বাঁচতে হবে মন্দ ধারণা থেকেও!

মন্দ ধারণা থেকে বাঁচতে হবে

একজন মুসলিম যার বাহ্যিক কাজ কর্ম শরীয়তের দৃষ্টিতে আপত্তিকর ও অসংগত নয়, তার কোন কাজ আচরণ বা কথা থেকে সুনির্দিষ্ট দলীল প্রমাণ ছাড়া মন্দধারণা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। ধরা যাক, এক ব্যক্তির প্রতিবেশি একটি সুরম্য বাড়ি নির্মাণ করছেন। তিনি ভাবছেন, প্রতিবেশি এতটাকা কোথায় পেলেন, মনে হয় অন্যায়ভাবে এই অর্থ জুগিয়েছেন! অথচ যার ব্যাপারে এই ধারণা করা হচ্ছে তিনি এমন কাজে জড়িত, এসম্পর্কে গ্রহণযোগ্য কোন দলীল প্রমাণ নেই।তাহলে এটি হবে নিষিদ্ধ মন্দধারণা।

অথবা, এলাকার একজন নিয়মিত নামাজি ব্যক্তিকে দেখা গেল নামাজের সময় মসজিদের বাইরে, অন্য কোথায় যাচ্ছেন। তার এই কাজ দেখে কেউ মনে করে নিল, ওহ, তাকে তো আগে নামাজি মনে করতাম, এখন দেখি নামাজ ফেলে বাজারে বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন! এটিও মন্দ ধারণার অন্তর্ভূক্ত এবং গোনাহের কাজ।

এমনিভাবে শরীয়তের পূর্ণাঙ্গ অনুসারি কোন ব্যক্তি সম্পর্কে হঠাত নেতিবাচক একটি সংবাদ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। এক্ষেত্রেও তার সম্পর্কে যে সংবাদ ছড়ানো হচ্ছে এটি শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য দলীল ও সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত নেতিবাচক সংবাদটি গ্রহণ করা যাবে না, এমনকি প্রচারিত সংবাদের উপর নির্ভর করে তার সম্পর্কে মন্দ ধারণাও পোষন করা যাবে না। কুরআন হাদীসের নির্দেশনা অনুযায়ী উপরোক্ত সকল ক্ষেত্রে বাহ্যিকভাবে ভালো মুসলিমের ব্যাপারে  সুন্দর ও উত্তম ধারণা পোষণ করা জরুরি।

একজন মুমিন অপর মুমিনের প্রতি সুধারণা পোষণ করবে এবং মন্দ ধারণা থেকে বেঁচে থাকবে, এর বিবরণ কুরআন হাদীসের একাধিক জায়াগায় রয়েছে। তন্মধ্যে সুরা নুরে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যখন তোমরা তা (উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ সম্পর্কে মুনাফিকদের রটানো ভয়াবহ অপবাদ) শুনলে তখন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীগণ নিজদের সম্পর্কে কেন ভালো ধারণা করল না? কেন তারা বলল না, এতো জ্বলজ্যান্ত মিথ্যাচার। (সুরা নূরঃ ১২)

সুরা নুরের এই আয়াত থেকে প্রখ্যাত ফকীহ মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ দুটি বিষয় প্রমাণ করেছেন। তিনি লিখেছেন, এ আয়াত থেকে একটি মূলনীতি বুঝা গেল- একজন মুমিনের বাহ্যিক অবস্থা যখন দোষ ও পাপমুক্ত হবে আর তার সম্পর্কে কোন নেতিবাচক কথা উঠবে, তখন অপরাধটি নির্ভরযোগ্য ও শরীয়ত স্বীকৃত দলীল দ্বারা প্রমাণিত হওয়া পর্যন্ত মুমিনরা সেই সংবাদের উপর ভিত্তি করবে না। বরং মুমিনের প্রতি উত্তম ধারণা রাখবে। এটি ওয়াজিব। … এমনিভাবে কোন ব্যক্তি যদি কোন মুসলিমের বিরুদ্ধে এমন অপবাদ দেয় বা মন্দ কথা আরোপ করে তাহলে সেই মিথ্যাকে রদ করাও অন্যান্যদের উপর আবশ্যক। (মাআরিফুল কুরআনঃ সুরা নূর-১২)

মুমিনের প্রতি সুধারণা পোষণ করার নির্দেশ যেমন দেয়া হয়েছে, সাথে সাথে মুমিনের প্রতি মন্দধারণা থেকে বিরত থাকতেও বলা হয়েছে। সুরা হুজুরাতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে মুমিনগণ, তোমরা অনেক রকম অনুমান থেকে বেঁচে থাক। কোন কোন অনুমান গুনাহ। (হুজুরাতঃ ১২)

কোন অনুমান বা ধারণা গুনাহ হিসেবে বিবেচিত হবে? মুফাসসিরগণ লিখেছেন, বাহ্যিকভাবে দোষমুক্ত মুমিনের ব্যাপারে দলীল প্রমাণ ছাড়া মন্দ ধারণাকে উক্ত আয়াতে পাপ ও হারাম আখ্যায়িত করা হয়েছে। (তাফসিরে কুরতুবি, ইবনে কাসীর, জালালাইন, মাআরিফুল কুরআন সংশ্লিষ্ট আয়াত)  

নবীজি হাদীস শরীফে মুমিনের ব্যাপারে মন্দ ধারণা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়ে একে বড় মিথ্যা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। (সহি বুখারি-৬৭২৪)

কথা হল, মুমিনের প্রতি মন্দধারণাকে এতটা ভয়াবহ ও কদর্য হিসেবে কুরআন হাদীসে উপস্থাপন করার কারণ কী? আমরা একটু তলিয়ে দেখলে দেখব মুমিনের প্রতি এই মন্দ ধারণা অজস্র কদর্য ও মন্দ কাজের সূচনা ঘটায়। এ থেকে জন্ম হয় বহু পাপ ও শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয়ের। বিষয়টি কিছুটা ব্যাখ্যাসহ এখানে পত্রস্থ করছি। 

কোন ব্যক্তির প্রতি কেউ যখন মন্দধারণা পোষন করবে, স্বাভাবিকভাবেই সে তার সাথে সুন্দর আচরণ করতে পারবে না, পারবে না তার কল্যাণকামি হতে। উল্টো তার প্রতি শত্রুতা বিদ্বেষ ও ঘৃণা লালন করবে। অথচ নবীজি সকল মুসলিমের প্রতি কল্যাণকামনাকে জরুরি সাব্যস্ত করেছেন। (সহি মুসলিম-৫৬)

আবার কারো সাথে হিংসা বিদ্বেষ ও ঘৃণা পোষন করা থেকে কঠোরভাবে নিষেধও করেছেন। কিন্তু অমূলক এক মন্দধারণার কারণে শরীয়তের এই বিধানগুলো চরমভাবে লংঘিত হয়ে থাকে।

মন্দধারণার ভয়াবহ একটি ক্ষতি হচ্ছে, যাকে ঘিরে মন্দ ধারণা করা হচ্ছে তাকে সাধারণত হেয় ও তুচ্ছ জ্ঞান করা হয়। কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা হচ্ছে আবার তার প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদাও দেয়া হচ্ছে, এটা হয় না। অথচ সহি মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে অপর মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করাকে কোন ব্যক্তির যথেষ্ট অকল্যাণ ও কদর্যতা বলা হয়েছে। (হাদীস-২৫৬৪)

অমূলক মন্দ ধারণাকে ইমাম গাযালি অন্তরের গীবত আখ্যায়িত করেছেন। তাছাড়া কেউ যখন কারো সম্পর্কে মন্দ ধারণা করে তখন কারো না কারো সাথে এই মন্দ ধারণার কথা আলাপ করে। তখন অন্তরের গীবত হওয়ার পাশাপাশি এটি সরাসরি গীবতের দরজাকেও খুলে দেয়। আর গীবত করা কতটা ভয়াবহ মুসলিম মাত্রই এ বিষয়ে অবগত। যদি মন্দ বিষয়টি তার মধ্যে আসলেই পাওয়া যায় তাহলে তো গীবত হবেই, আর যদি না থাকে তাহলে তো আরো জঘন্য ব্যাপার, অপবাদ হয়ে যাবে।

অমূলক ধারণার এটাও একটা কদর্য দিক যে, মন্দ ধারণা করার পর মানুষ সেই ধারণাটিকে নিশ্চিত করতে চায়। যার ব্যাপারে ধারণা করা হচ্ছে তার দোষ ত্রুটি খুঁজতে নেমে পড়ে। ছিদ্রান্মেষণ ও গোয়েন্দাবৃত্তি শুরু হয়ে যায়। এমনকি মন্দ প্রবৃত্তি তাকে আশপাশের মানুষকে জিজ্ঞেস করে হলেও কিছু দোষ বের করতে প্ররোচিত করে। যেকোন মূল্যে অমূলক ধারণাটি প্রমাণ করতে হবে, একে অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে নেয়।

মানবপ্রবৃত্তির এই মন্দ প্রবণতা সম্পর্কে কুরআনে কারীম সতর্ক করেছে। সুরা হুজুরাতে মন্দ ধারণার নিন্দা করার সাথে সাথে বলে দেয়া হয়েছে, এবং অন্যের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াবে না। (হুজুরাতঃ ১২) আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে মন্দ ধারণা ও দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ানোর মধ্যে জোড়ালো সম্পর্ক রয়েছে। ইমাম গাজালি লিখেছেন, কারণ সাধারণত মানব মন ধারণা করেই ক্ষ্যান্ত হতে পারে না, নিশ্চিত হতে চায়।

একটু চিন্তা করলে আমরা উপলব্ধি করব, যার সম্পর্কে মন্দ ধারণা করা হচ্ছে, সে যদি কোন বিপদে আক্রান্ত হয় কিংবা ক্ষতির শিকার হয়, তাহলে ধারণাকারি ব্যাক্তিটি তার এই বিপদে আনন্দিত হয়। হাদীস শরীফে যেখানে মুসলিমের বিপদে পাশে দাঁড়ানো ও সহমর্মি হওয়ার নির্দেশ রয়েছে, শুধু অমূলক ধারণার কারণে শরীয়তে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, বিপদে আনন্দিত হওয়ার মত কদর্য বিষয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে!

বুখারি শরীফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার আল্লামা খাত্তাবি লিখেছেন, “মন্দ ধারণা থেকে অধিকাংশ মিথ্যার জন্ম হয়।“ ইমাম গাযালি এর আরেকটি কদর্য দিক বর্ণনা করেছেন। তার মতে, “মন্দ ধারণার কারণে মানুষ মানুষের প্রাপ্য অধিকার আদায়ে ত্রুটি করে।“ ফলে আমরা দেখতে পাই, অমূলক ধারণাকে ভিত্তি করে কিছু মানুষ অন্যের যথাযথ হক আদায় না করার বৈধতা তৈরি করে নেয়। অথচ বান্দার হক আদায় না করা বা এক্ষেত্রে ত্রুটি করা ভয়ানক গোনাহ।

মোটকথা, এক মুসলিমের সাথে অপর মুসলিমের যে আদর্শ সম্পর্কের নির্দেশনা ইসলাম দিয়েছে, যেখানে থাকবে সুন্দর আখলাক, ভ্রাতৃত্ববোধ, কল্যাণকামিতা, পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা ও সহযোগিতার মতো উন্নত বিষয়াবলি, এক অমূলক মন্দধারণা এসে সব কিছু গুড়িয়ে দেয়। একেকটি উত্তম গুণকে মূলোতপাটন করে ফেলে। মানুষের পারষ্পরিক এই সুন্দর সম্পর্কগুলো যখন ভেঙ্গে পড়ে, তখন এর ক্ষতিকর ফলাফল ও প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে না পরিবার সমাজ এমনকি রাষ্ট্রও।

এজন্য সুধারণার চর্চা ও মন্দ ধারণা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা সবজায়গায় জরুরি। স্বামী স্ত্রী, পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যেমন এর চর্চা আবশ্যক, এমনিভাবে পাড়া প্রতিবেশি থেকে সমাজের সর্বশ্রেণির জন্য এটি জরুরি। যেহেতু পরিবার ও সমাজে মানুষ মানুষের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে বসবাস করে, উঠাবসা ও চলাফেরায় তারা একে অন্যের সাথে গভীরভাবে যুক্ত, ফলে এখানে খুব সহজেই মন্দ ধারণা তৈরি হওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ আছে। ছোট থেকে ছোট যেকোন কথা ও আচরণকে ঘিরে এই অমূলক ধারণা তৈরি হয়ে যেতে পারে। তারপর যেমনটি আমরা দেখেছি, মন্দধারণা তৈরি হওয়ার পর এটি নিজের মধ্যে সীমিত থাকে না, সময়ের সাথে সাথে একের পর এক এর নানারূপ অনিষ্টতা প্রকাশ পেতে থাকে।

কিভাবে বাঁচতে পারি মন্দ ধারণা থেকে? এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। তার আগে মন্দ ধারণার সাথে সম্পর্ক রাখে এমন কয়েকটি বিষয় সংক্ষেপে আলোচনা করব।

  • কখনো এমন হয় একজন সম্পর্কে আমি কোন ধারণাই করতে চাচ্ছি না, তবুও বারবার নেতিবাচক বিষয় মনে চলে আসছে। এটি মন্দধারণা হিসেবে গণ্য হবে না, শরীয়তে একে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এটি যেহেতু মানুষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত বিষয় তাই এতে কোন গোনাহ হবে না। হ্যাঁ, তিনি যদি মনে উদিত হওয়া এই নেতিবাচক ধারণাটিকে মনে জায়গা দেন, কোনভাবে প্রকাশ করেন তাহলে “মন্দধারণা” হয়ে যাবে। এমন ওয়াসওয়াসার ক্ষেত্রে করণীয় হল, এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা। এভাবে একসময় এটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
  • একজন মুসলিম স্বভাবতই সজাগ ও সতর্ক হবেন। প্রতারণা করা বা ঠকানোর সুযোগ তিনি কাউকে দিবেন না। কথা বার্তা কাজকর্ম ও লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এর জন্য যেমন মন্দধারণা করার দরকার নেই, আবার এই পদক্ষেপকে মন্দধারণা হিসেবে আখ্যায়িত করার সুযোগ নেই। বরং এটি তার সচেতনতার অংশ। এজন্য ইসলামে ঋণ দেয়া নেয়ার সময় লিখে রাখা, বা লেনদের সময় সাক্ষী রাখতে উতসাহিত করা হয়েছে। তার মানে এই নয়, একপক্ষ আরেক পক্ষকে খেলাপী মনে করছে!
  • কোন ব্যক্তি যদি বাহ্যিক দোষমুক্ত না হয়, প্রকাশ্য অন্যায় ও পাপাচারে লিপ্ত থাকে, তাহলে তার ব্যাপারে মন্দ ধারণা করা গোনাহ নয়। একইকথা সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যার অপরাধটি নির্ভরযোগ্যভাবে প্রমাণিত। অবশ্য তখন আর সেটা ধারণা থাকবে না, সুনিশ্চিত বিষয় হয়ে যাবে। তবে যে কাজে আমার দুনিয়া বা আখেরাতে কোন লাভ নেই, তা থেকে বেঁচে থাকাই সুবুদ্ধির কাজ।
  • হাদীসের শিক্ষা হচ্ছে, এমন স্থান পরিস্থিতি ও ক্ষেত্র থেকে একজন মুসলিম নিজেকে দূরে রাখবেন যাতে করে কেউ তার সম্পর্কে মন্দধারণা করার সুযোগ না পায়। তিনি হয়তো অপরাধটি করেন নি, কিন্তু এমন স্থানে অবস্থান করছেন, যেখানে সাধারণত অপরাধকারিরাই আসা যাওয়া করে। এতে করে তিনি যেমন আরেকজন মুসলিমকে মন্দ ধারণা করা থেকে বাঁচাতে পারবেন, আবার তার ব্যাপারে মন্দধারণার কারণে যে ক্ষতির শিকার হতে পারেন, তা থেকেও বেঁচে যাবেন। হ্যাঁ, তারপরও কেউ যদি মন্দ ধারণা করে তাহলে এর দায়ভার মন্দধারণাকারির উপরই বর্তাবে।

মন্দধারণা থেকে কিভাবে বাঁচা যায়, এসম্পর্কে কয়েকটি দিক বর্ণনা করেই লেখাটি সমাপ্ত করছি। এজন্য প্রথমে দেখতে হবে মন্দধারণা তৈরী হয় কেন? এর উতসগুলো কী কী? উতসগুলো চিহ্নিত করে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলে এর অনেকটা সমাধান করা সম্ভব।

আমরা লক্ষ্য করলে দেখব, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অহংকার থেকে মন্দধারণা তৈরি হয়। অহংকারি মানুষ যেহেতু নিজেকে সবার উপরে ও সবচে সেরা মনে করে, এখন অন্যকারো সম্পর্কেও যদি সে উত্তম ধারণা পোষণ করে, তাহলে একে নিজের কল্পিত শ্রেষ্ঠত্বের জন্য হুমকি মনে করে। আর একারণে মানুষের প্রতি মন্দধারণা তৈরি করে মানুষকে মন্দ ও নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার অসুন্দর কাজে রত হয়। এজন্য মন্দধারণা থেকে বাঁচতে হলে প্রথমে নিজেকে অহংকারের কলুষতা থেকে পবিত্র করে বিনয় অবলম্বন করতে হবে।

মন্দধারণা কতটা ভয়াবহ এ সম্পর্কে না জানার কারণেও অনেক সময় মানুষ এই হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। তাই অমূলকধারণার ইহকালীন ও পরকালীন ভয়াবহতা সম্পর্কে সম্মকভাবে জানতে হবে। কারো সাথে হিংসা বিদ্বেষ থাকলেও তার ব্যাপারে মন্দধারণা করতে নফস প্ররোচিত করে থাকে। এজন্য হিংসা থেকেও বেঁচে থাকা জরুরি।

মন্দ ধারণা থেকে বেঁচে থাকার আরেকটি উপায় হল, কোন কারণে যদি কারো সম্পর্কে অমূলক ধারণা করে ফেলে তাহলে একে অগ্রসর হতে দিবে না। কাউকে এর কথা বলবে না। নিজেও ধারণাটিকে প্রমাণ করার জন্য দোষ খুঁজতে যাবে না। এভাবে ধারণাটিকে যখন কার্যকর হতে দিবে না, তখন ধীরে ধীরে এটি আর তৈরিও হবে না। হাদীসেও এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যদি তুমি ধারণা কর তাহলে সেটা বাস্তবায়িত করবে না। (তাবারানি ও আল জামিউস সাগীরঃ ৩৪৫০) আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।

(তথ্য সূত্র – মাওসুআতুল আখলাকিল ইসলামিয়া, ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, মাআরিফুল কুরআন ও অন্যান্য)

Picture of আনাস চৌধুরী
আনাস চৌধুরী
আনাস চৌধুরীর জন্ম নব্বইয়ের শেষ দিকে, হবিগঞ্জ সদরে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়াতে। পরবর্তিতে দারুল উলুম দেওবন্দেও অধ্যয়ন করেছেন এক বছর। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক, হবিগঞ্জের দারুল ইরশাদ বহুলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। লেখালেখি, অনুবাদ ও দ্বীনি আলোচনাতেও তার অংশগ্রহণ রয়েছে। বাংলা ও আরবীতে অনুবাদ করেছেন বেশ কিছু বই। ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রকাশিত হয়েছে।
লেখকের অন্যান্য লেখা

সূচিপত্র

সর্বাধিক পঠিত
উত্তম আখলাক: অনন্য ছয়টি মর্যাদা
হাদিস শাস্ত্রের প্রাচ্যবাদী বয়ান এবং মুসলিম সমাজে এর প্রভাব
নকল মূদ্রা: শব্দের খোলসে মতাদর্শ ~ আব্দুল্লাহ আন্দালুসি
ইয়াহইয়া সিনওয়ার: শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়ে গেছেন যিনি
পরামর্শ বা মাশওয়ারা: ইসলামের অনুপম এক নির্দেশনা
দ্যা ফোরটি রুলস অফ লাভ: সুফিবাদের ইউটোপিয়া