চায় সে পাকিস্তান ও ইসলামকে আমরা সিন্ধীরা নিজেদের সবচেয়ে বড় দুশমন মনে করি। একথা সম্পূর্ণ ভুল যে, সিন্ধ ইসলাম ও ইসলামি সভ্যতার কারণে পৃথিবীর বুকে মর্যাদার অধিকারী।’’

অপর এক নারী লেখে,

রাজা দাহির সে হিন্দু হোক বা মুসলিম সে আমাদের জাতীয় বীর।… সময়ের সাথে এটা প্রমাণ হয়ে যাবে আমরা সিন্ধবাসীরা মুহাম্মদ বিন কাসেমের উপর অভিশাপ দেই।(24)

এমন উদাহরণ দূর ভুখণ্ডের সিন্ধীদেরই শুধু নয়। নিজেদের আশপাশে তাকালেও প্রচুর পরিমান পাওয়া যাবে। মোটকথা, যেখানে জাতীয়তাবাদ হবে সেখানে ইসলাম কখনোই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। অনুরূপভাবে যেখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে সেখানে জাতীয়তাবাদ এক মুহুর্তেও টিকতে পারে না। জাতীয়তাবাদের বিকাশ হলে সেখানে ইসলাম প্রচারের পথ অবরূদ্ধ হবেই। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তির পক্ষে একই সময়ে উভয় মতবাদের ধারক হওয়া সম্ভব নয়। হয়তো জাতীয়বাদ গ্রহণ করতে হবে অন্যথায় ইসলাম। দুটো একসাথে কখনোই হবে না।(25)

 

জাতীয়তাবাদ যখন মতবাদ থেকেও বেশি কিছু : 

জাতীয়তাবাদ শুধুই একটি মতবাদ না। জাতীয়তাবাদের প্রবক্তারা এই মতবাদটিকে আরো বড় কিছু, আরো আধ্যাতিক কিছু হিসেবেই দেখে। ধর্মের মতই জাতীয়তাবাদেরও আছে সৃষ্টিতত্ত্ব। দূর কিংবা নিকট অতীতের কোন যুদ্ধ, বিপ্লব কিংবা আন্দোলন। ইতিহাসের এমন এক মাহেন্দ্রক্ষণ যখন জন্ম নিয়েছিল সেই রাষ্ট্র এবং জাতি। মহান কোন আত্মত্যাগের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছিল মহিমান্বিত, চিরন্তন, ধ্রুব কোন চেতনা, উদ্দেশ্য কিংবা বিশ্বাস নিয়ে। এই সৃষ্টিতত্ত্ব প্রশ্নের উর্ধে। যুক্তি, তর্ক, সন্দেহের উর্ধে। এমনকি ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ এবং সংশোধনেরও আওতার বাইরে। এই সৃষ্টিতত্ত্বই ঠিক করে দেয় সেই রাষ্ট্র এবং জাতির পবিত্র মিশন। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য কেবল অর্থনৈতিক, সামাজিক কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়ন না। বরং আরও বেশি কিছু। আরও গভীর, আরো শুদ্ধ কিছু। হয়তো কোন চেতনা, স্বপ্ন, অথবা স্রষ্টাপ্রদত্ত পবিত্র কোন কর্তব্য। সব প্রতিকূলতা সব বিপর্যয় পেরিয়ে রাষ্ট্র এবং জাতিকে এগিয়ে চলতে হয় সেই পবিত্র উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে। এটাই তার চিরন্তন নিয়তি। তার গন্তব্য।(26)

জাতীয়তাবাদটি যে মতবাদ থেকেও বেশি কিছু, তা অন্যরকম এক আধ্যাতিকতার নাম তা অনেক পশ্চিমা ও বিধর্মী লেখক স্বীকার করেছেন।

ভারতীয় লেখক লেডী আসরাওয়াথম তার ‘পলিটিক্যাল থিউরি’ বইতে জাতীয়বাদ সম্পর্কে লেখে, “বর্তমান চিন্তাবিদরা সাধারণত একমত যে, জাতীয়তা মূলত একটি মনস্ত্বাত্তিক অবস্থা বা হৃদয়াবেগ। এ.এফ. জমরিন লিখেছেন, জাতীয়তাবাদ ধর্মের মতই এক অভ্যান্তরীণ মনস্তাত্ত্বিক ভাবধারা, মনের একটি বিশেষ অবস্থা, এক অন্তর্নিহিত বিশেষত্ব, অনুভূতির একটি ধরণ, চিন্তার একটা অবস্থা, জীবন যাপনের এক বিশেষ ধারা।’’(27)

আলফ্রেড জমরস ‘ন্যাশনালিটি এন্ড গভর্নমেন্ট’ গ্রন্থে বলেন, “জাতীয়তা ধর্মের মতই এক আভ্যান্তরীণ ভাবধারা। আর রাষ্ট্রত্ব হলো বাহ্যিক ও ব্যবস্থামূলক বিষয়। ….জাতীয়তা একটি অনুভূতি, পদ্ধতি, চিন্তাধারা ও বসবাসের ধরন-ধারণ।’’(28)

সাইয়েদ আবুল হাসান নদভি রহ.-এর লেখাতেও জাতীয়তাবাদকে ‘ধর্মের মত পবিত্র একটি বিষয় ও প্রশ্নের উর্ধ্বে উঠিয়ে মানুষের কাছে পেশ করা হয়’ দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করা হয়েছে। তিনি এই বিষয়টি এভাবে বলেন, “ধর্মের প্রতি যে পরিমাণ আবেগ-উদ্দীপনা, উচ্ছাস-উত্তেজনা ও প্রশ্নাতীত পবিত্রতার অনুভূতি মানুষের অন্তরে থাকে জাতীয়তাবাদের পক্ষে সেগুলো পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় ছিলো, বরং বলা চলে, একটি নতুন ধর্মরূপেই যেন তা আত্মপ্রকাশ করেছিলো।….জাতীয়তাবাদ নামক এ নতুন ধর্মের প্রথম বিশ্বাসই ছিলো এই যে, জাতি ও জাতীয়তা হচ্ছে সবকিছুর উর্ধ্বে। আমার জাতির চেয়ে উত্তম এবং আমার দেশের চেয়ে সুন্দর কোনো দেশ ও জাতি পৃথিবীতে নেই।’’(29)

জাতীয়তাবাদকে চাই ধর্ম হিসেবে দেখা হোক বা কোনো মতবাদ হিসেবে দেখা হোক, সর্বাবস্থায় তা ইসলামের সাথে পরিপূর্ণ সাংঘর্ষিক এবং এই উম্মাহের পূনর্জাগরণের পথে বড় বাঁধার একটি। তা একটি ভয়ংকর ফিতনা যা ইসলামের নেকাব লাগিয়ে মুসলিম জাতিকে শেষে ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই দিচ্ছে না। তাই এমন একটি ফিতনাকে সমূলে উৎখাত করে ইসলামি আকিদা পূনস্থাপন করা ব্যতিত মুসলিম উম্মাহর হারানো গৌরভ ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়।

আল্লাহ আমাদের ফিতনাকে ফিতনাহ হিসেবে চিহ্নিত করার ও তার থেকে বেঁচে থেকে নিজ ইমানকে রক্ষা করার তাওফিক দান করুক। আমীন।

 

তথ্যসূত্র:

 

[1] ) মুফতি শফী রহ.-এর ‘ইশতারাকিয়্যাত,কওমিয়্যাত আউর সারমায়াদারি’ প্রবন্ধ থেকে সংক্ষেপিত (জাওয়াহিরুল ফিকহ ৫/৮৫)

2) দেখুন, উইকিপিডিয়া ‘জাতীয়তাবাদ’

লিংক: https://bit.ly/3fyvWJ3

3) এখানে তিউনিসিয়ার আন নাহদা পার্টির আধ্যাতিক নেতা রশিদ ঘানুষির একটি বক্তব্য প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করা সমীচিন মনে করছি। তিনি এক স্থানে বলেন,

4) দেখুন, উইকিপিডিয়া ‘জাতীয়তাবাদ’

লিংক: https://bit.ly/3fyvWJ3

5) দেখুন, উইকিপিডিয়া ‘জাতীয়তাবাদ’

লিংক: https://bit.ly/3fyvWJ3

6) দেখুন,

১। উইকিপিডিয়া : https://bit.ly/3ruhzex

২। ইতিহাসের আয়নায় বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা  পৃষ্ঠা ১৩৫-১৩৬ (ইফতেখার সিফাত অনূদিত) রুহামা পাবলিকেশন

7) উইকিপিডিয়া : ইউরোপে জাতীয়তাবাদ। লিংক, https://bit.ly/3rpEJ5D

8) মুসলিমদের পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো?-সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি রহ. পৃ. ৩৪৬ (মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দা.বা. অনূদিত)

9) মুসলিমদের পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো?. পৃ. ৩৪৭-৪৮-৪৯

10) মাজাহিবি ফিকরাতুন মুয়াসারাহ-মুহাম্মদ কুতুব রহ. পৃ.৫৮১

11) মাজাহিবি ফিকরাতুন মুয়াসারাহ-মুহাম্মদ কুতুব রহ. পৃ.৫৭৭

12) ইসলাম আউর সিয়াসাতে হাজেরা-মুফতি তাকী উসমানী দা.বা. পৃষ্ঠা ৪১

13) সূরা তাওবা : ২৮

14) সূরা তাগাবুন : ২

15) সূরা নিসা : ৮৯

16) ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ-মাওলানা মওদুদি পৃষ্ঠা ২৩/২৮-২৯

17) সূরা হুজুরাত : ১৩

18) ইসলাম আউর সিয়াসাতে

সিয়াসাতে হাজেরা পৃষ্ঠা ৪২,৪৩

19) সাইয়েদ আবুল হাসান নদভির “মুসলিমদের পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো?” ৩৬২-৩৬৩ পৃষ্ঠা থেকে সংক্ষেপিত

20) মুসনাদে আহমদ ৩৮/৪৭৪ (মুয়াসসাসাতুর রিসালা)

21) জাওয়াহিরুল ফিকহ ৫/৯২

22) মুসলিমদের পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো?. পৃ. ৩৫৫

23) ইতিহাসের দর্পনে ইসলামী রাষ্ট্র ও আধুনিক রাষ্ট্রতত্ত্ব (চেতনা প্রকাশন থেকে প্রকাশিতব্য একটি বই থেকে )

24) ইসলাম আউর সিয়াসাতে হাজেরা পৃ. ৪৬-৪৭

25) ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ-মাওলানা মওদুদি, পৃ.৮৪

26) সোস্যাল এক্টিভিষ্ট আসিফ আদনানের একটি লেখার অংশবিশেষ। লিংক : https://web.facebook.com/AsifAdnan88

27) ইসলামের দৃষ্টিতে জাতি ও জাতীয়তাবাদ-মাওলানা আব্দুর রহিম রহ. পৃষ্ঠা ১৪

28) ইসলামের দৃষ্টিতে জাতি ও জাতীয়তাবাদ পৃষ্ঠা ১৭

29) মুসলিমদের পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো?. পৃ. ৩৫৩-৩৫৪

 

Facebook Comments

Previous Post

উত্তম আখলাক: অনন্য ছয়টি মর্যাদা | আনাস চৌধুরী

Next Post

প্রচলিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপঃ পেছনের দৃশ্য । আব্দুল্লাহ বিন বশির

সাবের চৌধুরী

সাবের চৌধুরী

Related Posts

প্রচলিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপঃ পেছনের দৃশ্য । আব্দুল্লাহ বিন বশির
আকীদা

প্রচলিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপঃ পেছনের দৃশ্য । আব্দুল্লাহ বিন বশির

May 14, 2022
কোয়ান্টাম মেথড: কুফরের ভিতর কুফর | আব্দুল্লাহ বিন বশির
চিন্তা ও মতবাদ

কোয়ান্টাম মেথড: কুফরের ভিতর কুফর | আব্দুল্লাহ বিন বশির

January 29, 2022
Next Post
প্রচলিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপঃ পেছনের দৃশ্য । আব্দুল্লাহ বিন বশির

প্রচলিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপঃ পেছনের দৃশ্য । আব্দুল্লাহ বিন বশির

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

Recent.

প্রচলিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপঃ পেছনের দৃশ্য । আব্দুল্লাহ বিন বশির

প্রচলিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপঃ পেছনের দৃশ্য । আব্দুল্লাহ বিন বশির

May 14, 2022
জাতীয়তাবাদ: জাহিলিয়্যাতের নতুন রূপ || আব্দুল্লাহ বিন বশির

জাতীয়তাবাদ: জাহিলিয়্যাতের নতুন রূপ || আব্দুল্লাহ বিন বশির

April 22, 2022
উত্তম আখলাক: অনন্য ছয়টি মর্যাদা | আনাস চৌধুরী

উত্তম আখলাক: অনন্য ছয়টি মর্যাদা | আনাস চৌধুরী

March 14, 2022
কোয়ান্টাম মেথড: কুফরের ভিতর কুফর | আব্দুল্লাহ বিন বশির

কোয়ান্টাম মেথড: কুফরের ভিতর কুফর | আব্দুল্লাহ বিন বশির

January 29, 2022
নারী, ফিতনা ও হাদীসের মর্মবিশ্লেষণ || ডক্টর নি’মাত বিনতে মোহাম্মাদ আল জা’ফরি অনুবাদ : হুজাইফা মাহমুদ

নারী, ফিতনা ও হাদীসের মর্মবিশ্লেষণ || ডক্টর নি’মাত বিনতে মোহাম্মাদ আল জা’ফরি অনুবাদ : হুজাইফা মাহমুদ

December 11, 2021

  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

No Result
View All Result
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ

© 2020 রিওয়ায়াহ - Developed by Tijarah IT Limited.