ইসলামে ইবাদতের তাৎপর্য মর্ম ও আধুনিক বিভ্রান্তি

কুরআনে হাকীম মানবজাতির যে সকল অতীব জরুরী জিজ্ঞাসার সমাধান দিয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে মানুষের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট বিবরণ প্রদান। সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন মানুষ মাত্রই নিজেকে জিজ্ঞেস করবেন, বিভিন্নভাবে জানতে চাইবেন, তিনি কে? এ পৃথীবিতে তিনি কেন এসেছেন? তার প্রধান দায়িত্ব কী? মানুষের উপর কুরআনের বড় অনুগ্রহ হল এই অতীব জরুরী জিজ্ঞাসার সঠিক জবাব সহজ সরলভাবে মানবজাতির কাছে তুলে ধরেছে। আল্লাহ তায়ালা বলছেন, আর আমি জিন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি কেবল আমার ইবাদতের উদ্দেশ্যে। (সূরা যারিয়াত, আয়াত ৫৬)

দুনিয়াতে মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য, জীবনকে সহজ করার জন্য কত শত সহস্র কাজ কর্ম করতে হয়। কত দৌড় ঝাপ, কত আয়োজন, এর কোনও হিসেব নেই। কিন্তু এত কিছুর মধ্যে মানুষের মূল কাজ কী? তার আসল পরিচয় কী? আয়াত থেকে এর উত্তর পরিষ্কার। মানুষের সব কাজের মধ্যে মূল ও প্রধান কাজ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করা। এবং তার প্রধান পরিচয় হল সে আল্লাহর আবদ, অনুগত বান্দা বা গোলাম।

দুই ধরণের আনুগত্য

আমরা লক্ষ্য করলে দেখব, আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের দুটি দিক আছে। একটি হচ্ছে বাধ্যতামূলক আনুগত্য। আস্তিক নাস্তিক মুমিন কাফের বিশ্বাসী অবিশ্বাসি সবাইকে এগুলো মেনে চলতে হয়। যেমন আল্লাহ তায়ালা যখন কারো ব্যাপারে সুস্থতা কিংবা অসুস্থতার ফায়সালা করেন তখন সে যেই হোক তাকে এই ফায়সালার আনুগত্য করতে হয়। একইভাবে কাউকে সম্মানিত করা, ক্ষমতাবান করা কিংবা ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার ফায়সালা করেন, তখন সে বিশ্বাসী হোক বা অবিশ্বাসী, তাকে আল্লাহর এই ফায়সালা মেনে নিতেই হয়। এই আনুগত্যে যেহেতু মানুষ বাধ্য ও এখানে অন্যকোন পথ নেই, তাই এই স্তরের আনুগত্যে বিশেষ মর্যাদাও নেই।

আরেক স্তরের আনুগত্য হল ইচ্ছাধীন আনুগত্য। যেমন আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী রাসূল পাঠিয়ে মানবজাতিকে বিভিন্ন নির্দেশনা ও শিক্ষা দিয়েছেন। কিছু কাজ করতে বলেছেন। কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। এবং এগুলো পালন করা বা না করার এখতিয়ারও তিনি মানুষকে দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত প্রদান কর। এখন কেউ ইচ্ছা করলে যাকাত আদায় করে আল্লাহর এই নির্দেশ পালন করতে পারে। আবার কেউ চাইলে অমান্যও করতে পারে। এই এখতিয়ার আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন। তবে তিনি এটাও জানিয়ে দিয়েছেন যে তার আনুগত্য করবে তিনি তাকে সম্মানিত করবেন। অপরদিকে যে খোদায়ী নির্দেশনা অমান্য করবে তিনি তাকে শাস্তি দিবেন। বস্তুত ঈমান ইসলামের মূল কথা এটাই যে একজন ব্যক্তি আল্লাহত তায়ালার এজাতীয় নির্দেশনা মেনে চলবে, পূর্ণাংগ আনুগত্য করবে। এই প্রত্যয় গ্রহণ করা ব্যতিত কেউ মুমিন মুসলিম হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।

ইবাদতের স্তর ও অবস্থান

একজন মানুষ আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা মেনে চলার প্রত্যয় গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে যখন মুসলিম হয়ে যায়, তখন ইসলামের সব বিষয় পূর্ণাংগভাবে তাকে মেনে চলতে হয়।সংক্ষেপে ইসলামের পূর্ণাংগ একটি চিত্র বরেণ্য ইমামগণ এভাবে বর্ণনা করে থাকেন— এক। আকীদা বিশ্বাস। দুই। ইবাদত। তিন। মুয়ামালাত বা লেনদেন। চার। মুয়াশারাত। পাঁচ। আখলাক বা উত্তম আচরণ।

আকীদা বিশ্বাসের প্রধান সম্পর্ক অন্তরের সাথে। বাকীগুলোর সম্পর্ক আমলের সাথে। আকীদা বিশ্বাস হচ্ছে সবকিছুর রূহ, মূল ও ভিত্তি। এগুলো ঠিক না থাকলে বাকী সব কিছু বেকার ও মূল্যহীন। আর আকীদা বিশ্বাসের পরই হচ্ছে ইবাদতের স্থান। এই ইবাদত হচ্ছে আমলের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। হাদীস শরীফে প্রধাণ পাঁচটি ইবাদত, একত্ববাদের সাক্ষ্য প্রদান, যথাযথভাবে নামাজ আদায়, যাকাত প্রদান, রমজানের রোজা পালন করা ও হজ্ব করাকে ইসলামের রুকন বা ভিত্তিমূল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআনে কারীম সকল নবী রাসূলের সম্মিলিত প্রধান শিক্ষা ও মৌলিক মিশন হিসেবে যে বিষয়টির কথা উল্লেখ করেছে সেটা এক আল্লাহ তায়ালার ইবাদত। সুরা আম্বিয়ায় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি আপনার পূর্বে যত রাসূলই পাঠিয়েছে তাদের প্রতি এই প্রত্যাদেশ করেছি যে, আমি ব্যতিত কোন “ইলাহ” নেই। অতএব তোমরা আমারই ইবাদত কর। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ২৫) ইলাহ মানে কী? আরবী ভাষাবিদ ও মুফাসসিরদের সম্মিলিত বক্তব্য হচ্ছে, ইলাহ মানে মাবুদ বা উপাস্য, যার ইবাদত করা হয়। যেহেতু একমাত্র তিনিই ইবাদতের হকদার তাই নির্দেশ দেয়া হয়েছে, “অতএব আমরই ইবাদত কর।“

ইবাদতের গুরুত্ব ও মর্যাদার আরেকটি বিশেষ দিক হচ্ছে এই ইবাদত বান্দার উপর আল্লাহ তায়ালার হক্ব। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি একবার হজরত মুয়াজ রাঃকে জিজ্ঞেস করলেন, মুয়াজ তুমি কি জানো বান্দার উপর আল্লাহ তায়ালার কী হক্ব রয়েছে? মুয়াজ উত্তর দিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন। নবীজি তখন ইরশাদ করলেন, বান্দাদের উপর আল্লাহ তায়ালার হক্ব হচ্ছে তারা তাঁর ইবাদত করবে, এবং কোন কিছুকে তাঁর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করবে না। (সহি বুখারী, হাদীস ৭৩৭৩)

ইবাদতের প্রাপ্তি ও অর্জন

ইবাদতের প্রাপ্তি কী? বান্দার ইবাদতে আল্লাহ তায়ালার কোন উপকার বা স্বার্থ নেই। “সকলে তাঁর মুখাপেক্ষি, তিনি কারো মুখাপেক্ষি নন।“ (সুরা ইখলাস, আয়াত ২) পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন, সবাই যদি সর্বোত্তম ইবাদতগোজারও হয়ে যায়, এতে আল্লাহ তায়ালার মহিমায় সামান্যও বৃদ্ধি ঘটবে না। (দ্রষ্টব্য সহি মুসলিম, হাদীস ২৫৭৭)। বরং ইবাদত বান্দারই অতীব জরুরি প্রয়োজন। ইবাদতের বহুবিধ উপকারিতা কল্যাণ ও প্রয়োজনীয়তার কথা কুরআন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি দিক সবিশেষ উল্ল্যেখযোগ্য। একটি দিক হল আত্মিক পবিত্রতা অর্জন। ইবাদতের দ্বারা বান্দার অন্তরজগত পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, (হে নবীপত্নীগণ!) তোমরা যথাযথভাবে নামাজ আদায় কর, যাকাত প্রদান কর, এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য কর। হে নবী-পরিবারবর্গ, আল্লাহ এই চান যে তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করবেন এবং তোমাদের সম্পূর্ণ পবিত্র করবেন। (সূরা আহযাব, আয়াত ৩৩) সুরা তাওবায় বলা হয়েছে, আপনি তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করুন, এর মাধ্যমে আপনি তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবেন। আর তাদের জন্য দোয়া করুন। আপনার দোয়া তাদের জন্য প্রশান্তিদায়ক। আল্লাহ তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা তাওবা, আয়াত ১০৩)

ইবাদততে বান্দার দ্বিতীয় প্রাপ্তি হচ্ছে এর দ্বারা সে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। বস্তুত মানুষ অতি দুর্বল ও অক্ষম। এই অক্ষমতা নিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তা, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি, সুউচ্চ, সর্বজ্ঞানি, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁর নৈকট্য লাভ করার জন্য ইবাদতকে অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে এই ইবাদতকে অবলম্বন করেই মাটির মানুষের পক্ষে নিজ দুর্বলতা ও অক্ষমতাকে অতিক্রম করে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করা সম্ভব। আল্লাহ তায়ালা বলেন, এবং তুমি সেজদা করো আর নৈকট্য অর্জন কর। (সূরা আল আলাক্ব, আয়াত ১৯) নবীজি বলেছেন, বান্দা যখন সেজদাবনত হয় তখন সে আল্লাহ তায়ালার সবচে নিকটবর্তি থাকে। অতএব তোমরা তখন বেশি বেশি দোয়া কর। (সহি মুসলিম, হাদীস ৪৮২) আরেকটি হাদীসে এই নৈকট্য অর্জনের কথা এভাবে বর্ণিত হয়েছে, আমার বান্দা যে সকল বিষয় দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম বিষয় হল তা যা আমি তার উপর ফরজ করেছি। এবং আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে, একপর্যায়ে আমি তাকে ভালোবাসি। (সহি বুখারি, হাদীস ৬৫০২)

ইসলামে ইবাদতের এই উঁচু অবস্থান ও গুরুত্বের কারণে ইবাদতের স্বরূপ ও পরিচয় সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান ও স্বচ্ছ ধারণা থাকা, এসম্পর্কে সজাগ সচেতন থাকা সবার জন্য জরুরি।

ইবাদতের মর্ম ও স্বরূপ

ইবাদত আসলে কী? মূল শব্দের বিবেচনায় এর অর্থ হয়, দীনতা ও নম্র হওয়া। তবে শরীয়তে, কুরআন ও হাদীসের বিশেষ পরিভাষায় ইবাদতের আরো সুনির্দিষ্ট অর্থ ও মর্ম রয়েছে। এবিষয়ে পন্ডিত ইমাম ও গবেষক আলেমগণ বিস্তর আলোচনা করেছেন। গুরুত্বের বিবেচনায় আমরা তাদের কিছু বক্তব্য তুলে ধরছি।

হাদীস ও তাফসীরের প্রসিদ্ধ ইমাম আল্লামা বাগাবী রহঃ বলেন,

والعبادة الطاعة مع التذلل والخضوع

ইবাদত মানে হল নম্রতা ও বিনয়ের সাথে আনুগত্য করা।

আল্লামা ইবনে কাসীর রহ লিখেছেন,

وفي الشرع عبارة عما يجمع كمال المحبة والخضوع والخوف

শরীয়তের পরিভাষায় ইবাদতের মর্ম হচ্ছে এমন কাজ যার মধ্যে পূর্ণ ভালোবাসা, পরিপূর্ণ বিনয় ও (শ্রদ্ধামিশ্রিত) ভয় থাকে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা ফাতেহার ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)

ইবনে তাইমিয়া রহঃ লিখেছেন, إن الله خلق الخلق لعبادته الجامعة لمعرفته والإنابة إليه ومحبته والإخلاص له.

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন, যে ইবাদতের মধ্যে আছে তাঁর পরিচয়, তাঁর প্রতি একাগ্রতা ও ভালোবাসা, এবং ইখলাস (সব কিছু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা)। (মাজমুউল ফাতাওয়ার সূত্রে, আত তাফসীর আস সিয়াসি— ৮৩)

তিনি অন্যত্র লিখেছেন,

لكن العبادة المأمور بها تتضمن معنى الذل ومعنى ، فهي تتضمن غاية الذل لله تعالى، بغاية المحبة له.

তবে শরীয়তে যে ইবাদতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এটি আনুগত্য ও ভালোবাসার অর্থকে ধারণ করে। ফলে ইবাদত হচ্ছে এমন বিষয় যা আল্লাহ তায়ালার প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসার সাথে তাঁর চূড়ান্ত আনুগত্যকে বুঝায়। (আল উবুদিয়ার সূত্রে আত তাফসীর  আস সিয়াসি লিল ইসলাম— ৮১)

হাফেজ ইবনুল কায়্যিমের ভাষায়,

 العبادة تجمع أصلين: غاية الحب بغاية الذل والخضوع… فمن أحببته ولم تكن خاضعا له، لم تكن عابدا له، ومن خضعت له بلا محبة، لم تكن عابدا به، حتى تكون محبا خاضعا

“ ইবাদতের মধ্যে দুটি মৌলিক বিষয় থাকে, এক সর্বোচ্চ ভালোবাসা, দুই সর্বোচ্চ বিনয় দীনতা ও আনুগত্য। ফলে আপনি যাকে ভালোবাসলেন কিন্তু তাঁর আনুগত্য করলেন না, তাঁকে ইবাদতই করলেন না। আবার ভালোবাসা ছাড়া কারো আনুগত্য করলেন, তাহলেও তাঁর ইবাদত করা হল না। ইবাদত তখনই হবে যখন একই সাথে ভালোবাসা ও আনুগত্য থাকবে। “ (তাফসীরে ইবনুল কায়্যিম, সুরা ফাতিহার ব্যখ্যা)

প্রখ্যাত মুফাসসির আবু সাউদ, বায়যাবী, যামাখশারি ও নাসাফি লিখেছেন, والعبادة أقصى غاية التذلل والخضوع

“ইবাদত হচ্ছে, সর্বোচ্চ বিনয় নম্রতা ও দীনতার চূড়ান্ত প্রকাশ।“(দ্রষ্টব্য, তাদের লিখিত তাফসীরের সুরা ফাতেহার আলোচনা)

মাওলানা মুহাম্মদ মঞ্জুর নোমানির ভাষায় ইবাদতের মর্ম হল, কোন সত্ত্বাকে অদৃশ্য শক্তিতে উপকার অপকারের নিয়ন্ত্রক, প্রয়োজনপূরণকারি ও ভাগ্যাধিপতি মনে করে তাঁর সন্তুষ্টি কামনায় ও তাঁর নৈকট্য সাধনায় সম্পাদিত যুক্তিউর্ধ্ব সম্মানজ্ঞাপক কর্ম ও আচরণকে ইবাদত বলে। (দীন ও শরীয়তঃ ৫৪) শব্দের সামান্য ভিন্নতার সাথে অন্যত্র লিখেছেন, ইবাদত বলতে এমন বিশেষ আমলকে বুঝানো হচ্ছে যা দ্বারা একজন বান্দা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ লাভের আশায় তাঁর দরবারে নিজের দুর্বলতা দাসত্ব ও মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করে। এবং বিশেষ এই আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার মাবুদ বা উপাস্য হওয়া, তাঁর সুউচ্চ মর্যাদা ও বড়ত্বের সাক্ষ্য দেয়।যেমন নামাজ রোজা হজ যাকাত সদকা যিকর তেলাওয়াত কুরবানি ইত্যাদি। (কুরআন আপ সে কিয়া কেহতা হ্যায়?  , দীন ও শরীয়তঃ ১৫৬)

সিরিয়ার প্রসিদ্ধ আলেম শায়েখ সালাহুদ্দিন ইদলিবি আগের বক্তব্যগুলোর অনেকটা একত্রিত করে, সারনির্যাস হিসেবে বলেন,

 الحقيقة هي أن أي فعل من هذه الأفعال لا يكون عبادة إلا إذا كان بقصد الخضوع والتقرب إلى من فعل مع اعتقاد ربوبيته أو إلاهيته.

বস্তুতঃ উল্লেখিত কাজসমূহের (সেজদা রুকু মানত ইত্যাদি) একটিও ইবাদত হিসেবে বিবেচিত হবে না, যতক্ষন পর্যন্ত কোন সত্ত্বাকে উপাস্য বা প্রতিপালক বিশ্বাস করে তার নৈকট্য অর্জন ও দীনতা নম্রতা প্রকাশের জন্য এই কাজগুলো করা হয়। (নাওকিযুল ইসলাম— ২৭)

মূলকথা

ইবাদত সম্পর্কে বরেণ্য ইমাম ও গবেষক আলেমদের বক্তব্য সামনে রাখলে আমাদের সামনে ইবাদতের একটি পূর্ণাংগ চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠে। আমরা দেখলাম, ইসলামে ইবাদতের যে মর্ম বয়ান করা হয়েছে এতে অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। এই সব অংশগুলো মিলে “ইবাদত” তৈরি হয়। যেমন ইবাদতের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার পূর্ণাংগ আনুগত্য লাগবে। আনুগত্য ছাড়া ইবাদত হতে পারে না। আনুগত্যের সাথে সর্বোচ্চ বিনয় নম্রতা নিজের দীনতা ও অসহায়ত্বের প্রকাশ থাকতে হবে। সাথেসাথে আল্লাহ তায়ালার প্রতি পূর্ণাংগ ভালোবাসা ও প্রেম, সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন ও শ্রদ্ধাপূর্ণ ভয় থাকা জরুরি। এসব কিছু হতে হবে আল্লাহ তায়ালাকে একমাত্র উপাস্য মনে করে, এবং তাঁর সন্তুষ্টি সওয়াব ও অনুগ্রহ লাভের আশায়। এবিষয়গুলোর সমষ্টি ও বন্ধন ছাড়া ইবাদত ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না।

ইবাদতের সাথে খুশুখুজুর সম্পর্ক

ইবাদতের এই স্বরূপ ও মর্ম সামনে রাখলে আমরা উপলব্ধি করতে পারব, কেন কুরআন হাদীসে নামাযে বা অন্যান্য ইবাদতে খুশু খুজুর প্রতি জোরালো নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সফল সে সকল মুমিন, যারা নামাজে একাগ্র। (সূরা মুমিনুন, আয়াত ২) প্রসিদ্ধ হাদীস হাদীসে জিবরীলে নবীজি ইহসানের পরিচয়ে বলেছেন, ইহসান হল তুমি এমনভাবে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর যদি তুমি না দেখ, তাহলে তিনি তো তোমাকে দেখছেন। (সহি মুসলিম) বস্তুত এই নম্রতা বিনয় ও একাগ্রতা হচ্ছে ইবাদতের মূল প্রাণ, যা ইবাদতের পরিচয় থেকে স্পষ্ট।আর তাই হাদীসে বলা হয়েছে, দোয়াই ইবাদত।(আবু দাউদ, হাদীস ১৪৭৯) কারণ দোয়ার মধ্যেই বান্দার দীনতা অসহায়ত্ব ও মুখাপেক্ষিতা সর্বোত্তমভাবে প্রকাশ পায়। কুরআন হাদীসে ইবাদত শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য ইখলাস তথা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করাকে শর্ত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। (সুরা বাইয়্যিনাহঃ ৫, তাফসীরে কুরতবী) একই সাথে রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদতকে জঘন্য ও ধংসাত্মক আখ্যায়িত করা হয়েছে। কেন? কারণ লোক দেখানোর সাথে ইবাদতের যে মর্ম ও মূলকথা সেটা একত্রিত হওয়া সম্ভব না।

যাহোক, শুরুতে আমরা দেখিয়েছি, মানুষ আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করে দুইস্তরে। একটি বাধ্যতামূলক। আরেকটি ইচ্ছাধীন বা স্বেচ্ছা আনুগত্য। আমাদের এই আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, ইবাদত ইচ্ছাধীন আনুগত্যের মধ্যে একটি বিশেষ স্তরের আমল ও অবস্থাকে বুঝায়।

আল্লাহ তায়ালার সাথে মানব সম্পর্কের প্রকৃতি ও ধরণ

ইবাদতের যথাযথ মর্ম পরিচয় ও অবস্থান উপলব্ধি করলে আমাদের জন্য আরেকটি অতীব জরুরী বিষয় বুঝা সহজ হবে। আল্লাহ তায়ালা ও মানুষের মধ্যকার সম্পর্কটা কেমন? এই সম্পর্ক কি শুধুই সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টি, শাসক ও শাসিত, বিধানদাতা ও অনুগত বিধানপালন কারীর মধ্যে সীমিত? এতো এক চিরন্তন সত্য যে আল্লাহ তায়ালাই একক মহান সৃষ্টিকর্তা পালনকর্তা। একমাত্র বিধানদাতা, সর্বময় ক্ষমতার মালিক কেবল তিনিই । কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ও বান্দাদের মধ্যকার সম্পর্ক এর চেয়ে আরো বেশি গভীর, সূক্ষ্ণ, আরো ব্যাপক। এই সম্পর্কের দাবীতে বান্দা তার মাবুদ আল্লাহ তায়ালাকে সর্বাধিক ভালোবাসবে। তার মহিমা বড়ত্ব ঘোষনায় ও তাসবীহ পাঠে, তাঁর যিকিরে মগ্ন থাকবে, সকাল সন্ধ্যা সর্বাবস্থায়। তাঁকে ক্রোধ ও প্রতাপকে ভয় করবে।  সবকাজে সর্বাবস্থায় তাঁর দিকেই ধাবিত হবে, চাইবে কেবল তাঁর কাছে। তাঁর সন্তুষ্টি ও দয়া অর্জনের জন্য নিজের জান মাল সব কিছু বিসর্জন দিবে। শুধু বিধানদাতা হিসেবে আনুগত্যই নয়, বরং আল্লাহ তায়ালার সাথে বান্দার এমন গভীর সম্পর্কের বিষয়টি কুরআনের একজন সাধারণ পাঠকের কাছে অস্পষ্ট থাকার সুযোগ নেই। এসম্পর্কে কয়েকটি আয়াত পাঠ করুন।

সুরা বাকারায় আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের একটি দিক বর্ণনা করা হয়েছে এই শব্দে,

“কিছু মানুষ আছে যারা আল্লাহ ব্যতিত অন্যদেরকে তাঁর সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। আল্লাহর মত তারা তাদের ভালোবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে সর্বাধিক ভালোবাসে। (সূরা বাকারা আয়াত ১৬৫) সুরা মায়েদায় বলা হয়েছে, হে ঈমানদারগন, তোমাদের কেউ যদি তার ধর্ম থেকে ফিরে যায়, তাহলে আল্লাহ এমন লোকদের নিয়ে আসবেন যাদের তিনি ভালোবাসবেন, তারাও তাঁকে ভালোবাসবে”। (সূরা মায়েদা, আয়াত ৫৪)

নবিজিকে নির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তারা যেসব কথা বলে এতে ধৈর্য ধারণ করুন। আর আপনার প্রতিপালকের স্বপ্রশংস তাসবীহ পাঠ করুন, সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে, রাতের বিভিন্ন অংশ ও দিনের প্রান্তসমূহেও তাসবীহ পাঠে মগ্ন থাকুন, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হতে পারেন। (সূরা তোয়াহা, আয়াত ১৩০)

অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের প্রশংসা করে বলেছেন, আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনবে কেবল তারাই যাদের উপদেশ দিলে তারা সেজদায় লুটিয়ে পড়ে। তাদের প্রতিপালকের স্বপ্রশংস তাসবীহ পাঠ করে। এবং তারা অহংকার প্রদর্শন করেনা। বিছানা থেকে তাদের পিঠ আলাদা হয়ে যায়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের প্রতিপালককে ডাকে। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে। (সূরা সাজদা, আয়াত ১৫-১৬)

ইবাদতের মর্ম সম্পর্কে আধুনিক ভ্রান্তি ও তার অপনোদন

ইবাদতের মর্ম ও স্বরূপ সম্পর্কে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করা জরুরী। আর তা এই যে, আধুনিক কোন কোন লেখক ও চিন্তাবিদ (যেমন মাওলানা আবুল আ’লা মওদুদী সাহেব ও তার সমচিন্তার অনেক লেখক ও চিন্তাবিদ) ইবাদতকে ব্যখ্যা করতে গিয়ে চরম বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন। যেমন একজন দাবী করে বসেছেন, রব মানে হচ্ছে, সর্বোচ্চ অথরোটি, আর ইবাদত মানে হল, সেই অথরোটির আনুগত্য করা, আদেশ পালন করা এবং তাকে পূর্ণাংগরূপে মেনে নেয়া। (আত তাফসীর আস সিয়াসি লিল ইসলাম— ৬৫)

বলাবাহুল্য এখানে ইবাদতের যে মর্ম বর্ণনা করা হয়েছে এটা খুবই আপত্তিকর ও বাস্তবতা বিরোধি। কেননা ইবাদতের মধ্যে যদিও আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য রয়েছে, এবং এটি এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কিন্তু শুধু আনুগত্য দ্বারা ইবাদত হতেই পারে না। ইবাদতে জন্য প্রয়োজন নিজের দীনতা ও অসহায়ত্ব, প্রেম ভালোবাসা, শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্মানের প্রকাশ। আরো আবশ্যক হল আল্লাহ তায়ালার নিকট সওয়াব ও নৈকট্য অর্জনের আকাঙ্ক্ষা। যার বিবরণ আমরা দিয়ে এসেছি।

ইবাদত সম্পর্কে এমনই আরেকটি বিভ্রান্তি হচ্ছে, ইবাদতের সঠিক অবস্থান ও মর্যাদা উপলব্ধি করতে না পারা। এই বিভ্রান্তি থেকে কিছু ব্যক্তিবর্গ দাবী করেছেন, নামাজ রোজা বা যাকাত হজ্ব, এই ইবাদতগুলো মূলতঃ বিশেষ মিশনের (ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা) উপকরণ ও মাধ্যম বা অনেকটা ট্রেনিংয়ের মত। অর্থাত এসব ঠিকভাবে পালন করলে মূল লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। (আত তাফসীর আসসিয়াসী— ১০৪, দীন ও শরীয়ত—১৩৪)

ইবাদত স্বত্ত্বাগত লক্ষ্য, মাধ্যম বা উপলক্ষ্য  নয়

বস্তুত কুরআন হাদীসে ইবাদতের যে অবস্থান ও স্বরূপ বর্ণনা করা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে যে বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত তাহল ইবাদত ইসলামের কেন্দ্রীয় ও মৌলিক বিষয়। ইবাদত অন্য কোন কাজ মিশন বা উদ্দেশ্যের উপায় উপকরণ বা মাধ্যম নয়। সত্ত্বাগতভাবে ইবাদত কাংখিত বিষয়।ফলে ইবাদত সম্পর্কে উক্ত দাবিটি  ইসলামের সামগ্রিক শিক্ষার সাথে ভয়াবহ সাংঘর্ষিক। শাসন ক্ষমতা অর্জন করা বা ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা নিজ জায়গায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিষয়। শরীয়তের সামগ্রিক নীতিমালা ও স্বতন্ত্র দলীল দ্বারা এটি সুপ্রমাণিত একটি বিধান। কিন্তু এই বিধানের গুরুত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে শরীয়তের স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত বক্তব্য ও অবস্থানকে পরিবর্তন করে ফেলা, সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। এটা কতটা অসার উক্তি নিচের আয়াতটি একটু মনোযোগ দিয়ে পাঠ করলেই যে কারো কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে।

আল্লাহ তায়ালা সুরা হজ্জে বলেছেন, তারা এমন যে আমি যদি তাদেরকে জমিনে ক্ষমতা দান করি তাহলে তারা যথাযথভাবে নামাজ আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে, মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে, ও অসত কাযে বাধা দিবে। আর সব কিছুর পরিণতি আল্লাহ তায়ালারই হাতে। (সূরা হজ্জ, আয়াত ৪১)

আয়াতের ভাষ্য খুবই পরিষ্কার। আল্লাহ তায়ালা শাসন ক্ষমতাকে নামাজ যাকাত সহ অন্যান্য ইবাদতের উত্তমভাবে পালন করার মাধ্যম ও উপকরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই নয় যে নামাজ বা অন্যান্য ইবাদত ইসলামি শাসন ক্ষমতা অর্জনের উপকরণ।আরেকটি আয়াত লক্ষ্য করুন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে, সতকর্মসমূহ করেছে আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি অবশ্যই  তাদের জমিনের খলীফা বানাবেন। যেমন খলীফা বানিয়েছেন তাদের পূর্ববর্তিদের, এবং তাদের জন্য তিনি সেই দীনকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠা দান করবেন, যে দীনকে তাদের জন্য মনোনীত করেছেন, এবং তারা যে ভয় ভীতির মধ্যে আছে তার পরিবর্তে নিরাপত্ত্বা দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে, আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর এরপর যারা অকৃতজ্ঞতা করবে, তারাই নাফরমান”। (সুরা নুর, আয়াত ৫৫)

আয়াতের মূল কথাটি হচ্ছে ঈমান ও আমলকে সঠিক ভাবে ধারণ করলে আল্লাহ তায়ালা পুরষ্কার দিবেন। সেই পুরষ্কারটি হচ্ছে শাসন ক্ষমতা। তাহলে শাসন ক্ষমতা অর্জন এটি হচ্ছে ঈমান ও আমলের ফলাফল ও পুরষ্কার, ঈমান ও আমলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নয়। এজন্য শাসন ক্ষমতা অর্জনের পরও বলা হয়েছে, তারা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না।

তাছাড়া নবী রাসূলদের পবিত্র আমলী বা বাস্তব জীবনধারা, এবং ইবাদতের সাথে তাঁদের গভীর সম্পর্ক ও সীমাহীন ভালোবাসা, এটাই প্রমাণ করে ইবাদত স্বত্ত্বাগতভাবে কাংখিত বিষয়। এটি অন্যকোন বিষয় বাস্তবায়ন ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যম উপকরণ বা ভায়া নয়। দেখুন, হজরত যাকারিয়া ও তাঁর পরিবারের উচ্ছসিত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালা এভাবে করেছেন, তারা তো কল্যানের কাজসমূহে প্রতিযোগিতা করত, আর আমাকে ভয় ও আশা নিয়ে ডাকত। আর তাদের অন্তর ছিল আমার সামনে বিনীত। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৯০) নবিজির সেই হাদীসটি স্মরণ করুন যেখানে তিনি বলেছেন, নামাজে আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে। (সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৩৯৪০) আরো বলতেন, বিলাল, নামাজের ইকামত দিয়ে আমাদের শান্তি দাও। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৮৫) তিনি এত সময় নামাজে দাঁড়িয়ে থাকতেন যে তাঁর দুই পা ফুলে যেত। (সহি বুখারি, হাদীস ৪৮৩৬)

নীতিগতভাবে ইবাদতের অবস্থান বর্ণনা করার পর নবী রাসূলদের নিজেদের কর্মপদ্ধতি এবিষয়টিকেই নিশ্চিত করে যে ইবাদত সত্ত্বাগতভাবেই উদ্দিষ্ট একটি বিষয়। এটি কোন মিশন বাস্তবায়নের ভায়া বা উপকরণ নয়।এরপরও কেউ যদি ইবাদতকে উপকরণ ও মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে, তাহলে এক দিকে নবী রাসূলদের আনীত শিক্ষার বিরোধীতা করা হবে। অন্যদিকে নবী রাসূলগণ ইবাদতের যে গুরুত্ব দিয়েছেন, যেভাবে ইবাদতের প্রতি সর্বোচ্চ যত্নশীল ছিলেন, তারা এ থেকে অনেক দূরে সরে যাবে। এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ইবাদতের গুরুত্ব তাদের নিকট অতিশয় তুচ্ছ ও নগন্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এটা শুধু আশংকার কথাই নয়, বাস্তবে এমনটি ঘটতে দেখা গেছে এবং এই অবস্থা এখনও চলমান রয়েছে।

এখানে এটি স্পষ্ট করা নেয়া সংগত হবে যে, আল্লাহ তায়ালা যে ইবাদতগুলো প্রণয়ন করেছেন, এগুলোর বস্তুগত নানাবিধ কল্যাণ ও উপকারিতা অবশ্যই রয়েছে। সন্দেহ নেই, শারিরীক মানসিক অর্থনৈতিক পারিবারিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বহু কল্যাণ এতে নিহীত আছে। কিন্তু এই বস্তুগত বিষয়গুলো ইবাদতের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য নয়। ফলে এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ইবাদত করলে কিছুতেই ইসলামের নির্দেশিত ইবাদত পালন করা হবে না। ইসলামে ইবাদত তো তখনই স্বার্থক হবে যখন ইবাদতটি শুধুই আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি রহমত ও নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে পালন করা হবে।

তথ্যসূত্র—

 المصادر والمراجع:

التفسير السياسي للإسلام

العقيدة والعبادة والسلوك، كلاهما للشيخ الندوي

دين وشريعت للشيخ محمد منظور النعماني-ترجمة أستاذنا زين العابدين

قرآن آب سي كيا كهتا هي له

معارف القرآن للمفتي محمد شفيع

نواقض الإسلام للشيخ صلاح الدين الإدلبي

حوار هادئ مع مناوئ الأشاعرة له

كتب التفسير المذكورة

محاضرات الشيخ سيف العصري

وغيرها من المصادر

Picture of আনাস চৌধুরী
আনাস চৌধুরী
আনাস চৌধুরীর জন্ম নব্বইয়ের শেষ দিকে, হবিগঞ্জ সদরে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়াতে। পরবর্তিতে দারুল উলুম দেওবন্দেও অধ্যয়ন করেছেন এক বছর। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক, হবিগঞ্জের দারুল ইরশাদ বহুলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। লেখালেখি, অনুবাদ ও দ্বীনি আলোচনাতেও তার অংশগ্রহণ রয়েছে। বাংলা ও আরবীতে অনুবাদ করেছেন বেশ কিছু বই। ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রকাশিত হয়েছে।
লেখকের অন্যান্য লেখা

সূচিপত্র

সর্বাধিক পঠিত
উত্তম আখলাক: অনন্য ছয়টি মর্যাদা
ক্রোধ সংবরণ: কেন ও কিভাবে
নববী চিকিৎসা : কিছু প্রয়োজনীয় আলোকপাত
নারীর জীবনলক্ষ্য ও জীবন পরিকল্পনা
হাদিস শাস্ত্রের প্রাচ্যবাদী বয়ান এবং মুসলিম সমাজে এর প্রভাব
কুরআনের আলো পেতে যে বিষয়গুলো লাগবেই!