বেশকিছু দিন আগে শাকিলুর রহমান শাকিল নামে একজন কুরআনুল কারীমের ব্যাপারে বেশ কিছু আপত্তি উঠিয়ে বেশ বড় একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। ভার্চুয়ালের স্বাধীন জগতে কত তালের মানুষ যে আছে। সে হিসেবে এটা কানে নেওয়ার কোন কারণ ছিল না। কিন্তু আমি ভাবিত হযেছি দুটো কারণে–
১. তার উপস্থাপন ভঙ্গি। এতে কিছু বিষয় লক্ষণীয়–
–ঝরঝরে, মনোরম ও আকর্ষণীয় গদ্যভঙ্গি।
–বিভিন্ন তথ্যকে আংশিকভাবে উপস্থাপন করে পাঠককে ধোকা দেওয়া।
–বিভিন্ন বক্তব্যকে ভুলভাবে ভুল ব্যাখায় উপস্থাপন।
–কিছু নিজের মনগড় অসত্য বক্তব্যকে সত্য বলে উপস্থাপন।
–বিভিন্ন তথ্য ও বক্তব্যকে রদবদল করে বিকৃতভাবে উপস্থাপন।
এমন চতুরতার সাথে তিনি মিথ্যা ও বানোয়াট কথাগুলোকে উপস্থাপন করেছিলেন, এবং গ্রহণযোগ্য বড় বড় কিতাবের রেফারেন্সগুলো এমন নিপুন চাতুর্যের সাথে ভুলভাবে ব্যবহার করেছিলেন যে, বাহ্যিকভাবে মনে হবে অত্যন্ত মজবুত ও দালিলিক একটি আলোচনা। সাধারণ যে কোন মানুষ টাসকি খেয়ে ভাবনায় পড়ে যাবে।
২. দ্বিতীয় কারণ ছিল তার সে পোস্টে প্রচুর লাইক ও কমেন্ট এবং সম্ভবত শেয়ারও ছিল বেশ।
জানি, শাকিলের মত যারা গর্বের সাথে নিজের নাস্তিকতা বলে বেড়ান, তাদেরকে দালিলিক আলোচনা দিযে ফিরানো সম্ভব নয়। অতএব শাকিল নয়; আমার উদ্দেশ্য হলো তার লেখাটি যাদেরকে আঘাত করেছে তারা।
দুই.
শাকিলুর রহমান শাকিল কুরআনুল কারীমের ব্যাপারে যে আপত্তিগুলো উঠিয়েছেন তা বেশ বিস্তৃত এবং অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সঠিক উৎস থেকে সঠিক জবাবটি না জানলে সাধারণ যে কেউ বিভ্রান্ত হতে পারে। নমুনাস্বরূপ এখানে একটি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করছি।
তার একটি প্রশ্ন ছিল : কুরআনুল কারীম অবিকৃতই যদি হয় তাহলে আয়াত সংখ্যা নিয়ে এতো মতপার্থক্য কেন?
এই প্রশ্নের পর কেউ যদি তালাশ করেন, তাহলে দেখতে পাবেন, ইসলামিক অথেনটিক সোর্সগুলোতে আসলেই আয়াত সংখ্যা নিয়ে শুরুর যুগ থেকেই উলামায়ে কেরামের মাঝে বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। তখন তিনি দ্বিধায় পড়ে যাবেন। যেহেতু এর হাকীকত তলিয়ে দেখার সুযোগ তার নেই। এটা হলো মুশকিলের জায়গা।
তো, উত্তর দেওয়ার আগে একটা ফার্সি কবিতা শুনাই। কবিতাটি এমন– নীমে তাবিবে খাতরায়ে জান। নীমে মোল্লা খাতরায়ে ঈমান।
এর অর্থ হল– আধা ডাক্তার রুগির জানের জন্য ক্ষতিকর। আর আধা মোল্রা মানুষের ঈমানের জন্য ক্ষতিকর।
কুরআনুল কারীমের আয়াতের সংখ্যাগত মতপার্থক্যের কারণে যারা এ আপত্তি উঠিয়েছেন তারা অনেকটা এই আধা মোল্রা ক্যাটাগরির। তারা এ ব্যাপারটির একটু জেনেছেন। সবটা জানেন নি। নিজের জানা অংশটিকে নিজের মত করে বুঝে নিয়েছেন।
আসল ব্যাপার কি?
এটা বুঝতে হলে আমাদেরকে আগে বুঝতে হবে আয়াত মানে কি?
আয়াত হল কুরআনুল কারীমের বক্তব্যে কিছুক্ষণ পর পর সুনির্দিষ্ট বিরতি।
এরকম আয়াত সংখ্যা কতটি এ নিয়ে শুরুর কাল থেকেই মতভিন্নতা আছে। নানারকম মত পাওয়া যায়। যেমন–
মাদানী গণনায় ৬২১৭,
দ্বিতীয় মাদানী গণনায়৬২১৪/৬২১০,
মাক্কী গণনায়–৬২১৯,
শামী গণনায়–৬২২৬,
বসরী গণনায়–৬২০৪,
কুফী গণনায়–৬২৩৬ ইত্যাদি।
যারা এ মতপার্থক্যের কারণে কুরআনুল কারীমের সংরক্ষণের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে আপত্তি ওঠান, তারা পরিস্কার জেনে রাখেন, এ মতভিন্নতা শুধু আয়াতের সংখ্যা নিয়েই; কুরআনুল কারীমের বক্তব্যের পরিমাণের কম–বেশি নিয়ে নয়। বরং সকল যুগেই সবাই এ ব্যাপারে একমত–বক্তব্যের পরিমাণ একই। এখানে কোন কমবেশ নেই।এ মতভিন্নতার ধরণটা এমন– কেউ বলছেন এ সূরায় এই এই জায়গায় বিরতি হবে। কেউ বলছেন অমুক অমুক জাযগায হবে ঠিক আছে কিন্তু এ জাযগাটিতে কোন বিরতি নাই। তাহলে মূল ট্যাক্স কী পরিমাণ এ ব্যাপারে দুদলই একমত। মতভিন্নতা হলো এখানে বিরতি হবে কি হবে না এ নিয়ে। আপনিই বলুন এ মতপার্থক্য কি কুরআনুল কারীমের বক্তব্যের মাঝে কোন রূপ কমবেশি হওয়ার দিকে নির্দেশ করে?একটা উদাহরন দেই–
সূরা ইখলাস। কুফি, বসরী ও মাদানী গণনা অনুযায়ী এর আয়াত সংখ্যা হল ৪.
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (1) اللَّهُ الصَّمَدُ (2) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (3) وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ (4)
কিন্তু মাক্কী ও শামী গণনা অনুযায়ী এর আয়াত সংখ্যা হল ৫. এরকম–
(5)قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (1) اللَّهُ الصَّمَدُ (2) لَمْ يَلِدْ (3) وَلَمْ يُولَدْ (4) وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
ভাই মুহসিন, একটু খেয়াল করে দেখেন তো, আয়াতের সংখ্যা নিয়ে মতপার্থক্য হলেও মূল বক্তব্যের মধ্যে কি কোন হেরফের হয়েছে?
এ উদাহরণ আমি নিজে থেকে বানিয়ে দিই নি; মতপার্থক্যপূর্ণ বাস্তব একটি উদাহরণ দিলাম।
তাহলে এ মতপার্থক্য দ্বারা কুরআনুল কারীমের সংরক্ষণের বিশুদ্ধতার উপর আপত্তি তোলাটা কতটুকু জ্ঞান ও বুদ্ধির পরিচয়?
(সংখ্যাগত মতপার্থক্যের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পড়ুন– ঢাকা থেকে প্রকাশিত মাসিক আল কাউসারের কুরআনুল কারীম সংখ্যায় মাও. আবদুল মালেক সাহেবের দীর্ঘ আলোচনা। )
ভাই কুরআনের আয়াতের রেফারেন্সের টেক্সটগুলা উল্টো দেখাচ্ছে। দয়া করে ফরম্যাট ক্লিন করে সঠিক ফন্ট এপ্লাই করে পোস্টটি এডিট করুন।
শুকরিয়া। এখন সঠিক দেখাবে।