বিভিন্ন প্রয়োজনের সময় আমরা আরবিতে যে কথাগুলো বলি, এগুলোর মর্ম ও এর ব্যপ্তির পরিমাণটি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ দিয় বক্তব্যটি আমি পরিস্কার করছি।
দেখুন,
আরবিতে বলা আমাদের কথাগুলো দু রকমের হয়–
হয়তো এগুলোতে কোন ফে’ল বা ক্রিয়া থাকবে, অথবা কথাটি ক্রিয়াহীন হবে।
১.
ক্রিয়াহীন বাক্য; যেমন বললাম : محمود جالس : মাহমুদ উপবিষ্ট।
বাক্যটি শুধু সংবাদ দিচ্ছে— উপবেশনের বিষয়টি মাহমুদের সাথে সম্পৃক্ত। ব্যাস্, এটুকুই। এবার তার উপবেশনের ব্যাপারটি ধারাবাহিক চলমান ছিল? বা সে কি পরবর্তিতেও বার বার উপবিষ্ট হয়েছে? —এরকম কোন মর্ম এই বাক্য থেকে উদ্ধার হয় না। প্রতিটি ক্রিয়াহীন বাক্যই এমন—শুধু একটি বিষয়ের সাথে আরেকটি বিষয়কে যুক্ত করে।
= এই যে একটি বিষয়কে আরেকটি বিষয়ের জন্য শুধুমাত্র প্রমাণিত বা যুক্ত করা—আরবিতে একে বলা হয় : ثبوت (প্রমাণিত হওয়া)
২.
ফে’ল বা ক্রিয়াযুক্ত বাক্য; যেমন বললাম :
١. اكل محمود.
٢. ياكل محمود.
٣. كل.
মাহমুদ খেয়েছে/মাহমুদ খাচ্ছে/মাহমুদ খাবে/ মাহমুদ খাও। এখানে চারটি বাক্য রয়েছে।
> প্রথমটি বোঝাচ্ছে অতীতে নির্দিষ্ট একটি সময়ে মাহমুদের খাওয়ার কাণ্ডটি ঘটেছে।
> দ্বিতীয়টি বোঝাচ্ছে মাহমুদের খাওয়ার ঘটনাটি বর্তমান কালে ঘটছে।
> তৃতীয় বাক্যটি বোঝাচ্ছে মাহমুদের খাওয়ার ঘটনাটি ভবিষ্যতকালে ঘটবে।
> চতুর্থ বাক্যটি বোঝাচ্ছে ভবিষ্যতকালে খাওয়ার কাজটি সংঘটিত করার জন্য মাহমুদের কাছে কামনা করা হচ্ছে।
এটুকুই। এর বাইরে অতীতে/বর্তমানে/ভবিষ্যতে খাওয়ার কাজটি ধারাবাহিক চলমান কিনা—এই মর্ম এখান থেকে নেওয়া যাচ্ছে না।
আবার, সেই বারের খাওয়ার ঘটনাটি ধারবাহিকভাবে চলমান না হলেও, অন্তত ঘটনাটি বার বার সংঘটিত কিনা তা-ও বুঝে আসছে না। সবগুলো ক্রিয়াযুক্ত বাক্যই এমন—শুধু কোন এক কালে কাজটির সংঘটনকে বুঝায়। আর,
= এই যে একটি ঘটনা কোন সময়ের মধ্যে শুধু সংঘটিত হওয়া, একে আরবিতে বলা হয় : حدوث (সংঘটিত হওয়া)।
আরবি বাক্যগুলোকে অবশ্য প্রাথমিকভাবে ভাগ করা হয় এভাবে—আরবি বাক্য দুই প্রকার :
১. যে বাক্যের শুরুতে ইসম আছে। একে বলা হয় : الجملة الاسمية বা ইসমপ্রধান বাক্য।
যেমন, زيد عالم
২. যে বাক্যের শুরুতে ফে’ল বা ক্রিয়া আছে। একে বলা হয় : الجملة الفعلية বা ফে’লপ্রধান বাক্য।
যেমন, قام زيد
এভাবে ভাগ করলেও তদন্ত করলে দেখা যাবে শেষ পর্যন্ত আসলে ভাগ সেটাই, যা আমরা শুরুতে বলেছি—অর্থাৎ, فعل –যুক্ত অথবা فعل মুক্ত।
কীভাবে দেখুন—
যেমন, جملة اسمية এর প্রথম অংশকে বলা হয় مبتداء আর দ্বিতীয় অংশকে বলা হয় خبر . একটি মুবতাদার খবর সর্বমোট চার রকমের হতে পারে—
ক. الفعل الماضي ( محمود قام )
খ. الفعل المضارع
গ. পরিপূর্ণ একটি جملة اسمية
খ. مفرد. (অর্থাৎ, ফেল বা জুমলা না হওয়া)
লক্ষ্য করে দেখুন,
প্রথম দুই প্রকারে فعل এর উপস্থিতি রয়েছে। সুতরাং, এই جملة اسمية দুটো শুধু حدوث বুঝাবে। যেমনটি পেছনে বলা হয়েছে। আর, শেষ দুই প্রকার হলো ক্রিয়াহীন বাক্য, তাই এ দুটো جملة اسمية শুধু ثبوت বোঝাবে।
অপরদিকে, একটি جملة فعلية মোট তিন রকমের হতে পার—হয়তো فعل টি
ক. ماضي.
খ. مضار.
গ. أمر.
তিনো প্রকারই যেহেতু فعل বা ক্রিয়াযুক্ত, তাই এগুলো শুধু حدوث –ই বুঝাবে।
এই যে, جملة اسمية-র ফে’লহীন প্রথম দুই প্রকার শুধু সম্পৃক্ততার অর্থটি বুঝায়; সম্পৃক্ততাটি ধারাবাহিকভাবে চলমান কিনা এ ব্যাপারে কিছুই বলে না—অনেক সময় শুধু এটুকু দিয়ে আমাদের কাজ হয় না। বিশেষ প্রয়োজনে আমরা একটি বিষয়ের সাথে আরেকটি বিষয়ের সম্পৃক্ততার চলমানতাকেও বোঝাতে চাই।
যেমন মাহমুদের প্রশংসা করে আমি বললাম : محمود شريف – মাহমুদ একজন ভদ্র মানুষ। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী এ বাক্যটি শুধু এটুকু বোঝায় যে, ভদ্রতার ব্যাপারটি রাশেদেরে সাথে সম্পৃক্ত; কিন্তু, এটি পরবর্তীতেও রাশেদের সাথে ধারাবাহিকভাবে যুক্ত আছে কিনা— এটা এ বাক্যের বিষয় না এবং এ থেকে তা বুঝেও আসে না।
কিন্তু,
লক্ষ্য করে দেখুন, এর দ্বারা কিন্তু মাহমুদের প্রশংসাটি পূর্ণ হলো না। পূর্ণ প্রশংসা তখনই হবে, যখন আমি বুঝাবো— মাহমুদ অতীতে ভদ্র ছিল এবং পরবর্তীতেও ভদ্রতার বিষয়টি তার সাথে ধারাবাহিকভাবে যুক্ত আছে।
মুশকিল হলো—
বাক্য তো এরকম বোঝাচ্ছে না। এটা খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার হলো। শুধু মাহমুদের বেলায় নয়; ফে’লহীন বাক্য দিয়ে যেখানেই আমি প্রশংসা করতে যাবো, প্রশংসাটি বিলকুল অসম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
এ জন্য বাধ্য হয়ে মানুষ ধরে নিয়েছে–যে সকল জায়গায় বোঝা যাবে যে এখানে অর্থের মধ্যে চলমানতার বিষয়টি না থাকলে অর্থ অসম্পূর্ণ হয়, সেখানেই চলমানতাকে ধরে নিতে হবে। এরকম জায়গাগুলোর অন্যতম হলো প্রশংসার স্থানগুলো, এই একই কারণে নিন্দার জায়গাগুলোও।
=এই যে, সম্পৃক্ততার চলমানতা ও ধারাবাহিকতা—একেই আরবিতে বলা হয় : استمرار বা دوام.
সুতরাং, আমরা নিয়মের মত করে বলতে পারি— ক্রিয়াহীন جملة اسمية সাভাবিকভাবে শুধু ثبوت এর অর্থ দিবে, কিন্তু, বিশেষ বিশেষ জায়গায় আলামতের ভিত্তিতে, استمرار ء বা دوام এর অর্থ দিবে। আর, অন্যতম দুটো আলামত হলো প্রশংসা বা নিন্দা।
এমনিভাবে,
ক্রিয়াযুক্ত বাক্যগুলো কোন এক সময়ে শুধু কাজটি সংঘটিত হওয়া বুঝায়; পরবর্তীতে কাজটি ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন করে বার বার সংঘটিত হয় কিনা—এরকম কিছু বোঝায় না।
কিন্তু, বাস্তবতা হলো শুধু সংঘটিত হওয়ার সংবাদটি দিয়ে আমাদের সবসময় চলে না। কখনো ধারাবাহিকভাবে বার বার সংঘটিত হওয়ার বিষয়টিও বুঝাতে হয়।
যেমন আমি মাহমুদের প্রশংসা করে বললাম : يعطني محمود الطعام – মাহমুদ আমাকে খাবার দিচ্ছে বা দিবে। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী বাক্যটি বোঝায় যে, মাহমুদের খাবার দেওয়ার কাজটি বর্তমানকালে সংঘটিত হচ্ছে বা ভবিষ্যতকালে হবে। এরপর কাজটি কি বার বার সংঘটিত হবে? এ বাক্য সেরকম কোন সংবাদ দেয় না।
কিন্তু,
এ অর্থ দ্বারা তো প্রশংসাটি ঠিকঠাক হলো না। পূর্ণ প্রশংসা তখনই হবে, যখন বোঝাবো যে, মাহমুদ আমাকে বার বার খাবার দেয়। এখানেও একই সমস্যা—বাক্যের স্বাভাবিক অর্থ প্রশংসাকে পূর্ণ হতে দিচ্ছে না। কী করার?
কোন পথ না পেয়ে মানুষ সবাই মিলে ভাষিক আইন পাশ করলো—যেখানে কর্মটি বারংবার ঘটার বিষয়টি না ধরলে অর্থ অসম্পূর্ণ হয়, সেখানে বারংবার এর অর্থ ধরতে হবে। এরকম জায়গাগুলোর অন্যতম হলো প্রশংসা বা নিন্দা।
=এই যে কোন কাজ বারংবার সংঘটিত হওয়া আরবিতে এক বলা হয় : تجدد.
সুতরাং,
আমরা নিয়মের মত করে এখানেও বলতে পারি— ক্রিয়াযুক্ত বাক্যগুলো স্বাভাবিকভাবে শুধুমাত্র حُدُوْث এর অর্থ প্রদান করবে, কিন্তু, বিশেষ বিশেষ জায়গায় আলামতের ভিত্তিতে تجدد এর অর্থও দিবে। আর, অন্যতম দুটো আলামত হলো প্রশংসা বা নিন্দা।
লক্ষ্য করলে সহজেই ধরতে পারবেন فعل ماضي থেকে تجدد এর অর্থ নেওয়ার কোন সুযোগই নেই। কারণ, এর সম্পর্ক হলো অতীতের সাথে। আর অতীত তো অতীত। সেখানে বারংবার সংঘটিত হবে কীভাবে? تجدد এর অর্থ নেওয়া যাবে فعل مضارع থেকে। এবং সে সময় স্বভাবতই “দিচ্ছে বা দিবে”—এরকম করে অর্থ নেওয়ার কোন সুযোগই নেই আসলে।
অর্থ করতে হবে— দেয়।
আর, أمر – نهي থেকেও কি এ সুবিধা নেওয়া যায়? এটা আরেকদিন আলোচনার ইচ্ছে রইল।