Riwayahbd

Personal Blog

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি—প্রথম পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | ভাষান্তর: হুজাইফা মাহমুদ

by আনাস চৌধুরী
November 12, 2022
1 min read
0
94
SHARES
726
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

গামেদি চিন্তার মৌলিক বিভ্রান্তি – প্রথম পর্ব

 

বিগত প্রায় বিশ বছর যাবত জনাব জাভেদ আহমেদ গামেদি সাহেবের চিন্তা ও লেখালিখির চর্চা হয়ে আসছে বিভিন্ন মাধ্যমে। আমি সেই সময় থেকে তার এসব চিন্তা ও লেখালেখির সাথে গভীরভাবে পরিচিত , যখন হিন্দুস্তানের খুব কম মানুষই তাকে চিনতো। তার সেসব লেখা আল ইশরাক্ব, আল ফুরকান নামক পত্রিকাগুলোতে ধারাবাহিকভাবে ছাপা হতো । ১৯৯১ সাল থেকে নিয়ে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আমি সেগুলো নিয়মিত পাঠ করেছি। গামেদি সাহেব নিজেকে মরহুম আমিন আহসান ইসলাহির সাথে সম্বন্ধিত করতেন। তার লেখা পড়ে আমার মনে হতো জনাব ইসলাহী সাহেব রজমের শাস্তির ব্যাপারে যেই দুঃসাহসিকতাপূর্ণ, বিপদজনক ও বিচ্ছিন্ন মতামত পেশ করেছেন ঠিক সেখান থেকে গামেদি সাহেব তার চিন্তার যাত্রা শুরু করেছেন।

তারপর এলো অবাধ ইন্টারনেটের যুগ। তার চিন্তা ও লেখালেখির পরিসর আরও বৃদ্ধি পেলো। এদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তার ব্যাপারে নানাবিধ প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা আসতে লাগলো আমাদের কাছে। এও শোনা যায় , তার লেকচারে আমাদের অনেক মানুষ বেশ ভালোভাবেই প্রভাবিত হয়ে পড়ছেন।

 

পশ্চিমা সাংস্কৃতির বৈশ্বিক বিস্তার ও এর প্রবল প্রভাবের কারণে মুসলমানদের মধ্য থেকেই এমন একটা দল তৈরী হয়েছে যারা মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের আশপাশের ঐতিহ্যবাদী আলেম উলামাদের সাথে মানসিক দূরত্ব ও বিচ্ছিন্নতা অনুভব করেন। এই শ্রেণীর লোকেরাই যেকোন বাতিলপন্থী চিন্তা ও মতবাদের আহ্বানে সবার আগে সাড়া দেন। আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, গামেদি সাহেবের এই ফাঁদেও তারাই আটকা পড়েছেন।

আমাদের কল্পনার চাইতেও দ্রুত বেগে তার এসব বিভ্রান্ত ছড়িয়ে পড়েছে সকলের মাঝে। অদ্য ১৩ই এপ্রিল , ২০১৯ তারিখে খবর পেলাম গামেদি সাহেবের প্রতিষ্ঠান “ আল মাওরিদ” এর ভারতীয় শাখা খোলা হয়েছে। সেখান থেকে তার যাবতীয় কিতাবপত্র , লেকচার ও লিফলেটের প্রচার প্রসার করা হচ্ছে। তখন আমি নিজের ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে তার চিন্তার মৌলিক ভুল ও ভ্রান্তিগুলো নিয়ে সুস্পষ্ট আলোচনা করার ইচ্ছা করলাম। যেনো তার শ্রোতা ও পাঠকেরা জানতে পারে— তার চিন্তার মৌলিক ত্রুটিগুলো কী এবং কেন সেগুলো দ্বীনের বিশুদ্ধ আক্বীদার সাথে সাংঘর্ষপূর্ণ। 

 

জনাব গামেদি সাহেবের এই বিভ্রান্তি এবং আহলে সুন্নাহর সঠিক পথ থেকে বিচ্যুতি মামুলি ছোটখাটো  কোন বিচ্যুতি না। নিতান্ত আফসোসের বিষয় হলো, তিনি নবুওয়ত ও  রিসালাতের মাক্বাম বুঝতে ব্যার্থ হয়েছেন।  তার মতে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই যোগ্যতাই নাই যে আল্লাহ্‌ ( কুরআন ব্যাতিত) তাঁর মাধ্যমে দ্বীনের কোন আক্বীদাহ , আমল বা কোন আদেশ নিষেধ  প্রণয়ন করবেন। তিনি রিসালাতের এই মাক্বাম বা দায়িত্ত্বের স্বীকৃতি দিতে রাজী নন। তার মতে মক্কার মুশরিকদের মাঝে , কিংবা মদীনার ইহুদি খৃষ্টানদের যেসব ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ প্রচলিত ছিলো সেগুলোকে সংস্কার ও সংশোধনের মাধ্যমে কোনটাকে  বাদ দেয়া  ও কোনটাকে জারি রাখার অধিকার তাঁর ছিলো। কিন্তু মুমিনদের জন্য  স্বতন্ত্র নতুন  কোন বিধান প্রনয়ণ করা এবং একে দ্বীনের কোন অংশ হিসেবে যুক্ত করার অধিকার তাঁর ছিলো না।

তার এই বক্তব্যের মূল কথা হলো হাদিসের মাধ্যমে দ্বীনের কোন বিধান প্রনয়ণ করা যাবেনা। অর্থাৎ তিনি সুস্পষ্টভাবেই মুনকিরে হাদিস বা হাদিসের প্রামাণ্যতা অস্বীকারকারী। 

তবে হাদিস অস্বীকারের যেসব প্রচলিত ধরন রয়েছে সেগুলো থেকে তার অস্বীকারের ধরন কিছুটা আলাদা এবং মানের বিচারে নিম্ন পর্যায়ের। তার চিন্তা ও মতবাদের সবচে নির্ভরযোগ্য ও মৌলিক গ্রন্থ সম্ভবত “ মিযান” গ্রন্থটি। সেখানে তিনি অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলেছেন , হাদিস দ্বীন ও শরিয়ার কোন উৎস হতে পারেনা। তিনি বলেন- রাসূল সাঃ এর কথা , কাজ , কিংবা  অন্যদের কাজের ব্যাপারে তাঁর নিরব সম্মতি ও অসম্মতি প্রদানের যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় , এবং যেগুলোর অধিকাংশই খবরে ওয়াহেদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে , পারিভাষিক অর্থে যাকে হাদিস বলা হয় , সেগুলোর ব্যাপারে এ কথাটি একেবারেই সুস্পষ্ট যে , এর মাধ্যমে দ্বীনের কোন আক্বীদা বা আমল বৃদ্ধি করা যাবেনা। “

 

তো তার এই বক্তব্যের এমন কোন ব্যাখ্যা বা অর্থ বের করার কি সুযোগ রয়েছে যার মাধ্যমে বলা যায় তিনি মুনকিরে হাদিস নন? আরও দেখুন , এই কথার অব্যবহিত পরেই তিনি লিখেন- এই বিষয়ে আলোচনার ভূমিকাতেই আমি অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়েছি যে , দ্বীনের নতুন কোন বিধানের উৎস হওয়া হাদিসের দায়িত্বের মাঝেই পড়েনা।    ( মিযান , পৃঃ ৬১)

তারপরও কি কোন সন্দেহ বাকি থাকে?

 

অবশ্য এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় । উপরোক্ত বক্তব্যে তিনি হাদিসের অধিকাংশ বর্ণণাকে খবরে ওয়াহেদ হিসেবে আখ্যায়িত করে এটা বুঝানোর চেষ্টা করছেন যে , হাদিসকে দ্বীনের প্রমাণ হিসেবে  না মানার সবচে বড় কারণ হলো, সেগুলোর খবরে ওয়াহেদ হওয়া। এর দ্বারা সাধারণ মুসলমানদের মাঝে তার এই অবস্থানের বিচ্ছিন্নতা ও বিচ্যুতির বিষয়টা কম দৃষ্টিগোচর হবে বলে মনে হয়। কিন্তু বাস্তবতা এরকম না। তিনি স্রেফ খবরে ওয়াহেদ হওয়ার কারনে হাদিসের প্রামাণ্যতা অস্বীকার করেন না , বরং যেসব হাদিস মুতাওয়াতির  সূত্রে বর্ণিত হয়েছে , সেগুলোর ব্যাপারেও একই অবস্থান গ্রহণ করেন। অর্থাৎ মুতাওয়াতির হাদিসের মাধ্যমেও দ্বীনের কোন বিধান বা আক্বীদা গ্রহণ করা যাবেনা। তার বক্তব্যের এই জায়গাটা লক্ষ্য করুন – হাদিসের সেই যোগ্যতাই নেই যে এটা নতুন কোন আকীদা বা আমলের উৎস হবে।

এখানে তিনি খবরে ওয়াহেদ ও মুতাওয়াতির নির্বিশেষে সবধরণের হাদিসকেই খারিজ করে দিয়েছেন। 

এখানে গামেদি সাহেবের মতবাদের আরেকটি মূলনীতি জেনে নেয়া জরুরী, যার মাধ্যমে আমরা তার উপরে বলে আসা “ আকীদা ও আমল বৃদ্ধি করা যাবেনা” এবং “  দ্বীনের নতুন কোন বিধানের উৎস হতে পারেনা”  এই কথাগুলোর ব্যাপারে আরও স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট ধারনা লাভ করতে পারবো। তিনি তার বিখ্যাত মিযান গ্রন্থে বলেন- দ্বীন আমাদের কাছে দুটি মাধ্যমে পৌঁছেছে –

১- কুরআন

২- সুন্নাহ

পাঠক, এতটুক দেখেই তার ব্যাপারে আস্বস্ত হয়ে যাবেন না। সাহাবায়ে কেরাম থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত মুসলমানগণ সুন্নত বলতে যা বুঝেছে এবং সুন্নত শব্দটি শুনার সাথে সাথেই তাদের মনে রাসূল সাঃ এর পবিত্র সত্ত্বার সাথে সম্পৃক্ত হাদিস ও আমলের যে কল্পচিত্র আসে, গামেদি সাহেবের কাছে সেগুলো সুন্নত না। তার কাছে সুন্নতের ভিন্ন অর্থ রয়েছে । তিনি বলেন-

সুন্নত বলতে আমরা বুঝি , দ্বীনে ইব্রাহীমের সেইসব ধর্মীয় আচার প্রথা যেগুলো আরবের মুশরিক, ইহুদি ও খৃষ্টানদের মাঝে প্রচলিত ছিলো ।  রাসূল সাঃ সেগুলো কে সংস্কার , সংশোধন ও যোগ বিয়োগের পর নিজের অনুসারিদের জন্য পালনিয় বিষয় হিসেবে জারি রাখেন। একেই সুন্নাহ হিসেবে আখায়িত করা হয়। ( মিযান, পৃঃ ১৪)

সুন্নাহর এমন অর্থকে সামনে রেখেই গামেদি সাহেব বলেন, বিশুদ্ধ ও নিঃসন্দেহ  দ্বীনের উৎস এই দুটি , কুরান এবং সুন্নাহ। এর বাইরে আর কোন কিছু দ্বীন নয়, এবং দ্বীনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতও নয়। রাসূল সাঃ এর যেসব বক্তব্য ও কাজের বিবরণ হাদিস হিসেবে আমাদের মাঝে প্রচলিত রয়েছে ,  যার সবটাই খবরে ওয়াহেদ সূত্রে বর্ণিত , সেগুলোর ব্যাপারে নিরেট বাস্তবতা হলো, রাসূল সাঃ নিজে এসবের প্রতি কোন গুরুত্ত্ব প্রদান করেননি। এগুলোর সংরক্ষণ ও প্রচারের ব্যাপারে কাউকে আদেশও দেননি। বরং সেইসময়ের মানুষের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়েছেন , তারা চাইলে পরবর্তীদের পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে আবার নাও পৌঁছাতে পারে। সুতরাং এমন বিষয় দ্বারা দ্বীনের কোন আক্বীদা বা আমল প্রমাণ করা যায়না। ( মিযান, পৃঃ১৫)

আমরা পূর্বেই বলেছি, গামেদি সাহেবের মূল বিভ্রান্তি হলো, ইনকারে হাদিস বা হাদিসের প্রামাণ্যতা অস্বীকার করা। এক্ষেত্রে তিনি এক নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন।

আমার আশ্চর্য লাগে , তার এসব বিভ্রান্তিমূলক চিন্তার খন্ডনে যেই সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট খন্ডন জনমানুষের সামনে আসা প্রয়োজন ছিলো সেভাবে আসেনি। তার লেখা ও বক্তব্যের বিষয়গুলো নিয়ে পাকিস্তানের জ্ঞানী মহলে আলোচনা জারি আছে বটে , কিন্তু তারা এতো লম্বা চওড়া ও ঘুরানো প্যাঁচানো  আলোচনা করেছেন যে এর দ্বারা মূল উদ্দেশ্যই হাসিল হয়নি।  এই সুদীর্ঘ আলোচনার কোন প্রয়োজন ছিলো না। বরং তার চিন্তার মূল পয়েন্ট ধরে সেটাকে খন্ডন করাই যথেষ্ট ছিলো।

তিনি হাদিসকে দ্বীনের বহির্ভূত অংশ বলেই থেমে থাকেননি, বরং এর প্রায়োগিক ক্ষেত্রগুলোও দেখিয়েছেন। তার মতে, রাসুল সাঃ এর যেসব কাজ , কথা , বিধান, এবং তাঁর বর্ণিত ঘটনাবলী কিংবা পরকাল বিষয়ক সংবাদ, যেগুলোর উল্ল্যেখ কুরআনে পাওয়া যায়না, এবং পূর্ববর্তী দ্বীনে ইব্রাহীমেও এর কোন চর্চা নাই , এমন বিষয়কে তিনি দ্বীন ও শরিয়তের অংশ হিসেবে মানতে পরিষ্কার ভাষায় অস্বীকার করেন। 

তিনি দ্বীন ও শরিয়াহকে যেভাবে চিত্রায়িত করেছেন এর ফলাফল দাড়ায় যে , তিনি সেইসব আক্বীদাকেও অস্বীকার করেন যেগুলো খবরে মুতাওয়াতির দ্বারা প্রমাণিত। 

কোন মানুষ যদি মুতওয়াতির হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কোন বিষয় কে অস্বীকার করে তাহলে আবশ্যিকভাবেই সে এমন বিষয়কে অস্বীকার করছে যা রাসূল সাঃ এর কথা বা কাজ হওয়ার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহেরও অবকাশ নাই।  মুতাওয়াতির হাদিস এমন হাদিস কে বলে যা অকাট্যভাবে রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত।

এর কারণ হলো গামেদি সাহেব মনে করেন, সুন্নাহ হলো পূর্ববর্তী দ্বীনে ইব্রাহীমের পালনীয় রীতিনীতি , যা রাসূল সাঃও  তাঁর উম্মতের জন্য জারি রেখেছেন , এর সীমা স্রেফ আমল পর্যন্ত। এই সুন্নাহ দিয়ে ইসলামের কোন আক্বিদা গ্রহন  করা যাবেনা। ( মিযান,৫৮)

তো এ থেকে বুঝাই যাচ্ছে, তার কথিত এই সুন্নাহ ব্যাতিত আর কোন সুন্নাহ কে তিনি দ্বীনের অংশ মনে করেন না। চাই সেটা খবরে ওয়াহেদ হোক কিংবা মুতাওয়াতির হোক। সুতরাং রাসূল সাঃ জান্নাত , জাহান্নাম, আখেরাত , কিয়ামত, শেষ যামানা, জ্বীন , ফেরেশতা, সহ আরও যেসকল গায়েবের বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন , সেগুলো মুতাওয়াতির কিংবা মাশহুর যেভাবেই বর্ণিত হোক , তার মতে দ্বীন ও শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নাই।

 

পাঠক , একটু চিন্তা করে দেখুন তার এই বক্তব্যের অর্থ কী দাঁড়ায়?  রাসূল সাঃ তাঁর সারাজীবনে সাহাবীদের কাছে যেসব কথা বলেছেন , মজলিসে বসিয়ে শিখিয়েছেন , এবং চারদিকে প্রচার করেছেন, আলামুল গায়েব বা অদৃশ্য জগতের ব্যাপারে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন সেগুলো কি তাহলে অনর্থক ও উদ্দেশ্যহীন কথাবার্তা ছিলো?

তার এই পর্যায়ের খোল্লামখোল্লা গুমরাহি ও দ্বীনের ব্যাপারে নিরেট মূর্খতার পরেও পাকিস্তানের কতিপয় বড় আলেম উলামা তার আলোচনায় যেসব উচ্চমার্গীয় বক্তব্য ও দার্শনিক আলাপ করেছেন , সেটা দেখে আমি খুবই বিস্মিত হয়েছি। তারা এসব উচ্চমার্গীয় আলোচনা করে গামেদি সাহেবকে একজন বিশিষ্ট চিন্তক ও গবেষকের মর্যাদা দিয়ে বসে আছেন। অথচ তিনি মোটেও এমন কেউ নন। অযৌক্তিক ও খাপছাড়া চিন্তার কোন মানুষের বক্তব্য খন্ডনে এই পর্যায়ের ইলমি আলাপ মানানসই না।

 

লক্ষ্য করুন, উদাহরণস্বরূপ যেসব হাদিসে রাসূল সাঃ পুল সিরাত কিংবা ঈসা মসীহ আঃ এর পূনরাগমণের সংবাদ দিয়েছেন, গামেদী সাহেবের মূলনীতি অনুযায়ি এগুলো বিশ্বাস করা ভুল। এসব বিষয় দ্বীনের কোন আক্বীদা হতে পারেনা।যেহেতু  দ্বীনের কোন আমল বা আক্বীদা যুক্ত করার ক্ষমতাই হাদিসের  নেই।

    অথচ , একথা সকলেই জানে যে, এই বিষয়গুলো রাসূল সাঃ থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়ে আসছে অর্থাৎ , সাহাবায়ে কেরাম থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক যুগে এই বিষয়গুলো এতো পরিমান মানুষ বর্ণনা করেছে যে, এগুলো মিথ্যা বা ভুল হওয়া হওয়া যৌক্তিকভাবে সম্ভব না। রাসূল সাঃ এই কথাগুলো বলেছেন এটা দিবালোকের ন্যায় সুনিশ্চিত। এমন বিষয়কে উলামাগণ “ যরুরিয়াতে দ্বীন” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ , এমন বিষয় যা সকলের কাছে আবশ্যক জ্ঞান হিসেবে উপলব্ধ থাকে।  যা দ্বীনের অংশ হওয়ার ব্যাপারে কারও মনে কোন সন্দেহ নাই।

পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকল উলামার মাঝে  এ ব্যাপারে ঐক্যমত রয়েছে যে, এইসব যরুরিয়াত দ্বীনের কোন একটাকে কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। ইলমে কালাম ও উসুলে ফিকহের কিতাবাদিতে এ বিষয়টি সবিস্তারে আলোচিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রহঃ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “ ইকফারুল মুলহিদীন” এ যুক্তি ও প্রমাণের আলোকে এই বিষয়টি একেবারে খোলাসা করে দিয়েছেন। সেখানে তিনি অসংখ্য উলামা , ইমাম ও মুজতাহিদের এব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্যগুলোকে সংকলিত করেছেন।

মুতাওয়াতির হাদিস বর্ণনার যে পদ্ধতি আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি , এই পদ্ধতিতে একটি হাদিস বর্ণিত হয়ে আসার পরেও কেউ যদি তা অস্বীকার করে তাহলে সে যেনো খোদ রাসূল সাঃ কেই মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো , এবং রাসূলের সাঃ কথা কে ভুল হিসাবে আখ্যায়িত করলো।

গামেদি সাহেব নিজের মূলনীতির ভিত্তিতেই ঈসা আঃ এর জীবিত থাকা এবং পূনরাগমণের ব্যাপারটি অস্বীকার করেন। তার মতে ঈসা আঃ এর মৃত্যু হয়ে গেছে। তিনি এখন জীবিত নন , এবং কিয়ামতের পূর্বে পূনরাগমণও করবেন না।

যদিও রাসূল সাঃ হযরত ঈসা আঃ এর জীবিত থাকা ও কিয়ামতের পূর্বের পূণরাগমণ সম্পর্কে সুনিশ্চিত সংবাদ প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ ও বিতর্ক করার সুযোগ নেই। সেইসব সংবাদের বর্ণনা তাওয়াতুর সূত্রে আমাদের পর্যন্ত বর্ণিত হয়ে এসেছে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ভুল বা মিথ্যা হওয়ার সামান্য সম্ভাবনাও নাই।

আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রহঃ তার বিখ্যাত কিতাব “ আত তাসরীহ বিমা তাওাতারা ফি নুযুলিল মাসীহ” এ এ সংক্রান্ত সকল বর্ণনা একত্রিত করেছেন। সেখানে বর্ণনার আধিক্য ও সনদের নির্ভরযোগ্যতা কে সামনে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, রাসূল সাঃ যে এসব সংবাদ দিয়েছেন, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু গামেদি সাহেবের মতে এগুলো দ্বীনের কোন অংশ হতে পারেনা, দ্বীনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই। ঈসা আঃ এর পূনরাগমনের বিশ্বাস রাখা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ( মিযান, পৃঃ ১৭৮-১৮০)

 

আক্বীদার মতো দ্বীনের অন্যান্য আহকাম ও বিধানাবলির ব্যাপারেও গামেদি সাহেব একই মূলনীতি অবলম্বন করেন। অর্থাৎ কোন বিধান যদি কুরআন ও পূর্ববর্তী দ্বীনে ইব্রাহীমে না থাকে তাহলে স্রেফ রাসূল সাঃ  এর হাদিস দ্বারা এই বিধান প্রণয়ন করা যাবেনা। শরীয়তে রাসূল সাঃ এর  নিজ থেকে দেয়া আদেশ ও নিষেধাজ্ঞার কোন ধর্তব্য হবেনা। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন নাই। দ্বীন ও শরিয়াকে  যেসব মূলনীতির উপর তিনি দাঁড় করিয়েছেন সেটাকে সামনে রেখে দুয়েকটি উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটি সম্পূর্ণ স্পষ্ট হয়ে যাবে।

তার প্রধান মূলনীতি হলো – যেসব বিধান কুরআন ও পূর্ববর্তী দ্বীনে ইব্রাহীমের চর্চায় পাওয়া যায়না , সেসব বিধান দ্বীনে ইসলামেরও অংশ না। এই মূলনীতির আলোকে দেখা যায় শরিয়তের অধিকাংশ ফরজ, ওয়াজিব ,সুন্নত কিংবা হালাল হারামের বিধানই খারিজ হয়ে যায়। যেমন, স্বর্ণের থালা বা পিয়ালা ব্যাবহার করা হারাম। একইভাবে পুরুষদের জন্য স্বর্ণের অলংকার ও রেশমের কাপড় পরিধান করা হারাম। অথবা মহিলাদের মাসিকের সময় নামাজ পড়া নিষিদ্ধ , এবং পরবর্তীতে এই নামাজ আদায় করা মওকুফ। নামাজের ভেতর কথা বললে নামাজ ভেঙ্গে যায় , ইত্যাদি। এরকম আরও কতশত সর্বস্বীকৃত বিধান রয়েছে যেগুলো না কুরআনে উল্লেখ আছে না তার কথিত দ্বীনে ইব্রাহীমে এর কোন রেওয়াজ আছে। রাসূল সাঃ এর আগমনের পূর্বে এসব বিধান কেউ জানতইনা। গামেদি সাহেবের মূলনীতি অনুযায়ি এগুলো দ্বীনের কোন বিধান না, বরং দ্বীন বহির্ভূত বিষয়। তার মূলনীতি ও চিন্তার ফলাফলতো এটাই দাঁড়ায়।

 

 

Facebook Comments

Previous Post

বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

Next Post

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি | শেষ পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | তরজমা: হুজাইফা মাহমুদ

আনাস চৌধুরী

আনাস চৌধুরী

আনাস চৌধুরীর জন্ম ১৯৯৭ সালে, হবিগঞ্জ সদরে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়ায়। পরে দারুল উলুম দেওবন্দে অধ্যয়ন করেছেন। বর্তমানে শিক্ষকতা করছেন দারুল ইরশাদ হবিগঞ্জ এ। পাশাপাশি দীন ও শরিয়া বিষয়ে লেখালেখি ও আলোচনা করেন। আজম হাশেমীর বহুল পঠিত 'বোখারা সামারকন্দের রক্তাক্ত স্মৃতি' বইটি তিনি উর্দু থেকে আরবীতে অনুবাদ করেছেন, যা মদীনা মুনাওয়ারা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

Related Posts

এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।
কুরআন

এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

November 28, 2022
কুরআন

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি | শেষ পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | তরজমা: হুজাইফা মাহমুদ

November 16, 2022
Next Post

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি | শেষ পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | তরজমা: হুজাইফা মাহমুদ

No Result
View All Result

Recent.

তাসাউফ সম্পর্কে অপপ্রচার ও ভ্রান্তি : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা ।। মাওলানা আনাস চৌধুরী

December 16, 2022
এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

November 28, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি | শেষ পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | তরজমা: হুজাইফা মাহমুদ

November 16, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি—প্রথম পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | ভাষান্তর: হুজাইফা মাহমুদ

November 12, 2022
বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

October 29, 2022

  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

No Result
View All Result
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ

© 2020 রিওয়ায়াহ - Developed by Tijarah IT Limited.