হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসের শিকার ভারতীয় মুসলমান ~ স্বরূপ ও নেপথ্য কারণ

ভারতীয় মুসলিমদের উপর হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাস ও আগ্রাসন দিন দিন বেড়েই চলছে। বিশেষত গত দেড় দশকে দেখা যাচ্ছে, ভারত সরকার, আইন-আদালত, পুলিশ, রাজনৈতিক দল ও গনমানুষ সবাই কেমন যেনো একমত হয়েগেছে এ ব্যাপারে।

মুসলিমরা কী ধরণের নীপিড়নের শিকার হচ্ছেন? হিন্দুত্ববাদি আগ্রসনের উপর সামগ্রিক দৃষ্টি দিলে আমরা দেখব, সম্প্রদায় হিসেবে মুসলিমদের সেখানে চিত্রিত করা হচ্ছে, দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে। তাদেরকে বহিরাগত, অনুপ্রবেশকারি, পাকিস্তানের দালাল বা সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

এভাবে হেয় ও ‘অপরাধী’ সাব্যস্ত করার পাশাপাশি মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও প্রোপাগাণ্ডাও করা হয় নিয়মিত। যেমন, মুসলিম শাসকরা যুগের পর যুগ হিন্দুদের উপর জুলুম করেছেন। তাদের সম্পদ লুন্ঠন, মন্দির ভেঙ্গে ফেলার মত কাজ ছিল শাসকদের অন্যতম কাজ। কিংবা কখনো বলা হচ্ছে, বর্তমান মুসলিমরা হিন্দুদের অধিকার বঞ্চিত করছে। ব্যবসা তাদের দখলে, সরকারি চাকরী ও রাষ্ট্রীয় নানা সুবিধাও তারা এককভাবে গ্রহণ করছে। তাদের জনসংখ্যা অনেক বাড়ছে, একসময় ভারত দখল করে নিবে ইত্যাদি।

মসজিদ মাদ্রাসাও নিরাপদ নেই ভারতে। (১৯৪৭ সালে গঠিত) ‘ভারত সরকার’ থেকে অনুমতি নেয়া হয়নি, এমন অজুহাতে সাতশো আটশো বছরের মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। যখন তখন দাবী করা হচ্ছে, এই মসজিদের নীচে মূর্তি আছে, কিংবা ঐ মসজিদটি মন্দির ভেঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছিল। তারপর সেই দাবীকে কেন্দ্র করে আদালত সরকার পুলিশ ও হিন্দু জনতা মিলে দাঙ্গা সৃষ্টি করে। পরিণতিতে মুসলিমদের হত্যা ও কারাবন্দি করা হয়। এই ঘৃণ্য কায়দায় ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ শহীদ করা হয়েছে। গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আরো ৩০০০ মসজিদ শহীদ করার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে হিন্দু মহাসভা। (আরাবপোস্ট) ২০২৪ সালের নভেম্বরে সাম্ভালের শাহী মসজিদকে ঘিরে যে সহিংসতা দেখিয়েছে ভারতীয় পুলিশ ও হিন্দুত্ববাদীরা, যেখানে ৭জন মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে, তা এই নীল নকশারই অংশ। ২০১৮ সালে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ দিল্লির প্রাচীন মসজিদগুলোর উপর একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেছিল। এতে দেখানো হয়েছে ‘প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণ আইনের’ অযুহাতে ৭৪ টি মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪টি মসজিদ অবশিষ্ট আছে। বাকীগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে অথবা একেবারে গায়েব করে দেয়া হয়েছে!

মুসলিমদের স্বকীয় জাতি-স্বত্ত্বার রক্ষাকবচ, ঈমান ইসলামের দূর্গ খ্যাত দীনি মাদ্রাসাও ভারত সরকারের অন্যায় হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত নয়। কোন ধরণের প্রমাণ ছাড়াই মাদ্রাসাগুলোকে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমে’ অভিযুক্ত করা হয়। দেয়া হয় নানান হুমকি। শুধু তাই নয়, আসামে সরকারী ৭০০ মাদ্রাসা বন্ধ করে সাধারণ স্কুলে রূপান্তর করা হয়েছে। ১লা জানুয়ারি ২০২৪ সালে সেখানকার উগ্রহিন্দুত্ববাদি মূখ্যমন্ত্রী আরো ১০০০ সরকারি মাদ্রাসা বন্ধ করার ঘোষনা দিয়েছেন। যদিও হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের ধর্মীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সংস্কৃত কেন্দ্র’গুলো বহাল আছে। শুধু একারণে যে এগুলো হিন্দুদের। (ঢাকাপোস্ট) উত্তরপ্রদেশ, যেখানে সবচে বেশি মুসলিমদের বসবাস এবং বড় বড় মাদ্রাসাও সেখানেই, এলাহাবাদের এক কোর্ট ২০২৪ সালের মার্চে সরকারি ও বেসরকারি সকল মাদ্রাসা বন্ধের রীট জারি করেছিল। যদিও হাইকোর্ট এটি খারিজ করে দেয়, তবে হিন্দুত্ববাদ যে মুসলিমদের অস্তিত্বকে ভারত থেকে মুছে দিতে মরিয়া ও ততপর এ থেকে এটি সহজেই অনুমেয়।

পথে ঘাটে ট্রেনে গাড়িতে অফিসে আদালতে যখন তখন মুসলিমদের উপর হামলার সংবাদ এমনকি ভিডিও ফুটেজ প্রায় প্রতিদিন মানুষের সামনে আসছে। কেন তাদের উপর হামলা করছে হিন্দুত্ববাদিরা? কারণ তাদেরকে হিন্দু স্লোগান, ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করা হয়েছে, কিন্তু ইসলামি বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তারা এই স্লোগান দিতে পারেন না। উগ্রবাদিরা কখনও হামলে পড়ছে, কারণ তাদের কাছে ‘হয়তো’ গরুর গোশত থাকতে পারে। ২০১৯ এর শুরুর দিকে ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে ২০১৫ সালের মে থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৬ জন মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে গরু ও গরুর গোশতের অভিযোগে। (আমার দেশ, ১৮ মার্চ, ২০২৫) ড। যফারুল ইসলাম খানের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, উগ্রবাদি হিন্দুদের হাতে ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এমন বিচারবহির্ভূত নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন ১৪৭ জন মুসলিম।

সরকারি চাকরিতে মুসলিমরা কী ধরণের বৈষম্যের শিকার হয়েছেন তার চিত্র উঠে এসেছে ‘সাচর কমিটির রিপোর্টে’। যেখানে মুসলিমরা ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৪%, অথচ সরকারি চাকরিতে তাদের প্রতিনিধিত্ব মাত্র ২-৩%! এই কমিটি মুসলিমদের জন্য ১০% কোটা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করলেও সরকার কার্যত কোন পদক্ষেপ নেয় নি। (ড। যাফারুল ইসলাম খান, হারাকাতুল ক্বাওমিয়া আল হিন্দুসিয়া)

আইনিভাবে মুসলিমদের হয়রানি ও নীপিড়নের ঘটনাও কম না। শুধু ২০১৯ সালেই ভারত সরকার মুসলিম বিরোধী তিনটি আইন পাশ করেছিল। সেগুলো হচ্ছে, NRC (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি, যার ফলে আসামের প্রায় বিশ লাখ মুসলিমের নাগরিকত্ব হারানোর আশনঙ্কা তৈরি হয়েছে। CAA (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-২০১৯) যেখানে ছয় ধর্মের (হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ, পারসি, জৈন) অভিবাসিদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়ার কথা থাকলেও মুসলিমদের বাদ দেয়া হয়েছে, বিশেষ উদ্দেশ্যে। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়েছে।

আইনিভাবে মুসলিমদের ধরাশায়ি করার মহড়া থেমে নেই। হিন্দুত্ববাদি বিজেপি সরকার গত বছর আগস্টে ‘ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল-২০২৫ পেশ করেছিল। এ বছর এপ্রিলের শুরুতে মুসলিমদের ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারতীয় সংসদের নিম্ন (লোকসভা) ও উচ্চ কক্ষ (রাজ্যসভা) আইনটি পাশ করেছে। লোকসভায় এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন ২৮৮জন এমপি। কংগ্রেস সমাজবাদি দলসহ বিরোধি জোট বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ২৩২টি।রাজ্যসভায় ১২৮ জন পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিপক্ষে ভোটের সংখ্যা ৯৫টি।চরম তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে সংসদের দুই কক্ষে বিলটি পাশ হওয়ার পর ৫ই এপ্রিল ভারতের রাষ্ট্রপতিও এটি অনুমোদন করেছেন। ফলে বিতর্কিত বিলটি এখন পরিণত হয়েছে ভারতের বিধিবদ্ধ আইনে। 

নতুন পাশ হওয়া আইনটি ভারতীয় মুসলিমদের জন্য ভয়ংকর বিপদজনক। একে ব্যবহার করে ভারতীয় মুসলিমদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলতে পারে হিন্দুত্ববাদি মোদি-আদিত্যনাথের প্রশাসন। এটি অসংবিধানিক, বৈষম্যমূলক ও মুসলিমদের জন্য অপমানকর। শুরু থেকেই এর স্পর্শকাতরতা অনুভব করেছেন ভারতের সকল ঘরাণার আলেম, রাজনীতিবিদ, আইনজিবি ও সকল শ্রেণি পেশার মুসলিম নাগরিকগন। মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ, জামাতে ইসলামি, ওয়াকফ বোর্ড সম্মিলিত ও স্বতন্ত্রভাবে আইনটি রদ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। ১৭ মার্চ দিল্লির জন্তর মন্তরে ‘মহাধর্ণা’ ছিল এরই একটি অংশ। 

প্রথম কথা হচ্ছে, প্রতিনিধিত্বশীল মুসলিম নেতৃবৃ্ন্দ বা তাদের সংগঠনের সাথে আলাপ আলোচনা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে হিন্দুত্ববাদি বিজেপি সরকার যে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন-২৫ প্রণয়ন করে ফেলল, এর পেছনে কী তাদের যুক্তি কী? যে কয়েকটি কারণ দেখিয়েছে, তার একটি হচ্ছে, এই আইনের মাধ্যমে তারা বঞ্চিত মুসলিম, যেমন নারী, এতীম-অনাথদের স্বার্থ রক্ষা করতে চায়। 

কিন্তু কথা হল, দিনে দুপুরে ঠাণ্ডা মাথায় মুসলিমদের হত্যা করে যে বিজেপি সরকার, বুল্ডোজার দিয়ে যখন তখন মুসলিমদের ঘরবাড়ি দোকানপাট গুড়িয়ে দেয় যে আদিত্যনাথ ও তার হিন্দুত্ববাদি বাহিনী, কথায় কথায় মুসলিমদের ‘দালাল’ ‘বহিরাগত’ আখ্যা দেয় যারা, তাদের মুখে আইন করে মুসলিমদের অর্থনৈতিক ‘উন্নয়ন’ করতে চাওয়া কতটা হাস্যকর এবং উপহাসমূলক, তা বলাবাহুল্য। 

দ্বিতীয়ত, ভারতের সংবিধানের ১৪তম ধারায় যেখানে বলা হয়েছে, আইনের বিচারে সকল নাগরিক সমান গণ্য হবে, কিন্তু আইনে মুসলিমদের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে অনেক গুলো ক্ষেত্রে। যেমন, ওয়াকফ বোর্ডে কমপক্ষে দুই জন অমুসলিমকে অন্তর্ভূক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অথচ হিন্দু ও শিখদের ‘ওয়াকফ’ এ শুধু হিন্দু ও শিখরাই বোর্ডের সদস্য হতে পারে। 

তৃতীয়ত, ওয়াকফ মুসলিমদের একটি ধর্মীয় বিধান। সংবিধানের ২৫ ও ২৬ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক মুসলিমের অধিকার আছে স্বাধীনভাবে ধর্মীয় বিধান পালন করা। কিন্তু ওয়াকফ (সংশোধনি) বিল-২০২৫ মুসলিমদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতাকে চরম ভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে। যেমন, ইসলামি বিধান মতে, যেকোন মুসলিম যখন ইচ্ছা ওয়াকফ করতে পারে। অথচ নতুন আইনে বলা হচ্ছে, নতুন ইসলাম গ্রহণ কারি কোন ব্যক্তি ওয়াকফ করতে চাইলে তাকে কমপক্ষে পাঁচ বছর যাবত পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলাম পালন করতে হবে! এমনিভাবে কোন ব্যক্তি চাইলে তার সন্তান ও অন্যান্য আত্মীয়দের জন্যও ওয়াকফ করতে পারে। কিন্তু নতুন আইনে এক্ষেত্রে শরীয়তে অগ্রহণযোগ্য অনেক শর্ত যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। 

এ আইনের সবচে ভয়ংকর দিকটি হচ্ছে, একে হাতিয়ার বানিয়ে মুসলিমদের লাখ লাখ ওয়াকফ সম্পত্তি, যেমন মসজিদ কবরস্থান মাদ্রাসা খানকা ইত্যাদি জবরদখল করার যথেষ্ট আশঙ্কা আছে। এটা শুধু আশঙ্কার কথা নয়, সবচে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি যেখানে, সেই উত্তরপ্রদেশে ইতিমধ্যে সার্ভের কাজ শুরু হয়েগেছে। হিন্দুত্ববাদি সরকার ও প্রশাসন কিভাবে এটি করবে? নতুন আইনে অনেকগুলো সুযোগ এ উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। 

এর মধ্যে একটি দিক হল, ‘ব্যবহার সূত্রে ওয়াকফ’কে রহিত করা হয়েছে। ভারতের গ্রামে গঞ্জে অগণিত ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে, যেগুলো সার্ভের সময় ‘সরকারি জমি’ হিসেবে নথিভূক্ত করা হয়েছে। দলীল দস্তাবেজ দেখাতে না পারলে এগুলো পরম্পরা সূত্রে ওয়াকফ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও যেকোন সময় সরকার নিয়ে নিতে পারে। কারণ এগুলো এখন বিবাদমান সম্পত্তিতে পরিণত হয়েগেছে। আর এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত দিবে স্থানীয় সরকারি অফিসার। যারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদি ও মুসলিম বিদ্বেষী। তাছাড়া হিন্দুরা যে কোন মসজিদের ব্যাপারে মন্দির হওয়ার দাবী করছে অহরহ। তাদের কাছে এমন তিন হাজারের বেশি মসজিদের তালিকা রয়েছে। এগুলোও দখল করার রাস্তা সহজ হয়ে গেল এই আইনের মাধ্যমে। অথচ অমুসলিমদের জন্য ‘ব্যবহার সূত্রে ‘ওয়াকফ’কে বহাল রাখা হয়েছে। 

১৯৯৫ সনের আইনে ওয়াকফকে ‘লেমিটেশন এক্ট’ থেকে বহির্ভূত রাখা হয়েছিল। নতুন আইনে অন্তর্ভূক্ত করে দেয়া হয়েছে। ফলে কেউ যদি বারো বছর পর্যন্ত ওয়াকফের সম্পদ নিজ দখলে রাখে তাহলে এতে তার মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তি এভাবে দখলে রাখার ঘটনা বিপুল সংখ্যক রয়েছে। এভাবে এই ওয়াকফগুলো ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকল না নতুন আইনের কারণে। তবে হিন্দু বৌদ্ধসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনাগুলোকে ‘লেমিটেশন এক্ট’ থেকে এখনো ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে। 

ভারতে এমন ঘটনা অসংখ্য রয়েছে যেখানে মুসলিম শাসক ও জনসাধারণ হিন্দুদের জন্য জমি দান করেছেন। হিন্দু রাজা ও সাধারণ জনগনও মুসলিমদের জমি দান করেছে, মসজিদ কবরস্থান ইত্যাদির জন্য। কিন্তু ওয়াকফ (সংশোধনি) আইন-২০২৫ করে বলা হল, অমুসলিমরা মুসলিমদের যে জমি দান করেছে এর সবগুলো রহিত হয়ে যাবে। কিভাবে ওয়াকফ সম্পদ গ্রাস করে মুসলিমদের ধর্মীয় পরিচয় ও স্বকীয়তা নিশ্চিহ্ন করা যায়, এজন্য হিন্দুত্ববাদি সরকার আরো অনেক রদবদল করেছে, এবং এক্ষেত্রে তারা ওয়াকফ সম্পর্কে অনেক প্রোপাগাণ্ডাও ছড়াচ্ছে নিয়মিত ও সংঘবদ্ধভাবে।

 এ কয়েক মাসের মাথায় তা কার্যকর করতে বদ্ধ পরিকর। এটি মুসলিমদের লাখ লাখ মসজিদ কবরস্থান ও ওয়াকফকৃত সম্পদ দখল করার রাস্তা তৈরি করে দিবে।

বস্তুত ভারতে মুসলিম নিপীড়ণের আখ্যান অতি দীর্ঘ। কেননা তা বহু মাত্রিক ও বিচিত্র। সংক্ষিপ্ত এ নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই। শুধু চলতি মার্চ মাসে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি শিরোনাম তুলে ধরছি। ১৬ মার্চ জনকন্ঠের শিরোনাম ছিল, ‘ভারতে হোলির রঙ মাখার প্রতিবাদে মুসলিম এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা ও লুটপাটের ঘটনা’। ‘হোলি উতসবের কারণে মুসলিমদের জুমার নামাজ আদায়ে বাধা’ শিরোনামে আলজাযিরা মুবাশিরে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়ে, উত্তরপ্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ বলেছে, ‘প্রতি সপ্তাহে শুক্রবারে জুমার নামাজ পড়া হয়। কিন্তু হোলি উতসব বছর মাত্র একবার আসে। নামাজ পরে পড়া সম্ভব। কেউ যদি জুমার নামাজ পড়তে আগ্রহী হয় সে তার বাড়িতে পড়তে পারে। নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়।‘ মুসলিম আইনজীবি শরফুদ্দীন আহমদ এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছেন, এমন বক্তব্য মূলত গোয়ালকারের দর্শনকে বাস্তবায়ন করার প্রয়াস মাত্র। যিনি মুসলিমদেরকে এদেশের (হিন্দুদের) সমপর্যায়ের নাগরিক মনে করতেন না।‘ তারা মুসলিমদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করে স্যারাণ্ডার করাতে চায়। ‘তোমরা এখন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’ এবার্তাটি দেয়াই তাদের উদ্দেশ্য। ১৩ মার্চ যুগান্তরে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তরপ্রদেশের সাম্ভলে হোলির সময় শান্তি বজায় রাখার নামে ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে রাজ্যটির প্রশাসন। অন্তত ১,০১৫ জনকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে আটক করা হয়েছে এবং প্রায় এক ডজন মসজিদ ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

তার পরের দিন ইনকিলাবের শিরোনাম ছিল, মসজিদের সামনে মুসলমানদের ওপর হামলা ভারতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড়। এতে বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ভারতের একটি মসজিদের সামনে হঠাৎ করেই কট্টর হিন্দুত্ববাদি একটি দল নামাজ পড়ে বের হওয়া মুসল্লিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের মারধর করে আর উচ্চ স্বরে জয় শ্রী রাম বলতে থাকে, তাদের হাতে ছিলো মদের বোতলও… একে চলছে পবিত্র রমজান মাস এর ওপর মুসলিমদের ওপর হিন্দুত্ববাদিদের হামলা সবমিলে যেনো দিশেহারা এখন ভারতীয় মুসলমানরা। কলকাতার দৈনিক পুবের কলম ৬মার্চ শিরোনাম করেছে, লাউডস্পিকারে ইফতারের ঘোষণা, গ্রেফতার ইমামসহ ৯জন।‘

মার্চের  মাঝামাঝি যুগান্তর সমকালসহ অনেকগুলো সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম ছিল, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলা জায়গায় নামাজ পড়ায় ভারতে শিক্ষার্থী গ্রেফতার’

খালেদ মেওয়াতি নামে এক শিক্ষার্থীকে মিরাটের IIMT ইউনিভার্সিটি বহিষ্কার করেছে। তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, এর প্রতিবাদ করার কারণে আরো ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। শুধু মিরাটের এক ঘটনা নয়, দিল্লীর অদূরে অবস্থিত গোরগাও সহ অনেক জায়গাতেই এমন হচ্ছে, যেখানে সরকার মসজিদ নির্মাণ এমনকি মসজিদ সম্প্রসারণেরও অনুমতি দিচ্ছে না। আবার খোলা ময়দানে যে মুসল্লিরা নামাজ পড়বেন, সেখানেও হিন্দুত্ববাদিরা বাধা দিচ্ছে। এমনকি এভাবে নামাজ আদায়কে ঘৃণ্যভাবে আখ্যায়িত করছে ‘ভূমি জিহাদ’ (?) হিসেবে।

এমন সংবাদ প্রতিদিন অনবরত আসছে ভারতের সবজায়গা থেকে। এই হিন্দুত্ববাদি আগ্রাসনের পেছনে কারণ কী? এর উৎস কী? কেনইবা দিন দিন বেড়ে চলছে ভারতীয় মুসলিম নিধন? এর উত্তর  পাওয়ার জন্য বিশেষত দু’জন ব্যক্তি ও তাদের চিন্তার সাথে পরিচিত হতে হবে।

একঃ বিনায়ক দামোদর সাভারকর। তাকে ‘হিন্দুত্ব’ মতবাদের জনক হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯২৩ সালে প্রকাশিত ‘হিন্দুতভা, হু ইজ এ হিন্দু’ বইয়ে ‘হিন্দু’কে ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে ‘জাতিগত ও সাংস্কৃতিক’ পরিচয় হিসেবে দেখিয়েছেন। তার মতে, একজন ‘হিন্দু’র মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। পিতৃভূমি- যিনি ভারতের মাটিকে নিজ জন্মভূমি ও পূর্বপুরুষদের ভূমি হিসেবে বিশ্বাস করেন।  পবিত্রভূমি- যার ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কেন্দ্র ভারতে। তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ও জীবনধারার অনুসারি হতে হবে। এ হিসেবে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখরা ‘হিন্দু’। কিন্তু মুসলিমরা এর ব্যতিক্রম। কারণ তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য সংস্কৃতি আছে। তাদের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র মক্কা মদীনা। শুধু তাই নয়, সাভারকর একটি ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ গঠনের কথা ব্যক্ত করেছেন এই বইয়ে। যা তৈরি হবে হিন্দু জাতিয়তাবাদ ও সংস্কৃতিকে অবলম্বন করে। মুসলিমদের সেখানে অংশগ্রহণ সম্ভব নয় যতক্ষণ না তারা হিন্দু সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে কবুল করে। এই সাভরকর উগ্রবাদি হিন্দুত্ব সংগঠন হিন্দু মহাসভার সভাপতি ছিলেন।

দুইঃ মাধব সদাশিব গোলওয়ালকর (M.S. Golwalkar)  তিনি ১৯৪০ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত আরএসএস এর সভাপতি ছিলেন। ১৯৩৯ সালে তিনি ‘We or Our Nationhood Defined’ (আমরা অথবা আমাদের সংজ্ঞায়িত জাতিয়তা) বইটি প্রকাশ করেন। এটি বিজেপি আরএসএসসহ উগ্রবাদিদের নিকটি ‘পবিত্র’ ও রেফারেন্স গ্রন্থের মর্যাদা রাখে। তিনি গোলওয়ালকারের ‘দর্শন’কে বিষদভাবে ব্যাখ্যা করে আরো খোলাখুলিভাবে উগ্রহিন্দুত্ববাদ ও মুসলিম বিদ্বেষি চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছেন। তার মতে, ভারতের প্রকৃত নাগরিক শুধু হিন্দুরাই। মুসলিম ও খৃষ্টানরা ভারতের জন্য ‘বিপজ্জনক’ বলেও মনে করেন। তার দাবি, তাদেরকে হয় হিন্দু সংস্কৃতি গ্রহণ করতে হবে, নাহলে তারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে থাকবে। কারণ তার মতে রাষ্ট্রের স্থায়ীত্বের জন্য ‘জাতিগত ও সাংস্কৃতিকভাবে একজাতিক’ হওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে তিনি হিটলারের নাতসি বাহিনীর ‘দর্শন ও কর্মপন্থা’কে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে জোর দিয়েছেন।

এ দুই ‘চিন্তক’কে গুরু ও আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার পর ভারতে মুসলিমদের পরিণতি কী হবে, তা আমাদের সামনে স্পষ্ট।

ভারতে মুসলিম নিধন ও নীপিড়নের সাথে ভোট ও রাজনীতির সম্পর্কও গভীর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, যে রাজনৈতিক দল নিজেকে সবচে’ বেশি মুসলিম বিদ্বেষি হিসেবে হাজির করবে ভোটের রাজনীতিতে সেই এগিয়ে থাকবে। আরএসএস-বিজেপির নেতৃত্বে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গাকে তাদের বড় অর্জন হিসেবে দেখা হয়। যে গুজরাট দাঙ্গায় প্রায় তিন হাজার মুসলিমকে খুন করেছে হিন্দুত্ববাদিরা, একেও নিজেদের সাফল্য ও কীর্তি হিসেবে প্রচার করে থাকে। একারণে বিজেপি ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দল, চাই কংগ্রেস হোক বা কমিউনিস্ট, মুসলিম ও মুসলিম স্বার্থ রক্ষা হয় এমন অবস্থান থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। যে কংগ্রেস সম্পর্কে মনে করা হয়, এটি মুসলিম বান্ধব দল, বস্তুত তাদের আমলেই বড় বড় দাঙ্গা হয়েছে।

ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদিরা কিভাবে মুসলিম নীপিড়নকে ব্যবহার করে, এর চারটি ধাপ দেখিয়েছেন জনপ্রিয় আলোচক ধ্রুভ রাঠি। প্রথমে হিন্দুদের বুঝানো হয়, তোমরাই মহান জাতি, শ্রেষ্ঠ। কারণ তোমরা হিন্দু হয়ে জন্ম গ্রহণ করেছো। এভাবে তাদের মধ্যে অহং ও জাত্যাভিমান তৈরি করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে প্রচার করা হয়, তোমরা শত শত বছর যাবত নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছে ‘অপর’ সম্প্রদায়ের (মুসলিম) হাতে। তৃতীয় ধাপে বলা হয়, ‘অপর’ সম্প্রদায়ের কারণে তোমাদের সামনে বিপদ  আছে। সবশেষে জানানো হয়, এখন বিপদ থেকে বাঁচার উপায় একমাত্র মোদী ও তার দল। আরকেউ নয়।

এজন্য নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে ভারতে মুসলিম নিপীড়ন বেড়ে যায় ভয়ংকর মাত্রায়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ভারতে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মার্চ মাসে আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রচারে বেড়িয়ে যে ১৭৩টি বক্তৃতা দিয়েছেন, তার মধ্যে ১১০টিতে ইসলামফোবিক মন্তব্য রয়েছে। (ইনকিলাব, প্রথম আলো)

তাছাড়া এসব বক্তব্য ও নীপিড়নের মধ্য দিয়ে দলীয় দূর্নীতি ও প্রাসনিক ব্যর্থতা খুব সহজেই ঢাকা পড়ে। আবার নিরাপত্তা উন্নতি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সূচকে দেশের অবস্থান কোথায়, এমন জরুরী প্রসঙ্গ থেকেও মানুষকে অন্ধকারে রাখা সহজ হয়।

‘আন্তর্জাতিক মহল’ ভারতের মুসলিমদের উপর চলা আগ্রাসন ও নীপিড়নের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না, কখনো নিবে এমন সম্ভাবনাও নেই। এর প্রধাণ কারণ তো আদর্শিক। দুনিয়ার সকল কাফির এক পক্ষ, আর মুমিন মুসলিম এক পক্ষ। আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থা তৈরি হওয়ার পর নীপিড়িত মুসলিমদের পাশে আমেরিকা ইউরোপ বা তাদের অনুগত কোন সংস্থা কখনো জোরালো ভূমিকা গ্রহণ করেনি। বরং তারা নিজেরাই সবচে বেশি নির্যাতন করেছে। দ্বিতীয়ত, ভারত পশ্চিমা দেশগুলোর অনেক বড় বাজার। ভারতের সাথে তাদের আছে নানা রকম বানিজ্যিক ও নিরাপত্ত্বা চুক্তি। তৃতীয়ত, চীনের সাথে পশ্চিমাদের যে ভূরাজনৈতিক লড়াই, এক্ষেত্রে ভারত তাদের সবচে বড় অংশীদার। এসব কারণে পশ্চিমা দেশগুলো বেশির ভাগ সময় আনুষ্ঠানিক নিন্দাটুকুও জানায় না। ফলে ভারতের নিপিড়ীত মুসলিমদের পাশে মুসলিম দেশগুলোকেই দাঁড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক মুসলিম সংস্থাগুলো সরব হওয়ার বিকল্প নেই। মুসলিম দেশগুলো ছাড়া ভারত প্রায় অচল। তাদের বড় বাজার এই দেশগুলো। আরব দেশগুলোতে প্রবাসি কর্মির সংখ্যা ভারতের বেশি। এটি মুসলিমদের অনেক বড় হাতিয়ার। কয়েকটি ইস্যূতে আমরা এর কার্যকর ফলাফলও দেখেছি। ২০২২ সালে ভারত সরকার নত হতে বাধ্যও হয়েছে। প্রয়োজন শুধু ইসলামি ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঈমানি কর্তব্য পালন!

(সৌজন্যে মাসিক নেয়ামত, এপ্রিল ২০২৫)

শেয়ার করুন

image_print
Picture of আনাস চৌধুরী
আনাস চৌধুরী
আনাস চৌধুরীর জন্ম নব্বইয়ের শেষ দিকে, হবিগঞ্জ সদরে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়াতে। পরবর্তিতে দারুল উলুম দেওবন্দেও অধ্যয়ন করেছেন এক বছর। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক, হবিগঞ্জের দারুল ইরশাদ বহুলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। লেখালেখি, অনুবাদ ও দ্বীনি আলোচনাতেও তার অংশগ্রহণ রয়েছে। বাংলা ও আরবীতে অনুবাদ করেছেন বেশ কিছু বই। ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রকাশিত হয়েছে।
লেখকের অন্যান্য লেখা

সূচিপত্র

সর্বাধিক পঠিত
উত্তম আখলাক: অনন্য ছয়টি মর্যাদা
নকল মূদ্রা: শব্দের খোলসে মতাদর্শ ~ আব্দুল্লাহ আন্দালুসি
দ্যা ফোরটি রুলস অফ লাভ: সুফিবাদের ইউটোপিয়া
হাদিস শাস্ত্রের প্রাচ্যবাদী বয়ান এবং মুসলিম সমাজে এর প্রভাব
ইয়াহইয়া সিনওয়ার: শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়ে গেছেন যিনি
ক্রোধ সংবরণ: কেন ও কিভাবে