Riwayahbd

Personal Blog

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি | শেষ পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | তরজমা: হুজাইফা মাহমুদ

by আনাস চৌধুরী
November 16, 2022
1 min read
0
17
SHARES
127
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি। দ্বিতীয় পর্ব

আমরা তার কিতাব থেকে পূর্বেই দেখিয়েছি, তিনি হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাঃ এর দেয়া কোন বিধান তখনই কবুল করেন যখন সেটা পূর্ববর্তী দ্বীনে ইব্রাহীমে পাওয়া যায় , এবং আরবের মুশরিক ও ইহুদি নাসারাদের মাঝে এর চর্চা থাকে। কুরআনের বাইরে হালাল ও হারাম নির্নয়ের মানদন্ড তার কাছে এটাই। এজন্য তার চিন্তার ভিত্তিমূলক গ্রন্থ “ মিযান” এ তিনি যখন হাদিস থেকে কোন বিধান আলোচনা করেন তখন হাদিস উল্লেখের পাশাপাশি একথাও আবশ্যিকভাবেই উল্লেখ করেন যে, বাইবেলে এর মূল উৎস রয়েছে , অথবা ইসলাম পূর্ব জাহেলী যুগে এর চর্চা ছিল। যেমন, মিসওয়াক করা রাসূল সাঃ এর অত্যন্ত পছন্দনীয় একটি সুন্নত। রাসূল সাঃ থেকে এই আমলের ব্যাপারে তাওয়াতুর সূত্রে বর্ণিত হাদিস রয়েছে। সুতরাং এটা দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এতে কোন সন্দেহ নেই।

গামেদি সাহেবও একে দ্বীনের অংশ ও সওয়াবযোগ্য আমল হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু কেন ? এই জন্য যে, জাওয়াদ আলী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “ আল মুফাসসাল ফি তারিখিল আরাবি ক্বাবলাল ইসলাম” এ বলেছেন মিসওয়াক করার আমলটি জাহেলি যুগেও বিদ্যমান ছিলো। (মিযান-৬৪১)

ব্যাপারটা একবার চিন্তা করে দেখুনতো! আল্লাহ্‌ তাঁর রাসূল সাঃ কে আমাদের দ্বীনের বাহক বানিয়ে পাঠিয়েছেন। তিনি মানবজাতীর সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। আমাদের পথ প্রদর্শক। অথচ তাঁর কোন আমলকে দ্বীনের বিধান হিসেবে গ্রহন করার জন্য আমাদেরকে দেখতে হবে, আবু জাহেল আবু লাহাব কিংবা উতবা শায়বারা এই আমল করতো কি না। অর্থাৎ, রাসূলের সাঃ আমলকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণের জন্য তাদের কাছে থেকে সত্যায়নপত্র পেতে হবে।

যে লোক কুরবানী করার ইচ্ছা করে সে যেন যিল হজ্জ মাসের প্রথম তারিখ থেকে দশ তারিখ কুরবানি করার আগ পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে। এটি একটি সুন্নত আমল। মুসলিম শরিফ সহ আরও বিভিন্ন কিতাবে বিশুদ্ধ সনদে বর্নিত হয়েছে হাদিসটি। গামেদি সাহেব তার কিতাব “মিযান” এ এই আমলকে দ্বীনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এটাকে তিনিও সুন্নত আমল বলেছেন। পরবর্তীতে তার কাছে কেউ জানতে চাইলো, আপনি কিভাবে একে সুন্নত হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন? অথচ আপনার উসূল অনুযায়ি তো এটা সুন্নত হওয়ার কথা না। কারণ এটা স্রেফ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কুরআনেও নাই , আবার দ্বীনে ইব্রাহীমের মাঝেও এর চর্চা আমরা দেখি না।

এর জবাবে তিনি বিস্তারিত এক প্রবন্ধ লেখেন। রিসালাহর ২০১৮ সাল সংখ্যায়। সেখানে তিনি অনেকগুলো রেফারেন্স ও সূত্রের সাহায্যে দেখিয়েছেন , এই আমলটির উল্লেখ বাইবেলে পাওয়া যায়, এবং জাহেলি যুগের আরবদের মাঝেও এর চর্চা ছিলো। ঠিক সেকারণেই তিনি এ সংক্রান্ত হাদিসগুলোকে দ্বীনে ইসলামের অংশ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছেন।

কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল, গামেদি সাহেব তার এই উসূল বা মূলনীতি সবখানে বজায় রাখেন না। দ্বীনের এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো কুরআনে উল্লেখিত হয়নি , আবার দ্বীনে ইব্রাহীমেও এর চর্চা নাই , স্রেফ হাদিস ও রাসূল সাঃ এর আমলের মাধ্যমে প্রমাণিত, গামেদি সাহেব সেগুলোকেও মানেন। যেমন দুই ঈদ পালন করা। দুই ঈদকে তিনি দ্বীনের অংশ হিসেবে মানেন। কেউ যেন তাকে জিজ্ঞেস করে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার কথা কি কুরআনে এসেছে, কিংবা জাহেলী যুগে কি এই দুই ঈদ পালন করা হতো?

আরবের জাহেলী সংস্কৃতী ও রীতি রেওয়াজের বাধা অতিক্রম করেই আমরা দুই ঈদ কে উপহার হিসেবে পেয়েছি, হাদিসের মাধ্যমে, রাসূলের সাঃ আমলের মাধ্যমে।

গামেদী সাহেব ঈদের নামাজকেও আবশ্যক মনে করেন। কী কারনে? এই বিশেষ নামাজের কথাতো কুরআনে নাই। মক্কার মুশরিকরা কি বাইতুল্লায় গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতো? মদীনার ইহুদীরা কি কখনও আদায় করেছে? কিংবা নাজরানের খৃষ্টানরা তাদের গির্যায় ?

একই হিসেবে তার মূলনীতি অনুযায়ী জানাজার নামাজের বিধানও গ্রহনযোগ্য হওয়ার কথা না। তার উল্লিখিত দ্বীনের দুই উৎস , তথা কুরআন ও মিল্লাতে ইব্রাহীমের সেইসব আমল যা রাসূল সাঃ বাকি রেখেছেন , এর কোনটাতেই জানাজার নামাজের কথা পাওয়া যায়না। ইসলামের পূর্বে অন্য কেউ এই নামাজ আদায় করেছে বলেও জানা যায়না। কিন্তু তিনি একে ঠিকই দ্বীনের অংশ হিসেবে মানছেন। এই নামাজকে কোনভাবেই ওয়াক্তিইয়া নামাজের সাথে মেলানো যায়না। কেননা এই নামাজের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো মৃতের জন্য দোয়া করা। সুতরাং “ আক্বীমুস সালাহ” এই আয়াতের মধ্যে এই নামাজ অন্তর্ভুক্ত হবেনা। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন আরেকটি ওয়াজিব বিধান।

এই সবগুলোই এমন বিধান যা সরাসরি হাদিসের মাধ্যমে, রাসূল সাঃ এর আদেশ বা দেখানো আমলের মাধ্যমে দ্বীনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতী পেয়েছে।

বিস্ময়ের চূড়ান্ত

গামেদি সাহেবের সামনে আরেকটি মাসালা উত্থাপন করা যায়। কুরআনে শুধু মাত্র চার ধরণের প্রাণী খাওয়া কে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। তথা, মৃত পশু , রক্ত প্রবাহিত হয়নি এমন পশু, আল্লাহ্‌র নামে জবাই করা হয়নি এমন পশু, এবং শুকর। এই চার ধরণের প্রাণী খাওয়া হারাম।

কিন্তু এর বাইরে আরও অনেক পশু পাখি খাওয়া হারামের বিষয়টা আল্লাহ্‌ আমাদেরকে তাঁর রাসূলের মাধ্যমে জানিয়েছেন, অর্থাৎ হাদিসের মাধ্যমে। কুরআনে উল্লিখিত চার ধরণের প্রাণীর বাইরে সবধরনের হিংস্র পশুর গোশত খাওয়া হারাম , যেমন বাঘ, সিংহ, চিতা, নেকরে, কুকুর ইত্যাদি। আবার অহিংস্র পশুর মাঝে হাতি, গাধা, জেব্রা , জিরাফ ইত্যাদি। বন্য পাখির মাঝে চিল , বাজ ও নখর দিয়ে শিকারকারি অন্যান্য পাখি। তো, কোনটা খাওয়া হালাল ও কোনটা খাওয়া হারাম এটা শুধুমাত্র রাসূলের সাঃ নির্দেশনার উপর ভিত্তি করেই পুরো উম্মত এতোদিন পর্যন্ত মেনে এসেছে। গামেদি সাহেবের সামনে এখন পথ দুটি। তিনি কি এসব প্রাণীর গোশত খাওয়া কে হালাল বলবেন? যদি হালাল বলেন , তাহলে সেটা খুবই উদ্ভট ও পাগলাটে কথা হবে।

আর যদি সেগুলো কে হারাম বলেন, তাহলে তো তিনি নিজেই তার বহু বছরের নির্মিত চিন্তার প্রাসাদে হাতুড়ি চালাবেন। কেননা তার মতে, স্রেফ হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ি কোনকিছু কে হালাল বা হারাম ঘোষণা দেয়া সম্ভব না।

তো, এই উভয় সঙ্কটের এক “ বিস্ময়কর সমাধান” তিনি আবিষ্কার করেছেন।

তিনি বলেন, কোন প্রাণি খাবার উপযুক্ত, কোনটা উপযুক্ত না, কোনটা নোংরা এবং কোনটা পবিত্র সেটা মানুষের রুচি বা জন্মগত স্বভাবই ঠিক করে দেয়। রাসূল সাঃ যেসব প্রাণীর ব্যাপারে হারাম হওয়ার কথা বলেছেন সেটা একান্তই তার নিজস্ব রুচি ও পছন্দ হিসেবে মতামত দিয়েছেন, শরিয়তের বিধান হিসেবে বলেন নি। মানুষের (অর্থাৎ, উম্মতের সকল ফুকাহা, উলামা, মুজতাহিদ) মূল সমস্যা এটাই , তারা কোনটা শরিয়তের বিধান আর কোনটা ফিতরাত বা স্বভাবজাত রুচির বয়ান, এ দুয়ের মাঝে পার্থক্য করতে পারেনা। কুরআনে যেসব পশুকে হারাম করাম করা হয়েছে, সেইসব পশুর সাথে এগুলোর কোন সম্পর্ক নাই।

তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় বলেন- পশু পাখির গোশত হালাল হারাম হওয়ার ব্যাপারে শরিয়তের নির্দেশনা কুরআনে বর্ণিত স্রেফ এই চার প্রকার প্রাণীর ক্ষেত্রেই কার্যকর হবে। তথা, মৃত পশু, রক্ত প্রবাহিত না হওয়া পশু, আল্লাহ্‌ ব্যাতিত অন্য কারও নামে জবাইকৃত পশু এবং শুকরের গোশত। আল্লাহ্‌ একাধিক আয়াতে “ইন্না মা” শব্দ দ্বারা সুনির্দিষ্টভাবে এই চার প্রকার পশুর ব্যাপারেই হারামের ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং এর বাইরে আর কোন পশুর গোশতকে শরঈ হুকুম হিসেবে হারাম ঘোষণা করা যাবেনা। ( মিযান-৩৬)

এই চার প্রকার প্রাণীর বাইরে আরও যেসকল প্রাণি কে রাসূল সাঃ হারাম ঘোষণা দিয়েছেন , হিংস্র জন্তু জানোয়ার, বাঘ , সিংহ , চিতা, গাধা, হাতি, চিল , কাক ইত্যাদি , সেটা রাসূল সাঃ তার নিজের রুচি ও মেজাজের অনুযায়ি অভিমত দিয়েছেন। শরিয়তের হুকুম বয়ান করেননি।

তিনি বলেন- মানুষের স্বভাবজাত রুচি তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। এই রুচিই তাকে ঝটপট বলে দিতে পারে কোন জিনিসটা খাবার উপযোগি আর কোন জিনিসটা খাবার অনুপযোগি। ফলে বনের হিংস্র পশু পাখি, বাঘ ভাল্লুক , চিতা , সাপ , চিল, বিচ্ছু ইত্যাদি যে কোনভাবেই খাবার উপযোগি না এই জ্ঞান মানুষ তার স্বভাবজাত রুচি থেকে পেয়েছে। একই সাথে ঘোড়া গাধা ইত্যাদি বাহন হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে, তার ভোজন বিলাসের জন্য না, এই জ্ঞানও মানুষ তার বুদ্ধি ও রুচির মাধ্যমে লাভ করেছে। এইসব প্রাণীর মল মূত্র যে নাপাক সে ব্যাপারেও সে জন্মগতভাবে অবগত।

মোটকথা, যেসব হাদিসে এইসব পশু পাখির গোশত খাওয়াকে হারাম ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেসব হাদিস নিছকই রাসূল সাঃ এর নিজস্ব রুচির অভিমত, শরিয়তের সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই। কেউ যদি এসব পশু পাখি খায় তাহলে সে হয়তো স্বাভাবিক রুচি বহির্ভুত কাজ করলো, কিন্তু তাকে একথা বলার সুযোগ নেই যে সে হারাম গোশত খেয়েছে।

এ যেন উদ্ভট সব চিন্তা আর আত্মবিরোধি বক্তব্যের এক আলাদা জগতই নির্মাণ করেছেন তিনি। তিনি সম্পূর্ণ নিজের মনমতো করে দ্বীনের একটি চিত্র দাঁড় করিয়েছেন। অত:পর সেই কল্পিত দ্বীনের যেসব আবশ্যিক পরিণতি তার সামনে আসতে লাগলো সেগুলো তার পক্ষে যায়নি। যেমন এসব ক্ষেত্রে তার উসূল ও মূলনীতির দাবী অনুযায়ি কুরআনে বর্ণিত চার প্রকার নিষিদ্ধ প্রাণী ব্যাতীত অন্য সকল প্রাণীর গোশত নিঃশর্তভাবে বৈধ হওয়ার কথা। যেহেতু তার মতে, কুরআনের বাইরে দ্বীনের নতুন কোন বিধান প্রণয়ন করা হাদিসের ক্ষমতার বাইরে। হাদিসের সেই যোগ্যতাই নাই যে সে দ্বীনের বিধানাবলীর উৎস হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। সুতরাং হাদিসে বর্ণিত সেসকল নিষিদ্ধ প্রাণী হারাম বা নিষিদ্ধ হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। মানুষ যে কুকুর, বাঘ, সিংহ, হাতি গাধা ইত্যাদি প্রাণীকে হারাম জেনে বসে আছে তারা ভুল বুঝেছে। মানুষের রুচির পছন্দ অপছন্দ শরিয়তের বিধান হতে পারেনা।

তিনি যে পর্যায়ে হাদিসের প্রামাণ্যতাকে অস্বীকার করেন তার যৌক্তিক দাবি এটাই ছিলো যে তিনি সবধরণের প্রাণিকেই বৈধ বা হালাল বলবেন। কিন্তু তিনি অতি চৌকস ও বুদ্ধিমান মানুষ। ফলে খুব ভালো করেই বুঝেছেন যে, এই পর্যায়ের উদ্ভট কথা বললে তার চিন্তা ও মতবাদ থেকে মানুষ দূরে সরে যাবে। সুস্থ বোধ বুদ্ধি ও চিন্তার কোন মানুষই তার কথা শুনার প্রতি আগ্রহী হবেনা।

ফলে এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্যই এমন হাস্যকর ও উদ্ভট একটি ব্যাখ্যা তিনি তৈরি করেছেন। এমনই ব্যাখ্যা যা আমাদের বুদ্ধি ও আকল কোনভাবেই গ্রহন করেনা।

গামেদি সাহেব অনেক মেধাবি একজন মানুষ , তিনি নিজেও হয়তো এমন ব্যাখ্যায় মানসিক প্রশান্তি লাভ করেননি। শরিয়তের অকাট্য বিধানকে মানুষের রুচির দাবী বলে রাসূল সাঃ এর নির্দেশনাকে তুচ্ছ করলেন।

এখন কাল যদি তার কোন শুভাকাঙ্ক্ষী তাকে এই প্রশ্ন করে বসে যে, হে আমাদের উস্তায ও ইমাম, আপনি যে বলেছেন হিংস্র জন্তু জানোয়ার , বাঘ, সিংহ, সাপ বিচ্ছু, চিল বাজ, কুকুর ইত্যাদি প্রাণী খাওয়া শরঈভাবে হালাল, কিন্তু রুচিগত কারণে হালাল না। কিন্তু আমরা পৃথিবীতে এমন জায়গার মানুষের কথা জানি যাদের কাছে এসব অতি সুস্বাদু খাবার হিসেবেই বিবেচিত হয়। তাদের স্বাভাবিক রুচিতেই এগুলো খাওয়া দোষণীয় নয় কোনভাবেই। চিন কোরিয়া জাপান ইত্যাদি দেশগুলোতে সাপ বিচ্ছু বানর কুকুর খাওয়ার প্রচলন সুবিদিত। তারা কোনরূপ সমস্যা ব্যাতিতই এগুলো খেয়ে থাকে।

আপনি যে বলছেন এগুলোকে খাবার হিসেবে বিবেচনা করা মানবরুচি বহির্ভূত, মানুষের স্বাভাবিক রুচিই এগুলোকে খেতে দেয়না, সেটা আপনার সমাজ ও সংস্কৃতির হিসেবে। দুনিয়ার সকল মানুষ কি আপনার রুচি ও সস্কৃতিকে নিজের রুচি ও সংস্কৃতি হিসেবে গ্রহন করে নিতে বাধ্য? যারা এসব প্রানী খায় তাদের স্বাভাবিক রুচি ও সংস্কৃতি তাদেরকে এসব প্রাণী খেতে নিষেধ করেনা।

বাকি থাকে রাসূল সাঃ এর নিষেধাজ্ঞা। তিনি এসব প্রাণী খেতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু আপনার মূলনীতি অনুযায়ি তো এই নিষেধাজ্ঞার শরঈ কোন মূল্য নেই । কারন হাদিসের সেই ক্ষমতাই নাই যে, সে দ্বীনের কোন বিধানের উৎস হবে। যাই হোক এমন শুভাকাঙ্ক্ষী নিশ্চয় গামেদি সাহেবের খুব একটা পছন্দ হবেনা। কিন্তু তার জিজ্ঞাসাটা কি অযৌক্তিক?

দ্বীন যদি গামেদি সাহেবের এই মূলনীতি অনুযায়ি চলে তাহলে এর তিন চতুর্থাংশই বিলীন ও অকার্যকর হয়ে পড়বে। তখন দ্বীন চলবে গামেদি সাহেবের এমন কতিপয় হৃদয়গ্রাহী, যুগান্তকারি সব চিন্তা ও বক্তব্যের উপর নির্ভর করে।

সকল ভ্রান্তির গোড়া-

সবচাইতে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো , রাসূল সাঃ এর আগমন ও নবুওত প্রাপ্তির ১৪শত বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে, এতোদিন পর এসে একজন লোক দাবী করে বসলো দ্বীনের উৎস কী , হাদিস ও সুন্নাহর অর্থ কী , কোন জিনিস দ্বীনে গ্রহনযোগ্য আর কোন জিনিস গ্রহনযোগ্য না, সেটা না পূর্বের কেউ বুঝেছে না পরবর্তীদের কেউ বুঝেছে। আমিই একমাত্র ব্যাক্তি যে এই বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়েছি।

বিস্ময়ে বুদ্ধি থমকে যায়। গামেদি সাহেব একজন সুস্থ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ , তিনি এসব কি ধরণের কথা বলছেন? তিনি বলেন , রাসূল সাঃ এর উপর ঈমান আনয়নকারি সাহাবির সংখ্যা যদিও লাখের উপর, এবং সকল বিচারে তারা মানব বাগানের শ্রেষ্ঠ ফুল, ইসলাম নামক বৃক্ষের সর্বোৎকৃষ্ট ফল , দ্বীন ও ইসলাম প্রচারে তারা তাদের প্রচেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেননি, তথাপি রাসূল সাঃ তাদের কাছে এটা স্পষ্ট করে যাননি যে দ্বীনের উৎস কী এবং কোনটি।

সাহাবায়ে কেরামের পর ইসলামি জ্ঞানের যে সিলসিলা জারি হয়েছে, হাজারো লাখো মানুষ অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে এই সিলসিলা বহন করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দিয়েছেন , যাদের মাঝে তাবেঈন , তাবে তাবেঈন, ফুক্বাহা, মুহাদ্দিসীন, ইমাম মুজতাহিদ সকলেই শামিল রয়েছেন, তারা এই পর্যায়ের মূর্খ ও নির্বোধ ছিলেন যে, দ্বীনের উৎস কোনটি, কোন জায়গা থেকে দ্বীনের ইলম নিতে হবে সেই জ্ঞান পর্যন্ত তাদের ছিলোনা! আল্লাহ্‌ মাফ করুন!

আজ এতো বছর পর এসে গামেদি সাহেব এসে বলছেন, তোমরা এতোদিন যা জানতে তা ভুল। দ্বীনে লা রাইব বা সংশয়হীন দ্বীনের উৎস স্রেফ দুটি , কুরআন ও দ্বীনে ইব্রাহীম তথা আরবের মুশরিক, ইহুদি ও নাসারারা যেসব ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ পালন করতো সেগুলো কে পরিমার্জন ও পরিশোধনের পর রাসূল সাঃ তার উম্মতের জন্য যেসব রীতি রেওয়াজ জারি রেখেছেন সেগুলো।

এই দুয়ের বাইরে তৃতীয় কোন বিষয় না দ্বীন হতে পারে, না দ্বীনের বিধি বিধানের উৎস হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।

আরও হাস্যকর ব্যাপার দেখুন , তিনি এতো বড় দাবী করেছেন , দ্বীনের উৎস ও ভিত্তি কী, সেটা তিনি ব্যাতিত আর কেউ জানে নাই এতোদিন, এমন দাবী দিয়ে তার ঢাউস সাইজের কিতাব “ মিযান” পূর্ণ করে রেখেছেন ,কিন্তু এর স্বপক্ষে দলিল বা প্রমাণ দেননি একটিও। দলীলের কাছাকাছি যায় এমন কিছুরও উল্লেখ নেই তার কিতাবে। দ্বীনে ইব্রাহীমের যেসব ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ রাসূল সাঃ জারি রেখেছেন সেগুলোই দ্বীনে ইসলামের উৎস, এমন বিস্ময়কর দাবীর একমাত্র দলীল হচ্ছে, “ আমি এমনটা মনে করি” বা “ আমার সুদীর্ঘ গবেষণার পর এটাই প্রতিভাত হয়েছে আমার নিকট” । সুবহানাল্লাহ! হায় আল্লাহ্‌, রহম করো!

আমার এই লেখার উদ্দেশ্য গামেদি সাহেবের চিন্তার খন্ডন বা সেগুলোর তাত্ত্বিক পর্যালোচনা করা না। আমি সুস্পষ্টভাবে স্রেফ এটা দেখাতে চেয়েছি যে, তিনি একজন হাদিস অস্বীকারকারী । হাদিসের প্রামাণ্যতা ও শরিয়তে এর ভূমিকা তিনি স্বীকার করেন না। যদিও আর দশজন হাদিস অস্বীকারকারির মতো তিনি সরাসরি এটা স্বীকার করেন না। বরং অনেক কৌশল ও বক্তব্যের মারপ্যাঁচের আশ্রয় নেন। ফলে আমি এটাও দেখাতে চেয়েছি তার সেসব ঘোরানো প্যাঁচানো বক্তব্যের শেষ পরিণতি কী দাঁড়ায়।

তিনি দ্বীনের নিজস্ব একটি চিত্র ও বুঝাপড়া তৈরী করে নিয়েছেন , সেটা তার কিতাব মিযানের ভূমিকাতেই স্পষ্ট করে বলেছেন-

আল্লাহ্‌ নিকট একমাত্র দ্বীন হলো ইসলাম। আমি আমার দীর্ঘ ২৫ বছর গবেষণা ও চিন্তা ফিকিরের পর এই দ্বীন সম্পর্কে যা বুঝেছি সেগুলই এই কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছি।“

তো তার সেই বুঝাপড়ায় রাসূল সাঃ এর হাদিস কোন স্থান পায়নি। তবে হ্যাঁ, হাদিসের সাথে যদি “মিল্লাতে ইব্রাহীমের কোণ আমল” মিলে যায় তখন সে হাদিস তিনি গ্রহন করতে রাজী আছেন। কিন্তু এর বাইরে, রাসূল সাঃ এর আদেশ, নিষেধ, ওয়াযিব, ফরয, সুন্নত, হালাল, হারাম, সওয়াব, গুনাহ, কোন কাজের জন্য লা’নত, ভয়াবহ শাস্তির হুশিয়ারি, কিংবা সুসংবাদ ইত্যাদি হাদিসরূপে যা কিছুই আসুক কোনটাই গ্রহণযোগ্য না তার কাছে , দ্বীনের সাথে সেগুলোর কোন সম্পর্ক নাই। সেগুলো অনর্থক বা মূল্যহীন! আল্লাহ্‌ মাফ করুন।

এতোসব স্পষ্ট টেক্সট, ইবারাত, এবং বক্তব্য বিদ্যমান থাকার পরেও গামেদি সাহেব বারবার একই কথা বলেন , হাদিস ও সুন্নতের ব্যাপারে তার বক্তব্য ও সালাফদের বক্তব্যের মাঝে তেমন মৌলিক কোন পার্থক্য নাই। বরং স্রেফ পরিভাষা, জ্ঞানতাত্তিক বিন্যাস ও প্রকাশের পার্থক্য। কিন্তু সত্ত্বাগতভাবে একই কথা। এমনটা তিনি নিজেও বলেন এবং তার ভক্ত মুরিদান কিংবা তার পক্ষ নিয়ে সাফাই প্রদানকারিরাও বলে থাকেন। আমাদের চাওয়াও এমনটাই। কিন্তু সত্যিই যদি তিনি এমনটা মনে করে থাকেন তাহলে তাকে অবশ্যই পূর্বোল্ললিখিত বক্তব্য সহ এমন আরও অসংখ্য বক্তব্য রয়েছে যেগুলো থেকে স্পষ্টভাবে ফিরে আসতে হবে। এইসব বক্তব্য তিনি তার চিন্তার ভিত্তিমূলক কিতাব “ মিযান” এ লিপিবদ্ধ করেছেন। এগুলোর অর্থ ও মর্ম পরিষ্কার। সাধারণ অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন যে কেউ পড়লেই বুঝতে পারবে। তিনি যে বলেছেন হাদিস থেকে আহরিত কোন বিধান ঠিক তখনই গ্রহন করা হবে, যখন এর স্বপক্ষে মিল্লাতে ইব্রাহীমের কোন দলীল পাওয়া যাবে, এমন কথা আমাদের সালাফদের কে বলেছেন ? হাদিস বলতে কি তাঁরা এটা বুঝতেন? যদি বলে থাকেন তাহলে সেই প্রমাণ দেয়া উচিত। আর যদি এর কোন প্রমাণ না থাকে তাহলে “ আমার বক্তব্য আর সালাফদের বক্তব্যের মাঝে মৌলিক কোণ বিরোধ নাই” এমন বক্তব্য পরিহার করা উচিত।

গামেদি সাহেবের এই মৌলিক বিভ্রান্তির আলোচনার পর আর কোন বিস্তারিত বিবরণ ও পর্যালোচনার প্রয়োজন থাকেনা। তার কোন কোন মতামত সঠিকও হতে পারে। কিন্তু যার মূল ভিত্তিতেই এতোবড় সমস্যা তার এক দুইটা সঠিক মতামত শুনার কোন যৌক্তিক কারন নেই। ইসলামী জ্ঞানের যে সিলসিলা রয়েছে সেখানে গুরুত্ব পাওয়ার মতো যোগ্য লোক নন তিনি।

আমরা নিজেদের জন্যও আল্লাহ্‌র দরবারে প্রার্থনা করি , আল্লাহ্‌ যেনো আমাদের সঠিক রাস্তায় অবিচল রাখেন , গামেদি সাহেবের জন্যও একই দোয়া করি। আল্লাহ্‌ যেনো তাকে রাসূল সাঃ এর দেখানো পথ ও সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ অনুসরণ করে চলে তাওফিক দান করেন।

Facebook Comments

Previous Post

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি—প্রথম পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | ভাষান্তর: হুজাইফা মাহমুদ

Next Post

এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

আনাস চৌধুরী

আনাস চৌধুরী

আনাস চৌধুরীর জন্ম ১৯৯৭ সালে, হবিগঞ্জ সদরে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়ায়। পরে দারুল উলুম দেওবন্দে অধ্যয়ন করেছেন। বর্তমানে শিক্ষকতা করছেন দারুল ইরশাদ হবিগঞ্জ এ। পাশাপাশি দীন ও শরিয়া বিষয়ে লেখালেখি ও আলোচনা করেন। আজম হাশেমীর বহুল পঠিত 'বোখারা সামারকন্দের রক্তাক্ত স্মৃতি' বইটি তিনি উর্দু থেকে আরবীতে অনুবাদ করেছেন, যা মদীনা মুনাওয়ারা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

Related Posts

এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।
কুরআন

এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

November 28, 2022
কুরআন

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি—প্রথম পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | ভাষান্তর: হুজাইফা মাহমুদ

November 12, 2022
Next Post
এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

No Result
View All Result

Recent.

তাসাউফ সম্পর্কে অপপ্রচার ও ভ্রান্তি : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা ।। মাওলানা আনাস চৌধুরী

December 16, 2022
এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

এই পৃথিবী একবার পায় তারে। সাবের চৌধুরী।

November 28, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি | শেষ পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | তরজমা: হুজাইফা মাহমুদ

November 16, 2022

গামেদি চিন্তার মৌলিক ভ্রান্তি—প্রথম পর্ব | মূল: মাওলানা ইয়াহয়া নোমানি | ভাষান্তর: হুজাইফা মাহমুদ

November 12, 2022
বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

বাংলাদেশে ইসলামি নারীবাদের সাতকাহন | হুজাইফা মাহমুদ

October 29, 2022

  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

No Result
View All Result
  • মূল পাতা
  • কুরআন
  • হাদীস
  • আকীদা
  • ফিকহ
  • ইবাদাত
  • সীরাত
  • তত্ত্ব ও পর্যালোচনা
  • চিন্তা ও মতবাদ
  • দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বিজ্ঞান ও আধুনিকতা
  • অন্যান্য
    • নারী, শিশু, পরিবার
    • সুন্নত ও বিদআত
    • জিহাদ
    • রাজনীতি
    • আইন ও সংবিধান
    • শিক্ষা
    • প্রাচ্যবাদ
    • ইতিহাস
    • বিয়ে ও দাম্পত্য
    • ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার
    • শিল্প-সাহিত্য
    • গ্রন্থ-আলোচনা
    • আরবি ব্যাকরণ
    • উর্দু ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • পিডিএফ
    • নির্বাচিত লেখক-পরিচিতি
    • গুরুত্বপূর্ণ লিংক ও সাইটসমূহ

© 2020 রিওয়ায়াহ - Developed by Tijarah IT Limited.