ত্বরাপ্রবণতা বা কাজে কর্মে তাড়াহুড়া করা মানুষের একটি সহজাত আচরণ। কাঙ্খিত বস্তুটি দ্রুততম সময়ে মানুষ অর্জন করে নিতে চায়। পছন্দের বা প্রয়োজনের কাজে সামান্য বিলম্বও তার কাছে ভারি ও কষ্টকর মনে হয়। মানব চরিত্রের এই দিকটি কোরআনে কারিমের একাধিক আয়াতে আলোচিত হয়েছে। এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
وكان الإنسان عجولا
‘আর মানুষ তো অতিশয় ত্বরাপ্রবণ।’ (সূরা ইসরা—১১)
তবে স্বভাবজাত এই চরিত্রটি কিন্তু প্রশংসনীয় নয়। এজন্য ইসলাম তাড়াহুড়ার অভ্যাসকে বর্জন করার নির্দেশ দিয়েছে। এর পরিবর্তে কাজে-কর্মে ধীরস্থিরতা অবলম্বনের তাকীদ করেছে।
ধীরস্থিরতা মানে কী? ধীরস্থিরতা হচ্ছে, বিলম্ব-মন্থর ও তড়িঘড়ির মাঝামাঝি একটি অবস্থা। ধীরস্থির স্বভাবের মানুষ কোন কাজ করার পূর্বে কাজটির ফলাফল নিয়ে চিন্তা করেন। এ কাজটি তার জন্য ভালো কি মন্দ, এটি তিনি পর্যালোচনা করেন এবং কাজটি করার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও সময় নেন। তারপর সঠিক পদ্ধতিতে সঙ্গত সময় নিয়ে কাজটি সম্পন্ন করেন। প্রয়োজনের চেয়ে কম সময় নিয়ে তড়িঘড়ি যেমন করেন না, আবার প্রয়োজন অতিরিক্ত সময় নিয়ে অযথা সময় ক্ষেপণও করেন না। কারণ মানুষ অলসতা, গুরুত্বহীনতা ইত্যাদি কারণে অযথা বিলম্ব করে, যা গ্রহণযোগ্য বা প্রসংশনীয় নয়। ফলে এটা পরিষ্কার বিষয় যে, ইসলাম মূলত আমাদেরকে ধীরস্থিরতার শিক্ষা দেয়, বিলম্ব করা বা মন্থরতার নয়।
কোন আচরণটি ধীরস্থির, কোনটি তড়িঘড়ি এবং কোনটি বিলম্বিত, এটা নির্ভর করে কাজের ধরন, সময়, অবস্থান ও অবস্থার বিভিন্নতার ওপর। একজন মানুষ তার কমনসেন্স বা সাধারণ বিবেক বুদ্ধির সাহায্যে বিষয়টি সহজেই নির্ধারণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রত্যেক কাজের জন্য আলাদা করে নির্দিষ্ট সংজ্ঞা বা মানদণ্ডের প্রয়োজন নেই, বরং সেটা সম্ভবও নয়।
হাদীসে ধীরস্থিরতা অবলম্বনের নির্দেশনা
ধীরস্থিরতা অবলম্বন করার ব্যাপারে বেশ কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে আনাস ইবনে মালিক বর্ণিত একটি হাদিসে নবীজি বলেছেন,
التأني من الله والعجلة من الشيطان.
ধীরস্থিরতা হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে। (সুনানে কুবরা লিল বাইহাকি, হাদীস—২০২৭০)
হাদীসটির ব্যখ্যায় আল্লামা মুনাবি রহ. লিখেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে হওয়ার অর্থ হল, ধীরস্থিরতাকে আল্লাহ পছন্দ করেন এবং এজন্য পুরস্কার দেন। আর শয়তানের পক্ষ থেকে হওয়ার অর্থ হচ্ছে, শয়তান কুমন্ত্রণার মাধ্যমে মানুষকে তড়িঘড়ি করতে উৎসাহিত করে। এভাবে মানুষকে কাজ কর্মের পরিণতি সম্পর্কে ভাবতে বাধা দেয়। (ফয়জুল কাদীর, হাদীস—৩০৮৮)
আরেকটি হাদীসে নবীজি আব্দুল কায়েস গোত্রের প্রধাণ আশাজ্জ সম্পর্কে বলেছিলেন,
إن فيك خصلتين، يحبهما الله: الحلم والأناة.
তোমার মধ্যে দুটি গুণ আছে। এগুলো আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়। একটি হল সহনশীলতা, আরেকটি হচ্ছে ধীরস্থিরতা। (সুনানে তিরমিজি-২০১১)
ধীরস্থিরতা যখন আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়, তাহলে এই গুণটি যার মধ্যে থাকবে তিনিও আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করবেন, এটি হাদীসের স্পষ্ট শিক্ষা।
কুরআনে কারিমে তাড়াহুড়ার নিন্দা
বলছিলাম ধীরস্থিরতা অবলম্বনের প্রতি উতসাহ ও নির্দেশনার কথা। অন্য দিকে যারা তড়িঘড়ি করে কুরআনে কারিম তাদের নিন্দা করেছে, যেমনটি শুরুতে উল্লেখিত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া একটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিষেধ করে বলেছেন,
لا تحرك به لسانك لتعجل به، إن علينا جمعه وقرآنه، فإذا قرأناه فاتبع قرآنه، ثم إن علينا بيانه.
“(হে রাসূল) আপনি এ কুরআনকে তাড়াতাড়ি মুখস্থ করার জন্য এর সাথে আপনার জিহবা নাড়াবেন না। নিশ্চয়ই আমি কুরআনকে আপনার বক্ষে একত্রিত করে দিব। এর পাঠ করানোর দায়িত্বও আমার।“ (সূরা কিয়ামাহ, আয়াত— ১৬-১৭)
হজরত জিবরীল যখন ওহী নিয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতেন, নবীজি তার সাথে সাথে কোরআনের আয়াতগুলো দ্রুত পাঠ করতেন, যেন কোরআনের কোন অংশ ছুটে না যায়। আল্লাহ তাআলা নবীজিকে এ কাজ থেকে বারণ করে সান্ত্বনা দিয়েছেন। তাঁকে জানিয়েছেন, কুরআনকে নবীজির বুকে সংরক্ষণ করা, নির্ভুলভাবে পাঠ করানো এটা স্বয়ং আল্লাহর দায়িত্বে। এ থেকে ইলমে ওহির অমূল্য জ্ঞানের প্রতি নবীজির তীব্র আকাঙ্খা ও পরম যত্নের কথা যেমন বুঝা যাচ্ছে, তেমনি এটাও বুঝা যাচ্ছে, কুরআনের ক্ষেত্রেই যখন তাড়াহুড়া অপছন্দনীয় তখন এর বাইরে অন্যান্য সাধারণ কাজ কর্মে তাড়াহুড়া বর্জন করা তো অবশ্যই জরুরি হবে!
ধীরস্থিরতা অবলম্বনের বিশেষ ক্ষেত্র
এমনিতে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা সব ক্ষেত্রেই কাংখিত। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে ধীরস্থিরতা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এমন কয়েকটি বিষয় এখানে বর্ণনা করছি।
- সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়
দৈনন্দিন জীবনে ছোটবড় বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এর মধ্যে কিছু বিষয় আছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জীবনে যার প্রভাব অনেক গভীর ও দীর্ঘ হয়ে থাকে। যেমন: বিয়ে-শাদি, ব্যবসা-বানিজ্য, বিদেশযাত্রা ইত্যাদি। এসকল ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয়া কিছুতেই কাম্য নয়। এতে বহুমাত্রিক পেরেশানি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। হাদীস থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই তা হল এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভালোমন্দ পরিণতি সম্পর্কে সময় নিয়ে চিন্তাভাবনা করা, অভিজ্ঞ ও কল্যাণকামি ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করা। নবীজি একবার আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত জানতে চেয়ে ছিলেন। তিনি তাঁকে বলেছিলেন, আমি তোমার নিকট একটি বিষয় পেশ করছি। তাড়াহুড়ো না করে তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে পরামর্শ করে উত্তর দেবে। (সহি বুখারি, হাদীস— ২৩৩৬)
- কোন কিছু ব্যবহার ও খাওয়ার পূর্বে
কোন বস্তু ব্যবহার ও খাওয়ার পূর্বও আমাদের জেনে নেয়া কর্তব্য, ইসলামের দৃষ্টিতে এটি বৈধ নাকি অবৈধ। বিশেষত যারা অমুসলিম দেশে বসবাস করেন বা ভ্রমণ করেন, তাদের জন্য খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি না করা অত্যন্ত জরুরী। পণ্য বা খাবারটি হালাল সার্টিফাইড কি না, এটি সময় নিয়ে যাচাই করা চাই। এমনিভাবে বর্তমান সময়ে যথাযথ মনিটরিং ও যাচাই করা ছাড়া যেভাবে অমুসলিম দেশ থেকে নানা ধরনের পণ্য আমদানি করা হচ্ছে, এক্ষেত্রেও আমদানিকৃত খাবার ও পণ্য সামগ্রির ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করা কর্তব্য। এটি ইসলামের বুনিয়াদি একটি নির্দেশনা। তাছাড়া এক্ষেত্রে ধীরস্থিরতার বিষয়টি হজরত আবু সাঈদ খুদরীর ঘটনাতেও বর্ণিত হয়েছে। তিনি ঝাড়ফুঁক করার বিনিময়ে ত্রিশটি ছাগল পেয়েছিলেন। মদীনায় এসে নবীজিকে জিজ্ঞেস করার আগ পর্যন্ত তিনি তা থেকে আহার করেন নি। ঘটনাটি সহি বুখারিতে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। (দ্রষ্টব্য, সহি বুখারি, হাদীস– ৫০০৭)
- সংবাদ প্রচার বা কোন ব্যক্তি সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করার পূর্বে
অনেক সময় এমন হয়, এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তি সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত না হয়েই নেতিবাচক মন্তব্য করে বসেন। লোকটি খেয়ানতকারি, প্রতারক, মিথ্যুক প্রভৃতি। তার এই মন্তব্যের কারণে অপরব্যক্তিটির কখনো কখনো ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যায়, সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। অথচ পরে দেখা গেল, তিনি যে মন্তব্যটি করেছিলেন তা সঠিক ছিল না। একাজটি অনেক বড় জুলুম। কারো ব্যাপারে কিছু শুনলে সরাসরি বা নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া ছাড়া মন্তব্য বা সিদ্ধান্ত দেয়ার সুযোগ নেই।
ঠিক একইভাবে কোন সংবাদ আসা মাত্রই তা প্রচার না করা কর্তব্য। বরং সঠিক পদ্ধতিতে যাচাই বাছাই করা কর্তব্য। না হয় এর মাধ্যমে গুজব তৈরি হতে পারে। একটি গুজব কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নবীজি সতর্ক করে বলেছেন,
بحسب المرء من الكذب أن يحدث بكل ما سمع.
একজন মানুষ মিথ্যাবাদি হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে সে যা শুনে (যাচাই বাছাই ছাড়া) তা বর্ণনা করে দেয়। (মুকাদ্দিমাতু সহি মুসলিম, হাদীস–০৫)
তাছাড়া আধিপত্যবাদের এযুগে মিডিয়া যে সকল সংবাদ প্রকাশ করে, বিশেষত ইসলাম মুসলিম ও ইসলামি সংস্কৃতি সভ্যতা সম্পর্কে, এগুলো গ্রহণ ও বিশ্বাস করার আগে যুক্তি ও বাস্তবতার আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করা অতীব জরুরী কাজ। কারণ এগুলো নিছক সংবাদই নয়, মানুষের বিশ্বাস ও আদর্শেও এর গভীর প্রভাব থেকে যায়। সংবাদগ্রহণে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা সুরা হুজুরাতেও এসেছে। (দ্রষ্টব্য, সুরা হুজুরাত, আয়াত–০৬)
- বিচার শালিস পরামর্শ ফতোয়া ও মাসয়ালা বলার সময়
উপরের প্রত্যেকটা কাজই আপন জায়গায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার শালিসে তড়িঘড়ি করে ফায়সালা দিলে একদিকে যেমন বাদি বা বিবাদির আর্থিক শারীরিক বা সামাজিক ক্ষয়-ক্ষতি হতে পারে, এমনিভাবে পরকালে আল্লাহ তায়ালার সামনেও ইনসাফ না করার কারণে জবাবদিহিতা করতে হবে। এমনিভাবে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য এসে থাকে। তারা ভরসা ও আস্থা নিয়ে আমাদের মতামত জানতে চায়। পরামর্শ দেয়ার ক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে সবদিক সামনে নিয়ে সবচেয়ে উত্তম পরামর্শ দেয়া আমাদের কর্তব্য। দ্বীনি মাসয়ালার বিষয়টি কতটা স্পর্শকাতর আমরা সহজেই বুঝি। তাই প্রয়োজন সর্বোচ্চ সতর্কতা ও ধীরস্থিরতা।
- তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করা
বিবাহ একটি স্থায়ী সম্পর্ক। এজন্য ইসলাম বিবাহবন্ধনকে টিকিয়ে রাখার সমস্ত ব্যবস্থা করেছে। দাম্পত্য জীবনে সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদ্ধতি ও পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। সব কিছু যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তালাকের সুযোগ রেখেছে। এজন্য দাম্পত্য জীবনে কোন সংকট তৈরি হলেই হুটহাট তালাক দিতে যাওয়া কিছুতেই মঙ্গলজনক নয়। বরং কুরআনি শিক্ষার স্পষ্ট বিরুদ্ধ আচরণ।
- দোয়ার ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি না করা
দোয়া–মোনাজাতের সাথে একজন প্রকৃত মুমিনের বন্ধন ও সম্পর্ক অটুট। মহান দরবারে দু’হাত তোলে মোনাজাত করা তাঁর জীবনের বড় অবলম্বন। তবে কেউ কেউ দোয়ার ক্ষেত্রেও তড়িঘড়ি করে থাকেন। হাদীস শরীফে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। দোয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া দুটি দিক এখানে বর্ণনা করব।
এক. দোয়ার শুরুতে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও নবীজির উপর দুরুদ পাঠ না করা। সাহাবী ফাদালা ইবনে উবাইদ রাঃ বলেন, নবীজি বসে ছিলেন, তখন এক ব্যক্তি এসে নামাজে দাঁড়াল, তারপর দোয়া করল, “হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন, অনুগ্রহ করুন।” নবীজি তাকে বললেন, হে মুসল্লী, তুমি তাড়াহুড়া করে ফেললে! নামাজ পড়ে যখন তুমি বসবে তখন আল্লাহর শান মাফিক তুমি প্রসংশা করবে। তারপর আমার প্রতি দুরুদ পড়বে। এরপর দোয়া করবে। (সুনানে তিরমিযি, হাদীস–৩৪৭৬)
দুই. দোয়ায় তাড়াহুড়া করার আরেকটি দিক হল, কয়েকবার দোয়া করে একথা বলা, আমি তো দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া কবুল হল না। নবীজি বলেছেন, তাড়াহুড়া করার আগ পর্যন্ত দোয়াকারির দোয়া কবুল করা হয়। (দোয়ায় তাড়াহুড়ার অর্থ হচ্ছে,) সে বলে, আমি দোয়া তো করলাম, কিন্তু কবুল করা হয় নি। (সহি বুখারি, হাদীস–৬৩৪০)
- দৈনন্দিন কাজ কর্মে
প্রতিদিন আমরা শত রকমের কাজ করি। ভাত খাওয়া, কথা বলা থেকে শুরু করে, গাড়ি চালানো, পরিবহনে আরোহন করা ও নামা, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বহন করা, জুতা কাপড় পরিধান করা প্রভৃতি। এসব কাজে আমরা যদি তাড়াহুড়া করি তাহলে কত রকম বিপদ ঘটবে, একটু সময় নিয়ে কল্পণা করুন তো! কথা বলার সময় তড়িঘড়ি করলে বক্তব্যই বুঝা যাবে না। ধীরস্থিরভাবে না হাঁটলে রাস্তাঘাটে কত বিপত্ত্বি ঘটবে। জুতো পড়তে গিয়ে পায়ে আঘাতও পেতে পারে। জামা পরার সময় তড়িঘড়ি করলে জামাও ছিড়তে পারে, পড়েও যেতে পারে। এভাবে প্রত্যেকটা কাজের কথা ভেবে দেখুন, ধীরস্থিরতার বহুবিধ উপকার ও তাড়াহুড়ার নানা ক্ষতি স্পষ্ট হয়ে উঠব। আর এজন্য মানুষের শত্রু শয়তান তাড়াহুড়া করতে প্ররোচিত করে থাকে।
যেক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা কাম্য নয়
দ্বীনি কাজ, নেক আমল, ইবাদত– নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ, তাওবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা কাম্য নয়। কোরআন ও হাদীসে এসকল ক্ষেত্রে দ্রুততার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কুরআনে কারীমে এরশাদ হয়েছে,
وسارعوا إلى مغفرة من ربكم وجنة.
“আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও।“ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত–১৩৩) নবীজি বলেছেন,
التؤدة في كل شيء إلا في عمل الآخرة.
সব ক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা কাম্য। তবে পরকালীন কাজ ব্যতিক্রম। (এক্ষেত্রে কাঙ্খিত হচ্ছে, দ্রুততা।) (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস–৪৮১০)
কেন? কারণ পরকালীন বা দীনি কাজ সন্দেহাতীতভাবে কল্যাণপূর্ণ। এতে অকল্যাণের কিছুই নেই যে সতর্ক থাকতে হবে, ভেবেচিন্তা অগ্রসর হতে হবে। অপরদিকে দুনিয়াবি বা বৈষয়িক কাজ কর্মে ভালো মন্দ দুটোই আছে। মন্দ থেকে বাঁচার জন্য সময় নিতে হয়, বিচার বিশ্লেষণ করতে হয়। হ্যাঁ, দীনি কাজ, যেমন ইবাদত বন্দেগী যখন শুরু করে ফেলবে, তখন তাড়াহুড়া করবে না। বরং শান্ত ও ধীরস্থিরভাবে সম্পন্ন করবে। আল্লাহ তাআলাই তাওফিকদাতা।